সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মোবাইল ছিনতাই

মোবাইল ছিনতাই


গতকাল একাধিক মোবাইল নাম্বার নিয়ে লিখতে গিয়ে ২০১১ সালে আমার মোবাইল ছিনতাই হয়েছিলো ঢাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান গেইটে উল্লেখ করেছিলাম । এখানে সময়ের একটু ভুল ছিলো । আসলে ২০১২ সালের প্রথম দিকে হবে ।
আমি একটা লেখা মৌচাকে ঢিল সম্পাদক মি.শফিক রেহমানকে দিতে তাঁর ১৫ ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় গিয়েছিলাম । তিনি আমাকে স্নেহ করতেন । ভালো লিখি বলে উৎসাহ দিতেন । তাই সময় পেলেই আমি তাঁর বাসায় যেতাম । যায়যায়দিন-এ লেখা থেকেই উনার সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো । যায়যায়দিনে সব লেখাই আমি আমেরিকা থেকে লিখতাম । তিনি পশ্চিমা মানসিকতার আধুনিক মানুষ । অনেক দিন দেখা না হলে তিনিও কখনো আমাকে ফোন করে বাসায় যেতে বলতেন । অথবা সজীব ওনাসিস (সহকারি সম্পাদক)কে দিয়ে ফোন করিয়ে আমাকে বাসায় যেতে বলতেন ।
আমাকে তিনি সব সময় তাঁর বাসার ভেতরের ভিআইপি ড্রয়িং রুমে নিয়ে গল্প করতেন । আমাকে তিনি ডাক নামেই ডাকতেন ।
তো সেবার একটা লেখা দিয়ে সম্ভবত চৈতালি ভালোবাসা সংখ্যার জন্য “ভালোবাসার গান” শিরোনামে লেখাটি দিয়ে আমি ইস্কাটন গার্ডেন থেকে রিকশায় পল্টন ফিরছিলাম । তখন রাত ৯টা হবে । সেদিন ইনডিয়ান প্রেসিডেন্ট মি.প্রণব মুখার্জি ঢাকা এসেছিলেন । ঢাকা বেশ নিরিবিলি । পত্রপত্রিকার ভাষায় ঢাকাকে “নিরাপত্তার চাদরে” ঢেকে দেয়া হয়েছিলো । উল্লেখ্য যে, আমি রিকশায় বা গাড়িতে মোবাইল ফোন চালাই না । দূরের যাত্রায় বাসে মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোন চালাই । সেদিন ১৫ ইস্কাটন থেকে বের হয়ে রিকশায় বসে আমি সহকারি সম্পাদক সজীব ওনাসিসের সঙ্গে একটু কথা বলছিলাম লেখা নিয়ে । সে কারনে মোবাইল সেটটি আমার হাতেই ছিলো । খুব ভালো একটা সেট ছিলো । নোকিয়া E52. কিছুদিন আগেই কিনেছিলাম কুয়ালালামপুর থেকে ১১০০ রিঙ্গিত দিয়ে । প্রায় ২৫ হাজার টাকা । খুব ই চমৎকার একটি সেট ছিলো E52 । এর ক্যামেরা ৩.২ মেগাপিক্সেল হলেও তা যেনো ১০ মেগাপিক্সেলের রেজুলেশন দেয় । সিঙ্গাপু্‌র , মালয়শিয়া, লাওসের আমার সব ছবি ও ভিডিও ওই সেটে করা । বিমানের ভেতরে এবং বিমান থেকে জানালা দিয়ে বাইরে যতো ভিডিও করেছিলাম তা ওই E52 সেট দিয়ে । ৩.২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় এতো ক্লিয়ার ছবি কিভাবে আসে তা ছিলো আমার কল্পনার অতীত । একদিন চার্জ দিলে তিন দিন চলতো !
আমার রিকশা যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছাকাছি তখন একটা মোটরবাইক আমাকে অতিক্রম করলো । স্পীড বেশি ছিলো না । একজন ড্রাইভ করছিলো আরেকজন পেছনে বসা । পেছরের ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন । মনে হলো যেন তিনি আমাকে চেনেন । একটু সামনে এগুতেই আমার রিকশা ঠিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেইটের সামনে আসতেই দেখি মোটরবাইকওয়ালা দুই “ভদ্রলোক” এমনভাবে দাঁড়িয়েছেন যে, আমার রিকশা থামতে বাধ্য ।
রিকশাচালক রিকশা থামালো । বাইকের পেছনে বসা ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এলেন । আমি ভাবলাম পরিচিত কেউ হবে । হয়তো কথা বলবে । আমি রিকশায় বসা । কাছে এসেই তিনি হাসি মুখে বললেন, আমরা একটু খারাপ ছেলে । মোবাইলটা দিয়ে দেন । বুঝলাম তারা ছিনতাইকারী । আমি অত্যন্ত ভদ্রভাবে বললাম, ভাই, এই ফোনে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফোন নাম্বার আছে । ফোনটা নিয়েন না । আমার পকেটে ক্যাশ টাকা বেশি নেই । ফোনটার দাম ২৫ হাজার টাকা । আমাকে আপনাদের মোটরবাইকে করে কাছাকাছি কোনো এটিএম বুথে নিয়ে যান । আমার কাছে ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড দুটোই আছে । আমি টাকা তোলে মোবাইল ফোনের দামটা আপনাদের দিয়ে দেবো । প্রমিস । তবু আমার ফোনটা নিয়েন না ।
আমার সঙ্গে ওরা ভদ্র ব্যবহার করেছে । ওই কথা শুনে ভদ্রলোক আমার ডান হাতটা টেনে নিয়ে তার শার্টের নিচে কোমরে রাখা পিস্তলে আমার হাতটা ঘষা দিয়ে বললেন, এটা দেখছেন ? বেশি কথা বললে গুলি করে দেবো । আমরা শুধু মোবাইল নেই । টাকা না ।
আমি সুবোধ বালকের মতো প্রিয় মোবাইল সেটটা ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিই । যাওয়ার আগে আমাকে ‘থ্যংক ইউ ভেরি মাচও’ বলে গেছে !
আমি রিকশা নিয়ে পল্টন মোড়ের প্রীতম হোটেলে এসে বয়কে ডেকে বললাম, এই ছেলে, চারটা হাইনিক্যান বিয়ার আনো তো । তারপর ঢঘ ঢঘ করে বিয়ার চারটা খেয়ে এক ঘুমে সকাল ।
করিম চৌধুরী
১৮/০৩/২০১৮
কুমিল্লা ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর