সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাবেরী ও এক নিস্কলুষ ভালোবাসা





























কাবেরী ও এক নিস্কলুষ ভালোবাসা

কাবেরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১৬ সালের জুন মাসে । আজ থেকে দুই বছর আগে । ফেবুতে আমরা বন্ধু হই । তারপর ঘনিষ্ঠতা । তাঁর পুরো নাম কাবেরী মির্জা । প্রথম যখন বন্ধু হই তখনো কাবেরীর প্রোফাইলে তেমন কিছুই ছিলো না । শুধু লেখা ছিলো Lives in Dhaka. তাঁর হোম ডিস্ট্রিক্টও উল্লেখ ছিলো না ।
অন্য অনেকের মতো কাবেরীও আমার লেখা খুব পছন্দ করতো । আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন যে, এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন ম্যাগাজিনে তরুণ লেখকদের মধ্যে আমি বেশ জনপ্রিয় ছিলাম । ফেবুতে আমার লেখার স্টাইলও অনেকটা সে ধরণের । আমি জনপ্রিয় ছিলাম তা বর্তমানে নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী Lovloo Reza, যিনি যায়যায়দিনের বিশাল কর্মী বাহিনীর একজন তিনি যেমন জানেন, অত্যন্ত আন্তরিক জুনিয়র বন্ধু তৎকালীন যায়যায়দিনের গবেষণা সহকারী সজীব ওনাসিস ও তার স্ত্রীও জানেন আমার জনপ্রিয়তা । সজীবের স্ত্রী Farhana Tania আমার লিস্টে আছেন । তিনিও একজন সাংবাদিক । আমি সজীবের শ্যামলীর বাসায় অনেক গিয়েছি, খেয়েছি, রাতে থেকেছিও । সজীব ওনাসিনের বাবা মাও আমাকে লেখক হিসেবে চেনেন ।সজীবের বড় ছেলে তৃপ্ত আমাকে মিনিটে ২০ বার মন্টু মামা ডাকতো । এই নিয়ে আমি একদিন সজীব, তানিয়াকে বলেছিলাম, আমার দেড় ডজন ভাগিনা ভাগ্নীও জীবনে এতো মামা ডাকেনি তোমাদের ছেলে আমাকে যতো বার মামা ডেকেছে।
আমার লিস্টে আছেন ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা Shahed Md Sharif. তিনিও আমার লেখার ভক্ত ছিলেন খুব । পরে মৌচাকে ঢিল ম্যাগাজিনে লেখার মাধ্যমে এই জেনারেশনেরও অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় । তাদের মধ্যে অন্যতম রাজশাহীর Kakon Quazi. আমার লিস্টে আছেন ।
লন্ডন প্রবাসী ডাক্তার Masum Billah এবং প্যারিস প্রবাসী Dipak Borua, জার্মানি প্রবাসী Md Ferdous ও টেক্সাস প্রবাসী অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় মি. Matiur Rahman, আরেকজন আমেরিকা প্রবাসী বন্ধু আছেন মি. Mahmood Ali,একজন ইন্ডিয়ান ডাক্তার Samim Ahmed ও তাঁর স্ত্রী Shahida Samim এর সঙ্গেও আমার আন্তরিকতা এই লেখালেখির কারনে। সবার সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব লেখালেখির জন্য। ওয়াশিংটন ডিসিতে আছেন Shireen Afzal, নিউ ইয়র্কে আছেন Nasrin Haq, Zakia Sultana, ফ্লোরিডায় Chowdhury Erfanul Kabir , Imtiaz Ahmed এই দুইজন আমার ব্যক্তিগত বন্ধু হলেও তারাও জানে আমি লেখালেখি করতে পছন্দ করি।
বাহুল্য হলেও বলবো, বাংলাদেশের সব জেলায় আমার পাঠক বন্ধু আছেন । ২০০০ সালে সম্পাদক মি.শফিক রেহমান ও মিসেস তালেয়া রেহমান ফ্লোরিডা বেড়াতে গিয়ে আমাকে বলেছিলেন, তোমার লেখা ছাপা হলে মেলব্যাগে পাঠকের চিঠি আসে বেশি ।
আমি বিদেশের অভিজ্ঞতার কথা বেশি লিখি এবং আমার লেখায় প্রচুর ফান থাকে । হয়তো কাবেরী সেটিই বেশি পছন্দ করেছিলো । যতোদিন আমরা বন্ধু ছিলাম ফেবুতে ততোদিন আমার এমন কোনো পোস্ট নেই যেখানে কাবেরীর ফানি কমেন্ট ছিলো না । এই পোস্টে তাঁর কিছু কমেন্টও দিলাম । প্রথম কাবেরীর ফেসবুকে বাংলা নাম ছিলো ‘কাবেরী মির্জা’ নামে । তারপর আমি অনুরোধ করে সেটা ইংরেজিতে লিখতে বলি এবং তার হোম ডিস্ট্রিক্ট উল্লেখ করে প্রোফাইলে যেন তার মেরিটাল স্ট্যাটাস দেয় সে জন্য অনুরোধ করি । কাবেরী আমার কথা রেখেছিলো ।
ফেসবুক প্রতিদিনই কিছু আগের পোস্টের মেমোরি দেখায় । সে সব পোস্টে কাবেরীরও কমেন্ট ছিলো । আগে Kaberi লিখলেও ইদানীং দেখি তার নামের বানান পরিবর্তন করে Kabery  করেছে ।
আমি অনেক ব্যক্তিগত, পারিবারিক কথাও ফেবুতে লিখি । কাবেরী সবই পড়তো আর কমেন্ট করতো । আমিও মাঝে মাঝে কমেন্টের জবাব দিতাম । এভাবে একটা সখ্য গড়ে উঠেছিলো আমাদের মাঝে ।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে একদিন রাত সাড়ে নয়টায় আমার ফোনটা বেজে উঠে । দেখলাম একটা আননোন এয়ারটেল নাম্বার থেকে কল । ধরে হ্যালো বলতেই সালাম পেলাম । তিনি নিজেই তার পরিচয় দিলেন যে, তিনি কাবেরী মির্জা । ঢাকা থেকে বলছেন । যে কোনো লেখকের কাছে তার ফ্যানদের ভালোবাসা খুব গুরুত্বপূর্ন। লেখক এতে বেশি উৎসাহিত হয় । ফেসবুকে তিন চার লাইন লিখলাম, আর অনেক লাইক, কমেন্ট পেলাম তাতে আমি মোটেও আনন্দিত হই না । ফেবুর লেখা আর পত্রিকার লেখা আকাশ পাতাল পার্থক্য । পত্রিকায় নির্দিষ্ট শিক্ষিত পাঠক থাকে যা ফেসবুকে খুবই সামান্য ।
আমি জানতে চাইলাম, আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছেন ? তিনি জানালেন, ফেবুর প্রোফাইলে আমার ফোন নাম্বার উমুক্ত করা আছে সেখান থেকেই নিয়েছেন ।
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি বললেন, তাকে যেন আমি ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করি । কারন সে বয়সে আমার প্রায় ১৮/২০ বছরের ছোট । সেদিন আমরা প্রায় ২ ঘন্টা কথা বলেছিলাম । তিনি জানালেন, আমার পোস্ট তাঁর খুব ভালো লাগে তাই আমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা থেকেই তিনি ফোন করেছেন । এরপর আমি তার হাসব্যান্ড Golam Kibriaর লিস্টেও যাই । যিনি পরে নাম বদলে Mirza Mamun নামে ফেসবুক চালায় ।
সেদিনের পর থেকে কাবেরী প্রতিদিন আমাকে কয়েকবার ফোন করতো । আমি তখন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি পড়াতাম । অনেক সময় ক্লাশ টাইমেও কাবেরী ফোন করতো । সে সময় বিকেল ৫টার পর আমার কাছে কয়েকজন মেয়ে ইংরেজি পড়তো বাসায় এসে । অনেকদিন কাবেরী ওই সময় ফোন করতো । আমি কথা বলতাম । আমার প্রায় সব ছাত্রীই কাবেরীর নাম জানে । আমিই বলেছিলাম । মনে অপরাধবোধ না থাকলে সব কথাই বলা যায় । অনেক সময় ছাত্রীরা ক্লাশে জিজ্ঞেস করতো, স্যার, কাবেরী আপু কেমন আছেন?
কাবেরী আমাকে কখনোই নাম ধরে সম্বোধন করতো না । প্রথম কয়েকদিন কথা বলে কাবেরী আমার অনুমতি চাইলো এই বলে যে, আপনি তো আমার অনেক সিনিয়র । আমি যদি একজন জুনিয়র বন্ধু হয়ে আপনাকে তুমি সম্বোধন করি আপনি কি কিছু মনে করবেন ? আমি অনুমতি দিয়েছিলাম । সেই থেকে কাবেরী আমাকে ‘তুমি’ সম্বোধনে ডাকে । তবে ফেবুর পোস্টে চৌধুরী, মন্টু বলে ফানি কমেন্ট করলেও ফোনে কথা বলার সময় কাবেরী কোনোদিনই আমাকে নাম ধরে ডাকেনি । কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে জানা হলো, কাবেরী বিবাহিতা, দু’ছেলের মা । বয়স ২৭/২৮ বছর । বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার দশগড়িয়া গ্রামে । বাবার নাম মি. আজিজুর রহমান খান । মায়ের নাম মিসেস মোমেনা বেগম । এক ভাই, দু’বোন তারা । ভাই বড় । নাম কাইয়ুম । এরপর কাবেরী । ছোট বোন কলি । বর্তমানে ঢাকা মোহাম্মদপুর নিজেদের বাসায় থাকে । বাবা মা,ভাই বোন চাটখিলেই আছেন । আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, তোমরা ভাই বোন সকলের নাম 'ক' দিয়ে ! কাইয়ুম, কাবেরী,কলি । আমার নামও ' দিয়ে । ঘটনা কি ? এতো মিলে গেলো কেন ?
কাবেরী বলেছিলো, এটাও একটা মিরাকল ।
একদিন বললাম, তোমার সঙ্গে কথা বলি কিন্তু আমিও তোমার নাম ধরে কথা বলতে বিব্রতবোধ করি । আমার সেজো আপার ডাকনাম মণি । আমি তোমাকে আমার বোনের ওই আদুরে নামে ডাকলে তুমি কি কিছু মনে করবে ? কাবেরী খুশি হয়ে আমাকে অনুমতি দিয়েছিলো । সেই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত দেড় বছর আমি কাবেরীকে মণি বলেই ডাকতাম ।
কাবেরী সব সময় আমার খোঁজ নিতো । অনেকদিন সকালে ফোন করে আমাকে জাগিয়ে দিতো । আমি একা থাকি । এবং একা থাকতে পছন্দও করি । বাবা, মা জীবিত নেই । জেমিমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও আমরা আলাদা থাকি । এসব কারনে আমার জন্য তার মনে একটা মায়া জেগেছিলো সেটা আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম । অনেক সময় ফোনে রাগারাগিও হতো । বিশেষ করে কাবেরীর পোস্টে বেশিরভাগ ছেলে খুব ফ্রেন্ডলি কমেন্ট করতো আর কমেন্টে কাবেরীকে তুমি বলে সম্বোধন করতো যা আমার কাছে ভালো লাগতো না । এদের অনেকেই কাবেরীর জুনিয়র । শিক্ষাদীক্ষাও এদের কাবেরীর চেয়ে কম । একজনের স্ত্রী এবং দু’সন্তানের মাকে শুধু ফেসবুক বন্ধু তুমি বলে সম্বোধন করতে পারে না একমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্নীয় ছাড়া । এটা আমার মত । আর বিবাহিতা এবং দু সন্তানের মা হলেও কাবেরী প্রায়ই সব সময় নিজের একা আকর্ষণীয় ছবি ফেবুতে আপলোড করে। আর সেই সব ছবিতে দুনিয়ার ছেলেরা লাভ রিয়েক্ট দিয়ে রোমান্টিক কমেন্ট করে। কাবেরীও রোমান্টিক উত্তর দেয় যা শুধু অশোভন নয়, গুরুতর অন্যায়। তাছাড়া কাবেরীর ফ্রেন্ডলিস্টে তার কয়েকজন মেয়ে আত্নীয় ছাড়া সব অনাত্মীয় ছেলে! কাবেরীর ফ্রেন্ডলিষ্ট হাইড থাকে। কেন এতো গোপনীয়তা? এ নিয়েও আমি আপত্তি করেছিলাম। এখন বুঝি কেন? মামুন তার ব্যবসায়িক স্বার্থে কাবেরীকে ফ্রন্টলাইনে রাখে। তারপরও অনিচ্ছা স্বত্বেও আমি তা মেনে নিই। যেখানে তার স্বামীর আপত্তি নেই সেখানে আমি কে?
আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্ক মধুর থেকে মধুরতম হয়ে উঠলো । চাটখিলের অনেকেই আমার বন্ধু হলেন। উল্লেখযোগ্য Nasima Sultana, Taslima Sultana Khanom, Mafruya Hasan Porny, Mamun Hasan Al Razi, সাহিদুল ইসলাম শাওন, Jabed Kayes Arrianসহ আরো অনেকেই। এরা সবাই কাবেরীর আত্নীয়। আমার কাছে মনে হতো চাটখিল আমার নিজের এলাকা। তাদের কেউ এখন আমার লিস্টে নেই।
আমার পোস্ট নিয়ে কাবেরী, তার স্বামী মামুন এবং মামুনের বন্ধুরা গল্প করতেন বলে কাবেরীই আমাকে জানিয়েছিলো ।
২০১৬ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর । ছয় মাস । ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় আমি বাসায় শুয়ে টিভি দেখছিলাম । এমন সময় আমার নাম্বারে জিপি থেকে একটা কল এলো । আমি রিসিভ করতেই এক ভদ্রলোক বললেন,করিম সাহেব, আপনি কোথায় ? আমি কাবেরীর হাসব্যান্ড মামুন । আমরা আপনার বাসার নীচে
আমি বিস্ময়ে হতবাক ! সেদিন আমি তাদের ছবিসহ লিখেছিলাম...
কি লিখবো ? কি হলো ? কেন হলো ? কেমন করে হলো ?
আমি অবাক, আশ্চার্য, বিমোহিত, আনন্দিত, কিংকর্তব্যবিমুঢ়, অবিশ্বাস্য ! এটা কেমন করে সম্ভব ? আমি কি পারবো এই ভালোবাসা আর আন্তরিকতার বিনিময় দিতে কোনোদিন ? কেন আমাকে এই চিরজীবনের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করলো তারা ? আমি ‘করলো’ লিখেছি । ‘করলেন’ লিখিনি । কারন আজ থেকে আমি তাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড ।
আমি কি লিখবো ? কেমন করে লিখবো ? কিভাবে সাজাবো এই লেখা আমি জানি না । আমার ভাষা নেই । I've really lost my language to express my actual feeling. I'm speechless. আমার ভাষা এলোমেলো হয়ে গেছে । কোন ভাষায় লিখলে এই বন্ধুত্বের প্রকৃত মর্যাদা দেয়া যায় ? আমি কিছুই জানি না ।
আমার ফেসবুক বন্ধু Kabery Mirzaএকটু আগে আমার বাসায় এলো । সে আমার সব পোষ্ট পড়ে । পছন্দ করে । আমার সম্পর্কে অনেক জানে । ফেবুর লেখা পড়েই । আমাকে নিয়ে তার বাসায় ভাইবোন, মা, স্বামী(মামুন)র সঙ্গেও কথা বলে ।
তারা নোয়াখালী থেকে এসেছে । আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । আমি খেয়াল করলাম, আমি স্বাভাবিক নেই । এটা কি হলো ? এভাবে আননোটিসড কেউ আমার কাছে আসবে তাও শুধু ফেসবুক বন্ধু এটা নিঃসন্দেহে স্বাভাবিক ঘটনা নয় ।(আমাকে আজি মামুন প্রথম ফোন করে। ফেসবুকে আমার ফোন নাম্বার উম্মুক্ত আছে। সেখান থেকেই নিয়েছে। )
আমি চার তলা থেকে নেমে গেলাম । কাবেরী গাড়ি থেকে নামলো । এই প্রথম আমাদের সামনা সামনি দেখা ! একটা ব্যাগ হাতে । আমার সঙ্গে চার তলায় উঠে এলো একা । অন্যরা গাড়িতেই ছিলো । আমার রুমে এসেই ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে বললো, আমার মা তোমার জন্য পুডিং বানিয়ে দিয়েছে । আর এই ক্যান্ডি/ আচার তোমার জন্য কক্সবাজার থেকে এনেছি ।
বলেই চলে যেতে চাইলে, আমি বললাম, একটু বসো । আমি নিচে গিয়ে ওদের নিয়ে আসি । না, সে বসবে না । ওরাও আসবে না । আমি খুব বিচলিতবোধ করছিলাম । করার কথাও। চারতলায় আমি আর কাবেরী ছাড়া কেউ নেই। কাবেরীর পেছনে পেছনে প্রায় দৌঁড়ে নিচে নেমে দেখি গাড়ির সামনের বাঁ দিকের সীটে মামুন আশিককে কোলে নিয়ে, ডানে ড্রাইভার,পেছনে কাবেরী আর তার এক বোন । তবে কলি নয় । আমি মামুন ভাইকে সবাইকে নিয়ে বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানালাম আন্তরিকভাবে । মামুন বললো, এখন আর ভাই না । বন্ধু । আজ জার্নিতে আছি অন্য একদিন আসবো ।
আমি তাদেরকে দুই একটা বইও গিফট করতে পারলাম না !!!! তাদের গাড়ি চলতে শুরু করলো । আমি হাত নেড়ে বিদায় জানালাম ।
কাবেরীর মা’কে আমি খালাম্মা অথবা মা’ও ডাকতে পারি । আমার মা, বাবা কেউ বেঁচে নেই । মা'র বানানো পুডিং আমি একটু খেয়েছি । আজ আর ভাত খাবো না । সবটা পুডিং খাবো ভাবছি । পারবো কিনা জানি না । আল্লাহ মা বাবাকে সুস্থ রাখুন ।
কাবেরী/মামুন যে কোনো প্রয়োজনে ডেকো । আমি থাকবো প্রয়োজনে তোমাদের পাশে । থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ । আমার একাকি জীবনে একটা অভূতপূর্ব নতুন বছর উপহার দেয়ার জন্য
সেদিন যা লিখিনি তা আজ লিখছি, এবং মামুনকে আন্তরিক অনুরোধ করবো যেন কাবেরীকে ভুল না বুঝে । কাবেরী সৎ আর মহৎপ্রাণ এক মেয়ে। কাবেরী আমার খাটে ৩০ কি ৪০ সেকেন্ড বসেছিলো । আমি পাশে বসতেই কাবেরী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো,
তুমি নিজেকে একা মনে করবা না । আমি আছি না তোমার পাশে  ?
আমার কাছে তখন মনে হয়েছিলো, আমার কোনো বোন বা ভাগ্নী আমাকে এমন আদর করে বলছে । উল্লেখ্য, আমি পরিবারে সবার ছোট । আমার বেশ কয়েকজন ভাগ্নি কাবেরীর ১৫/২০ বছরের বড় । তাদের অনেক ছেলে মেয়ের বিয়েও হয়ে গেছে ।
আমার ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখের ওই পোস্ট কমেন্ট অপশনে দিলাম ।
এভাবে কাবেরী প্রতিদিন ফোনে আমার খোঁজ নিতো । আমরা অনেক ফানি কথা বলতাম । একদিন বললাম, দেখো মণি, ছোট থাকতে জেমিমা আমাকে প্রায়ই বলতো,
বাবা, তুমি আমার বড় বন্ধু আর আমি তোমার ছোট বন্ধু । আর ছাগলের বাচ্চা নিয়ে খেলা করতে করতে জেমিমা বলতো,
বাবা, তুমি বড় ছাগল আর আমি ছোট ছাগল
এখন দেখি সত্যি সত্যি আমি তোমার বড় বন্ধু আর তুমি আমার ছোট বন্ধু । এরপর ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ দুপুরে মণি আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, এই পাগলু, তোমার কি খেতে ইচ্ছা করে ? আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, কেন ?
মণি বললো, মামুন আজ নোয়াখালী যাবে তাই তোমার জন্য আমি রান্না করে দেবো । আমি বললাম, হাঁসের মাংস । মণি মাঝে মাঝে আমাকে পাগলু বলতো।
এভাবে বেশ সুখেই দিন কাটছিলো । ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় মামুন ফোন করে বললো, করিম ভাই, আমরা আপনার বাসার পাশেই মায়ামি হোটেলে । চলে আসুন । আপনার বন্ধু আপনার জন্য হাঁসের মাংস রান্না করে দিয়েছেন । বললাম, আমি আসছি ।
আমি মায়ামিতে গিয়ে দেখি আটজনের এক বিরাট দল । সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম । সবাই মিলে পরোটা, সবজি, মুরগি তারপর চা খেলাম । বিল মামুনই দিলো । খাওয়া দাওয়া শেষে বাইরে এসে বেশ খানিকক্ষণ মজা করা হলো । ছবি তুললাম । ছবি তোলা নিয়ে আরো কাহিনী । মামুন ছাড়া বাকি সাত জনের সঙ্গেই আজ প্রথম পরিচয় । মনেই হয়নি তাদের সঙ্গে আজি আমার প্রথম পরিচয় । তাদের নাম ...
১। গোলাম কিবরিয়া বা মির্জা মামুন
২। এ.আর. ডন Ar Doneআমার লিস্টে আছেন ।
৩। শামিম চৌধুরী
৪। জুয়েল / জুয়েল রানা।
৫। রাজু আহমেদ
৬। জাহাঙ্গীর আলম
৭। সাজু
৮। তালেব
তাদের গাড়িতেই আমাকে বাসায় ড্রপ করে গেলো । উল্লেখ্য যে,আমি ট্রাউজার পরেই গিয়েছিলাম ।
ওই রাতেই মামুন গাড়ি থেকে ফোন করে বললো, করিম ভাই, আমাদের কিছু রসমালাই লাগবে । কাল যেতে নিয়ে যাবো ঢাকায় । আমি জানতে চাইলাম, কতো কেজি লাগবে ? তিনি বললেন, ৫ কেজি । পরদিন আমি আর্লি ঘুম থেকে জেগেই গেলাম শহরের মনোহরপুরে অবস্থিত মাতৃ ভান্ডারে । ১০টা, ১১টার পর ওই দোকানে আর রসমালাই পাওয়া যায় না । কুমিল্লা জেলায় এই একটি মাত্র মিষ্টান্ন দোকানের রসমালাই-ই অরিজিনাল । আর সব ডুপ্লিকেট । তাদের কোনো শাখা নেই । আমি ৫ প্যাকেটে ৫ কেজি রসমালাই কিনে এলাম জিলা স্কুল রোডে । এখানে সব লাইব্রেরি । আমার স্কুল, কলেজ জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিলো এই জিলা স্কুল রোডে । মণির জন্য কয়েকটা বিদেশি লেখকের অনুবাদ করা বই কিনলাম । রসমালাইগুলো এনে ফ্রিজে রেখে দিলাম । যাওয়ার পথে দিয়ে দেবো বলে । মামুন যাবার সময় কল করলো । আমার বাসা বিশ্বরোডের পাশেই । মণির জন্য কেনা বই আর রসমালাইগুলো দিলাম । তারা চলে গেলো । কিছুক্ষণ পর মামুন ফোন করে বললো, করিম ভাই, তাড়াহুড়ার মাঝে আপনাকে রসমালাই এর টাকা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম । আমি ফান করে বললাম, আগে খেয়ে দেখুন ভালো কিনা । বিফলে মাগনা । ওই দিন মানে ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ আমি এই নিয়ে যে পোস্ট লিখেছিলাম কমেন্ট অপশনে তার লিংকও দিলাম ।
দিন যায় । রিলেশন বাড়তে থাকে । মামুনও আমাকে ফোন করে খোঁজ খবর নেয় । আমি দিন দিন কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ি তাদের কাছে ।
এইতো গত-কোরবানী ঈদের পরদিন সকাল সাতটায় মামুন আমাকে ফোন করেছিলো ।
করিম ভাই, আমরা আপনার বাসার নিচে । আসেন । আমি গেলাম । আমাকে পুরো ঈদের খাবার দিলো । মণি আশিককে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে সালাম দিলো । যা আমি ফেবুতেও লিখেছি । আগের বার আমি মণির জন্য আমার বেশ কিছু লেখা যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো সেই ম্যাগাজিনগুলো দিয়েছিলাম মামুনকে । সেগুলো পড়ার পর ফেরত দিলো । চলে গেলো । আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট হলাম এবার । ঘন্টা খানেক পর আমি মামুনকে একটা এসএমএস করি এমন...
কাউকে কিছু দিতে হলে তার বাসায় এসে দিতে হয় । কাউকে কিছু দিলেই মহৎ হওয়া যায় না । মহৎ হতে হলে মহত্ববোধ থাকতে হয় । আপনি আমাকে ফোন করে নিচে ডেকে নিয়ে খাবার বা গিফট দেন । এটা কি খুব শোভন ? আমি কি রাস্তার কেউ ? আমি কি না খেয়ে থাকি ?
