সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাদ্দাম হোসেন

 সাদ্দাম হোসেন





প্রথমে সাদ্দাম হোসেন জেনারেল আহমেদ হাসান আল বকরের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন । সেই সময় সাদ্দাম দৃঃঢ়ভাবে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যকার বিরোধের অবসান ঘটান । এই উদ্দেশ্যে তিনি নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করেন । পরে ইরাকের রাষ্ট্রপতি ও বাথ পার্টির প্রধান হিসেবে সাদ্দাম হোসেন আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্ম নিরপেক্ষ ও আধুনিক ইরাক গড়ে তুলতে প্রয়াস নেন । এ সময়ই সাদ্দাম ইরানের সাথে ৯ বছরের যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন (১৯৮০-১৯৮৮)। ইরাক-ইরান যুদ্ধের পরে ১৯৯১-এ সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দখল করে উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন । সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত দখল নিয়ে প্রকৃত ঘটনা অনেকেই জানেন না । শুধু সাদ্দামকে দোষ দেন । ইরাক-ইরান যুদ্ধে আমেরিকাসহ সৌদি আরবের নেতৃত্বে কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশ একটা চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলো যে, যুদ্ধে যে পরিমান টাকা খরচ হবে তা সবাই মিলে ইরাককে পরিশোধ করবে । একটা যুদ্ধে ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয় । প্রাণহানি তো আছেই ।
১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুলা খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে সফল ইসলামি বিপ্লব সংঘঠিত হয় । ইরানী মুসলমানরা শিয়া এবং কট্টর আমেরিকা বিরোধী । অন্যান্য আরব দেশ ইরানের এই বিপ্লবে ভয় পেয়ে যায় । তাই সব আরব দেশ সাদ্দাম হোসেনকে দিয়ে ইরানকে সাইজ করতে চেয়েছে । কিন্তু যুদ্ধ শেষে কুয়েতের কাছে সাদ্দাম হোসেন যুদ্ধের খরচ বাবদ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাওনা ছিলেন । আমি তখন ইউরোপে । নিয়মিত ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন ( International Herald Tribune ) পত্রিকা পড়ি । যা প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয় । ওই পত্রিকার ভাষ্য মতে, কুয়েত সাদ্দামের পাওনা টাকা দিতে অস্বীকার করে । আর সাদ্দাম তখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তারা যদি আমার পাওনা টাকা না দেয় তবে আমি তা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবো । ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরের একদিন সাদ্দাম হোসেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট তাহা ইয়াসিন রামাদানকে সড়ক পথে কুয়েত পাঠান এ বিষয়ে আলোচনার জন্য । বাগদাদ থেকে কুয়েত সড়ক পথে যেতে ১ ঘন্টা লাগে । তো কুয়েতের আমীর শেখ জাবের আল আহমেদ আল সাবাহ ইরাকি ভাইস প্রেসিডেন্টের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন । খাওয়া শুরুর আগেই ইরাকি ভাইস প্রেসিডেন্ট তাহা ইয়াসিন রামাদান কুয়েতের কাছে পাওয়া টাকার প্রসঙ্গ তুললে, কুয়েতের আমীর তাচ্ছিল্য ভরে সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেন । ইরাকি ভাইস প্রেসিডেন্ট না খেয়ে টেবিলে ঘুষি মেরে বলেছিলেন, “আমরা তোমাদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা আদায় করতে হয় তা জানি” বলে না খেয়েই সড়ক পথেই বাগদাদ ফিরে এসে সাদ্দাম হোসেনকে জানান ।
উত্তেজিত সাদ্দাম সেই রাতেই কুয়েত দখল করে নেন । আর কুয়েতের আমীর তার ১০ বউ আর ৪০ সন্তান নিয়ে জান বাঁচাতে সড়ক পথে পালিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে আশ্রয় নেন । তখন বুশ সিনিয়র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট । যিনি প্রেসিডেন্ট রেগানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন । শুরু হয় উপসাগরীয় যুদ্ধ । যাকে ইংরেজিতে গালফ ওয়ার বলা হয় । ওই যুদ্ধে সাদ্দাম হেরে যান নি । এক পর্যায়ে যুদ্ধ বিরতি হয় এবং সাদ্দাম হোসেন কুয়েত ছেড়ে চলে আসেন । সাদ্দাম এও দাবী করেছিলেন যে, ঐতিহাসিকভাবে কুয়েত ইরাকের অংশ । যা সত্য ।
সাদ্দাম, তার মতে ইরাকের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধের সকল পক্ষকে নির্মুল করার উদ্যোগ নেন । এই বিরুদ্ধ পক্ষে ছিল উপজাতীয় ও ধর্মীয় গোত্রগুলো যারা স্বাধীনতা দাবি করছিলো । যেমন, ইরাকি শিয়া মুসলমান, কুর্দি, ইরাকি তুর্কি জনগন ।
২০০৩ সালে আমেরিকার নেতৃত্বে কতিপয় আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে । তারা এই যুক্তি দেখিয়ে আক্রমণ করে যে, সাদ্দাম ব্যাপক ধ্বংসাত্বক জীবানু অস্ত্র তৈরি করছেন (যদিও যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে এমন কোন অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায় নি )।
১৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেন আমেরিকান সেনাদের হাতে ধরা পড়েন । তার জন্মস্থান তিকরিতের এক ব্যাংকারে ।
পরবর্তিতে আমেরিকা তার বানানো ইরাকি সরকার দিয়ে সাদ্দাম হোসেনের বিচার করে । সাদ্দামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ । ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঈদের দিন ইরাকি সময় সকাল ৬.০৬ মিনিটে সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি কার্যকর হয় ।
বিচারকের চেয়ারে বসে রউফ আবদুর রহমান নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভেবেছিলেন । সাদ্দাম হোসেনকে আদালতে যে ভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন তার ভিডিও এখনো ইউটিউবে পাওয়া যায় । এই লোকের প্রহসনের রায়েই সাদ্দাম হোসেনকে ঈদের দিন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে হত্যা করা হয়েছিলো । নিয়তির কী নির্মম পরিহাস । তিন বছর আগে ২০১৪ সালে সুন্নিদের আক্রমণের সময় তিনি নর্তকীর পোষাক পড়ে পালানোর সময় ধরা পড়েন এবং বিদ্রোহীরা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

আমাদের দেশেও কয়েক বছর ধরেই বিচার বিচার খেলা চলছে । যারা বিচারকের আসনে বসে নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভাবছেন তাদের অবস্থাও এমন হতে পারে । কাজেই সাধু সাবধান !
Saddam Hussein
Former President of Iraq
Saddam Hussein Abd al-Majid al-Tikriti was the fifth President of Iraq, serving in this capacity from 16 July 1979 until 9 April 2003
Born: April 28, 1937, Al-Awja, Iraq
Died: December 30, 2006, Kadhimiya, Iraq
Height: 6′ 1″
Spouse: Samira Shahbandar (m. 1986–2006), Sajida Talfah (m. 1958–2006)
Movies: Long Days
Children: Uday Hussein, Raghad Hussein, Qusay Hussein, Rana Hussein, Hala Hussein

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর