গতকাল আমাদের দেশের কিছু নাম নিয়ে অল্প কিছু লিখেছিলাম । এতে অনেকেই রাগ করেছেন । আমি কি বুঝাতে চেয়েছিলাম তা অনেকে বুঝতেই পারেন নি । দেশপ্রেমের সঙ্গে যে নামের কোনো সম্পর্ক নেই এটা বুঝার মেধা আল্লাহ তাদের দেন নি । নাম নিয়ে মানুষ কতো রকমের বিভ্রান্তিতে পড়ে তা জানতে কাইন্ডলি এই নোটটা পড়ে নেবেন । জীবন চলার পথে আমি যা শিখেছি তাই লিখি ।
এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশীটে রোল নাম্বার কিভাবে লিখে তা সকলের জানা আছে । পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর নাম খেয়াল করবেন । যেমন কেন্দ্রের নাম যদি হয় কুমিল্লা তবে লেখা হয় কেন্দ্র-কুম । নং .........। কেন্দ্রের নাম যদি হয় বুড়িচং তবে লেখা হয় কেন্দ্র বুড়ি । নং.........। তেমনি ছাগলনাইয়া হলে লেখা হয় কেন্দ্র ছাগল । নং.........। বিয়ানী বাজার হলে লেখা হয় কেন্দ্র- বিয়ানী । নং......... । ছাত্র জীবনে কিছু সময় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে চাকরি করেছিলাম । আমরাও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সংক্ষিপ্ত নামই বলতাম । যেমনঃ কুম, বুড়ি, ছাগল, বিয়ানী ।
আগে আমাদের সময় সংশ্লিস্ট বিষয়ের শিক্ষকরা খাতা দেখার পর তা শিক্ষা বোর্ডে জমা দিতেন । তারপর বড় খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম ও প্রতি বিষয়ের প্রাপ্ত নাম্বার লেখা হতো । ওই খাতাকে শিক্ষাবোর্ডের ভাষায় টেবুলেশন(Tabulation) খাতা বা টেবুলেটিং( Tabulating) শীট বলা হতো ।
ওই খাতা দেখে ছাত্রছাত্রীদের মার্ক সার্টিফিকেট বা মার্কশীট লিখতেন শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত জুনিয়র অফিসাররা । মার্ক সার্টিফিকেট লেখার জন্য শিক্ষা বোর্ড আমাদের আলাদাভাবে পেমেন্ট দিতো । আমি ছিলাম সংস্থাপন সেকশনে । সংস্থাপন শাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ । প্রশাসনিক সব কিছুই এই শাখাতে । ৩২টি পদের জন্য ওই চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ৫৫৬৭ জন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে আমি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দুটোতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম । বোর্ডের চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি, কলেজ ইন্সপেক্টর, কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশন, প্রশাসনিক অফিসার সবাই আমাকে খুব স্নেহ করতেন আমার রেজাল্টের কারনে । পরে আমি রিজাইন করে জাপান চলে যাই ।
তো মার্কস সার্টিফিকেট লেখার সময় নাম নিয়ে আমার এক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো । এক কেন্দ্র শেষ করে আমরা আরেক কেন্দ্র লিখতাম । আমাদের সেকশনে তিন জন মেয়ে ছিলো আমাদের কলিগ । মোরশেদা বেগম,সাজেদা বেগম ও পাঞ্চালি চক্রবর্তী । আমাদের একজন সিনিয়র কলিগ ছিলেন সাব্বির আহমেদ । খুব মজার মানুষ ছিলেন তিনি । কথায় কথায় ফান করতেন । একদিন আমি শিক্ষা বোর্ডের পাশেই সালাউদ্দিন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম চা খেতে । আমি সেকশনে ফিরে আসতেই সাব্বির ভাই বললেন, করিম খবর শুনছো ? কাল থাইকা তো মোরশেদা বিয়ানী শুরু করবো । সঙ্গে সঙ্গে মোরশেদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো লজ্জায় । আর লাল মুখ নিয়ে হাসতে হাসতে সাব্বির ভাইকে বললো, সাব্বির ভাই, আপনি এতো শয়তানি কথা বলেন যা মান ইজ্জত নিয়াও টান দেয় ! সাব্বির ভাই বললেন, ওমা, তুমিইতো বললা, কাল থাইকা বিয়ানী শুরু করবা !
ব্যাপার হলো, মোরশেদার ছিলো ছালগনাইয়া আর বিয়ানী বাজার কেন্দ্রের মার্কস সার্টিফিকেট লেখার দায়িত্ব । সাব্বির ভাই উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, মোরশেদা তোমার কয় কেন্দ্র লেখা শেষ হইছে ? মোরশেদা বলেছিলো, ছাগল শেষ করছি । কাল থেকে বিয়ানী শুরু করবো ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন