সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্মার্ট ফোন

স্মার্ট ফোন

স্মার্ট ফোন বা ফেসবুক কে বা কারা ইউজ করতে পারবে বা করা উচিৎ এ নিয়ে আমাদের সমাজে বিতর্ক আছে । আমার জুনিয়র বা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও অনেকেই জানতে চেয়েছে তারা মোবাইল ফোন বা ফেসবুক ইউজ করতে পারবে কিনা । এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে একটু ভূমিকা লাগে ।
ইসলাম ধর্মের অনেক মাওলানা, মুফতি, ক্বারি, কিছু ধর্মীয় গুরু (যাদের আমরা পীর মানি), ইমাম সাহেবকে বলতে শুনেছি, ইসলামের দৃষ্টিতে এসব ব্যবহার করা নিষেধ । টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এরা বাঁধা দেয় । এরা মনে করে,এসব প্রযুক্তি ইসলামের মুল্যবোধকে আঘাত করে । এরা বলে, এসব ইহুদি নাসারাদের সৃষ্টি । ইসলাম বা মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য বিধর্মী বা নাস্তিকরা এসব বানিয়েছে । সেখান থেকেই এগুলো ব্যবহারের বৈধতার প্রশ্ন এসেছে প্রধানত । কিন্তু সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, আমার দেখা এসব মাওলানা, মুফতি, ক্বারি, ইমাম সাহেব সবাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন ! অনেকেরই ফেসবুক একাউন্টও আছে ।
এ প্রসঙ্গে কলেজ জীবনের এক স্মৃতি মনে পড়লো । ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে যখন বিভিন্ন ভার্সিটিতে টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন একদিন বাকী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা ভিক্টোরিয়া কলেজে । উনার পুরো নাম আব্দুল্লাহিল বাকী । তিনি আমাদের সিনিয়র ছিলেন । বাসদ রাজনীতি করতেন ।
সমাজতন্ত্রের রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি আমাকে বললেন,
দেখো, কে বেহেশত যাবে আর কে দোজখে যাবে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন । যারা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা আল্লাহর প্রেরিত ধর্মেই বিশ্বাসী । সে হতে পারে খ্রিস্টান, ইহুদী ।
পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্মের লোকই আল্লাহ বিশ্বাস করেন । খ্রিষ্টানরা ঈশা (আঃ) নবীকে মানেন । এবং আল্লাহর প্রেরিত আসমানি কিতাব ‘ইঞ্জিল’ শরিফ অনুসরণ করেন । আমেরিকার ডলারেও লেখা আছে “ In God We Trust”.
ইহুদিরা মুসা নবীকে মানেন । তারাও মুসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ন ‘তাওরাত'(তোরাহ) আসমানি কিতাব অনুসরণ করেন । আমরা হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে মানি । এবং ‘কোরআন’ অনুসরণ করি । সবাই এক খোদা বিশ্বাস করে ।
এখন মৃত্যুর পর বিচারের সময় আল্লাহ যদি দেখেন যে, মার্কোনি রেডিও আবিষ্কার করার ফলে মানুষের যথেষ্ট কল্যান সাধন হয়েছে । এবং ইসলাম প্রসারে রেডিও গুরত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছে । তখন মানব হিতৈষী কাজের জন্য আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করতে পারেন ।
তিনি আরো অনেক উদাহরন দিলেন ।
এ অঞ্চলের মানুষ এক সময় জাহাজে করে হজে যেতো । প্রথম ভারতের বম্বে (এখন মুম্বাই) যেতো । তারপর সেখান থেকে জাহাজে চেপে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব যেতো হজ পালন করতে । কেউ কেউ জাহাজে যেতে না পারলে ফিরে আসতেন ।
আমাদের ছোটবেলায় তাদেরকে “বোম্বাইয়া হাজী” বলা হতো । তারা বম্বে থেকে ফিরে আসতো বলেই তাদেরকে "বোম্বাইয়া হাজী " বলা হতো । এখন রাইট ব্রাদার্স বিমান আবিস্কার করায় মুসলিমদের হজ করতেও কতো সুবিধা !
রেডিও, টেলিভিশনে পাঁচ ওয়াক্তই আজান শোনা যায় । মোবাইল ফোন বা সেল ফোন খুব আধুনিক প্রযুক্তি । চালাতে জানে এবং কিছুটা হলেও ভালোমন্দ বুঝে তাদের সবাই সেল ফোন ব্যবহার করতে পারে বলে আমি মনে করি । কেউ চাইলে ফেসবুক চালাতে পারে । এতে সে অনেক অজানাকে জানতে পারে । অনেকের ধারণা, ফেসবুক চালালেই ছেলেমেয়েরা প্রেম করবে । ফেসবুক এসেছে এই সেদিন । ২০০৪ সালে । এদেশে ফেসবুক জনপ্রিয় হয়েছে ৪/৫ বছর হয়। এর আগে কি ছেলেমেয়েরা প্রেম করতো না ? আগে আমরা চিঠি লিখে প্রেম করতাম । এখন ছেলেমেয়েরা এসএমএস লিখবে । জীবনে এমন লোক দেখেছি বলে মনে পড়ে না, যে প্রেম করেনি বা প্রেমে পড়েনি !
চাইলে সেল ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে সে ঘরে বসেই ইসলাম সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করতে পারে । এখনো দেশে অনেকেই আছেন যারা সেল ফোন ব্যবহার করতে জানেন না । তাদের অনেককেই তো নামাজও পড়তে দেখি না । মোবাইল ফোন তাদের কিভাবে প্রভাবিত করেছে ?!
এখন সব মোবাইল ফোনে আছে এলার্ম, নির্ধারিত সময়ের বিষয়ে সংকেত, ঘড়ি, ক্যামেরা,টর্চ লাইট, রমজানের সময়সূচী, সেহেরি ও ইফতারের সময় । কিছু কিছু মোবাইল ফোনে আছে কম্পাস যা মক্কার দিক নির্দেশ করে । এতে মুসুল্লিরা সঠিক দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে পারে । সাইলেন্ট মুডে রেখে নামাজ পড়ার সুবিধাও আছে । ৪/৫ হাজার টাকার একটা মোবাইল ফোনে অনেক ফাংশন আছে। যারা আর্থিকভাবে দূর্বল তারা ৩০/৪০ হাজার টাকায় কম্পিউটার না কিনে একটা মোবাইল ফোনে সে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ৮০% লোক মোবাইল ফোনেই ইন্টারনেট ইউজ করে।
কয়েকদিন আগে আমাদের এলাকায় এক ওয়াজ মাহফিলে মাওলানা সাহেব এসেছিলেন হেলিকপ্টারে করে !
যারা আধুনিক প্রযুক্তির সমালোচনা করেন, বিরোধীতা করেন এবং ইসলামি মূল্যবোধে পশ্চিমা সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণাকে অনুপ্রবেশের মাধ্যম হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দায়ী করেন তারাও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক সুবিধা গ্রহণ করছেন । উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেককেই সিঙ্গাপুর, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক দৌঁড়াতে দেখি!
পত্রপত্রিকায় পড়েছিলাম, পশ্চিমা দেশগুলোকে তীব্রভাবে ঘৃনা করা চরমপন্থী মৌলবাদী ওসামা বিন লাদেন তার কিডনি ডায়ালসিসের মাধ্যমে বেঁচে ছিলেন । আল কায়েদা বা অন্যান্য চরমপন্থী মৌলবাদীরা যারা পশ্চিমাদের আধুনিক প্রযুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে তারাও এর সুবিধা নিয়ে থাকে । আল কায়েদার নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে । বিভিন্ন সময়ে লাদেনের বক্তব্য ভিডিও করে আল জাজিরা, বিবিসিতে পাঠানো হতো ।
গাড়ি, এসি, ইন্টারনেট, বিমান, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ আধুনিক প্রযুক্তি আজ সর্বত্র । এসব ছাড়া আমাদের চলেই না । সৌদি আরব, দুবাই ও কুয়েতে এমন দামি গাড়ি রাস্তায় চলে অহরহ সেসব গাড়ি ইউরোপ আমেরিকার রাস্তায় প্রায় দেখাই যায় না ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...