ডিজিটাল কোকেইন
পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ মানুষই এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অভ্যস্ত । এর একটা ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সমাজে । কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার শরীরেও পরছে এই প্রভাব ?
চলুন জেনে নিই এরকম কয়েকটি প্রভাবের কথা ।
* ডিজিটাল কোকেইনঃ অনলাইন আসক্তিকে মনোবিজ্ঞানীরা এখন ডিজিটাল কোকেইন নাম দিয়েছেন । ফেসবুক যারা ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই বলেছেন, একটু পর পর ফেসবুকে ঢুকে তাদের দেখতে ইচ্ছে করে নতুন কোনো নোটিফিকেশন এলো কিনা ?আর একবার ঢুকলে কিভাবে যে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায় তা যেন তারা টেরই পান না । শোনে মাদক আসক্তির মতো মনে হচ্ছে না ?
ব্রেন স্কেনে মাদকাসক্ত আর অনলাইন আসক্তদের একই রকম ছবি দেখা গেছে । দুজনেরই মস্তিষ্কের সামনের ওয়েব ম্যাটারগুলো ক্ষয়ে যাওয়া । ব্রেনের ওয়েব ম্যাটার নিয়ন্ত্রন করে মানুষের আবেগ, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকে । আর তা ক্ষয়ে যাওয়া মানে এই ক্ষমতাগুলো কমে যাওয়া ।
কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রনহীন ব্যবহার আপনার আবেগকে ভারসাম্যহীন করতে পারে । নষ্ট করতে পারে আপনার মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থকে ।
মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃস্বরন ঘটে প্রতিনিয়ত । কিন্তু হঠাৎ যদি এমন কিছু ঘটে যা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো তখন আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় এই ডোপামিনের প্রবাহ । এবং ভালোলাগাকে আরো বাড়াতে ব্রেন তখন কারণটাকে আরো বাড়াতে বলে । প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডোপামিন এবং ভালোলাগার সাময়িক অনুভূতিকে ক্রমাগত বাড়াতে চাওয়া, এটার নামই আসক্তি ।
* মনোযোগের ক্ষমতা নষ্টঃ কেউ কেউ ভাবতে পারেন কাজের মাঝে একটু পর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু মেরে আপনি একজন দক্ষ মাল্টি টাস্কার হয়ে উঠছেন । ভুল । বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে মানুষেরা একাধিক কাজের দক্ষতা তাদের অন্যদের চেয়ে কম থাকে । বরং তাদের মনোযোগ এতো বেশি বিক্ষিপ্ত যে, এর ফলে তাদের স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে অন্যদের চেয়ে দ্রুত ।
* ভৌতিক কলঃ কোনো কল বা ম্যাসেজ আসেনি কিন্তু আপনার মনে হয়েছে মোবাইলটা বেজে উঠেছে । বা পকেটে থাকা ফোন সেটটা কাঁপছে ? যদি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ফ্যান্টম ভাইব্রেশন বা ভৌতিক কল সিনড্রোমে আক্রান্ত । আর এর কারন হলো, আধুনিক সময়ে মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার মস্তিস্কের ভেতরে যে হ্যালোসিনেশন বা বিভ্রম তৈরি করছে, তা ।
একটা জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যতজন ছাত্রছাত্রীকে এর কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তাদের ৯০ ভাগেরই এই ফ্যান্টম ভাইব্রেশনের অভিজ্ঞতা রয়েছে । স্মার্ট ফোন আমাদের এতোই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, একটু পর পর আমরা নিজের অজান্তেই মোবাইল হাতে তুলে নিই দেখার জন্য যে, কেউ এসএমএস বা মেইল করলো কিনা বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু এলো কিনা ?
* আত্নকেন্দ্রিকঃ শোনতে অবাক লাগলেও এটাই একটা বাস্তবতা যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আসলে আপনাকে অসামাজিক করে তুলছে । বিচ্ছিন্ন আর স্বার্থপর করে তুলছে । গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ যখন সামনাসামনি আরেকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তখন সে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বিষয় নিজের বিষয়ে কথা বলে । বাকিটা শোনে । কিন্তু একজন মানুষ যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দেয় সে আশি ভাগ সময় ব্যয় করে নিজেকে নিয়ে বলতে ।
*স্বপ্নভঙ্গঃ আমরা প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচয় তারপর তার থেকে প্রেম বা পরিণয়ের কথা শুনি । কিন্তু এদের একটা বড় অংশই পরে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারে না । স্বপ্নভঙ্গের কারনে । কারন ভার্চুয়াল জগতের মানুষ আর রক্ত মাংসের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই এক হয় না । অনলাইনে যে তরুণকে অসাধারণ প্রেমিক পুরুষ মনে হয়েছিলো, বাস্তবে তাকে বদ মেজাজি, খুনসুটে সঙ্গী হিসেবে আবিষ্কার করা খুব বিচিত্র কিছু নয় । তেমনি অপ্সরাদের মতো দেখতে ফেসবুকের তরুণীটি যে বাস্তবেও এমন হবে তার কি নিশ্চয়তা আছে ?
* সাইবার বুলিঃ অনলাইনে ঢুকে গালিগালাজ বা অশ্লীল ভাষা বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য ও হুমকি পেয়েছেন এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে,সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করছেন বা অনলাইনে গেইম খেলেছেন এমন শতকরা ৭৯ জন মানুষই সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়েছেন । যাদের জীবনে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে । যৌন হয়রানি, অর্থনাস, সম্মানহানি, এমন কি আত্নহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে অনেকের ক্ষেত্রে ।
তাই, তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করুন । ঠুনকো এই যোগাযোগের চেয়ে আপনার দীর্ঘ সুস্থতা, মনের সুস্থিরতা অনেক বেশি দামি।
,2018
পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ মানুষই এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অভ্যস্ত । এর একটা ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সমাজে । কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার শরীরেও পরছে এই প্রভাব ?
চলুন জেনে নিই এরকম কয়েকটি প্রভাবের কথা ।
* ডিজিটাল কোকেইনঃ অনলাইন আসক্তিকে মনোবিজ্ঞানীরা এখন ডিজিটাল কোকেইন নাম দিয়েছেন । ফেসবুক যারা ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই বলেছেন, একটু পর পর ফেসবুকে ঢুকে তাদের দেখতে ইচ্ছে করে নতুন কোনো নোটিফিকেশন এলো কিনা ?আর একবার ঢুকলে কিভাবে যে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায় তা যেন তারা টেরই পান না । শোনে মাদক আসক্তির মতো মনে হচ্ছে না ?
ব্রেন স্কেনে মাদকাসক্ত আর অনলাইন আসক্তদের একই রকম ছবি দেখা গেছে । দুজনেরই মস্তিষ্কের সামনের ওয়েব ম্যাটারগুলো ক্ষয়ে যাওয়া । ব্রেনের ওয়েব ম্যাটার নিয়ন্ত্রন করে মানুষের আবেগ, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকে । আর তা ক্ষয়ে যাওয়া মানে এই ক্ষমতাগুলো কমে যাওয়া ।
কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রনহীন ব্যবহার আপনার আবেগকে ভারসাম্যহীন করতে পারে । নষ্ট করতে পারে আপনার মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থকে ।
মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃস্বরন ঘটে প্রতিনিয়ত । কিন্তু হঠাৎ যদি এমন কিছু ঘটে যা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো তখন আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় এই ডোপামিনের প্রবাহ । এবং ভালোলাগাকে আরো বাড়াতে ব্রেন তখন কারণটাকে আরো বাড়াতে বলে । প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডোপামিন এবং ভালোলাগার সাময়িক অনুভূতিকে ক্রমাগত বাড়াতে চাওয়া, এটার নামই আসক্তি ।
* মনোযোগের ক্ষমতা নষ্টঃ কেউ কেউ ভাবতে পারেন কাজের মাঝে একটু পর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু মেরে আপনি একজন দক্ষ মাল্টি টাস্কার হয়ে উঠছেন । ভুল । বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে মানুষেরা একাধিক কাজের দক্ষতা তাদের অন্যদের চেয়ে কম থাকে । বরং তাদের মনোযোগ এতো বেশি বিক্ষিপ্ত যে, এর ফলে তাদের স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে অন্যদের চেয়ে দ্রুত ।
* ভৌতিক কলঃ কোনো কল বা ম্যাসেজ আসেনি কিন্তু আপনার মনে হয়েছে মোবাইলটা বেজে উঠেছে । বা পকেটে থাকা ফোন সেটটা কাঁপছে ? যদি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ফ্যান্টম ভাইব্রেশন বা ভৌতিক কল সিনড্রোমে আক্রান্ত । আর এর কারন হলো, আধুনিক সময়ে মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার মস্তিস্কের ভেতরে যে হ্যালোসিনেশন বা বিভ্রম তৈরি করছে, তা ।
একটা জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যতজন ছাত্রছাত্রীকে এর কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তাদের ৯০ ভাগেরই এই ফ্যান্টম ভাইব্রেশনের অভিজ্ঞতা রয়েছে । স্মার্ট ফোন আমাদের এতোই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, একটু পর পর আমরা নিজের অজান্তেই মোবাইল হাতে তুলে নিই দেখার জন্য যে, কেউ এসএমএস বা মেইল করলো কিনা বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু এলো কিনা ?
* আত্নকেন্দ্রিকঃ শোনতে অবাক লাগলেও এটাই একটা বাস্তবতা যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আসলে আপনাকে অসামাজিক করে তুলছে । বিচ্ছিন্ন আর স্বার্থপর করে তুলছে । গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ যখন সামনাসামনি আরেকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তখন সে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বিষয় নিজের বিষয়ে কথা বলে । বাকিটা শোনে । কিন্তু একজন মানুষ যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দেয় সে আশি ভাগ সময় ব্যয় করে নিজেকে নিয়ে বলতে ।
*স্বপ্নভঙ্গঃ আমরা প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচয় তারপর তার থেকে প্রেম বা পরিণয়ের কথা শুনি । কিন্তু এদের একটা বড় অংশই পরে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারে না । স্বপ্নভঙ্গের কারনে । কারন ভার্চুয়াল জগতের মানুষ আর রক্ত মাংসের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই এক হয় না । অনলাইনে যে তরুণকে অসাধারণ প্রেমিক পুরুষ মনে হয়েছিলো, বাস্তবে তাকে বদ মেজাজি, খুনসুটে সঙ্গী হিসেবে আবিষ্কার করা খুব বিচিত্র কিছু নয় । তেমনি অপ্সরাদের মতো দেখতে ফেসবুকের তরুণীটি যে বাস্তবেও এমন হবে তার কি নিশ্চয়তা আছে ?
* সাইবার বুলিঃ অনলাইনে ঢুকে গালিগালাজ বা অশ্লীল ভাষা বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য ও হুমকি পেয়েছেন এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে,সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করছেন বা অনলাইনে গেইম খেলেছেন এমন শতকরা ৭৯ জন মানুষই সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়েছেন । যাদের জীবনে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে । যৌন হয়রানি, অর্থনাস, সম্মানহানি, এমন কি আত্নহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে অনেকের ক্ষেত্রে ।
তাই, তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করুন । ঠুনকো এই যোগাযোগের চেয়ে আপনার দীর্ঘ সুস্থতা, মনের সুস্থিরতা অনেক বেশি দামি।
,2018
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন