সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খেতাব

খেতাব

আমার মনে আছে । এক সময় কুমিল্লার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন আবুল কালাম মজুমদার । যিনি কালাম মজুমদার নামেই পরিচিত ছিলেন । কম বয়সেই মারা গেছেন । এরশাদ সরকারের সময় খুব সম্ভবত ১৯৮৭ সালের কথা । কাজী জাফর আহমদ তখন বানিজ্য মন্ত্রী । সে সময় চিনির দাম খুব অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিলো । আমরা তখন ছাত্র । প্রায় প্রতিদিনই পূবালী চত্বরে বা টাউন হল মাঠে জনসভা থাকতো । আমি বসবাস করতাম কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পাশেই । বলতে গেলে ২৪ ঘন্টাই কুমিল্লা জেলার মূল কেন্দ্রে । কাজেই রাত ১২টা ১টায়ও টাউন হল মাঠে বা ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে রানীর দিঘীর পাড় আড্ডা মারা আবার কখনো ধর্ম সাগর পাড়ে । এটাই ছিলো স্বাভাবিক জীবন ! তো সেবার চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রয়াত কালাম মজুমদার চা দোকানে গিয়ে বলতেন, “এই, জাফর কম দিয়ে এক কাপ চা দে।”। চিনির অপর নাম একজন মন্ত্রীর নাম ! তো যেভাবে জিনিষ পত্রের দাম বাড়ছে মানুষ যদি পন্যের নামের সঙ্গে তাদের নাম জুড়ে দেয় ?
যেমন খাদ্য মন্ত্রনালয় গম আমদানী করে । আটার দাম বেড়ে গেলে কেউ যদি দোকানে গিয়ে বলে “এই, ১ কেজি কামরুল দেন”। খাদ্য মন্ত্রীর নাম কামরুল ইসলাম । চিনি আবার বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের । তেমনি চিনির দাম বেড়ে গেলে কেউ যদি দোকানে গিয়ে বলে” ১ কেজি তোফায়েল দেন” । বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ।
এখন থেকে মন্ত্রীদের নামে পন্যের নাম রাখা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে ছাত্র জীবনের কথা মনে পড়লো । ছাত্র জীবনে পহেলা বৈশাখে “খেতাব”দিতাম বন্ধুদের । গভীর রাতে আমরা কয়েকজন বসতাম । এলাকার আর বন্ধুদের নববর্ষে কি নাম দেয়া যায় ? আমরা কাগজ কলম নিয়ে সবার ক্যারেক্টার বিচার করতাম । সেই হিসেবে নাম দিতাম । তিন চার দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হতো । আমরা লিখে টাইপ করিয়ে নিতাম । প্রথম কয়েকদিন কেউ জানবে না এই খেতাব কে বা কারা দিয়েছে । তাই হাতের লেখা দেয়া যাবে না । টাইপের পর কয়েকশ ফটোকপি করতাম । বাংলা বছরের শেষ রাতে আমরা সন্তর্পণে প্রত্যেকের বাসার দরজার নিচ দিয়ে, দিয়ে দিতাম । আর কিছু কপি এলো মেলো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখতাম । এসব জিনিষ একজনে পেলেই কাফি । সে-ই দশজনকে বলবে । খেতাবে ভালোর সঙ্গে খারাপও থাকতো । কাজেই অনেকে আহত হবে, দুঃখিত হবে, রাগ করবে । যেমনঃ
১। মন্টু- বিশ্বপ্রেমিক ।
২। হিরো- শালার প্রেম।
৩। জাহাঙ্গীর - বড় ভাইদের কার্বন কপি।
৪। তাহের- মিরু তুমি কই?
৫। লিপি – কম দামে দুধ খেতে চান?
৬। ঝর্ণা – অস্ট্রেলিয়ান গাভী ।
এই জাতিয় খেতাব।
মন্ত্রীদের নামে এই সরকারের আমলেও খেতাব ছিলো । কয়েকবছর আগে যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন আবুল হোসেন । রাস্তাঘাটের কি যে বেহাল দশা ছিলো ! তখন গাড়ির হেলপারদের বলতে শুনেছি,”ওস্তাদ, ডাইনে কাইট্টা যাইয়েন । বাঁয়ে আবুল আছে।”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...