মানহানি ও তথ্য প্রযুক্তি আইন
কেউ আপনার সম্পর্কে কুৎসা রটিয়েছে। লোকজনের কাছে আজেবাজে মন্তব্য করছে। আপনার মানসম্মান যেন ধুলোয় মিশে যেতে বসেছে। আপনি মানহানির শিকার। ভাবছেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু চাইলেই কি কারও বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠুকে দিতে পারবেন? আইন কিন্তু স্পষ্ট করে দিয়েছে মানহানির বিষয়টি। আইন মেনেই আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
মানহানির মানদন্ড:
দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানি কিসে হবে আর কিসে হবে না, তা বলে দেওয়া হয়েছে। এ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হবে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে।
এমনকি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন। আইনে এমন কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না। যেমন:
১. জনগণের কল্যাণে কারও প্রতি সত্য দোষারোপ করলে, তাতে মানহানি হবে না।
২. সরকারি কর্মচারীর সরকারি আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না।
৩. সরকারি বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে কোনো ব্যক্তির আচরণ নিয়ে মত প্রকাশ করলে মানহানি নয়।
৪. আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না।
৫. যেকোনো জনসমস্যা সম্পর্কে ও কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা মানহানির শামিল নয়।
৬. আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না।
৭. গণ-অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে কোনো মতামত প্রদান মানহানি নয়।
৮. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎ বিশ্বাসে কারও সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন: পুলিশের কাছে কারও ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ।
৯. কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারও স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়।
১০. জনকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারও সম্পর্কে কিছু বলা হলে, সেটিও মানহানি হবে না। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।
মানহানি যদি হয় অনলাইনেঃ
অনলাইনে ফেসবুক বা অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইটে যদি মানহানিকর ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয় তাহলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। তবে ৫৭ ধারাটি একটি অস্পষ্ট ধারা। কারণ এখানে মানহানি কীভাবে হবে, এর কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই, যা দণ্ডবিধিতে আছে।
আবার ৫৭ ধারায় শাস্তিও দণ্ডবিধির চেয়ে অনেক কঠোর। পুলিশ এ ধারার অভিযোগে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে। অর্থাৎ মানহানিকর বক্তব্য যদি অনলাইনের বাইরে হয় তাহলে এক ধরনের শাস্তি আর অনলাইনে হলে আরেক ধরনের শাস্তি। তাই ৫৭ ধারায় অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আইনের আশ্রয় লাভের উপায়ঃ
মানহানির অভিযোগে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের মামলা বা মোকদ্দমা দায়ের করার সুযোগ আছে। ফৌজদারি আদালতে নালিশি মামলা হিসেবে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। যিনি মানহানির শিকার তিনি আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে।
আদালত সমন জারি করবেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মানহানি মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দিলে আদালতে হাজির হয়ে জামিন না চাইলে সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অনলাইনে বা যেকোনো মাধ্যমে যদি মানহানির শিকার হন কেউ, তাহলে থানায় এজাহার দায়ের করতে হবে। সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। মানহানির কারণেÿ ক্ষতিপূরণ দাবি করে দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।
এ মোকদ্দমা দায়ের করতে হলে ক্ষতিপূরণের টাকার মূল্যের ওপর কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। তবে বিচারপদ্ধতি দেওয়ানি মোকদ্দমার মতোই। মামলায় বাদী জয়ী হলে বিবাদী থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ আদায় করতে পারেন।
(২)
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে।
কেউ আপনার সম্পর্কে কুৎসা রটিয়েছে। লোকজনের কাছে আজেবাজে মন্তব্য করছে। আপনার মানসম্মান যেন ধুলোয় মিশে যেতে বসেছে। আপনি মানহানির শিকার। ভাবছেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু চাইলেই কি কারও বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠুকে দিতে পারবেন? আইন কিন্তু স্পষ্ট করে দিয়েছে মানহানির বিষয়টি। আইন মেনেই আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
মানহানির মানদন্ড:
দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানি কিসে হবে আর কিসে হবে না, তা বলে দেওয়া হয়েছে। এ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হবে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে।
এমনকি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন। আইনে এমন কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না। যেমন:
১. জনগণের কল্যাণে কারও প্রতি সত্য দোষারোপ করলে, তাতে মানহানি হবে না।
২. সরকারি কর্মচারীর সরকারি আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না।
৩. সরকারি বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে কোনো ব্যক্তির আচরণ নিয়ে মত প্রকাশ করলে মানহানি নয়।
৪. আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না।
৫. যেকোনো জনসমস্যা সম্পর্কে ও কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা মানহানির শামিল নয়।
৬. আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না।
৭. গণ-অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে কোনো মতামত প্রদান মানহানি নয়।
৮. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎ বিশ্বাসে কারও সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন: পুলিশের কাছে কারও ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ।
৯. কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারও স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়।
১০. জনকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারও সম্পর্কে কিছু বলা হলে, সেটিও মানহানি হবে না। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।
মানহানি যদি হয় অনলাইনেঃ
অনলাইনে ফেসবুক বা অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইটে যদি মানহানিকর ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয় তাহলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। তবে ৫৭ ধারাটি একটি অস্পষ্ট ধারা। কারণ এখানে মানহানি কীভাবে হবে, এর কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই, যা দণ্ডবিধিতে আছে।
আবার ৫৭ ধারায় শাস্তিও দণ্ডবিধির চেয়ে অনেক কঠোর। পুলিশ এ ধারার অভিযোগে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে। অর্থাৎ মানহানিকর বক্তব্য যদি অনলাইনের বাইরে হয় তাহলে এক ধরনের শাস্তি আর অনলাইনে হলে আরেক ধরনের শাস্তি। তাই ৫৭ ধারায় অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আইনের আশ্রয় লাভের উপায়ঃ
মানহানির অভিযোগে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের মামলা বা মোকদ্দমা দায়ের করার সুযোগ আছে। ফৌজদারি আদালতে নালিশি মামলা হিসেবে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। যিনি মানহানির শিকার তিনি আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে।
আদালত সমন জারি করবেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মানহানি মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দিলে আদালতে হাজির হয়ে জামিন না চাইলে সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অনলাইনে বা যেকোনো মাধ্যমে যদি মানহানির শিকার হন কেউ, তাহলে থানায় এজাহার দায়ের করতে হবে। সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। মানহানির কারণেÿ ক্ষতিপূরণ দাবি করে দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।
এ মোকদ্দমা দায়ের করতে হলে ক্ষতিপূরণের টাকার মূল্যের ওপর কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। তবে বিচারপদ্ধতি দেওয়ানি মোকদ্দমার মতোই। মামলায় বাদী জয়ী হলে বিবাদী থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ আদায় করতে পারেন।
(২)
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন