আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
করিম চৌধুরী
প্রতি বছর জুলাই মাসের চার তারিখ চমৎকারভাবে উদযাপিত হয় আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস । দিনটি গুরুত্বপূর্ণ, সরকারি ছুটির দিন । ১৯৯৭ সালে দিনটি পড়েছিল শুক্রবারে । শনি ও রবিবার মিলে টানা তিন দিন ছুটি । সামারে চমৎকার লম্বা উইকএন্ড ।
গা-জ্বলা রোদে মানুষজন দল বেধে ছুটেছে আটলান্টিকের পাড়ে । সারাক্ষণ কোলাহল ভরপুর পৃথিবীর ব্যস্ততম সিটি, ক্যাপিটাল অফ দি ওয়ার্ল্ড বা বিশ্বের রাজধানী বলে পরিচিত নিউ ইয়র্ক আজ তুলনামূলকভাবে বেশ শান্ত । প্রতিদিনকার মতো কর্মচাঞ্চল্য আজ নেই । রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম । এ দেশের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো উইন্টারে । অথচ আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসটি পড়েছে টাটকা সামারে । পশ্চিমের হাড় কাঁপানো শীতের কথা আমরা অনেকেই জানি । কিন্তু এই শীত প্রধান দেশগুলোতে যে এতো গরম পরে, তা এসব দেশে না গেলে কিংবা গল্প, উপন্যাস না পড়ে অনুমান করা কঠিন ।
জুন মাসের প্রথম থেকেই বড় বড় ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর আর মোটরকার কম্পানিগুলো রেডিও, টিভি এবং পত্র পত্রিকায় অবিরাম বিজ্ঞাপন দিয়ে চলে ‘ইনডিপেনডেন্স ডে সেল’। অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ মুল্য হ্রাসসহ কেনাকাটায় অন্যান্য সুবিধার বিস্তারিত সব বর্ণনা । ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ঝুলতে থাকে ‘ফোর্থ জুলাই- ইনডিপেনডেন্স ডে -ক্লোজড’ নোটিশ।
আমাদের বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ । এখানে ঈদ এলেই বেড়ে যায় জিনিসপত্রের দাম । এ সময় কেনাকাটা বেশি হয় । লাভ কম করলেও দোকানীর লস হবে না । যেহেতু বিক্রি বেশি । কিন্তু দোকানদার মানেই মুনাফেক, মিথ্যুক । এরা বলে রোজা মুখে মিছা কথা কই না । অথচ তার এই কথাটাও মিছা ।
আমেরিকা একটি বিশাল দেশ । প্রতিটি ষ্টেট নিজস্ব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনটি উদযাপন করে থাকে । ওয়াশিংটন ডিসি এতে কোনো হস্তক্ষেপ করে না । আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা হলেও এটি ফেডারেল গভর্ণমেন্ট বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার । ইউনিটারি গভর্নমেন্ট বা এককেন্দ্রিক সরকারের মতো কেন্দ্রীয় সরকার যখন তখন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না ।
গত চার জুলাই প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখেছি । আমাদের দেশের পত্র পত্রিকার মতো বড় বড় অক্ষরে প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার নিউজ নেই ‘আজ স্বাধীনতা দিবস’। নেই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র । স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার আবেদন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর (যদিও আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নেই) বাণীও নেই । আগের দিন রাত বারোটা এক মিনিটে কামান দাগিয়ে, বোমা ফাটিয়ে, একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মজীবী মানুষের ঘুম নষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয় না
‘আজ স্বাধীনতা দিবস’। সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর সদস্যদের জড়ো করে কুচকাওয়াজের নামে স্যালুট নেন না ক্ষমতাসীন কর্তাব্যক্তি। বিরোধীদলও আয়োজন করে না কোনো আলাদা অনুষ্ঠানের । কোনো কোনো স্থানে প্যারেডের আয়োজন করা হয় বটে । সেই প্যারেডে সিটি মেয়র, ষ্টেট গভর্নর স্বয়ং অংশ গ্রহণ করেন । জনসাধারণ স্বত:স্ফুর্তভাবে জাতীয় পতাকা হাতে সেই প্যারেডে অংশ গ্রহণ করে একই সঙ্গে গেয়ে ওঠেন তাদের জাতীয় সঙ্গীত। 'Star Spingled Banner...'|
এবার স্বাধীনতা দিবসে নিউ ইয়র্কের গভর্নর প্যাটাকি এবং মেয়র রুডলফ জুলিয়ানি অংশ গ্রহণ করেন ব্রুঙ্কস (Bronx)-এর প্যারেডে । কি সুন্দর ! কি চমৎকার ! দেখলেই মন ভরে যায় ।
দিনব্যাপী কোথাও কনসার্ট , কোথাও ষ্ট্রিট ফেয়ার, (মেলা অর্থাৎ বাংলাদেশে বৈশাখ মাসে যেমন মেলা বসে) কোথাও থিয়েটার, কোথাও গৃহহীনদের (হোমলেস) জন্য খাবারের আয়োজন ইত্যাদি অনুষ্ঠান লেগেই আছে । বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, সাবওয়ে বা পাতাল রেলওয়ে ষ্টেশনে স্কুল কলেজের তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা বিলি করছে নানা রঙের লিফলেট । ছোট্ট অথচ আকর্ষণীয় এসব লিফলেটের উপরে বড় করে লেখা ‘হ্যাপি বার্থ ডে আমেরিকা’। নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা:
July 4th is not just a nationalistic birthday party ... It's a freedom celebration ... For over 200 years we've enjoyed independence and freedom ... Speak as we think ...Live as we will ... Still we enjoy the freedom our forefathers established ... Statue of Liberty more than 100 years old.
করিম চৌধুরী
প্রতি বছর জুলাই মাসের চার তারিখ চমৎকারভাবে উদযাপিত হয় আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস । দিনটি গুরুত্বপূর্ণ, সরকারি ছুটির দিন । ১৯৯৭ সালে দিনটি পড়েছিল শুক্রবারে । শনি ও রবিবার মিলে টানা তিন দিন ছুটি । সামারে চমৎকার লম্বা উইকএন্ড ।
গা-জ্বলা রোদে মানুষজন দল বেধে ছুটেছে আটলান্টিকের পাড়ে । সারাক্ষণ কোলাহল ভরপুর পৃথিবীর ব্যস্ততম সিটি, ক্যাপিটাল অফ দি ওয়ার্ল্ড বা বিশ্বের রাজধানী বলে পরিচিত নিউ ইয়র্ক আজ তুলনামূলকভাবে বেশ শান্ত । প্রতিদিনকার মতো কর্মচাঞ্চল্য আজ নেই । রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম । এ দেশের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো উইন্টারে । অথচ আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসটি পড়েছে টাটকা সামারে । পশ্চিমের হাড় কাঁপানো শীতের কথা আমরা অনেকেই জানি । কিন্তু এই শীত প্রধান দেশগুলোতে যে এতো গরম পরে, তা এসব দেশে না গেলে কিংবা গল্প, উপন্যাস না পড়ে অনুমান করা কঠিন ।
জুন মাসের প্রথম থেকেই বড় বড় ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর আর মোটরকার কম্পানিগুলো রেডিও, টিভি এবং পত্র পত্রিকায় অবিরাম বিজ্ঞাপন দিয়ে চলে ‘ইনডিপেনডেন্স ডে সেল’। অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ মুল্য হ্রাসসহ কেনাকাটায় অন্যান্য সুবিধার বিস্তারিত সব বর্ণনা । ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ঝুলতে থাকে ‘ফোর্থ জুলাই- ইনডিপেনডেন্স ডে -ক্লোজড’ নোটিশ।
আমাদের বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ । এখানে ঈদ এলেই বেড়ে যায় জিনিসপত্রের দাম । এ সময় কেনাকাটা বেশি হয় । লাভ কম করলেও দোকানীর লস হবে না । যেহেতু বিক্রি বেশি । কিন্তু দোকানদার মানেই মুনাফেক, মিথ্যুক । এরা বলে রোজা মুখে মিছা কথা কই না । অথচ তার এই কথাটাও মিছা ।
আমেরিকা একটি বিশাল দেশ । প্রতিটি ষ্টেট নিজস্ব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনটি উদযাপন করে থাকে । ওয়াশিংটন ডিসি এতে কোনো হস্তক্ষেপ করে না । আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা হলেও এটি ফেডারেল গভর্ণমেন্ট বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার । ইউনিটারি গভর্নমেন্ট বা এককেন্দ্রিক সরকারের মতো কেন্দ্রীয় সরকার যখন তখন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না ।
গত চার জুলাই প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখেছি । আমাদের দেশের পত্র পত্রিকার মতো বড় বড় অক্ষরে প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার নিউজ নেই ‘আজ স্বাধীনতা দিবস’। নেই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র । স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার আবেদন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর (যদিও আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নেই) বাণীও নেই । আগের দিন রাত বারোটা এক মিনিটে কামান দাগিয়ে, বোমা ফাটিয়ে, একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মজীবী মানুষের ঘুম নষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয় না
‘আজ স্বাধীনতা দিবস’। সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর সদস্যদের জড়ো করে কুচকাওয়াজের নামে স্যালুট নেন না ক্ষমতাসীন কর্তাব্যক্তি। বিরোধীদলও আয়োজন করে না কোনো আলাদা অনুষ্ঠানের । কোনো কোনো স্থানে প্যারেডের আয়োজন করা হয় বটে । সেই প্যারেডে সিটি মেয়র, ষ্টেট গভর্নর স্বয়ং অংশ গ্রহণ করেন । জনসাধারণ স্বত:স্ফুর্তভাবে জাতীয় পতাকা হাতে সেই প্যারেডে অংশ গ্রহণ করে একই সঙ্গে গেয়ে ওঠেন তাদের জাতীয় সঙ্গীত। 'Star Spingled Banner...'|
এবার স্বাধীনতা দিবসে নিউ ইয়র্কের গভর্নর প্যাটাকি এবং মেয়র রুডলফ জুলিয়ানি অংশ গ্রহণ করেন ব্রুঙ্কস (Bronx)-এর প্যারেডে । কি সুন্দর ! কি চমৎকার ! দেখলেই মন ভরে যায় ।
দিনব্যাপী কোথাও কনসার্ট , কোথাও ষ্ট্রিট ফেয়ার, (মেলা অর্থাৎ বাংলাদেশে বৈশাখ মাসে যেমন মেলা বসে) কোথাও থিয়েটার, কোথাও গৃহহীনদের (হোমলেস) জন্য খাবারের আয়োজন ইত্যাদি অনুষ্ঠান লেগেই আছে । বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, সাবওয়ে বা পাতাল রেলওয়ে ষ্টেশনে স্কুল কলেজের তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা বিলি করছে নানা রঙের লিফলেট । ছোট্ট অথচ আকর্ষণীয় এসব লিফলেটের উপরে বড় করে লেখা ‘হ্যাপি বার্থ ডে আমেরিকা’। নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা:
July 4th is not just a nationalistic birthday party ... It's a freedom celebration ... For over 200 years we've enjoyed independence and freedom ... Speak as we think ...Live as we will ... Still we enjoy the freedom our forefathers established ... Statue of Liberty more than 100 years old.
নিউ ইয়র্কে
আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানটি হয় দিনের শেষে । সন্ধ্যায় । জুলাই মাসে সন্ধ্যা হয় রাত
পৌনে নয়টার দিকে। অনুষ্ঠানটির সময় রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টায় । এই চমৎকার
অনুষ্ঠানটির ইংরেজি নাম ‘ফায়ার ওয়ার্কস ডিসপ্লে’(Fireworks Display)|
বাংলায় বলা যায় আতশবাজি পোড়ানোর প্রদর্শনী । এবং তা হয় নদীতে । নিউ ইয়র্কের প্রতিবেশী ষ্টেট-নিউ জার্সি, কানেকটিকাট, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড থেকেও মানুষজন আসে মাত্র ত্রিশ মিনিট স্থায়ী বাজি পোড়ানোর এই অনুষ্ঠান দেখতে । নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে এই অনুষ্ঠান দেখতে কমপক্ষে এক মিলিয়ন মানুষ আসে । মানে ১০ লাখ । কয়েক লাখ ডলার ব্যয় করে অনুষ্ঠানটি প্রতি বছর স্পনসর করে মেসি’স(Macy's ) | এটি একটি ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর । বলে রাখা ভালো, মেসি’স ডিপার্টমেন্ট ষ্টোরটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর ।
আমি থাকি থার্ড এভিনিউতে । দুই ব্লক পরই অর্থাৎ সেকন্ড এভিনিউর পর ফার্ষ্ট এভিনিউ । ফার্ষ্ট এভিনিউর পাড় ঘেষে ইষ্ট রিভার বা পূর্ব নদী । ম্যানহাটন বা নিউ ইয়র্ক সিটির পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে বলেই নদীর নাম ইষ্ট রিভার । বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে নদীর পাড়ে যেতে সময় লাগে মাত্র দশ মিনিট । দুপুরের পর আস্তে ধীরে বাসা থেকে বেরিয়ে ভ্যানিলা ফ্লেভারের একটা আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে থার্টি ফোর ষ্ট্রিট ধরে ইষ্ট রিভারের দিকে এগুচ্ছি । যদিও অনুষ্ঠানটি উপভোগ করার জন্য সকাল থেকেই লাখ লাখ মানুষ এখানে এসে জড়ো হয় । নয়তো সামনে জায়গা পাওয়া যাবে না । রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ । একটাই সবার উদ্দেশ্য ফায়ার ওয়ার্কস দেখা । ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, আমার মতো বয়সী কোনো পুরুষ কিংবা নারী একা আসেনি । প্রত্যেকের সঙ্গেই বয় ফ্রেন্ড কিংবা গার্ল ফ্রেন্ড আছে । আর অন্যদের সঙ্গে ফ্যামিলি । সেকন্ড এভিনিউর জেব্রাক্রসিং-এর কাছে দুজন যুবক-যুবতী পরস্পরকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে, ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে জিহ্বায় জিহ্বা ভিজিয়ে এমনভাবে চুমু খাচ্ছে, মৌলবাদীরা এই দৃশ্য দেখলে নিশ্চয়ই দোররা মারার ফতোয়া দিতো।
ফার্ষ্ট এভিনিউতে এসে দেখি রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারনকে দিক নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত । ইংরেজি T অক্ষরের মতো কাঠের ব্যারিকেড দিয়ে কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সে সব ব্যারিকেডে স্পষ্ট করে লেখা: Please-Police Line-Do not cross. অর্থাৎ এই ব্যারিকেড কেউ অতিক্রম করবেন না । ওখানে সবাই আইন মেনে চলে ।
ইষ্ট রিভারের এপারে ম্যানহাটন ওপারে লং আইল্যান্ড সিটি । ফায়ার ওয়ার্কস দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা বা বেষ্ট ভিউ হচ্ছে এফ.ডি.আর ড্রাইভ । এফ.ডি.আর অর্থাৎ ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট ড্রাইভ । প্রয়াত প্রেসিডেন্টের নামে এই রাস্তা । সন্ধ্যা সাতটায় এফ.ডি.আর ড্রাইভে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয় । অনেকের দেখাদেখি আমিও দৌঁড়ে গিয়ে এফ.ডি.আর ড্রাইভে উঠে সুবিধাজনক একটা জায়গায় দাঁড়ালাম । জায়গাটি এমনিতেই ভারী সুন্দর । একটু দুরে বাম দিকে জাতিসংঘের সদর দফতর ডানদিকে বেলেভিউ হসপিটাল । তাছাড়া নদীর পাড় ঘেষে এফ.ডি.আর ড্রাইভটি একটি ফ্লাইওভার । সন্ধ্যা যতোই ঘনিয়ে আসছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যস্ততাও ততো বাড়ছে। আকস্মিক দুর্ঘটনা এড়াতে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার বৃগেড, হেলিকপ্টার সবই প্রস্তুত। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ ।
নয়টা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে মাথার একটু উপর দিয়ে উড়ে গেল কয়েকটা অবজারভেশন হেলিকপ্টার । নদীতে আগে থেকেই চারটি বার্জ (শিপ) নির্দিষ্ট দূরত্বে ভেসে আছে । বার্জগুলো দেখতে আমাদের দেশের ফেরির মতো । অসংখ্য ছোট ছোট হোল বা গর্ত আছে বার্জগুলোর উপরের দিকে । সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম সেট করে বাটন টিপে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করা হয় ।
নয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই একযোগে চারটি বার্জের গর্ত থেকে সহস্রাধিক বাজি আগুনের টুকরোর মতো দ্রুত আকাশের দিকে উঠছে । এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে আকাশে বিস্ফোরিত হচ্ছে । কখনো এক যোগে অনেকগুলো কখনো একটার পর একটা । অর্থাৎ একটা সম্পূর্ণ শেষ না হতেই আরেকটা । বিস্ফোরণের পর ছোট ছোট আগুনের টুকরোগুলো মিলে কোনোটি হয় ফুল, কোনোটি হয় গাছ, কোনোটি হয় প্রতীক । দর্শকরা মুগ্ধভাবে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। একটি বাজি বিস্ফোরণের পর দেখলাম ,আগুনের টুকরোগুলো মিলে লেখা হলো Happy Birthday America. প্রতিটি বাজি বিস্ফোরণের সময় বড় আওয়াজ হয় । দ্রিম, দ্রিম । এক ফাকে নিচে তাকিয়ে দেখি আগুনের ফুলকিতে জ্বলে উঠেছে ষ্ট্যাচু অফ লিবার্টির ছবি । বাজিগুলো বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান ষ্টাইলে দর্শকদের ‘ওয়াও’ বলে উল্লাস প্রকাশ করার এক অদ্ভুত শব্দে ভিন্ন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে । দশ লাখেরও বেশী মানুষের এক সঙ্গে ‘ওয়াও’ বলা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল । ঠিক সাড়ে নয়টায় লাখ লাখ ডলার ব্যয়ে বহু প্রস্তুরির লাখ লাখ মানুষকে মুগ্ধ করা ফায়ার ওয়ার্কস বছরের জন্য শেষ হয়ে গেল ।
( বিঃদ্রঃ লেখাটি প্রেজেন্ট টেন্সে লেখা । যেহেতু সেই সময় আমি আমেরিকায় ছিলাম এবং পরের সপ্তাহেই লিখেছিলাম যা সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত হয়েছিলো ।
)
বাংলায় বলা যায় আতশবাজি পোড়ানোর প্রদর্শনী । এবং তা হয় নদীতে । নিউ ইয়র্কের প্রতিবেশী ষ্টেট-নিউ জার্সি, কানেকটিকাট, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড থেকেও মানুষজন আসে মাত্র ত্রিশ মিনিট স্থায়ী বাজি পোড়ানোর এই অনুষ্ঠান দেখতে । নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে এই অনুষ্ঠান দেখতে কমপক্ষে এক মিলিয়ন মানুষ আসে । মানে ১০ লাখ । কয়েক লাখ ডলার ব্যয় করে অনুষ্ঠানটি প্রতি বছর স্পনসর করে মেসি’স(Macy's ) | এটি একটি ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর । বলে রাখা ভালো, মেসি’স ডিপার্টমেন্ট ষ্টোরটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর ।
আমি থাকি থার্ড এভিনিউতে । দুই ব্লক পরই অর্থাৎ সেকন্ড এভিনিউর পর ফার্ষ্ট এভিনিউ । ফার্ষ্ট এভিনিউর পাড় ঘেষে ইষ্ট রিভার বা পূর্ব নদী । ম্যানহাটন বা নিউ ইয়র্ক সিটির পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে বলেই নদীর নাম ইষ্ট রিভার । বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে নদীর পাড়ে যেতে সময় লাগে মাত্র দশ মিনিট । দুপুরের পর আস্তে ধীরে বাসা থেকে বেরিয়ে ভ্যানিলা ফ্লেভারের একটা আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে থার্টি ফোর ষ্ট্রিট ধরে ইষ্ট রিভারের দিকে এগুচ্ছি । যদিও অনুষ্ঠানটি উপভোগ করার জন্য সকাল থেকেই লাখ লাখ মানুষ এখানে এসে জড়ো হয় । নয়তো সামনে জায়গা পাওয়া যাবে না । রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ । একটাই সবার উদ্দেশ্য ফায়ার ওয়ার্কস দেখা । ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, আমার মতো বয়সী কোনো পুরুষ কিংবা নারী একা আসেনি । প্রত্যেকের সঙ্গেই বয় ফ্রেন্ড কিংবা গার্ল ফ্রেন্ড আছে । আর অন্যদের সঙ্গে ফ্যামিলি । সেকন্ড এভিনিউর জেব্রাক্রসিং-এর কাছে দুজন যুবক-যুবতী পরস্পরকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে, ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে জিহ্বায় জিহ্বা ভিজিয়ে এমনভাবে চুমু খাচ্ছে, মৌলবাদীরা এই দৃশ্য দেখলে নিশ্চয়ই দোররা মারার ফতোয়া দিতো।
ফার্ষ্ট এভিনিউতে এসে দেখি রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারনকে দিক নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত । ইংরেজি T অক্ষরের মতো কাঠের ব্যারিকেড দিয়ে কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সে সব ব্যারিকেডে স্পষ্ট করে লেখা: Please-Police Line-Do not cross. অর্থাৎ এই ব্যারিকেড কেউ অতিক্রম করবেন না । ওখানে সবাই আইন মেনে চলে ।
ইষ্ট রিভারের এপারে ম্যানহাটন ওপারে লং আইল্যান্ড সিটি । ফায়ার ওয়ার্কস দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা বা বেষ্ট ভিউ হচ্ছে এফ.ডি.আর ড্রাইভ । এফ.ডি.আর অর্থাৎ ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট ড্রাইভ । প্রয়াত প্রেসিডেন্টের নামে এই রাস্তা । সন্ধ্যা সাতটায় এফ.ডি.আর ড্রাইভে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয় । অনেকের দেখাদেখি আমিও দৌঁড়ে গিয়ে এফ.ডি.আর ড্রাইভে উঠে সুবিধাজনক একটা জায়গায় দাঁড়ালাম । জায়গাটি এমনিতেই ভারী সুন্দর । একটু দুরে বাম দিকে জাতিসংঘের সদর দফতর ডানদিকে বেলেভিউ হসপিটাল । তাছাড়া নদীর পাড় ঘেষে এফ.ডি.আর ড্রাইভটি একটি ফ্লাইওভার । সন্ধ্যা যতোই ঘনিয়ে আসছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যস্ততাও ততো বাড়ছে। আকস্মিক দুর্ঘটনা এড়াতে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার বৃগেড, হেলিকপ্টার সবই প্রস্তুত। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ ।
নয়টা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে মাথার একটু উপর দিয়ে উড়ে গেল কয়েকটা অবজারভেশন হেলিকপ্টার । নদীতে আগে থেকেই চারটি বার্জ (শিপ) নির্দিষ্ট দূরত্বে ভেসে আছে । বার্জগুলো দেখতে আমাদের দেশের ফেরির মতো । অসংখ্য ছোট ছোট হোল বা গর্ত আছে বার্জগুলোর উপরের দিকে । সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম সেট করে বাটন টিপে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করা হয় ।
নয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই একযোগে চারটি বার্জের গর্ত থেকে সহস্রাধিক বাজি আগুনের টুকরোর মতো দ্রুত আকাশের দিকে উঠছে । এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে আকাশে বিস্ফোরিত হচ্ছে । কখনো এক যোগে অনেকগুলো কখনো একটার পর একটা । অর্থাৎ একটা সম্পূর্ণ শেষ না হতেই আরেকটা । বিস্ফোরণের পর ছোট ছোট আগুনের টুকরোগুলো মিলে কোনোটি হয় ফুল, কোনোটি হয় গাছ, কোনোটি হয় প্রতীক । দর্শকরা মুগ্ধভাবে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। একটি বাজি বিস্ফোরণের পর দেখলাম ,আগুনের টুকরোগুলো মিলে লেখা হলো Happy Birthday America. প্রতিটি বাজি বিস্ফোরণের সময় বড় আওয়াজ হয় । দ্রিম, দ্রিম । এক ফাকে নিচে তাকিয়ে দেখি আগুনের ফুলকিতে জ্বলে উঠেছে ষ্ট্যাচু অফ লিবার্টির ছবি । বাজিগুলো বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান ষ্টাইলে দর্শকদের ‘ওয়াও’ বলে উল্লাস প্রকাশ করার এক অদ্ভুত শব্দে ভিন্ন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে । দশ লাখেরও বেশী মানুষের এক সঙ্গে ‘ওয়াও’ বলা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল । ঠিক সাড়ে নয়টায় লাখ লাখ ডলার ব্যয়ে বহু প্রস্তুরির লাখ লাখ মানুষকে মুগ্ধ করা ফায়ার ওয়ার্কস বছরের জন্য শেষ হয়ে গেল ।
( বিঃদ্রঃ লেখাটি প্রেজেন্ট টেন্সে লেখা । যেহেতু সেই সময় আমি আমেরিকায় ছিলাম এবং পরের সপ্তাহেই লিখেছিলাম যা সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত হয়েছিলো ।
)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন