সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ


আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল
১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় এটি ঘটে। সে সময় বাংলাদেশের মতো একটি নতুন রাষ্ট্র তাদের ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো ও বাজার নিয়ে এটি সামাল দেয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। নব্য নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাগণ ব্যাপক দুর্নীতিপ্রবণ ছিলেন। যদিও এপ্রিল মাসে সরকারের লোকেরা বলতে থাকেন যে, এই দুর্যোগ বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল এবং দুর্ভিক্ষ আরও ব্যাপকতা লাভ করছিল। অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করে।
মৃত্যু সংখ্যা :
মোট মৃতের সংখ্যা, যদিও পরিসংখ্যান আলাদা, এক পণ্ডিতের অনুমান ১৫ লাখ গ্রহণযোগ্য সংখ্যা। এই সংখ্যা দুর্ভিক্ষ পরবর্তী সংখ্যা। অনাহার একমাত্র কারন নয়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যুর কারন ছিল রোগ, কলেরা, ম্যালেরিয়া এবং ডাইরিয়া। দুর্ভিক্ষের কারনে আনাহারে দুর্বলতা, রোগ-সংবেদী কারনে দুর্ভিক্ষ পরবর্তী মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪,৫০,০০০। দরিদ্র, শ্রমিক এবং অ-ভূমি মালিকরা বিশেষত ভয়াবহতার শিকার।
অনেক লেখক সন্মত হয়েছেন যে, "সব ধরনের মজুরি শ্রমিকরা সর্বোচ্চ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন"।করুণ মৃত্যুর হার "ভূমিহীনদের মৃত্যু সংখ্যা ভুমিমালিকদের (তিন বা বেশি একর) চেয়ে তিন গুন বেশি ছিল"
কারণসমূহ :
অধিকাংশের মত, বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল বহুবিধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বন্যা, সরকারি খাদ্যশস্যের স্টকগুলির অপব্যবহার, আন্তজেলা খাদ্যশস্য সরবরাহে আইনী বাধা, , প্রতিবেশী দেশে খাদ্যশস্য চোরাচালান এবং তথাকথিত বিতরণ ব্যর্থতার।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে খাদ্য সঙ্কটে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে অথবা অনাহারজনিত অসুখে ভুগে মারা গিয়েছিল। প্রচলিত ধারনা হচ্ছে এই দুর্ভিক্ষের জন্য বন্যায় ফসলের ক্ষতি আর আমেরিকা পুরাপুরি রুপে দায়ী। কিন্তু এই ধারনা সত্য নয়।
“The food availability approach offers very little in the way of explanation of the Bangladesh famine of 1974. The total output, as well as availability figures for Bangladesh as a whole, point precisely in the opposite direction, as do the inter-district figures of production as well as availability. Whatever the Bangladesh famine of 1974 might have been, it wasn't a FAD (food availability decline, i.e. lack of food) famine.” AMARTYA SEN, in Poverty and Famines 1981:141.
সুতরাং দেশের নিজস্ব উৎপাদিত খাদ্যাকে দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা যাবে না। তাহলে এত বড় দুর্ভিক্ষের পিছনের মুল কারন কি ছিল?
এর পিছনের মুল কারন ছিল তিনটি।
প্রথমত, মুদ্রাস্ফীতিঃ ১৯৭৪ সালের মুদ্রাস্ফীতি একদম ক্রাইসিস পয়েন্টে চলে গিয়েছিল। একেতো ভারতের সাথে ব্যবসার কারনে সবকিছুর দাম ভারতীয় ঊর্ধ্ব দামের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল, তার উপর ছিল কালো বাজারের রমরমা ব্যবসা, যার কারনে সরকারর সংগ্রহে ছিল স্বল্প ট্যাক্স রেভেনিউ। সে সময় বাংলাদেশে ভারতীয় রুপির ব্যবহারের অনুমোদন ছিল এবং দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত ছিল উন্মুক্ত।
ফলে ভারতীয়রা ট্রাকবোঝাই করে বাংলাদেশ থেকে পন্য কিনে ভারতে নিয়ে যেতো। এতে করে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর জনগণের হাতে বিপুল পরিমান ভারতের কারেন্সি নোট এসে যায়। তদুপরি ভারতে মুদ্রিত প্রচুর জাল টাকা বাংলাদেশে এসে ঢুকে। এসব কারনে একদিকে যেমন কিছু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায়, অপরদিকে বেআইনি ভাবে খাদ্য মজুদ আর চোরাচালানের কারনে বাজারে খাদ্যের পরিমান কমে যাওয়ায় বাজারে প্রাপ্ত খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। যা পক্ষান্তরে গরিব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উর্ধ্বে চলে যায়।
“It was widely reported that the Indian military itself engaged in the purchase of huge quantities of both consumer and capital goods from Bangladesh using India's currency notes and then transferred those goods to India.” আখতার হোসেন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ।
দ্বিতীয়ত, খাদ্য প্রাপ্যতা এবং বিতরণঃ চোরাচালান করে প্রচুর চাল ভারতে পাচার হয়ে গিয়েছিল। বাকি যা দেশে ছিল তাও খাদ্য মজুদ বা হোর্ডিং এর কারনে বাজারে তার প্রাপ্যতা পর্যাপ্ত পরিমানে ছিল না। বন্যা কবলিত দুর্গত এলাকাগুলোতেও সরকার খাদ্য বিতরনে প্রচুর গাফিলতি করে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৯৭৪ সালের এই দুর্ভিক্ষের জন্য খাদ্য উৎপাদন নয় বরং প্রাথমিকভাবে 'খাদ্য বিতরণের সংকট' কেই দায়ী করেন।
“লগ্নিকারী, মুনাফাবাজ, এবং কালোবাজারিদের জন্য এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে” – দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ই মে, ১৯৭৪।
শেখ মুজিবের নিজের ভাষায়, “… a group of sharks, hoarders, smugglers, profiteers, and black-marketers were trading on human miseries.” Mujibur Rahman, The Bangladesh Observer, September 23, 1974.
তৃতীয়ত, আমেরিকার খাদ্য এইডঃ ফরেইন ইকোনোমিক এইড দেয়ার সময় দাতা দেশগুলোর কিছু শর্ত থাকে। যেমনটি ছিল ইউএস পিএল ৪৮০ তে। এই শর্ত অনুযায়ী, “A recipient country cannot trade with blacklisted countries such as Cuba.”-- PL480. কিন্তু মুজিব সরকার ঠিক তাই করেছিল। একদিকে এই পলিসির শর্ত না মেনে কিউবার কাছে পাট বিক্রি করে যাচ্ছিল ১৯৭৪ সালে, আর অপর দিকে আমেরিকার থেকে খাদ্য এইড আশা করেছিল।
হিউম্যানিটেরিয়ান গ্রাউন্ডে আমরা হয়তো আশা করতে পারি যে আমেরিকা খাদ্য দিবে, কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি এই নীতি মানে না। শর্ত ইজ শর্ত, শর্ত মানো খাদ্য নাও। না মানলে ভুগো। আর ঠিক তাই হয়েছিল। অতঃপর এই শর্ত মেনে কিউবাতে পাট রপ্তানি বন্ধ করলে আমেরিকার খাদ্য প্রবাহ শুরু হয়, কিন্তু ততদিনে দুর্ভিক্ষ প্রায় শেষের দিকে পৌঁছে গিয়েছিল। ( সেন, ১৯৮১)।
একথা ভুললে চলবে না যে দেশ পরিচালনার পরম দায়িত্ব সরকারের; যা মুজিব সরকার যুদ্ধ পরবর্তী আমলে করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সুতরাং ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সম্পূর্ণ দায়ভার মুজিব স













রকারের উপরেই বর্তায়।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই দুর্ভিক্ষের কয়েক মাস পরেই, তিন দিনের ব্যবধানে ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুলাই শেখ কামালের এবং ১৭ই জুলাই শেখ জামালের মহা সমারোহে বিয়ে হয়। দুই ভাইয়ের বউকে ঘরে আনেন শেখ মুজিব সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে। অথচ দুর্ভিক্ষের লং টার্মের এফেক্টে তখন পর্যন্ত মানুষ অপুষ্টি আর রোগে মারা যাচ্ছিল।
আওয়ামী লিগের এই শাসন ধারা আজও চালু আছে। এক দিকে মানুষ জীবিকার আশায়, অবৈধভাবে সাগর পারি দিয়ে ভিন দেশে আশ্রয় নেয়, জঙ্গলে তাদের গন কবর উদ্ধার হয়, তাদের অপুষ্টি জনিত চেহারা বিশ্ব মিডিয়ায় ভেসে আসে, সারাদেশ একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধ হয়, শিক্ষা ক্ষেত্র ধ্বংস প্রায়, ব্যাংকগুলো লুটপাট করে শেষ, রেমিটেন্স কমছে, রপ্তানি কমছে, অন্যদিকে রুলিং পার্টির নেতাদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ছে। তাদের একেক গাড়ির দাম তিন চার কোটি টাকা! তারা শানশওকতে আছে। না আছে এদের কোন দেশ প্রেম, না আছে বিবেক, না আছে দায় দায়িত্ব।
দেশটা কি হতে পারতো আর কি হয়ে রইলো !!!!!
শুধু আওয়ামী লীগের কারনে।

July 27 at 10:07 PM ·

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর