সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুমিল্লার ইতর



কুমিল্লার ইতর

স্কুল কলেজ জীবন থেকেই শোনে এসেছি কয়েকটি বিশেষ জেলার লোক কুমিল্লার লোকদের 'ইতর' বলে যা নিগেটিভ বা ঋণাত্মক অর্থে ব্যবহার হয়। গ্রেটার নোয়াখালীর লোকেরাই কুমিল্লার লোকদের 'ইতর' বলে বেশি । দুই প্রতিবেশি জেলার মাঝে কেন এই বিরোধ তা আমার বোধগম্য নয় । আমাদের স্কুল কলেজ জীবনে ফেনি,লক্ষীপুর জেলা ছিলো না । গ্রেটার নোয়াখালীর অংশ ছিলো। ব্রাম্মনবাড়িয়া, চাঁদপুরও কুমিল্লার সাব ডিভিশন ছিলো। এরশাদ সাহেব যখন ১৯ জেলাকে ৬৪ জেলা করলেন তখন চাঁদপুর, ব্রাম্মনবাড়িয়াও জেলার মর্যাদা পায়। আর গ্রেটার নোয়াখালী ভেঙে ফেনি ও লক্ষীপুর জেলা হয়। যদিও ফেনি,লক্ষীপুরের ভাষাও নোয়াখালীর ভাষা। 'আঁই কিচ্চি' টাইপ। কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধু বলেছে, নোয়াখালী, সিলেট আর চট্রগ্রামের ভাষা শোনলে ইচ্ছা করে মাতৃভাষার জন্য আবার যুদ্ধ করি। আমি আমার 'ভেলভেট প্রতারণা ' লেখায় লিখেছিলাম,
" বাংলা ভাষাটা নোয়াখালী গিয়ে আহত হয়েছে, সিলেট গিয়ে নিহত হয়েছে,আর চট্রগ্রাম গিয়ে লাশটাই গায়েব হয়ে গেছে।"
আমি বিদেশে অনেক জেলার লোকের সঙ্গে চলেছি। বিদেশে জেলার চেয়ে দেশ বড় হয়ে দেখা দেয় । আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমার মাঝে আঞ্চলিকতা নেই। আমরা এক দেশের মানুষ। নোয়াখালীর অনেক লোকের সঙ্গে আমার অনেক আন্তরিক সম্পর্ক ছিলো দেশে বিদেশে। কিন্তু নোয়াখালীর লোকেরা যে কুমিল্লার লোকদের দুই চোখে দেখতে পারে না এটা প্রমাণিত সত্য। কিছু ব্যতিক্রম আছে তবে ব্যতিক্রম উদাহরন নয় ।
নোয়াখালীর লোকেরা বৃটিশ আমলে মহাত্মা গান্ধীর জনসভায় তার ছাগল চুরি করেছিলো । সেই থেকে ওই জায়গার নাম 'ছাগলনাইয়া'। এটা দুনিয়ার সবাই জানে। এটা নিয়ে অনেকে নোয়াখলীর লোকদের খোঁটা দেয় ।তবু আমি বা আমরা তাদের আন্তরিকভাবেই ভালোবাসি।
এইতো গত বছরও নোয়াখালীর এক দম্পতির সঙ্গে আমার বিশেষ সখ্য ছিলো। তাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো। ভদ্রলোকের স্ত্রী দেড় বছর আমার সব পোষ্টে কমেন্ট করতেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমার এক পোষ্টেে ভদ্রলোকের স্ত্রী কমেন্ট করেছিলেন। আমি কমেন্টের উত্তর দিয়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ভদ্রমহিলার কমেন্ট টা নেই!!! তাদের বাড়ি নোয়াখালী হলেও থাকেন ঢাকা মোহাম্মদপুর।
আমি খুবই মন:ক্ষুন্ন হলাম। এটা কোন ধরনের ছোটলোকামি ? আমি জানতাম,তিনি তার স্ত্রীর পাসওয়ার্ড জানেন। তার স্ত্রী ঘুমিয়ে গেলে ওই আকামটা উনি করেন? আমার উত্তরটা তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে কমেন্টটা না দেখে আমার রক্ত মাথায় উঠে যায়। এটা কেমন ফাজলামি ? ভদ্রলোকের ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিলো। আমি উত্তেজিত হয়ে তাকে কিছু এসএমএস করি।
১। ফাজলামি করার আর জায়গা পাও না? আমি কি তোমার বউয়ের সঙ্গে প্রেম করি নাকি ? আমার রুচি এতো খারাপ না। তোমার স্ত্রীর চেয়ে লক্ষ কোটিগুন বেশি সুন্দরী মেয়েরা করিমের পিছে পিছে ঘুরেছে এখনো ঘুরে। ফাজিল কোথাকার।
২। লেখাপড়া কিছু করছো? তোমার প্রোফাইলে দেখলাম জগা বাবুর কলেজে পড়ছো। তোমার মানসিকতা বড় হলেই আর কতো হবে?
এমন আরো কিছু কথা। রাতের বেলা তিনি আমাকে আক্রমণাত্মক অনেকগুলো এসএমএস করেছিলো। তার ভাষায় " আমি নিমক হারাম, ( তারা স্বামী-স্ত্রী কয়েকদিন আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছিলো। সেই খাবারের খোটা!) তিনি আরো লিখেন 

" তুই কুমিল্লার ইতর। আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম।"
 ইত্যাদি। সেই থেকে তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক শেষ। যদিও তার স্ত্রী এক অসাধারণ মহৎপ্রাণ মহিলা। ফেনি, নোয়াখালীর মেয়েরা অনেক ভালো।
টাকার জোরে ওই ভালো আর সুন্দরী মেয়েটাকে সে বিয়ে করেছে। তার কোনো যোগ্যতাই নেই। না চেহারাচুরত সুন্দর, না হাইলি এডুকেটেড। যোগ্যতা শুধু তার বাপের অবৈধ টাকা আছে। বাড়ি,গাড়ি আছে। টাকা,বাড়ি, গাড়ি থাকলে অনেক মেয়েকেই কিনে নেয়া যায়। অনেক মেয়ের ফ্যামিলিও টাকার কাছে তাদের মেয়েকে বিক্রি করে দেয়। এসব কথা তার এলাকার লোকই আমাকে বলেছে। ছেলেটি তার স্ত্রীর ক্লাসমেট ছিলো। এখন দুবাই আছে। নাম মামুন হাসান আল রাজী। বাড়ি চাটখিলের রামদেবপুর গ্রামে।
কুমিল্লার মানুষকে ইতর কেন বলা হয় তার একটা ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। বৃটিশ আ

মল থেকেই কুমিল্লার মানুষেরা খুব বুদ্ধিমান ছিল,তাই বৃটিশরা তাদেরকে বলতো ITOR ( ইতর)।
বৃটিশ শাসন আমলে অফিসের লোকজনের মধ্যে কুমিল্লার মানুষেরা ছিল খুবই দক্ষ ও বিচক্ষণ,তাই বৃটিশরা এই অঞ্চলের লোকদের মধ্যে চারটি গুন দেখতে পেয়েছিলেন,
Intellectuality =(বোধশক্তি)
Talent =(প্রতিভা)
Obedience =(বাধ্যতা)
Reliability =(বিশ্বাসযোগ্যতা)
এই চারটি শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে তৈরি করে তাদেরকে ITOR বা ইতর বলে সম্বোধন করতো,(আর যারা মূর্খ তারা না জেনেই কুমিল্লার ইতর বলে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে) তাছাড়া কুমিল্লার লোকেরা রাজনৈতিকভাবে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতো এবং সারা বিশ্বকে রাজনৈতিক সুতায় বদ্ধ করে সুসংগঠিত করতো তাদের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে,তাই [ ITOR ] ইতর কোন উপহাস নয়,ইতর ভালবাসার,মর্যাদার ও মূল্যবোধের অহংকার,সুতরাং আমরা কুমিল্লাবাসি ইতর নিয়ে গর্ববোধ করি।
( এবার এসএসসি পরীক্ষায়ও নোয়াখালী, ফেনি লক্ষীপুর, চাঁদপুর,ব্রাম্মনবাড়িয়াকে পেছনে ফেলে কুমিল্লা শীর্ষে অবস্থান করছে।)

May 16 , 2017 at 6:10pm 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর