টাঙ্গাইলের মেয়েরা
আমার অনেক লেখায় অনেক সময় অনেকেই দুঃখ পেয়ে থাকতে পারেন । এ বিষয়ে আমার কৈফিয়ত, আমি কাউকে আঘাত করার জন্য লিখি না । আমি যা দেখেছি, আমার জীবনে যা ঘটেছে, তাই লিখি । এতে কেউ দুঃখ পেলে আমার কিছুই করার নেই । এসব কিছুই আমার জীবনের কথা । আমার ‘জীবনের কথা’ বলার অধিকার অবশ্যই আমার আছে । ফেসবুকে অনেক সময় দেখি, তরুণ তরুণীরা লিখে...
“কোন জেলার মেয়েরা কেমন ?”
সিনিয়র বলে এসব এড়িয়ে যাই । আজ এ প্রসঙ্গেই কিছু কথা । টাঙ্গাইল জেলার বন্ধুদের কাছে আমি মোটেও ক্ষমাপ্রার্থী নই এই নোটের জন্য । ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে আমি সিলেটে ছিলাম । আমার মন ভালো না বলে সুমি নামের একটি মেয়ে আমাকে সিলেট নিয়ে গিয়েছিলো । সেখানে থাকতেই একদিন “মৌচাকে ঢিল”এর সহকারি সম্পাদক সজীব ওনাসিস ফোনে আমাকে জানালেন, টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় “জিয়া হাসান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল”এ ইংরেজিতে দক্ষ একজন সুপারভাইজার খুঁজছেন স্কুলের মালিক জিয়া হাসান । জিয়া হাসানকে আমি চিনতাম লেখালেখির কারনে । তিনিও যায়যায়দিনে লিখতেন, আমিও । সেই হিসেবে তিনিও আমাকে না দেখেই চিনতেন । প্রায় ১০ বছর তিনি চ্যানেল আইতে খবর পড়েছেন । স্কুলটি ইংরেজি ভার্সনের । অনেকেই ইংলিশ ভার্সন আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন । ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বৃটেনের কারিকুলাম পড়ায় । ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেল । আর ইংলিশ ভার্সন স্কুল শিক্ষা বোর্ডের বই পড়ায় তবে তা ইংরেজিতে । স্কুলে পড়ার ভাষা ইংরেজি । জানতে চাইলাম, কাজ কী ? সজীব, জিয়া হাসানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিলেন ফোনে । তিনি জানালেন, শিক্ষকদের সুপারভাইস করা । অর্থাৎ তারা ঠিকমতো পড়াচ্ছেন কিনা, লেসন প্ল্যান ঠিক আছে কিনা, সময় মতো স্কুলে আসে কিনা, কখনো ক্লাশে গিয়ে শোনা তারা ঠিক উচ্চারণে ইংরেজি পড়ায় কিনা, এসব দেখা শোনা করা । জিয়া হাসান ঢাকা মোহাম্মদপুর থাকেন । তিনি মাসে একবার টাঙ্গাইল যান । স্কুলের টিচার সবাই ছাত্রছাত্রী । স্কুলের পাশেই সাদত ডিগ্রী কলেজ । এরা ওই কলেজেই পড়ে । সাদত ডিগ্রী কলেজ বললে তা শহরে মনে করার কোনো কারণ নেই । এটি গ্রামে অবস্থিত ।
স্কুলের ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই মেয়ে । জেমিমার মার সঙ্গে ডিভোর্সের পর আমি খুব মানসিক অশান্তিতে ছিলাম । তাই জায়গা পরিবর্তন করে মন ভালো করার কৌশল অবলম্বন করলাম । যথা সময়ে বিয়ে করলে ওই স্কুলের শিক্ষিকা মেয়েগুলো আমার মেয়ের মতোই হতো । কে কি ভুল করে তা ফোনে জিয়া হাসানকে ঢাকায় জানানোই ছিলো আমার প্রতিদিনের কাজ । অর্থাৎ আমি হলাম শিক্ষকেরও শিক্ষক । এটাই মেয়েগুলো সহ্য করতে পারতো না ।
টাঙ্গাইল জেলা শহর হলেও খুবই অনুন্নত । টাঙ্গাইল যদি বাংলাদেশ হয় তবে কুমিল্লা আমেরিকা । টাঙ্গাইল শহর ঘুরে আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম । বলতে গেলে কিছুই নেই । একটা ভালো শপিং সেন্টারও না । আমাকে জিয়া হাসান ১০ হাজার টাকা বেতন দেবেন আর খাওয়া থাকা ফৃ । তাঁর বাসায় দোতলায় আমার থাকার ব্যবস্থা । নিচ তলায় স্কুল । আমি ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ সিলেট ছেড়ে টাঙ্গাইল গেলাম । ২৪ দিন পর একদিন জিয়া হাসান ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল গেলেন । সন্ধ্যায় আমার রুমে এসে তিনি বললেন, করিম ভাই, আপনাকে যে কিভাবে বলি, আমার খুব লজ্জা লাগছে কারন আমি আপনাকে চিনি । আপনি আমারো সিনিয়র । মেয়েগুলো যে আমার স্কুলটাকে জিম্মি করে রেখেছে তা আজ বুঝলাম । আমার চোখ খোলে গেছে । এতোদিন আমি অন্ধ ছিলাম । আপনি কিছু মনে করবেন না । মেয়েগুলো আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যা সত্য নয় । কিন্তু স্কুল চালাতে গেলে আমাকে তাদের কথা শুনতে হবে । আমি জানতে চাইলাম, কী অভিযোগ ? তিনি বললেন ১৯টা মেয়ে একযোগে বলেছে, আপনি নাকি ওদের দিকে কেমন করে তাঁকান !
