সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

“অ্যাঁই কিচ্চি"


“অ্যাঁই কিচ্চি"


আমরা যারা জাপান, ইউরোপ, আমেরিকায় ছিলাম- তারা দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে চলারফেরা করার সুযোগ পায় । আমিও পেয়েছিলাম এমন সুযোগ ।
তিনি ছাগলনাইয়ার আবুল কালাম আযাদ । এক সময় ফেনির সাপ্তাহিক হাজারিকা’র বার্তা সম্পাদক ছিলেন । অস্টৃয়ায় আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা । সজ্জন মানুষ । এক সময় কম্যুনিস্ট পার্টি করতেন তাই আমার সঙ্গে মিলতো বেশি । উনার ছেলের নামও রেখেছেন লেনিন । আন্তরিক মানুষ । সমবয়সি হলেও আমার পাগলামি দেখে আমাকে বুঝাতেন । উলটা পালটা চললে বন্ধুর মতো শাসন করতেন । আমার জন্য নোয়াখালী তিনি বিয়েও ঠিক করেছিলেন । আমি ফেনি জেলার এই লোকটির কাছে ঋণী হয়ে রইলাম ।
নিউ ইয়র্কে গিয়ে পেলাম শাহ আলম ভাইকে । আমার বয়সি । আমি আমেরিকায় গিয়ে উঠেছিলাম লেক্সিংটন এভিনিউর ‘হোটেল আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল’এ ।
দুইদিন রেস্ট করে হাঁটতে বেরুলাম । একটু সামনে গিয়ে দেখি ‘স্পাইস কর্নার’ । একটা বাংলা কাম ইন্ডিয়ান স্টোর । আমেরিকায় আজ আমার দুই দিন । এই দোকানে কি কি পাওয়া যায় তা দেখার জন্য Spice Corner এর ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন র‍্যাকে সাজানো আইটেমগুলো দেখছিলাম । এমন সময় তিনি আমেরিকান কালচারে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, May I help you sir ?
আমি-No, Thank you. I have seen some Bangladeshi and Indian items over here in your store. That’s why I am curious since I am from Bangladesh.
তখনি তিনি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বললেন, আমিও বাংলাদেশের । আমার নাম শাহ আলম । শাহ আলম ভাই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের । আমি হোটেলে থাকি শুনে তিনি সরাসরি প্রস্তাব করলেন হোটেল এক্সপেনসিভ তাই আমি তার বাসায় থাকলে উনার কোন আপত্তি নেই । সেদিন বিকেলেই চেক আউট করে শাহ আলম ভাইয়ের বাসায় । ৪৪৪ থার্ড এভিনিউ । নিউ ইয়র্ক সিটির প্রাণকেন্দ্রে ।
ফ্লোরিডায় পেলাম দিদার(ফার্মাসিস্ট) আর বাবুকে । দিদারের বাড়ি চৌমুহনী , আর বাবু চাটখিলের । ওরা আমাকে কুমিল্লার ইতর বলে রাগাতো । ফান করা আরকি ! আমিও বলতাম নোয়াখালী নিয়ে । অনেক সময় ঝগড়া করতাম আবার একটু পরই এমনভাবে চলতাম যেন কিছুই হইনি ।
একদিন আমি বাবু আর দিদারকে বললাম,
“শোনো,আজ থেকে বহুবছর আগে জাপান এয়ার লাইন্সের একটা যাত্রীবাহী বিমান ব্রাজিলের এক গহীন জঙ্গেলে বিধ্বস্ত হয় । ক্রু, যাত্রী , পাইলট কেউ বাঁচেনি । তবে একজন যাত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন । অনেক তদন্ত করেও জাপানি সরকার এই বিমান দুর্ঘটনার কারন খুঁজে পায়নি । তারও বেশ কয়েক বছর পর একটা জাপানি বিশেষজ্ঞ দল এই তদন্তভার গ্রহন করেন । ব্রাজিলের ওই দুর্গম পাহাড়ে তারা অনেক অনুসন্ধান চালিয়ে কিছু ডেব্রিস (Debris)- (বিমানের ভেঙে যাওয়া অংশ ) সংগ্রহ করেন ।
হঠাৎ বিশেষজ্ঞ দল দেখতে পান এক আজব প্রাণী । দেখতে মানুষের মতো । কথা কি বলে তা বুঝা যায় না । চুল, নখ,দাড়ি সবকিছু মিলে এটাকে ভিন্নধর্মী অদ্ভুত এক বিরল প্রাণী বলে তাকে খাঁচায় বন্ধি করলো এবং এই নতুন প্রাণী নিয়ে গবেষণার জন্য টোকিও চিড়িয়াখানায় নিয়ে প্রাণীটিকে রাখলো । এই প্রাণীর খাঁচায় (Cage) চিড়িয়াখানা অথরিটি বড় করে লিখে দিলো New Arrival. নতুন এসেছে ।
তো টোকিওতে যে সব বাংলাদেশি আছে তারা রোববারে চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায় । দুই নোয়াখালীর বন্ধু সেদিন চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলো নতুন প্রাণী দেখতে ।
ব্রাজিলের জঙ্গল থেকে আনা সেই নতুন প্রাণীটি তারা দেখছিলো । চিড়িয়াখানায় কোনো প্রাণী ঝিম ধরে বসে থাকলে তার মুভমেন্ট দেখার জন্য অনেকেই ছোট কাগজ, চকোলেটের খোসা বা চুইংগাম দিয়ে লুকিয়ে ঢিল মারে যাতে সে নাড়াচাড়া করে । যদিও এটা বেআইনি । তো ওই দুই বন্ধু যখন নতুন প্রাণীটিকে চুইংগাম দিয়ে ঢিল মেরেছে তখন সঙ্গে সঙ্গেই খাঁচায় বন্ধি অদ্ভুত প্রাণীটি স্পষ্ট নোয়াখালীর উচ্চারণে বললো “অ্যাঁই কিচ্চি?”
মানে আমি কি করছি ? বন্ধু যুগল অবাক হয়ে কনফার্ম হওয়ার জন্য আবার ঢিল মারলে একি উত্তর প্রাণীটির “অ্যাঁই কিচ্চি ? যার অর্থ ঢিল মারো কেন ,আমি কি করছি ?
সেই দুই বন্ধু তখন দৌঁড়ে গিয়ে চিড়িয়াখানা অথরিটিকে বললো, ভাই, এটা কোনো জন্তু না । আমার দেশের ভাই । তিনি ওই বিধ্বস্ত বিমানের যাত্রী ছিলেন । অনেক বছর জঙ্গলে থাকার কারণে তার এই অবস্থা । তার ভাষা আমরা বুঝেছি । আপনারা আমাদের ভাইকে ছেড়ে দিন প্লিজ ।
প্রাণীটিকে তাদের সঙ্গে কথা বলিয়ে অথরিটি সিউর হয় যে, সে মানুষ এবং নোয়াখালীর । তখন তাকে ছেড়ে দেয় ।
এই হলো “অ্যাঁই কিচ্চি’র শানে নুযূল ।
দিদার আর বাবু হাসতে হাসতে আমাকে বলেছিলো, আপনি এসব কই পান ? আমাদের কাছে বলছেন, বেঁচে গেছেন । নোয়াখালীর অন্য কারো সামনে বললে, আপনাকে মারতেও পারে ।
( না । আমি জানি, আমার এতো সব দুষ্টুমির পরও কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বেশিরভাগ ফেনি/ নোয়াখালীর মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে । আমি প্রমাণ পেয়েছি ।
ছবিটি ফ্লোরিডায় তোলা । আমার ডানে বায়ে দুই নোয়াখাইল্লা । বা থেকে বাবু,আমি, দিদার ।)

 June 30, 2016

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর