সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুজিব থেকে হাসিনা

মুজিব থেকে হাসিনা!!

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন হয় মার্চ, ১৯৭৩ সালে। ব্যক্তিগত আগ্রহ-অনাগ্রহের ব্যাপার নয়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয় ওই নির্বাচনে। মাস খানেক ঘুম হারাম। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগে অন্যান্য নেতার সঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছি। হেলিকপ্টারে তাঁর সঙ্গে সফর করার সময় ওই কয়েক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, যুগান্তর, পিটিআই প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকও আমাদের সঙ্গে থাকতেন। খুব বড় হেলিকপ্টার। কোনো অসুবিধা হতো না। যেখানেই যেতাম, আমাদের খাওয়াদাওয়ার খোঁজ না নিয়ে বঙ্গবন্ধু খেতে বসতেন না। ভোটের দুই দিন আগে তাঁর সঙ্গে শেষ নির্বাচনী প্রচারণায় যাই মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে। সংক্ষিপ্ত সভা শেষে স্থানীয় নেতা হাবু মিয়া ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হাস্যরস করছিলেন। তিনি তাঁদের লক্ষ করে আমাদের দেখিয়ে বললেন, ‘ওদের খাঁটি ছানার মিষ্টিমণ্ডা কিছু খাওয়াও। তা না হলে কিসের মধ্যে কী লেখে।’ হেলিকপ্টারে ওঠার সময় এসডিও (মহকুমা প্রশাসক) হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড-এর তুষার পণ্ডিত ও আমার হাতে কয়েক হাঁড়ি মিষ্টি তুলে দিলেন।
নির্বাচনটি ভালোই হয়েছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনেই বাঙালি প্রথম পরিচিত হলো দুটি শব্দের সঙ্গে: ব্যালট বাক্স ছিনতাই। ছাত্রজীবনে আমরা তিনটি অভিধান অনবরত ঘাঁটতাম—এ টি দেবের বাঙ্গালা অভিধান, রাজশেখর বসুর চলন্তিকা এবং কাজী আবদুল অদুদের ব্যবহারিক শব্দকোষ। এগুলোয় ছিনতাই শব্দটি ছিল না। কারচুপি শব্দটিও ছিল কি না, বলতে পারব না। কিন্তু বঙ্গীয় নির্বাচনের সঙ্গে ছিনতাই ও কারচুপি শব্দ দুটি একেবারে অবিচ্ছেদ্য হয়ে গেল।
প্রথম বাংলাদেশি নির্বাচনটি কলঙ্কমুক্ত হতে পারল না। বঙ্গবন্ধু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডেপুটি বঙ্গবন্ধু হতে চাইলেন অনেকে। পাঁচ প্রার্থীর ক্যাডারদের হাতে চায়নিজ রাইফেলের নল দূর থেকে তাক করা দেখে দ্বিতীয় কেউ মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে পোঁ দৌড়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন দেখা গেল আরও পাঁচজনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অর্থাৎ ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। একদিন যে বাংলার মাটিতে দেড় শতাধিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন, সে পথ দেখিয়ে দেয় প্রথম নির্বাচনটিই। কয়েকজন বিজয়ী প্রার্থীকেও পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করতে বাধ্য করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ন্যাপের আলীম আল রাজী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাসদের মেজর এম এ জলিল, মস্কো ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ প্রমুখ।

সহজিয়া কচরা নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বাপ
সৈয়দ আবুল মকসুদ
৭ জানুয়ারি ২০১৪

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর