হংকং টু ম্যানিলা
হংকং থেকে ক্যাথে প্যাসেফিক ( Cathay Pacific- হংকংয়ের এয়ারলাইন্স ) এয়ারলাইন্সে ম্যানিলা গিয়েছিলাম একদিন । সেই কবে ১৯৯৫ সালে । হংকং থেকে ম্যানিলা ৩ ঘন্টা ১০ মিনিটের ফ্লাইট । ঢাকা - কুয়ালালামপুর ফ্লাইটের সমান । ক্যাথে প্যাসেফিক এয়ারলাইন্সের ইনফ্লাইট সার্ভিস যেমন ভালো তেমনি বিমানগুলোও প্রায় নতুনের মতো । যাত্রীও হয় প্রচুর । হংকং - ম্যানিলা মাত্র ৩ ঘন্টার ছোট দূরত্ব হলেও ক্যাথে প্যাসিফিক এই রুটেও ৭৪৭ এর মতো বড় বোয়িং ব্যবহার করে । বিমানে উঠে দেখি ৭৪৭ই আমাদের ম্যানিলা নিয়ে যাবে । যাত্রীও প্রচুর ।
হংকং বৃটিশ কলোনি থাকা অবস্থায় ক্যাথে প্যাসেফিক ফ্লাইট সার্ভিস শুরু করে। ১৯৯৭ সালে চায়নার অধীনে চলে গেলেও এই ফ্লাইট সার্ভিস চায়না বন্ধ করে নি।
ফিলিপিন্সের প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো খুব । ১৯৮৬ সালে যখন জাপান গিয়েছিলাম তখন ম্যানিলাতে ২ ঘণ্টার ট্রানজিট ছিলো ।
খুব আনন্দের ছিলো বিকেলের সেই ফ্লাইট । কৃসেলডা নামের ফিলিপিন্সের একটা মেয়ে ছিলো আমার পাশের সিটে । বয়স ২২/২৩ । আমি কথা বলতে পছন্দ করি। সহযাত্রী যেই হোক তার সঙ্গে কথা বলা হয়। কেউ না কেউ শুরু করে। ইকোনমি ক্লাশে বিমানের সীটগুলোও পাশাপাশি এবং কাছাকাছি। আমিই কথা শুরু করলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে প্রথমে তার দেশ নিয়ে কিছু কথা বললাম।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস , ফার্স্ট লেডী ইমেলদা মার্কোস( যার ৬০০০ জোড়া জুতা ছিলো ), ফিদেল রামোস ,বেনিনো আকিনো ( অনেকে বলে বেনিগনো ), যিনি আমেরিকা থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন ছেড়ে দেশে ফিরলে ম্যানিলা এয়ারপোর্টেই বিমান থেকে নামার সময় বিমানের সিঁড়িতেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিলো সম্ভবত ১৯৮৩ সালে। ফিলিপিন্সের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তিনি । তার হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী কোরাজন আকিনো মার্কোসের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । শেষ পর্যন্ত ২৫ বছরের প্রতাপশালী স্বৈরশাসক মার্কোস আমেরিকার হনলুলু দ্বীপে আশ্রয় নেন স্ত্রী ইমেলদাকে নিয়ে ।
তীব্র গন আন্দোলনের মুখে ফিলিপিন্সের আমেরিকান বিমান ঘাটি থেকে তাকে আমেরিকান বিমান বাহিনীর বিমানে হনুলুলু নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । মার্কোস আমেরিকার ভালো বন্ধু ছিলেন । কয়েক বছর পর তিনি সেখানেই মারা যান । মার্কোসের পর বেনিনো আকিনোর বিধবা স্ত্রী কোরাজন আকিনো নির্বাচনের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট হন । যায়যায়দিন একবার প্রচ্ছদও করেছিলো " কোরাজন , বুবুজান( হাসিনা) , ভাবীজান( খালেদা) " নামে । বেনিনো আকিনোর ডাকনাম ছিলো নিনয় । তার ডাক নামেই ম্যানিলা এয়ারপোর্টটির নামকরন করা হয়েছিলো " নিনয় আকিনো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট " । কৃসেলডার সঙ্গে এসব বিষয়ে গল্প
করার সময় সে খুব অবাক হয়েছিলো তার দেশ সম্পর্কে ধারণা দেখে ।
ফিলিপিন্সের প্রায় সবাই ভালো ইংরেজি জানে । ফিলিপিনো মেয়েরা খুব মিশুক । অল্প কিছু টাকা খরচ করলেই তারা অকাতরে সঙ্গ দেয় । সততা আর নিরাপত্তায় তাদেরকে বিশ্বাস করা যায় । কৃসেলডা হংকংয়ে একটা ইলেকট্রনিক্স দোকানে সেলস গার্লের কাজ করে বলে জানালো । ম্যানিলাতেই তার বাসা । ফিলিপিন্স প্রশান্ত মহাসাগরে একটা গরিব দ্বীপ দেশ । বাংলাদেশ পাসপোর্ট তখন পোর্ট অফ এন্টৃ ছিলো । পৃথিবীর প্রায় সব ধনী দেশে ফিলিফিনো মেয়েরা চাকরি করে । সৌদি আরব থেকে আমেরিকা পর্যন্ত । আমি তখন ভিয়েনায় থাকতাম , ফিলিপিন্স বেড়াতে এসেছি । আমি জানি, অনেক দেশেই অল্প সময়ের জন্য কারো বাসায় পেয়িং গেস্ট থাকা যায় । একবার বুখারেস্টে ( ১৯৯২ সালে) এক বাসায় ছিলাম মাত্র ২০ ডলারে এক মাস । আরো কতো সুযোগ সুবিধা ! এসব শুনে কৃসেলডা বললো , আমি চাইলে তার বাসায় থাকতে পারি । আমি নিম রাজী । বিমান আস্তে আস্তে নিচে নামতে লাগলো । কৃসেলডা আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে আমার হাত ধরে জানতে চাইলো Are you coming with me ? আমিও ওর হাতে ঝাঁকি দিয়ে বলেছিলাম Yes , I am. সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে আমরা ম্যানিলায় নেমে সোজা কৃসেলডার বাসায় ।
(ম্যানিলা বে (Manila Bay) বা ম্যানিলা উপসাগরের পাড়েই ম্যানিলা শহর। ওই সাগরের বাধাই করা পাড়ে বসা একটা ছবি।)
হংকং থেকে ক্যাথে প্যাসেফিক ( Cathay Pacific- হংকংয়ের এয়ারলাইন্স ) এয়ারলাইন্সে ম্যানিলা গিয়েছিলাম একদিন । সেই কবে ১৯৯৫ সালে । হংকং থেকে ম্যানিলা ৩ ঘন্টা ১০ মিনিটের ফ্লাইট । ঢাকা - কুয়ালালামপুর ফ্লাইটের সমান । ক্যাথে প্যাসেফিক এয়ারলাইন্সের ইনফ্লাইট সার্ভিস যেমন ভালো তেমনি বিমানগুলোও প্রায় নতুনের মতো । যাত্রীও হয় প্রচুর । হংকং - ম্যানিলা মাত্র ৩ ঘন্টার ছোট দূরত্ব হলেও ক্যাথে প্যাসিফিক এই রুটেও ৭৪৭ এর মতো বড় বোয়িং ব্যবহার করে । বিমানে উঠে দেখি ৭৪৭ই আমাদের ম্যানিলা নিয়ে যাবে । যাত্রীও প্রচুর ।
হংকং বৃটিশ কলোনি থাকা অবস্থায় ক্যাথে প্যাসেফিক ফ্লাইট সার্ভিস শুরু করে। ১৯৯৭ সালে চায়নার অধীনে চলে গেলেও এই ফ্লাইট সার্ভিস চায়না বন্ধ করে নি।
ফিলিপিন্সের প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো খুব । ১৯৮৬ সালে যখন জাপান গিয়েছিলাম তখন ম্যানিলাতে ২ ঘণ্টার ট্রানজিট ছিলো ।
খুব আনন্দের ছিলো বিকেলের সেই ফ্লাইট । কৃসেলডা নামের ফিলিপিন্সের একটা মেয়ে ছিলো আমার পাশের সিটে । বয়স ২২/২৩ । আমি কথা বলতে পছন্দ করি। সহযাত্রী যেই হোক তার সঙ্গে কথা বলা হয়। কেউ না কেউ শুরু করে। ইকোনমি ক্লাশে বিমানের সীটগুলোও পাশাপাশি এবং কাছাকাছি। আমিই কথা শুরু করলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে প্রথমে তার দেশ নিয়ে কিছু কথা বললাম।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস , ফার্স্ট লেডী ইমেলদা মার্কোস( যার ৬০০০ জোড়া জুতা ছিলো ), ফিদেল রামোস ,বেনিনো আকিনো ( অনেকে বলে বেনিগনো ), যিনি আমেরিকা থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন ছেড়ে দেশে ফিরলে ম্যানিলা এয়ারপোর্টেই বিমান থেকে নামার সময় বিমানের সিঁড়িতেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিলো সম্ভবত ১৯৮৩ সালে। ফিলিপিন্সের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তিনি । তার হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী কোরাজন আকিনো মার্কোসের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । শেষ পর্যন্ত ২৫ বছরের প্রতাপশালী স্বৈরশাসক মার্কোস আমেরিকার হনলুলু দ্বীপে আশ্রয় নেন স্ত্রী ইমেলদাকে নিয়ে ।
তীব্র গন আন্দোলনের মুখে ফিলিপিন্সের আমেরিকান বিমান ঘাটি থেকে তাকে আমেরিকান বিমান বাহিনীর বিমানে হনুলুলু নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । মার্কোস আমেরিকার ভালো বন্ধু ছিলেন । কয়েক বছর পর তিনি সেখানেই মারা যান । মার্কোসের পর বেনিনো আকিনোর বিধবা স্ত্রী কোরাজন আকিনো নির্বাচনের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট হন । যায়যায়দিন একবার প্রচ্ছদও করেছিলো " কোরাজন , বুবুজান( হাসিনা) , ভাবীজান( খালেদা) " নামে । বেনিনো আকিনোর ডাকনাম ছিলো নিনয় । তার ডাক নামেই ম্যানিলা এয়ারপোর্টটির নামকরন করা হয়েছিলো " নিনয় আকিনো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট " । কৃসেলডার সঙ্গে এসব বিষয়ে গল্প
করার সময় সে খুব অবাক হয়েছিলো তার দেশ সম্পর্কে ধারণা দেখে ।
ফিলিপিন্সের প্রায় সবাই ভালো ইংরেজি জানে । ফিলিপিনো মেয়েরা খুব মিশুক । অল্প কিছু টাকা খরচ করলেই তারা অকাতরে সঙ্গ দেয় । সততা আর নিরাপত্তায় তাদেরকে বিশ্বাস করা যায় । কৃসেলডা হংকংয়ে একটা ইলেকট্রনিক্স দোকানে সেলস গার্লের কাজ করে বলে জানালো । ম্যানিলাতেই তার বাসা । ফিলিপিন্স প্রশান্ত মহাসাগরে একটা গরিব দ্বীপ দেশ । বাংলাদেশ পাসপোর্ট তখন পোর্ট অফ এন্টৃ ছিলো । পৃথিবীর প্রায় সব ধনী দেশে ফিলিফিনো মেয়েরা চাকরি করে । সৌদি আরব থেকে আমেরিকা পর্যন্ত । আমি তখন ভিয়েনায় থাকতাম , ফিলিপিন্স বেড়াতে এসেছি । আমি জানি, অনেক দেশেই অল্প সময়ের জন্য কারো বাসায় পেয়িং গেস্ট থাকা যায় । একবার বুখারেস্টে ( ১৯৯২ সালে) এক বাসায় ছিলাম মাত্র ২০ ডলারে এক মাস । আরো কতো সুযোগ সুবিধা ! এসব শুনে কৃসেলডা বললো , আমি চাইলে তার বাসায় থাকতে পারি । আমি নিম রাজী । বিমান আস্তে আস্তে নিচে নামতে লাগলো । কৃসেলডা আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে আমার হাত ধরে জানতে চাইলো Are you coming with me ? আমিও ওর হাতে ঝাঁকি দিয়ে বলেছিলাম Yes , I am. সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে আমরা ম্যানিলায় নেমে সোজা কৃসেলডার বাসায় ।
(ম্যানিলা বে (Manila Bay) বা ম্যানিলা উপসাগরের পাড়েই ম্যানিলা শহর। ওই সাগরের বাধাই করা পাড়ে বসা একটা ছবি।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন