সুমি
চার বছর আগে । সিলেটের চা বাগানে । ছবিটি তুলেছিলো আমার জুনিয়র বন্ধু সুমি । মেয়েটি আমাকে খুব ভালোবাসতো । পত্রিকায় আমার লেখা পড়েই ফোন করেছিলো । কথায় কথায় আন্তরিকতা গড়ে উঠে । তখন আমি রেইস কোর্স থাকতাম । রেইস কোর্সে আমার বন্ধুরাও এই ঘটনা জানতো । আমার মন খারাপ জেনে সে আমাকে সিলেট নিয়ে গিয়েছিলো । নেয়া বলতে আমাকে অনুরোধ করেছিলো যেন সিলেট যাই । আমি সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলাম । তার আগে সে আমাকে তাদের বাসায় যেতে অনুরোধ করেছিলো । আমি তার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেছিলো, তার বাবা-মা, বড় ভাই-ভাবী, দুই ছোট বোন, এক ছোট ভাই নিউ ইয়র্ক থাকেন । দেশে সে, তার বড় বোন ,আর এক ছোট ভাই আছে । তারাও ইমিগ্রেশন ফরমালিটিস শেষ হলে আমেরিকায় চলে যাবে ।
২০১২ সালের মাঝামাঝি একদিন সুমি ফোন করে তার বড় আপাকে দিলো । আপা আমাকে তাদের বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন । ১৯৮১ সালে একবার সিলেট গিয়েছিলাম কুমিল্লা জেলা পুলিশের ফুটবল টিমের সঙ্গে । এক রাত ছিলাম । খেলা শেষে আবার চলে আসি । একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আমার সখ্য ছিলো । আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম । এরপর আর সিলেট যাইনি । তো সুমি ও তার বড় বোনের অনুরোধে ২০১২ সালের জুলাই মাসে সিলেট গেলাম । ট্রেন জার্নি আমি সব সময়ই ইনজয় করি । তবে তা হতে হবে প্রথম শ্রেণিতে । কুমিল্লা থেকে ট্রেনে সিলেট গেলাম । সন্ধ্যা নেমে গেছে তখন । ফোনে পরিচিত । তাও একটি মেয়ের বাসায় বাসায় যাচ্ছি ! কি নাটকীয় আমার জীবন ! আমার অবশ্য ডর ভয় নেই পরাণে । ভুত পেত্নিও বিশ্বাস করি না । সিলেট স্টেশনে নেমে সুমিকে ফোন করলাম । অবশ্য ট্রেনে থাকতে ১০/১২ বার কথা হয়েছে । সুমি বাসার লোকেশন জানালো । সিলেট শহরের অভিজাত এলাকা হাউজিং স্টেটে তাদের বাসা । রেলওয়ে স্টেশন থেকে রিকশায় যাওয়া যাবে । সুরমা বৃজ পার হয়ে জিন্দাবাজার হয়ে হাউজিং পৌঁছলাম । সিলেটের কিচ্ছু চিনি না । ভাষাও জানি না । হাউজিংয়ের সবগুলো বাসাই অভিজাত । আমাকে বাসার যে নাম্বার সুমি দিয়েছিলো ওই নাম্বারের বাসার সামনে রিকশা যেতেই সুমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে রিকশাকে বললো, এই এখানে, এখানে । অভিজাত একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। প্রথম আমি সুমিকে দেখলাম ! লাল সবুজের কম্বিনেশন থ্রি পিস পরা, ফর্শা গায়ের রঙ, আকর্ষনণীয় ফিগার । লেখকের দৃষ্টিতে নারী দেহের সৌন্দর্যের আরো বর্ণানা দেয়া গেলেও এখানে এর বেশি দেয়া সম্ভব নয় কারণ সুমি আমার অনেক ছোট । ওই সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ২৬ বছর । সুমি তখনো স্পিনস্টার ( Spinster) ।
সুমির সঙ্গেই তাদের বাসায় ঢুকলাম । আমার সঙ্গে একটা ট্র্যাভেল ব্যাগে টুথপেস্ট, ব্রাশ, সেভিং কিটস, টাওয়েল ও প্রয়োজনীয় কাপড় । আরেকটা ব্যাগে ল্যাপটপ । খুব গরম ছিলো । আমি গোসল করার কথা বলতেই সুমি নিজে আমাকে বাথরুমে নিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দিলো । আমি গোসল সেরে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পড়ে বসলাম লিভিং রুমে । এবার চা বিস্কিট ট্রেতে নিয়ে সুমির বড় বোন এলেন । আমি উনাকে দেখে খুবই বিস্মিত হলাম ! এতো সুন্দর নারী আমি জীবনে খুব কম দেখেছি । খুবই ফর্শা । হাতগুলোতে উনার নীলাভ রগ দেখা যায়!!! এতোই ফর্শা । শুধু ফর্শা নয়, ডাকসাইটে সুন্দরী । দু'বাচ্চার মা । আমি দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিলাম । এরপর এলেন সুমির খালা আর খালাতো বোন রেবি । পরিচিত হলাম । কথা বললাম । সুমির ছোট ভাই শহিদ এলো সব শেষে । আমিতো হরবর করে সব কথাই বলে ফেলি । নিজের সম্পর্কেও তাই বললাম । তিনদিন সুমিদের বাসায় ছিলাম । একেবারেই আপনজনের মতো । একদিন সুমির দুই বোন নিউ ইয়র্ক থেকে ফোন করলে সুমি আমার সঙ্গেও কথা বলিয়ে দেয় তার দু'বোনকে । এরপর চলে আসি । সুমি নিয়মিত ফোন করে আমার খোঁজ নিতো ।
ওই সময় মানে ২০১২ সালে আমার খুব মন খারাপ ছিলো । একদিন সুমি অনুরোধ করে আমাকে বলে, করিম ভাই, আপনি সিলেট চলে আসেন । আমি কাছে থেকে আপনার মন ভালো করে দেবো । আমিও বোকার মতো রাজি হয়ে যাই । একা মানুষ । কেউ আদর করে ডাকলে যেতে কোনো বাধা নেই । সবচেয়ে বড় কথা, আমার মনে কোনো অপরাধবোধ নেই ।
কাপড় চোপড়, বই পুস্তক নিয়ে চলে গেলাম সিলেট । উঠলাম দরগা গেইটের পাশে এক হোটেলে । সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে বইগুলো পার্সেল করেছিলাম। আমাকে নিয়ে দুইদিন ঘুরে সুমি খাদিম পাড়া একটা বাসা ভাড়া করলো । আমাকে তিন মাস সিলেটে রেখে দিয়েছিলো সুমি ! কি আশ্চার্য !
খাদিম পাড়া শাহ পরাণ মাজারের কাছে । বেশ নিরিবিলি জায়গা । সুমিই জীবনে প্রথম আমাকে জাফলং নিয়ে যায় ! জাফলং গিয়ে দেখলাম কিভাবে মাটির নিচ থেকে পাথর উঠানো হয় । এটিও এক আশ্চর্য । আমি নাম দিয়েছিলাম পাথরের খনি। প্রতিদিন সুমি আমার কাছে ওই বাসায় যেতো । তিন চার ঘন্টা থাকতো । ওই বাসার পাশেই আরেকটা সিলেটি বাসায় আমাকে তার আত্নিয় পরিচয় দিয়ে তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো অন পেমেন্টে । আমার জীবনের অনেক কথাই গল্পের চেয়েও বিস্ময়কর ! Truth is stranger than fiction. সত্য কল্পনার থেকেও অদ্ভুত । এই কথাটি কে লিখেছিলেন জানি না । একথা মনে হয় আমার মতো আরো অনেক মানুষের জন্যই লিখেছিলেন ।
কতো জায়গায় ওকে নিয়ে ঘুরেছি ! একদিন সুমি আমাকে বলেছিলো " করিম ভাই, আপনাকে বিয়ে করতে আমার ইচ্ছা করে ।" আমি ধমক দিয়ে বলেছিলাম, তোমার বয়স কম । এসব আবেগী কথা । শাওন টাইপ কথা বলবা না । আমি হুমায়ুন আহমেদ না । আমি তোমার অনেক বড় বয়সে । দ্বিতীয়বার একথা বললে আমি চলে যাবো।
এতো ঘনিষ্ঠতার কথা শোনে অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে।
সৎভাবে বলছি, ওর সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না । ও আমার ২৪ বছরের ছোট । জিন্দাবাজার 'রাজা ম্যানশন' এর পাশে "পানসি" রেস্তোরায় ওকে নিয়ে প্রায়ই খেতাম । বিল সুমিই দিতো । পানসি খুব ভালো মানের রেস্তোরা । খাবারের মানও খুব ভালো । প্রায় ৫০ রকমের ভর্তা হয় প্রতিদিন । এর একেবারেই পাশে হাসন রাজার বাড়ি যা এখন "রাজা মিউজিয়াম "। সেখানেও বেশ কয়েকদিন গিয়েছিলাম ।
আমরা প্রায়ই যেতাম বলে পানসির ম্যানেজার, বয় সকলেই আমাদের মুখ চিনতো । তখন আমি আরো জোয়ান ছিলাম । ছয় বছর আগের কথা । একদিন সুমি আগে চলে গিয়েছিলো রেস্টুরেন্টে । পানসির ম্যানেজার নাকি ওকে বলেছিলো, "আপা, দুলাভাই অনেক সুন্দর আর স্মার্ট "। খেতে খেতে সুমি এই কথা বলে হেসে কুটি কুটি যাচ্ছিলো !
একদিন সুমি আমাকে গৌর গোবিন্দ টিলায় নিয়ে গিয়েছিলো । খুব সুন্দর জায়গা । ও আমাকে কিছু সিলেটি ভাষাও শিখিয়েছিলো । এমসি কলেজ, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, বন্দর, রাগিব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন, শাহ পরান মাজার, হযরত শাহজালাল মাজারের পেছনে অনেক সাহাবির কবর সুমি আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছিলো । জিন্দাবাজার, মিরবক্স টোলাসহ সিলেট শহরের কতো কিছু সুমি আমাকে চিনিয়েছিলো !
ও আমাকে তীব্রভাবে ভালোবাসতো । আমি চাইলেই ওর সঙ্গে যে কোনো ধরনে
র সম্পর্ক করতে পারতাম । কিন্তু আমি ভালোবাসাকে নিষ্কলুষ রাখতে সব সময় বদ্ধপরিকর ।
আমাকে অনেক গিফট দিয়েছিলো সুমি । ওকে নিয়ে দরগা গেইটের ( এই নামটিও তখন শিখেছিলাম- হযরত শাহজালাল মাজারের প্রধান গেইট) দুই পাশের রেস্তোরাগুলোতে বেশি সময় কাটাতাম । আজ অনেকদিন হয়, তিন বছর সুমি ফোন করে না । গত বছর সুমির ছোট ভাই ফোনে জানালো, সুমির বিয়ে হয়েছে । তিন দিন পর সুমি ফোন করে কেঁদে কেঁদে বললো, আমাকে তুমি ভুল বুঝো না । এই প্রথম সুমি আমাকে 'তুমি' বললো । আমি হাসতে হাসতে তাকে অভিনন্দন জানালাম ।
( আমার গল্প পড়ে অনেকেই অবাক হতে পারেন । এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই । ফেসবুকে পরিচিত হয়েও কতোজন আমাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসেছিলেন ! আমি ফেসবুকে তাদের ছবিসহ লিখেও তা জানিয়েছিলাম বন্ধুদের । এইতো এক বছর আগেও কাবেরী মির্জা নামের নোয়াখালীর এক বন্ধু তার স্বামী মির্জা মামুনসহ আমার এই বাসায় এসে আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকদিন । পরে হয়তো কোনো পারিবারিক কারনে দূরে সরে গেছেন । তবু তাদের সকলের এই ভালোবাসা আমি আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই স্মরন রাখবো । গত বছরের এই পোষ্টে কাবেরীর কমেন্টও আছে! আজ এই দিনে আমি তার লিস্টে ব্লক!!! )
চার বছর আগে । সিলেটের চা বাগানে । ছবিটি তুলেছিলো আমার জুনিয়র বন্ধু সুমি । মেয়েটি আমাকে খুব ভালোবাসতো । পত্রিকায় আমার লেখা পড়েই ফোন করেছিলো । কথায় কথায় আন্তরিকতা গড়ে উঠে । তখন আমি রেইস কোর্স থাকতাম । রেইস কোর্সে আমার বন্ধুরাও এই ঘটনা জানতো । আমার মন খারাপ জেনে সে আমাকে সিলেট নিয়ে গিয়েছিলো । নেয়া বলতে আমাকে অনুরোধ করেছিলো যেন সিলেট যাই । আমি সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলাম । তার আগে সে আমাকে তাদের বাসায় যেতে অনুরোধ করেছিলো । আমি তার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেছিলো, তার বাবা-মা, বড় ভাই-ভাবী, দুই ছোট বোন, এক ছোট ভাই নিউ ইয়র্ক থাকেন । দেশে সে, তার বড় বোন ,আর এক ছোট ভাই আছে । তারাও ইমিগ্রেশন ফরমালিটিস শেষ হলে আমেরিকায় চলে যাবে ।
২০১২ সালের মাঝামাঝি একদিন সুমি ফোন করে তার বড় আপাকে দিলো । আপা আমাকে তাদের বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন । ১৯৮১ সালে একবার সিলেট গিয়েছিলাম কুমিল্লা জেলা পুলিশের ফুটবল টিমের সঙ্গে । এক রাত ছিলাম । খেলা শেষে আবার চলে আসি । একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আমার সখ্য ছিলো । আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম । এরপর আর সিলেট যাইনি । তো সুমি ও তার বড় বোনের অনুরোধে ২০১২ সালের জুলাই মাসে সিলেট গেলাম । ট্রেন জার্নি আমি সব সময়ই ইনজয় করি । তবে তা হতে হবে প্রথম শ্রেণিতে । কুমিল্লা থেকে ট্রেনে সিলেট গেলাম । সন্ধ্যা নেমে গেছে তখন । ফোনে পরিচিত । তাও একটি মেয়ের বাসায় বাসায় যাচ্ছি ! কি নাটকীয় আমার জীবন ! আমার অবশ্য ডর ভয় নেই পরাণে । ভুত পেত্নিও বিশ্বাস করি না । সিলেট স্টেশনে নেমে সুমিকে ফোন করলাম । অবশ্য ট্রেনে থাকতে ১০/১২ বার কথা হয়েছে । সুমি বাসার লোকেশন জানালো । সিলেট শহরের অভিজাত এলাকা হাউজিং স্টেটে তাদের বাসা । রেলওয়ে স্টেশন থেকে রিকশায় যাওয়া যাবে । সুরমা বৃজ পার হয়ে জিন্দাবাজার হয়ে হাউজিং পৌঁছলাম । সিলেটের কিচ্ছু চিনি না । ভাষাও জানি না । হাউজিংয়ের সবগুলো বাসাই অভিজাত । আমাকে বাসার যে নাম্বার সুমি দিয়েছিলো ওই নাম্বারের বাসার সামনে রিকশা যেতেই সুমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে রিকশাকে বললো, এই এখানে, এখানে । অভিজাত একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। প্রথম আমি সুমিকে দেখলাম ! লাল সবুজের কম্বিনেশন থ্রি পিস পরা, ফর্শা গায়ের রঙ, আকর্ষনণীয় ফিগার । লেখকের দৃষ্টিতে নারী দেহের সৌন্দর্যের আরো বর্ণানা দেয়া গেলেও এখানে এর বেশি দেয়া সম্ভব নয় কারণ সুমি আমার অনেক ছোট । ওই সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ২৬ বছর । সুমি তখনো স্পিনস্টার ( Spinster) ।
সুমির সঙ্গেই তাদের বাসায় ঢুকলাম । আমার সঙ্গে একটা ট্র্যাভেল ব্যাগে টুথপেস্ট, ব্রাশ, সেভিং কিটস, টাওয়েল ও প্রয়োজনীয় কাপড় । আরেকটা ব্যাগে ল্যাপটপ । খুব গরম ছিলো । আমি গোসল করার কথা বলতেই সুমি নিজে আমাকে বাথরুমে নিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দিলো । আমি গোসল সেরে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পড়ে বসলাম লিভিং রুমে । এবার চা বিস্কিট ট্রেতে নিয়ে সুমির বড় বোন এলেন । আমি উনাকে দেখে খুবই বিস্মিত হলাম ! এতো সুন্দর নারী আমি জীবনে খুব কম দেখেছি । খুবই ফর্শা । হাতগুলোতে উনার নীলাভ রগ দেখা যায়!!! এতোই ফর্শা । শুধু ফর্শা নয়, ডাকসাইটে সুন্দরী । দু'বাচ্চার মা । আমি দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিলাম । এরপর এলেন সুমির খালা আর খালাতো বোন রেবি । পরিচিত হলাম । কথা বললাম । সুমির ছোট ভাই শহিদ এলো সব শেষে । আমিতো হরবর করে সব কথাই বলে ফেলি । নিজের সম্পর্কেও তাই বললাম । তিনদিন সুমিদের বাসায় ছিলাম । একেবারেই আপনজনের মতো । একদিন সুমির দুই বোন নিউ ইয়র্ক থেকে ফোন করলে সুমি আমার সঙ্গেও কথা বলিয়ে দেয় তার দু'বোনকে । এরপর চলে আসি । সুমি নিয়মিত ফোন করে আমার খোঁজ নিতো ।
ওই সময় মানে ২০১২ সালে আমার খুব মন খারাপ ছিলো । একদিন সুমি অনুরোধ করে আমাকে বলে, করিম ভাই, আপনি সিলেট চলে আসেন । আমি কাছে থেকে আপনার মন ভালো করে দেবো । আমিও বোকার মতো রাজি হয়ে যাই । একা মানুষ । কেউ আদর করে ডাকলে যেতে কোনো বাধা নেই । সবচেয়ে বড় কথা, আমার মনে কোনো অপরাধবোধ নেই ।
কাপড় চোপড়, বই পুস্তক নিয়ে চলে গেলাম সিলেট । উঠলাম দরগা গেইটের পাশে এক হোটেলে । সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে বইগুলো পার্সেল করেছিলাম। আমাকে নিয়ে দুইদিন ঘুরে সুমি খাদিম পাড়া একটা বাসা ভাড়া করলো । আমাকে তিন মাস সিলেটে রেখে দিয়েছিলো সুমি ! কি আশ্চার্য !
খাদিম পাড়া শাহ পরাণ মাজারের কাছে । বেশ নিরিবিলি জায়গা । সুমিই জীবনে প্রথম আমাকে জাফলং নিয়ে যায় ! জাফলং গিয়ে দেখলাম কিভাবে মাটির নিচ থেকে পাথর উঠানো হয় । এটিও এক আশ্চর্য । আমি নাম দিয়েছিলাম পাথরের খনি। প্রতিদিন সুমি আমার কাছে ওই বাসায় যেতো । তিন চার ঘন্টা থাকতো । ওই বাসার পাশেই আরেকটা সিলেটি বাসায় আমাকে তার আত্নিয় পরিচয় দিয়ে তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো অন পেমেন্টে । আমার জীবনের অনেক কথাই গল্পের চেয়েও বিস্ময়কর ! Truth is stranger than fiction. সত্য কল্পনার থেকেও অদ্ভুত । এই কথাটি কে লিখেছিলেন জানি না । একথা মনে হয় আমার মতো আরো অনেক মানুষের জন্যই লিখেছিলেন ।
কতো জায়গায় ওকে নিয়ে ঘুরেছি ! একদিন সুমি আমাকে বলেছিলো " করিম ভাই, আপনাকে বিয়ে করতে আমার ইচ্ছা করে ।" আমি ধমক দিয়ে বলেছিলাম, তোমার বয়স কম । এসব আবেগী কথা । শাওন টাইপ কথা বলবা না । আমি হুমায়ুন আহমেদ না । আমি তোমার অনেক বড় বয়সে । দ্বিতীয়বার একথা বললে আমি চলে যাবো।
এতো ঘনিষ্ঠতার কথা শোনে অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে।
সৎভাবে বলছি, ওর সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না । ও আমার ২৪ বছরের ছোট । জিন্দাবাজার 'রাজা ম্যানশন' এর পাশে "পানসি" রেস্তোরায় ওকে নিয়ে প্রায়ই খেতাম । বিল সুমিই দিতো । পানসি খুব ভালো মানের রেস্তোরা । খাবারের মানও খুব ভালো । প্রায় ৫০ রকমের ভর্তা হয় প্রতিদিন । এর একেবারেই পাশে হাসন রাজার বাড়ি যা এখন "রাজা মিউজিয়াম "। সেখানেও বেশ কয়েকদিন গিয়েছিলাম ।
আমরা প্রায়ই যেতাম বলে পানসির ম্যানেজার, বয় সকলেই আমাদের মুখ চিনতো । তখন আমি আরো জোয়ান ছিলাম । ছয় বছর আগের কথা । একদিন সুমি আগে চলে গিয়েছিলো রেস্টুরেন্টে । পানসির ম্যানেজার নাকি ওকে বলেছিলো, "আপা, দুলাভাই অনেক সুন্দর আর স্মার্ট "। খেতে খেতে সুমি এই কথা বলে হেসে কুটি কুটি যাচ্ছিলো !
একদিন সুমি আমাকে গৌর গোবিন্দ টিলায় নিয়ে গিয়েছিলো । খুব সুন্দর জায়গা । ও আমাকে কিছু সিলেটি ভাষাও শিখিয়েছিলো । এমসি কলেজ, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, বন্দর, রাগিব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন, শাহ পরান মাজার, হযরত শাহজালাল মাজারের পেছনে অনেক সাহাবির কবর সুমি আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছিলো । জিন্দাবাজার, মিরবক্স টোলাসহ সিলেট শহরের কতো কিছু সুমি আমাকে চিনিয়েছিলো !
ও আমাকে তীব্রভাবে ভালোবাসতো । আমি চাইলেই ওর সঙ্গে যে কোনো ধরনে
র সম্পর্ক করতে পারতাম । কিন্তু আমি ভালোবাসাকে নিষ্কলুষ রাখতে সব সময় বদ্ধপরিকর ।
আমাকে অনেক গিফট দিয়েছিলো সুমি । ওকে নিয়ে দরগা গেইটের ( এই নামটিও তখন শিখেছিলাম- হযরত শাহজালাল মাজারের প্রধান গেইট) দুই পাশের রেস্তোরাগুলোতে বেশি সময় কাটাতাম । আজ অনেকদিন হয়, তিন বছর সুমি ফোন করে না । গত বছর সুমির ছোট ভাই ফোনে জানালো, সুমির বিয়ে হয়েছে । তিন দিন পর সুমি ফোন করে কেঁদে কেঁদে বললো, আমাকে তুমি ভুল বুঝো না । এই প্রথম সুমি আমাকে 'তুমি' বললো । আমি হাসতে হাসতে তাকে অভিনন্দন জানালাম ।
( আমার গল্প পড়ে অনেকেই অবাক হতে পারেন । এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই । ফেসবুকে পরিচিত হয়েও কতোজন আমাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসেছিলেন ! আমি ফেসবুকে তাদের ছবিসহ লিখেও তা জানিয়েছিলাম বন্ধুদের । এইতো এক বছর আগেও কাবেরী মির্জা নামের নোয়াখালীর এক বন্ধু তার স্বামী মির্জা মামুনসহ আমার এই বাসায় এসে আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকদিন । পরে হয়তো কোনো পারিবারিক কারনে দূরে সরে গেছেন । তবু তাদের সকলের এই ভালোবাসা আমি আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই স্মরন রাখবো । গত বছরের এই পোষ্টে কাবেরীর কমেন্টও আছে! আজ এই দিনে আমি তার লিস্টে ব্লক!!! )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন