আশির দশকের পর থেকে ইসলামকে বেশি বিতর্কিত করেছেন ওসামা বিন লাদেন । ইসলাম ধর্মের অনুসারী অনেকেই তাঁকে( লাদেন) হিরো মনে করেন !
১৯৯১ এর গালফ ওয়ারের সময় আমি ভিয়েনায় ছিলাম । আবার ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমনের সময় আমেরিকা ছিলাম । কেবল চাকরি করে বাসায় এসে ঘুমিয়েছি আর টাকা জমিয়েছি তাতো নয় । ওইসব দেশের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে দেখেছি তারা আমাদের সম্পর্কে কী ভাবে ?
সাবেক যুগোস্লাভিয়ার এক মুসলিম মহিলা আমার সঙ্গে চাকরি করতো অস্টৃয়ায় । একদিন সে পরিচয় দিলো যে, সে যুগোস্লাভ মুসলিম । নাম সোফিয়া । আমার সিনিয়র ছিলো সে । সে আল্লাহ বলতে পারতো না । বলতো ‘আলা’ । ডৃংক করা, সেক্স করা সবই করতো ইউরোপিয়ানদের মতোই । তখন হালকা মনে হতো, ধর্ম মনে হয় একেক দেশে একেক রকম । এক জায়গায় পড়েছিলাম, ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম, যে সব দেশে কায়েম হয়েছে সে দেশের কৃস্টি, ঐতিহ্য, জীবনধারণ পদ্ধতির সঙ্গে মিশেই কায়েম হয়েছে । সৌদি আরবের মানুষের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাপন আর আমাদের জীবনযাপন এক নয় ।
আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর পৃথিবীই বদলে যায় । প্রেসিডেন্ট বুশ তার ভাষণে তখন ক্রুসেড (Crusade) শব্দটি বেশি ব্যবহার করতেন ।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়, আমাদের ইসলাম ধর্মে বিভক্তি বেশি অন্য ধর্মের তুলনায় ।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে যে অভ্যন্তরীণ ফাটল আছে তাতো সকলেই দেখছেন । বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে, মতাদর্শের মধ্যে, ইসলামের বানীর ব্যাখ্যা নিয়ে প্রায়ই রক্তাক্ত সংঘাত সহিংসতার সৃষ্টি হয় । এই উত্তেজনায় ভাই ভাইকে হত্যা করে । নিজেদের মধ্যে এই গোত্র কলহ এখন কান্ডজ্ঞানহীন অজ্ঞতায় রূপ নিয়েছে । যদিও এই কলহ মোহাম্মদ(সাঃ) এর মৃত্যুর পর থেকেই শুরু । আলী (রাঃ)সঙ্গে মুয়াবিয়া(রাঃ)যুদ্ধ । আলী (রাঃ) সঙ্গে আয়শা(রাঃ) যুদ্ধ ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই ছিলো ।
সব যুগেই ইসলামের মুল্যবোধ ওই সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । ইসলামের মধ্যেই তীব্র বিতর্ক রয়েছে । অন্যান্য একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোতে এতো বিতর্ক নেই যতোটা ইসলাম ধর্মে আছে । আপাতদৃষ্টিতে ইসলামকে রক্ষনশীল এবং অসহিঞ্চু মনে হলেও ইসলাম ধর্ম বেশ আধুনিক ও প্রগতিশীল । কিন্তু এর অপব্যাখ্যা দিয়ে অনেককেই বিভ্রান্ত করা সম্ভব ।
আমি কোন ধর্মীয় স্কলার নই । সাধারন মুসলমান হিসেবে যেটুকু জানি বা আমার কাছে দৃশ্যমান হয় তাই প্রকাশ করছি ।
ইসলাম ধর্মের মৌলিক আদর্শে যারা বিশ্বাস করে তারা এও বলেন , এই পৃথিবীতে যা কিছুই হচ্ছে সবই আল্লাহর ইচ্ছায় । মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন সমাজ ও ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম দিয়ে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবেই ।
“এবং আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে সমগ্র মানবজাতিকে একটি জাতি করে পাঠাতেন । তিনি চেয়েছেন তাদের মধ্যে প্রভেদ থাকবে”। এরপর বলা হয়েছে, “এবং তোমার আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবীর সব মানুষ বিশ্বাসী হতো”।
আল্লাহ চান নি যে সব মানুষ এক ধর্মের অনুসারী হোক এবং একই সংস্কৃতির সদস্য হোক । তিনি যদি চাইতেন তাহলে সেভাবেই সাজাতেন । আল্লাহ এই পৃথিবীতে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন । বিশ্বাসীকে ভালো মন্দ বিচার করতে বলেছেন ।
ছোটবেলায়ই পবিত্র কোরআন পড়েছি । এক লাইনও বুঝি নি । অনেককেই নানাভাবে আমাদের বুঝান ।
মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে অনেক মাওলানা বা হুজুরদের অনেক কথা শুনি । অনেকেই মেয়েদের উচ্চশিক্ষা, স্কুল, কলেজ, ভার্সিতে পড়া ভালো চোখে দেখেন না । কিন্তু কোরআনের প্রথম‘পড়’ শব্দটির কথা উল্লেখ করা যায় । এখানে পুরুষেরা ‘পড়’ বলা হয়নি । এই আদেশ সব বিশ্বাসীর জন্য । শুধু পুরুষের জন্য নয় ।
একথা এক হুজুরকে বলায় তিনি বলেছিলেন, শুধু ধর্মীয় বিষয়ে পড়তে বলেছেন ! আমি আর কথা বাড়াই নি । বুঝেছি, উনি আমাকে কনভিন্স করতে পারবে না । অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সমাজে মেয়েদের উপর ধর্মীয় অনুশাসনের বিধি বেশি প্রয়োগ করা হয় । অথচ আমরা জানি, পৃথিবীতে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন একজন নারী । তিনি খাদিজা (রাঃ)।
মুসলমান সমাজের মধ্যে যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিরাজমান এর সুষ্ঠু ও যৌক্তিক সমাধান করতে না পারলে ইসলাম এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে চরম সংঘাত ছড়িয়ে পরতে পারে । আর এই সুযোগে আমাদের মতো ছোট ছোট মুসলিম দেশগুলো শক্তিশালী অন্য ধর্মের প্রতিবেশি দেশের দ্বারা শুধু সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নয় ধর্মীয় আগ্রাসনের শিকার হবে । মায়ানমারের রোহিঙ্গারা এর উদাহরন । বাংলাদেশের মুসলমানরাও ভারতের ধর্মীয় আগ্রাসনের শিকার ।
·
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন