সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পাগলামি

পাগলামি

জেমিমার মায়ের সঙ্গে আমার মূলত বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিলো । একদিন কুমিল্লা বাসায় রাগ করে তিনি আমার গায়ের ব্লু শার্টটা দুই হাত দিয়ে বুক বরাবর ছিড়ে ফেলেছিলেন । সেই শার্ট আমি ঢাকা তাদের বাসায় নিয়ে সবাইকে দেখিয়েছিলাম । কিছুটা পাগলাটে ছিলাম বলে তারা আমাকে বেশ আদরই করতো ।
মাঝে মাঝে জেঠসের ছেলে মেয়েদের আমি ধমকও দিতাম । সবাইকে শুনিয়ে । আচ্ছা, শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে কোনো জামাই কি জেঠসের ছেলেমেয়েকে ধমকায় ? সেতুর ইমিডিয়েট বড় ভাই হাসিবের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিলো । শপিং এ গেলে সুন্দরী মেয়ে দেখলে হাসিব ভাই আমাকে খোঁচা মেরে দেখাতো । আমাকে বলতো, করিম ভাই, আপনার মতো মানুষ আমি একজনও দেখিনি । আপনি এক পিস । থাক সে সব ।
আজ জেমিমার নানার প্রসঙ্গ । একদিন কুমিল্লার বাড়িতে জেমিমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, আমি যে তোমাদের বাসায় এমন পাগলামি করি কেউ কিছু বলে না? সেতু বলেছিলো, একদিন কথা উঠেছিলো তোমার পাগলামি নিয়ে । আব্বা বলেছিলেন, থাক, ও পাগল-ছাগল টাইপ মানুষ । মেধাবীরা এমনি হয় । কিছু বলিস না । এমনি তো বেশ ভালো । অভিজাত পরিবারের ভদ্র ছেলে। বিদেশে ছিলো তাই এমন।
আমি সেতুকে বললাম, কী ? শ্বশুর মেয়ের জামাইকে পাগল-ছাগল বলেছে ? দাঁড়াও,তোমার বাবার নামে কারন দর্শাও নোটিশ জারি করবো । বলেই আমি কাগজ কলম নিয়ে বসলাম । জেমিমার মাকে বললাম, তুমি অন্য রুমে যাও । লেখার পর তোমাকে দেখানো হবে তোমার বাবাকে জারি করা নোটিশ ।
আমি লিখতে শুরু করলাম ।
বরাবর
মি. আবদুল হামিদ
বাড়ি # ১১/এ ( ষষ্ঠ তলা)
রোড # ০২
ব্লক # ডি
মিরপুর ০২
ঢাকা-১২১৬
বিষয়ঃ কারণ দর্শাও নোটিশ
জনাবেষু,
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়েছে যে, আপনি আপনার মেজো জামাই সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন । আপনি জামাতার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয় এমন মন্তব্য করে সম্পর্ককে অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন । আপনি আপনার সম্মানিত মেজো জামাইকে আড়ালে পাগল-ছাগল বলে সম্বোধন করেন । যা অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং অগ্রনযোগ্য বলে সর্বমহলে স্বীকৃত ।
আপনার উপর্যুক্ত আপত্তিজনক মন্তব্যের কারনে আপনার মেয়ে ওয়াহিদা সুলতানা ওরফে সেতুর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না তা এই পত্র প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে যথাযথ কারন দর্শানোর জন্য আপনাকে জানানো হলো । এই সময়ের মধ্যে আপনি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে একতরফাভাবে আপনার আদরের মেজো কন্যার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে জামাই বাবাজি বাধ্য হবে ।
আপনার বিশ্বস্ত মেজো জামাই
করিম চৌধুরী
কুমিল্লা ।
১০/০৭/২০০৮
এরপর সেতুকে ডেকে এই চিঠি দেখালাম । এবং বললাম, কাল সকালেই তা রেজিস্টার্ড ডাকযোগে তোমার বাবাকে পাঠানো হবে । আমার সম্পর্কে সেতুর ধারণা, আমি খেয়ালি চরিত্রের ফানি মানুষ । যে কোনো সময় মনে যা আসে তা করে ফেলি । সেতু এই শোকজ লেটার পড়ে, পারে না আমার পায়ে ধরে । অনুরোধ করে বলেছিলো, করিম, তোমার আল্লাহর দোহাই এই কাজটা তুমি করো না । আব্বা মনে কষ্ট পাবে । আমাদের ভুল বুঝবে । ভাববে, আমি বাসায় যা বলি সব বোধহয় করিমকে ওরা বলে দেয় । প্লিজ অন্য পাগলামি করো । এটা করো না । আমি কঠিনভাবে বললাম, এটাই হবে বেস্ট পাগলামি । রাতে শুয়ে শুয়ে আমাকে অনেক বুঝালো । কতো অনুনয় বিনয় !
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে বের হবো, সেতু জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাও ? বললাম, তোমার বাবাকে কারন দর্শানোর নোটিশ পোষ্ট করতে । এবার সে হুমকি দিয়ে বললো, আমিও এখন ঢাকা যাবো । আমি জানতে চাইলাম কেন ? সেতু বললো, চিঠিটা যাতে বাবার হাতে না পড়ে সেজন্য । এবার আমি বললাম, হামিদ সাহেবকে বলবা ভবিষ্যতে যেন এমন আর না করে । এই হলো আমার যতোসব পাগলামি ।
(নানার সঙ্গে জেমিমা ব্র‍্যাক রিজিওনাল অফিসে যা আমার বাড়ি থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে। ছবি: আমি)
April 15 at 11:06pm

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...