আমি হেসে বললাম, ওরাতো আমার মেয়ের বয়সি হবে । তাছাড়া জাপান, ইউরোপ, আমেরিকার মেয়ে দেখে এসব গ্রামের মেয়েকে আমার পছন্দই হয় না । নতুন এসেছি বলে ওদের চাল চলন, কথা বলার ভঙ্গী, এখানের কালচার এসব ফলো করি ।
আপনি ওদের বললেন না যে আমাকে রেখেছেন তাদের দেখার জন্যই ? তাও বলতে পারতেন, তোমরা যদি উনার দিকে না তাঁকাও তবে দেখলে কিভাবে যে উনি তোমাদের দিকে তাঁকিয়ে থাকে ? জিয়া হাসান অসহায়ের মতো বললেন, ভাই আমি নিরুপায় । এনি নামের একটি মেয়ে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো । উল্লেখ্য যে, তিন জন পুরুষ টিচার ছিলো । ওরাও ছাত্র । একজন রুবেল, একজন মাইদুল (এখন মালয়শিয়া আছে) । দুজনই আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে । আরেকজনের নাম মনে নেই । অত্যন্ত ভদ্র ছিলো ছেলেগুলো । রুবেল আমার পোষ্টে ‘স্যার’বলে কমেন্ট করতো । একদিন আমাকে স্যার না বলার জন্য ওকে বলেছিলাম । পরদিনই আমি টাঙ্গাইল ছেড়ে আসি । সেই থেকে টাঙ্গাইলের মেয়েদের সম্পর্কে আমার নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছিলো যা আজো আছে ।
আমার অনেক লেখায় অনেক সময় অনেকেই দুঃখ পেয়ে থাকতে পারেন । এ বিষয়ে আমার কৈফিয়ত, আমি কাউকে আঘাত করার জন্য লিখি না । আমি যা দেখেছি, আমার জীবনে যা ঘটেছে, তাই লিখি । এতে কেউ দুঃখ পেলে আমার কিছুই করার নেই । এসব কিছুই আমার জীবনের কথা । আমার ‘জীবনের কথা’ বলার অধিকার অবশ্যই আমার আছে । ফেসবুকে অনেক সময় দেখি, তরুণ তরুণীরা লিখে...
“কোন জেলার মেয়েরা কেমন ?”
সিনিয়র বলে এসব এড়িয়ে যাই । আজ এ প্রসঙ্গেই কিছু কথা । টাঙ্গাইল জেলার বন্ধুদের কাছে আমি মোটেও ক্ষমাপ্রার্থী নই এই নোটের জন্য । ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে আমি সিলেটে ছিলাম । আমার মন ভালো না বলে সুমি নামের একটি মেয়ে আমাকে সিলেট নিয়ে গিয়েছিলো । সেখানে থাকতেই একদিন “মৌচাকে ঢিল”এর সহকারি সম্পাদক সজীব ওনাসিস ফোনে আমাকে জানালেন, টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় “জিয়া হাসান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল”এ ইংরেজিতে দক্ষ একজন সুপারভাইজার খুঁজছেন স্কুলের মালিক জিয়া হাসান । জিয়া হাসানকে আমি চিনতাম লেখালেখির কারনে । তিনিও যায়যায়দিনে লিখতেন, আমিও । সেই হিসেবে তিনিও আমাকে না দেখেই চিনতেন । প্রায় ১০ বছর তিনি চ্যানেল আইতে খবর পড়েছেন । স্কুলটি ইংরেজি ভার্সনের । অনেকেই ইংলিশ ভার্সন আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন । ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বৃটেনের কারিকুলাম পড়ায় । ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেল । আর ইংলিশ ভার্সন স্কুল শিক্ষা বোর্ডের বই পড়ায় তবে তা ইংরেজিতে । স্কুলে পড়ার ভাষা ইংরেজি । জানতে চাইলাম, কাজ কী ? সজীব, জিয়া হাসানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিলেন ফোনে । তিনি জানালেন, শিক্ষকদের সুপারভাইস করা । অর্থাৎ তারা ঠিকমতো পড়াচ্ছেন কিনা, লেসন প্ল্যান ঠিক আছে কিনা, সময় মতো স্কুলে আসে কিনা, কখনো ক্লাশে গিয়ে শোনা তারা ঠিক উচ্চারণে ইংরেজি পড়ায় কিনা, এসব দেখা শোনা করা । জিয়া হাসান ঢাকা মোহাম্মদপুর থাকেন । তিনি মাসে একবার টাঙ্গাইল যান । স্কুলের টিচার সবাই ছাত্রছাত্রী । স্কুলের পাশেই সাদত ডিগ্রী কলেজ । এরা ওই কলেজেই পড়ে । সাদত ডিগ্রী কলেজ বললে তা শহরে মনে করার কোনো কারণ নেই । এটি গ্রামে অবস্থিত ।
স্কুলের ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই মেয়ে । জেমিমার মার সঙ্গে ডিভোর্সের পর আমি খুব মানসিক অশান্তিতে ছিলাম । তাই জায়গা পরিবর্তন করে মন ভালো করার কৌশল অবলম্বন করলাম । যথা সময়ে বিয়ে করলে ওই স্কুলের শিক্ষিকা মেয়েগুলো আমার মেয়ের মতোই হতো । কে কি ভুল করে তা ফোনে জিয়া হাসানকে ঢাকায় জানানোই ছিলো আমার প্রতিদিনের কাজ । অর্থাৎ আমি হলাম শিক্ষকেরও শিক্ষক । এটাই মেয়েগুলো সহ্য করতে পারতো না ।
টাঙ্গাইল জেলা শহর হলেও খুবই অনুন্নত । টাঙ্গাইল যদি বাংলাদেশ হয় তবে কুমিল্লা আমেরিকা । টাঙ্গাইল শহর ঘুরে আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম । বলতে গেলে কিছুই নেই । একটা ভালো শপিং সেন্টারও না । আমাকে জিয়া হাসান ১০ হাজার টাকা বেতন দেবেন আর খাওয়া থাকা ফৃ । তাঁর বাসায় দোতলায় আমার থাকার ব্যবস্থা । নিচ তলায় স্কুল । আমি ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ সিলেট ছেড়ে টাঙ্গাইল গেলাম । ২৪ দিন পর একদিন জিয়া হাসান ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল গেলেন । সন্ধ্যায় আমার রুমে এসে তিনি বললেন, করিম ভাই, আপনাকে যে কিভাবে বলি, আমার খুব লজ্জা লাগছে কারন আমি আপনাকে চিনি । আপনি আমারো সিনিয়র । মেয়েগুলো যে আমার স্কুলটাকে জিম্মি করে রেখেছে তা আজ বুঝলাম । আমার চোখ খোলে গেছে । এতোদিন আমি অন্ধ ছিলাম । আপনি কিছু মনে করবেন না । মেয়েগুলো আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যা সত্য নয় । কিন্তু স্কুল চালাতে গেলে আমাকে তাদের কথা শুনতে হবে । আমি জানতে চাইলাম, কী অভিযোগ ? তিনি বললেন ১৯টা মেয়ে একযোগে বলেছে, আপনি নাকি ওদের দিকে কেমন করে তাঁকান !
আমি হেসে বললাম, ওরাতো আমার মেয়ের বয়সি হবে । তাছাড়া জাপান, ইউরোপ, আমেরিকার মেয়ে দেখে এসব গ্রামের মেয়েকে আমার পছন্দই হয় না । নতুন এসেছি বলে ওদের চাল চলন, কথা বলার ভঙ্গী, এখানের কালচার এসব ফলো করি ।
আপনি ওদের বললেন না যে আমাকে রেখেছেন তাদের দেখার জন্যই ? তাও বলতে পারতেন, তোমরা যদি উনার দিকে না তাঁকাও তবে দেখলে কিভাবে যে উনি তোমাদের দিকে তাঁকিয়ে থাকে ? জিয়া হাসান অসহায়ের মতো বললেন, ভাই আমি নিরুপায় । এনি নামের একটি মেয়ে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো । উল্লেখ্য যে, তিন জন পুরুষ টিচার ছিলো । ওরাও ছাত্র । একজন রুবেল, একজন মাইদুল (এখন মালয়শিয়া আছে) । দুজনই আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে । আরেকজনের নাম মনে নেই । অত্যন্ত ভদ্র ছিলো ছেলেগুলো । রুবেল আমার পোষ্টে ‘স্যার’বলে কমেন্ট করতো । একদিন আমাকে স্যার না বলার জন্য ওকে বলেছিলাম । পরদিনই আমি টাঙ্গাইল ছেড়ে আসি । সেই থেকে টাঙ্গাইলের মেয়েদের সম্পর্কে আমার নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছিলো যা আজো আছে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন