সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শবে বরাত

শবে বরাত

শবে বরাত শব্দের বিশ্লেষণের দিকে যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে দেখব, ‘শব’ শব্দটি ফারসি, যার অর্থ রাত আর ‘বরাত’ শব্দটি আরবি ‘বারাআত’ শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ বিমুক্তকরণ, সম্পর্ক ছিন্ন করা, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং শবে বরাত অর্থ বিমুক্তকরণ রজনী। যদিও আমাদের দেশে শবে বরাত অর্থ ভাগ্য রজনী। হাদিস শরিফে উল্লিখিত ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ই ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত বলে পরিচিত।
এখন আল কোরআনের আলোকে ‘শবে বরাত’-এর অনুসন্ধান করলে দেখব, কোরআনের কোথাও শবে বরাত বা মধ্য শাবনের রজনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উল্লেখ নেই। কিন্তু অতিরঞ্জিতকারীরা আল কোরআনের সুরা দোখানের ৩ নম্বর আয়াত দিয়ে শবে বরাত প্রমাণের ব্যর্থ প্রয়াস চালান। আয়াতটি হলো, ‘ইন্না আনজালনাহু ফি লাইলাতিম মোবারাকাতিন ইন্না কুন্না মুনজিরিন’, অর্থ : নিশ্চয়ই আমি এটি (আল কোরআন) এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি তো (জাহান্নাম থেকে) সতর্ককারী। অধিকাংশ আলিম বলেছেন, ‘লাইলাতুম মোবারাকাহ’ হলো ‘লাইলাতুল কদর’।
কেউ কেউ বলেছেন, তা হলো মধ্য শাবানের রজনী। তবে এ মতটি কোরআনের দলিল দ্বারাই বাতিল হয়ে যায়। কারণ, মহান রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন, রামাদান মাস, যার মধ্যে আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত।
এই আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাচ্ছে যে, কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় রামাদান মাস আর সুরা দোখানের এই আয়াতে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুম মোবারাকাহ’। কাজেই কেউ যদি মনে করে যে, এই লাইলাতুম মোবারাকাহ হলো রামাদান ছাড়া অন্য মাসে, তাহলে সে আল্লাহর নামে তাহা ডাহা মিথ্যা বানিয়ে বলল।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা কুরতুবি (র.) বলেন, ‘লাইলাতুম মোবারাকাহ হলো লাইলাতুল কদর।’
আল্লামা ইবনে কাসির (র.) বলেন, ইকরিমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে বরকতময় রাতটি শাবানের মধ্যম রজনী। এ মতটি একটি অসম্ভব ও অবাস্তব মত। কারণ, কোরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে যে, এ রাতটি রামাদানের মধ্যে।
এ সম্বন্ধে হাদিসও যথেষ্ট রয়েছে। আর কেহ কেহ ‘লাইলাতুম মোবারাকাহ’র তাফসির করেছেন শবে বরাত। যেহেতু শবে বরাতে কোরআন নাজিল হয়েছে বলে কোনো রেওয়ায়াত নেই এবং শবে কদরে নাজিল হয়েছে বলে আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু শবে বরাত বলে লাইলাতুম মোবারাকাহ-এর তাফসির করা শুদ্ধ নয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...