সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ছোটবেলা

·ছোটবেলা












ছোট বেলায় শ্লেটে লিখতাম । চক বা গ্রাফাইট (সম্ভবত) পেন্সিল দিয়ে । ভেজা কাপড়ে মুছে আবার নতুন কিছু লিখতাম । হাতের কাছে পানি না পেলে কখনো বা থুথু দিয়ে শ্লেট মুছে ফেলতাম । বড় সাইজের জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলেছি অনেক । কখনো বা কাগজের বড় ঠোঙায় খড় ঢুকিয়ে মোটা সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে ওই ঠোঙাকে ফুটবল বানাতাম । সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে "বৌ-জামাই" খেলেছি অসংখ্যবার । সেই হিসেবে আমার কয়েক ডজন বৌ ছিলো । ডাংগুলি খেলা ছিলো কমন ।
হাই স্কুল জীবনে কখনো সখনো বাজারে পাঠালে বাজারের টাকা থেকে চুরি করে থার্ড ক্লাশে বাংলা সিনেমা দেখা যে কি আনন্দের ছিলো তা বলাই বাহুল্য । ''অবুঝ মন''(শুধু গান গেয়ে পরিচয় -অবুঝ মনের গান ) "সাধু শয়তান"( আগে পিছে দেখে চলো কাঁটা ফুটবে পা-য়- চোরা কাঁটা হলে পরে তারে খোলা যায়-প্রেমের কাটাতো খোলা যায় না-একবার যদি বিঁধে যায় কি উপায় বলো- সাধু শয়তানের গান)" দোস্ত দুশমন "(চুমকি চলেছে একা পথে- দোস্ত দুশমনের গান) "কি যে করি"( শোন গো রূপসী ললনা- কি যে করির গান) "ময়নামতি"( অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়-মিছেই তারে শিকল দিলাম রাঙা দুটি পা'য় ) "বেইমান"( আমিতো বন্ধু মাতাল নই- বেইমান ছবির গান) "অতিথি"( ও পাখি তোর যন্ত্রনা-আরতো প্রাণে সয়না-যখন তখন মোরে জ্বালাতন- ভালো লাগেনা-অতিথির গান ) "সুজন সখী"(সব সখীরে পার করিতে নেবো আনা আনা-তোমার বেলায় নেবো সখী-সুজন সখীর গান) " অনেক প্রেম অনেক জ্বালা "( অনেক প্রেমে রাঙানো আমার এই মন- অনেক প্রেম অনেক জ্বালার গান) "দি রেইন " ( একা একা কেন ভালো লাগেনা -কোন কাজে মন কেন বসেনা- দি রেইনের গান ) " অনন্ত প্রেম " ( ও চোখে চোখ পরেছে যখনি- তুমি হলে মনের রানী- অনন্ত প্রেম ছবির গান ) " রং বাজ " ( সে যে কেন এলোনা-কিছু ভালোলাগেনা-এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো-রং বাজ ছবির গান) । আরো অনেক ছবি হাই স্কুল জীবনে থার্ড ক্লাশে আমি দেখেছি বাজারের টাকা থেকে চুরি করা টাকায় ।
কলকাতার মেট্রো সিনেমায় " করণ অর্জুন " ( যাতি হু ম্যায়-জলদি হ্যায় কেয়া ), দিল্লীর শিলা সিনেমায় "রাজা "( আখিয়া মিলাও কাভি আখিয়া চোড়াও-তু নে কিয়া যাদু ) , বম্বের দুটি সিনেমা হলে "সাজন " ( বহুত পেয়ার কারতে হ্যাঁয় তোমকো সনম-কসম চাহে লে লাও খোদা কি কসম) আর "দিল"( মুঝে নিদ না অ্যাঁয়ে ), জার্মানির বার্লিনে এক সিনেমা হলে " টু উইম্যান" , নিউ ইয়র্কের কয়েকটি সিনেমা হলে " টুইস্টার " " জুরাসিক পার্ক " এয়ারফোর্স ওয়ান" "টাইটানিক "সহ আরো কিছু মুভি দেখেছিলাম কিন্তু বাজারের চুরি করা টাকায় থার্ড ক্লাশে সিনেমা দেখার মতো আনন্দ পাইনি । আরো কতো স্মৃতি !
তাই বলতে ইচ্ছা করে,শ্লেটে চকের দাগ ভেজা কাপড়ে মুছে ফেলা যায় । কাগজে পেন্সিলের লেখা রাবার ঘষে উঠিয়ে ফেলা যায় । কিন্তু মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা বা স্মৃতি থাকে যা কখনো কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না । উঠিয়ে ফেলা যায় না । সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বটে কিন্তু থেকে যায় স্মৃতি । সময়কে পরাজিত করে বার বার সে জেগে উঠে । হতে পারে সে স্মৃতি সুখের, দুঃখের , আনন্দের , বেদনার , ভালোবাসার । মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে অবিকল । স্মৃতির মুখচ্ছবিতে কখনো কালের মলিনতা লাগেনা ।


Karim Chowdhury
March 25, 2016

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...