আমার এসএমএস পেয়ে মামুন ফোন করে বললো, ভাই, আজি ঢাকা ফিরবো । যাওয়ার পথে আপনার বাসায় চা খেয়ে যাবো । প্লিজ কিছু মনে করবেন না ।”
বেশ । আমি সারাদিন তাদের জন্য বসেছিলাম বাসায় । তারা এলো না ! তাদের জেলা থেকে ঢাকা যেতে হলে কুমিল্লার উপর দিয়ে যেতে হয় । আর আমার বাসাটা ঠিক বিশ্ব রোডের পাশেই । আমি খুব মাইন্ড করলাম । চা খেয়ে যাবে বলে আমাকে বাসায় বসিয়ে রেখে তাদের চলে যাওয়া কতোটা শোভন হয়েছে ? মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে । এপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করা যায় । আমাকে একটা ফোন করে বলে দেয়া কি তাদের উচিৎ ছিলো না ? এটাতো একটা মিনিমাম কার্টেসি। মামুন এই কার্টেসি জানে না? সেই থেকেই সম্পর্কের অবনতি। আমি ভাবলাম, আমি একা থাকি বলে হয়তো করুণা করে ঈদের খাবার দিয়ে গেছে । এখানে কোনো আন্তরিকতা নেই । যাযাবরের মতোই আমি কাঁচকে ভেবেছি হীরা ।
তবু চলছিলো ভালোই । ফেবুতে আমার পোষ্টে তাদের, বিশেষ করে কাবেরীর কমেন্ট নিয়মিত থাকতো । আমিও কাবেরীর পোষ্টে কমেন্ট করতাম । মামুনের ফেসবুক একাউন্ট থাকলেও সে কিছু লিখে না । তাদের সঙ্গে প্রায় পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেলো । আমি যদিও আমার বাসায় তাদের ইনভাইট করেছিলাম কিন্তু তারা কখনো আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলেনি । যদিও আমি জেমিমার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের খুব কাছাকাছি যাই ঢাকায় ।
গত বছর ঈদ হয়েছিলো সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখ । ঈদের দু’দিন পর জেমিমা ও তার মা কুমিল্লা এসেছিলো । ওই সময় আমি একটা কম্পিউটার ট্রেইনিং সেন্টার খোলেছিলাম । দুপুরে অফিসেই আমরা খাচ্ছিলাম । এমন সময় কাবেরী ফোন করেছিলো । কাবেরী আমার সব কিছু জানতো । ফোন করলেই আমি সব বলতাম । তাই সে ফোন করে জানতে চেয়েছে জেমিমা ও তার মা এসেছে কিনা ? আমি কিছুক্ষন কথা বলে কাবেরীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জেমিমার সঙ্গে কথা বলবা ? কাবেরী বলেছিলো, দাও । আমি ফোনটা জেমিমাকে দিয়ে বললাম, আম্মু, তোমার একটা আন্টির সঙ্গে কথা বলো । জেমিমার মা সামনে । তিনি আগেই কাবেরীর কথা জানতেন । আমিই বলেছিলাম । মনে অপরাধবোধ থাকলে কি কোনো বাবা তার মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে নিজের মেয়েকে কথা বলতে দেন ? কাবেরীর সঙ্গে আমার স্বশরীরে দেখাই হয়েছিলো দুই দিনে মোট ৩ মিনিট । তাও মামুন সঙ্গে ছিলো । এখানে অসৎ বা অনৈতিক সম্পর্কের প্রশ্নই আসে না।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে আমার এক পোষ্টে কাবেরী কমেন্ট করেছিলো। আমি তার উত্তর দিয়েছিলাম । সকালে দেখি তার কমেন্টটা নেই । আমি খুবই মনঃক্ষুন্ন হলাম । রাতে কাবেরী ফোন করলে জানতে চাইলাম, কমেন্টটা ডিলিট কেন ? কাবেরী জানালো, তার পাসওয়ার্ড মামুন জানে । কাজটা উনি করেছেন ! আমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিলাম । কাবেরীর সঙ্গে তো আমার প্রেম নেই যে এমন কাজ করে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করিয়ে প্রেম ভেঙে দেবে । আর মামুন পাসওয়ার্ড জানবেই বা কেন ? তাহলে কি তিনি তার স্ত্রীকে বিশ্বাস করেন না ? আমার আরো নজরে এলো, বেশির ভাগ সময় মামুন কাবেরীর ফেসবুকে লগ ইন থাকে ! এটা আমি জেনেছি, কাবেরীকে জিজ্ঞেস করে । সময় অসময় নেই যে কোনো সময় দেখতাম কাবেরী ফেবুতে লগ ইন । তখন একদিন তাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি ফেবু লগ আউট করো না মণি ? তখন কাবেরী বলেছিলো, মামুন প্রায়ই  আমার একাউন্টে লগ অন থাকে । আমার আরো সন্দেহ হলো যে, কাবেরীর পোষ্টে যারা কমেন্ট করে আর কাবেরী যে উত্তর দেয় সেটা কাবেরী দেয় না তার হাজব্যান্ড দেয় উত্তরগুলো ? এমনকি পোষ্ট কে লিখে তাও এক প্রশ্ন। আমার কাছে বিষয়টা খুব বড় ধরনের প্রতারণা বলে বিবেচিত হলো । এটা তার স্ত্রীকেও অপমান করার শামিল । কমেন্ট করে কমেন্ট ডিলিট করা যায় । কিন্তু পোষ্টদাতা কমেন্টের উত্তর দিলে সেই কমেন্ট ডিলিট করা গুরুতর অন্যায় । পোষ্টদাতার কমেন্ট তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় । আমার কাছে যা খুবই অশোভন মনে হয় । তাছাড়া আমি তাদের পুরো পরিবারকে আন্তরিকভাবে ভালোবেসেছিলাম । এখানে কোনো অসততা, অনৈতিকতা নেই । এরা আমার অনেক ছোট । আমি তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই ছোট ভাইবোনের চোখে দেখি । আমি বেশ দুঃখ পেয়েছি মামুনের এমন আচরণে । তাই মামুনকে আনফ্রেন্ড করেছিলাম গত সেপ্টেম্বরে । ওমা ! ১ ঘন্টার মধ্যে দেখি কাবেরী আমাকে ব্লক করেছে । রাতে কাবেরী ফোন করলে আমাকে ব্লক করার কারন জানতে চাইলে কাবেরী আমাকে জানিয়েছিলো, এটা মামুন করেছে । প্লিজ আমাকে তুমি ভুল বুঝো না
আমি মামুনকে কয়েকটা এসএমএস করেছিলাম সেদিন যার ভাষা ছিলো অনেকটা এমন ...
আমি কি তোমার বউয়ের সঙ্গে প্রেম করি ? তুমি কমেন্ট ডিলিট করেছো কেন? ফাজলামি করো, না ? আমার পোস্টে তোমার বউ কমেন্ট করে এটা তোমার ভালো না লাগলে তোমার বউকে বলতে পারো । সমস্যা শেষ। কমেন্ট ডিলিট করে এতো নাটক করার কি দরকার
সন্ধ্যার পর মামুন আমাকে ফোন করে । আমি ফোন ধরিনি । এরপর অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে । তাও আমি ধরিনি । এরপর একটা রবি নাম্বার থেকে এসএমএস আসে আমার কাছে । এসএমএসে লেখা...
আমি কাবেরী । এটা আমার বাবার নাম্বার । ফোন ধরেন । আমি উত্তর দিয়েছিলাম, এখন আমি কথা বলবো না । মুড ভালো নেই ।
এরপর মামুন অভদ্র আর উশৃঙ্খল ভাষায় আমাকে বেশ কয়েকটা এসএমএস করে যেখানে মামুন লিখে...
তুই কুমিল্লার ইতর । আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম । তুই নিমক হারাম
সেই থেকে মামুনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই । কিন্তু কাবেরী আগের মতোই প্রতিদিন আমাকে ফোন করে । একদিন আমি রাগ করে ফোন না ধরায় মণি ৬৫ বার ফোন করেছিলো আমাকে । আবারো বলছি ৬৫ বার।
৬৫ বার ফোন না ধরায় মণি আমাকে একটা এসএমএস করে এমন...
আরে ছাগল, তোর দরকার হলে আমার শরীরের দুই একটা হাড্ডি ভাঙ । শরীরে তো হাড্ডি অনেক । মন তো একটাই । বেছে বেছে কেন ওখানেই আঘাত করিস ?
পরে ফোনে আমি তাকে বলেছিলাম, দেখো মণি, বিবাহিতা কোনো মেয়ের সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করবো না । আমার আগের অভিজ্ঞতা আছে । এটা আমাদের সমাজ যেমন ভালো চোখে দেখে না তেমনি ওই ভদ্রমহিলার স্বামীও পছন্দ করে না । এক সময় মেয়ের পক্ষের কেউ(স্বামী) সন্দেহ পোষণ করলে ওই ভদ্রমহিলা তার স্বামী, সংসার আর সন্তানের কথা ভেবে ওই ভালোলাগা মানুষটিকে ছেড়ে যায় । ওই মহিলার তেমন কোনো সমস্যা হয় না । কারন তিনি স্বামী, সংসার, সন্তান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন । কিন্তু ওই ভদ্রলোকের খুব কষ্ট হয় । তার কিছুই করার থাকে না । কাউকে বলতেও পারে না । আর এমন রিলেশন বেশিদিন লুকিয়েও রাখা যায় না ।
তুমি কেন আমাকে ভালোবাসো ? আমি তো তোমার অনেক সিনিয়র । দুষ্টুমি করে আরো বলতাম, তুমিতো আমার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমও করো না । তবু কেন আমার এতো খোঁজ নাও তুমি ? ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলো ? এক সময় তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে । একথা কাউকে বলতে পারবো না । নীরব ব্যধির মতোই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে । এই বয়সে এই ধকল আমি নিতে পারবো না । তাছাড়া আমি একা থাকি বলে তোমার এই সরব উপস্থিতি এক সময় নীরব হয়ে গেলে আমি খুব শুন্যতায় ভুগবো । আমিও তোমাকে ভালোবাসি বোনের মতো । একজন জুনিয়র বন্ধুর মতোই । এখানে যৌনতাও নেই । তুমি আমার সব উপদেশ উপেক্ষা করে আমার সার্বক্ষনিক খোঁজ নিয়েছো ।
একদিন সে কি ঝগড়া ! আমাকে খোঁচা একটা দিলেই দুনিয়ার কথা বলি। আমার কথা বলার সাবজেক্টের অভাব নেই । তুমি কেবল শোনো । আমাকে দিয়ে দুনিয়ার কথা বলাও। মণি হাসতে হাসতে বলেছিলো, আমি ফোন করি শুধু তোমার কথা শুনতে । এই পাগলু, তোমার মতো এতো সুন্দর করে ঘুছিয়ে কেউ কথা বলে না
দেখো, আমার স্বামী, সন্তান, সংসার সব আছে । আমি একজন সুখী মহিলা । কোনো দিকেই আমার অপূর্নতা নেই । এমনও নয় যে, স্বামীর সঙ্গে আমার বনিবনা হয় না বলে তোমাকে নক করি । মামুনের সঙ্গে আমার খুব ভালো বুঝাপড়া । আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই । সুখী দম্পতি বলতে যা বুঝায় আমরা তার চেয়েও সুখী । কিন্তু কেন জানি, তোমার জন্য আমার খুব মায়া লাগে । অনেকদিন খাঁ খাঁ দুপুরে যেমন আব্বা আম্মার জন্য পরাণ পুড়ে, তোমার জন্যও আমার তেমন পরাণ পুড়ে
আজ সেই মণির জন্য আমার প্রতিদিন পরাণ পুড়ে!!!
মণির কথা মনে হলেই চোখ সজল হয়ে উঠে। এই গল্প লিখছি অশ্রু ভেজা চোখে। মাঝে মাঝে বিরতি দিই। ভেজা চোখে কম্পিউটারের মনিটর ঝাপসা দেখি। চোখ মুছে আবার লিখি। কতোদিন একা একা চোখের জল ফেলেছি!!!!
পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন
ফিরে আর আসবে কি কখনো
খুশি আর লজ্জার মাঝামাঝি সেই হাসি
তুমি আর হাসবে কি কখনো
মান্নাদের এই গানটিও আমি মণিকে গেয়ে শুনিয়েছিলাম।
তুমি আমার উপর অনেক বড় প্রভাব বিস্তার করেছো মণি । আমি নিশ্চিত বলতে পারি, মৃত্যুর মুহুর্তেও আমার তোমার কথা মনে পরবে।
তুমি বলতে, ছেড়ে যাবো না । যখন ফোনে ঝগড়া হতো তুমি বলতে, ঝগড়া করবা কিন্তু ছেড়ে যাবা না আমরা বাকি জীবন ঝগড়া করতে করতেই কাটিয়ে দেবো । তুমি বলতে, তোমাকে (আমাকে)কখনো বাবার মতো, কখনো ভাইয়ের মতো, কখনো একজন সৎ আর বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো ভালোবাসি । আমি তোমাকে কখনোই ছেড়ে যাবো না । তুমি ভালো থাকলে আমার ভালো লাগে । একদিন তোমাকে নিয়ে আব্বা আম্মার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো । কুমিলা থেকে তো নোয়াখালী কাছে । তোমার যখন ভালো লাগবে না তখন আমাদের বাসায় গিয়ে কয়েকদিন থেকে এসো । আমি দুস্টুমি করে বলতাম, তোমার দুই ছেলেকে পাড়ানোর দায়িত্ব দাও আমাকে । দেখো কেমন পণ্ডিত বানিয়ে দিই । মণি বলতো, আমরা তো এখনো জয়েন্ট ফ্যামিলি । আমার সংসার নিয়ে আলাদা থাকলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম । আর তোমার মেয়ে জেমিমা যদি আমার ছেলেদের চেয়ে ছোট হতো তবে জেমিমাকে আমার ছেলের বউ করতাম । তুমি হতে আমার বেয়াই । আমরা এসব কথাই বলতাম । কখনো রোমান্টিক বা প্রেমের কথা বলতাম না ।
অনেকেই ভাবতে পারেন এতো কথা আমরা কি বলতাম ? আমরা খুব শয়তানি কথা বলতাম । গত বছর আমার দাঁতে খুব পেইন ছিলো । দাঁত ফেলতে হবে । এই কথা শোনে মণি বলেছিলো, এই, তোমাকে আব্বুর কাছে পাঠিয়ে দেই ? আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন ? মণি বলেছিলো, তার বাবা মি. আজিজুর রহমান খান নাকি একদিন এক লোকের সঙ্গে রেগে গিয়ে চাটখিল থানার সামনে ওই লোককে এমন জোরে থাপ্পড় মেরেছিলেন যে, ওই লোকের দাঁত পরে গিয়েছিলো
এসবই আমাদের কথা ছিলো । আমার এমন কিছু নেই যা কাবেরী জানে না ।
মাঝে মাঝে মণি বলতো, একটা গান শোনাও না পাগলু । আমি মণিকে অনেক বাংলা আর হিন্দি গান গেয়ে শুনিয়েছিলাম । মণি আমার অনেক জুনিয়র তাই আগের গানগুলো সে শোনেনি । কিশোর কুমার, মান্না দে, হেমন্ত, কুমার শানু, অভিজিৎ, তালাত মাহমুদ, শিবাজি, বাপ্পি লাহিরীর গান মণি বলতে গেলে শোনেই নি । আমি সে সব গান গেয়ে শোনাতাম ।
গত ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ ২০১৭ হঠাৎ আমি মণির একটা এসএমএস পেয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও হতাশ হই । আগের দিন ১৩ তারিখ রাতেও মণির সঙ্গে স্বাভাবিক কথা হয়েছিলো। পরদিন এই এসএমএস!!
মণি এসএমএসে লিখেছিলো...
আমাকে ক্ষমা করো । আমি ভীষণ লজ্জিত । আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । তুমি কি চাও তোমাকে সময় দেয়ার জন্য আমি হার্ট হই ? আর আমাদের নিয়ে কিছু ফেবুতে লিখো না । শুধু দোয়া করো যেন সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায় আর আমিও । দোয়া করো আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা যেন তিনি নিয়ে না যান । আর কাঁদতে পারছি না । তোমার মণি একা । ফিরবো । আমাকে একটু সময় দাও
আমার তাৎক্ষণিক বুঝতে কষ্ট হলেও পরে বুঝেছি, তুমি যে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলো তা মামুন জানতো না । বা জানলেও আগে উপেক্ষা করেছিলো । হয়তো মামুনের অন্য কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে নিয়ে । মামুন নিচে গাড়িতে বসে তোমাকে একা আমার বাসায় পাঠায় আর ফোনে কথা বলাতো সে তুলনায় নস্যি। এখন মামুন চায় না আমার সঙ্গে তুমি যোগাযোগ করো । তাই সে তোমাকে বড় ধরনের চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দিয়েছে যেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করো।
হয় তোমাকে কোরান ছুঁইয়ে শপথ করিয়েছে, নয় তোমার দুই ছেলের মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে। অথবা ঢাকার ৫ তলা বাড়িটি যে তোমার নামে সেটি তার নামে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে। অথবা তোমাকে ডিভোর্সের হুমকিও দিয়ে থাকতে পারে। এই ৪টি অপশনই আমি খোঁজে পেয়েছি। মামুনের মতো ছেলের পক্ষে এসব সম্ভব। নইলে তুমি মণি আমাকে এমন এসএমএস করতে পারো না। কিছুতেই না। কোনোদিন না ।
আমি মামুনের পরিবারের ফুল রেজ্যুমে নিয়েছি। মামুনের বাবা নোয়াখালীর হলেও তার মা বরিশালের। মামুনের আগে তার ছোট ভাই মিল্টন বিয়ে করে। বড় ভাইকে ফেলে ছোট ভাই বউ নিয়ে ঘুমায় ! সেই পরিবারের সন্তানদের মূল্যবোধ আর কি হবে ? এতো বছর লেখালেখি আর সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত থেকে কি ঘাস কেটেছি? ঘরে বসেই অনেকের খবর নেয়ার যোগ্যতা রাখি। মামুনের ছোট বোনের নাম হ্যাপি।
যদিও ঢাকার ওই বাড়িতে তোমার বাবার দেয়া অনেক টাকা তুমি ইনভেস্ট করেছো বলে কথা প্রসঙ্গে আমাকে তুমি বলেছিলে।
আমার তখন মনে পরে গেলো, ২০১৭ সালের এপৃল, মে এবং জুলাই মাসে মামুন তার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমাকে কিছু লোক যোগাড় করে দিতে বলেছিলো । আমি ওই ব্যবসায় অনৈতিকতা আর দূর্নীতি দেখে মামুনের প্রস্তাবে সাড়া দিইনি । তাই মামুন এখন আর চায় না আমার সঙ্গে তোমার যোগাযোগ থাক । আমি তোমাকে ফোনে বলেছিলাম...
তোমরা স্বামী-স্ত্রী-আর দুই সন্তানকে আমি অনেক ভালোবাসি । তোমার ছেলেগুলো আমার কাছে জেমিমার মতোই। যদিও উপলক্ষ্য তুমি । বিশ্বাস করো আমাকে । ধরো, এখন যদি এমন কোনো মিরাকল হয় যে, আমার সামনে অপশন দেয়া হলো- হয় আমি বাঁচবো নয় তোমার স্বামী বাঁচবে । আমি কোনটা বেছে নেবো ? আমি চাইবো, আমি মরে গিয়ে তোমার স্বামী বেঁচে থাক । তুমি অনেক ছোট । এই বয়সে তোমাকে বৈধব্য মানায় না
তুমি যদি এখন বলো, তোমার প্রিয় কোনো আত্মীয়ের জন্য একটা কিডনি লাগবে জরুরী । যদি আমার ব্লাড গ্রুপ মিলে তবে আমি হাসি মুখে এটা তোমাকে/তোমাদেকে দেবো । তোমার/তোমাদের প্রিয় কারোর জন্য যদি চোখের কর্নিয়া লাগে আমি আমার একটা চোখ দেবো হাসি মুখে । বিলিভ মি । পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা প্রমাণ করা যায় না । আমিও হয়তো প্রমাণ করতে পারবো না তোমাদের কতোটা ভালোবাসি ।
কিন্তু তোমার বর যে কাজগুলোর কথা আমাকে বলে এই কাজগুলো আমি করতে পারবো না । আমার পক্ষে কারো কাছে গিয়ে বলা সম্ভব নয় যে, কাউকে চাকরি দেবো । এতো টাকা লাগবে ঘুষ । আমি মরে গেলেও তা পারবো না । সবাই সব কাজ পারে না।
তোমাদের সমস্যা হলে আমাকে বলো, আমি আমেরিকায় ড্রাইভিং পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে লাইসেন্স নিয়েছিলাম। আমার নিজেরও হন্ডা সিভিক গাড়ি ছিলো। এখনো আমার ভ্যালিড ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। আমাকে বেতন দিতে হবে না। প্রয়োজনে তোমাদের গাড়ি চালাবো। তবু আমি অনৈতিক বা অসৎ কাজ করতে পারবো না।
হন্ডা, নিসান, টয়োটার সব সিরিজের গাড়ি আমি চালাতে জানি। ক্যাডিলাক, লেক্সাস, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, ভলভো কারও আমি ভালো চালাতাম বলে সুনাম ছিলো। আমেরিকায় যে সব বাংলাদেশি একটু আয়েশি জীবন যাপন করতে চায় তাদের সকলেরই নিজের গাড়ি আছে।
গত ডিসেম্বরে ওই এসএমএসের পর তুমি ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছো । যেটা দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে । তবু আশায় ছিলাম তুমি ফিরবে । কিন্তু জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে দেখলাম তুমি ফেবুতে নিয়মিতই আছো । রোমান্টিক পোস্ট দাও । নিজের অনেক সুখী ছবি দাও । অনেকের পোস্টে কমেন্ট করো । অনেকের কমেন্টের রোমান্টিক উত্তর দাও । মান্নাদের গানের মতোই...
আমি দুঃখ পেলেও খুশি হলাম জেনে
আমি ভালো থাকলে যেমন তোমার ভালো লাগে তেমনি তুমি ভালো থাকলেও আমার অনেক ভালোলাগে মণি। আমার জন্য তুমি কষ্ট পাও তা আমি কিছুতেই চাই না ।
তুমি কথা দিয়েছিলে, একবার নয়, অসংখ্যবার যে আমাকে ছেড়ে তুমি যাবে না । কিন্তু তুমি গিয়েছো । যাও । তোমার যেভাবে থাকতে ভালো লাগে বা তুমি যেভাবে সুখী থাকো সেভাবেই থাকবে । আমাদের বন্ধুত্বে কোনো শর্ত ছিলো না । একটা শর্ত ছিলো, কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো না । তুমি এটা ভঙ্গ করেছো । তোমার সুন্দর জীবনের জন্য আমি আনন্দের সঙ্গেই এটা মেনে নিলাম । আমার কোনো অভিযোগ নেই ।
আমার আমৃত্যু কষ্ট হবে । এই যা । এখন তুমি হয়ে গেছো আমার বাস্তব গল্পের জীবন্ত নায়িকা । আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমাকে নিয়ে যেন অন্য মেয়েদের মতো অন্যের কাছে গল্প করতে না হয়। তাছাড়া আমি লেখালেখি করি। গল্প যেন লিখতে না হয়। তুমি বলেছিলে, বলতে হবে না। গল্পও লিখতে হবে না। আমি অন্য মেয়েদের মতো না
অথচ আজ ফেবুতেই তোমাকে নিয়ে গল্প লিখতে হলো । এই গল্প ঈদে তোমাকেই উৎসর্গ করলাম। তোমাকে বলেছিলাম- দেখো, যায়যায়দিন আর মৌচাকে ঢিল ম্যাগাজিনে লিখে আমার বেশ কিছু ইয়াং বন্ধু (মেয়ে) আছে । ওই পত্রিকা দু'টো তরুণ আর আধুনিক ছেলেমেয়েরা খুব পছন্দ করতো । আর লেখার নিচে লেখকের ফোন নাম্বার উল্লেখ করে দিতো । আমি জানি, তরুণ ছেলেমেয়েরা আমার লেখা বেশি পছন্দ করে । তারা অনেকে আমাকে ফোনও করতো । এতো বেশি ফোনের জ্বালায় আমি ওই সিমটা এখন আর চালাই না । ওই বন্ধুদের কেউ কেউ ফেবুতেও আমার লিস্টে আছে । বলেছিলাম তোমাকে অনেক কথা । তুমিও বলেছিলে । তুমি অন্য জেলার হলেও মনে হতো সারাক্ষণ তুমি আমার পাশেই আছো । তোমার অনেক স্মৃতি আমার কাছে আছে । কতো স্মৃতি ! তোমার খাবার দেয়ার প্লাস্টিকের বাটিগুলো আমি যত্নে রেখে দিয়েছি । সব মনে পড়ে। দেড় বছরের সম্পর্ক তো কম নয়। আশা ভোঁসলের গানের মতোই.....
মনটা যদি না থাকতো আমার
কিছুই মনে পরতো না
শ্লেটে চকের দাগ ভেজা কাপড়ে মুছে ফেলা যায় । কাগজে পেন্সিলের লেখা রাবার ঘষে উঠিয়ে ফেলা যায় । কিন্তু মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা বা স্মৃতি থাকে যা কখনো কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না । উঠিয়ে ফেলা যায় না । সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বটে কিন্তু থেকে যায় স্মৃতি । সময়কে পরাজিত করে বার বার সে জেগে উঠে । হতে পারে সে স্মৃতি সুখের, দুঃখের, আনন্দের, বেদনার, ভালোবাসার । মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে অবিকল । স্মৃতির মুখচ্ছবিতে কখনো কালের মলিনতা লাগে না তুমিও আমার কাছে কখনো মলিন হবে না।
তুমি ঢাকা থেকে যতোবার নোয়াখালী যাবে বা নোয়াখালী থেকে ঢাকা যাবে ততো বারই আমার কাছ থেকে ১০০ গজ দূর দিয়ে তোমার গাড়িটা যাবে । এমন কি আমার মৃত্যুর পরও আমার কবরের ১০০ গজ দূর দিয়েই তুমি যাওয়া আসা করবে । ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাওয়ার এটাই একমাত্র রাস্তা ।
আমাদের বাড়িটা ঢাকা- চট্রগ্রাম হাইওয়ের পাশেই । আমাদের পারিবারিক কবরস্থানটা পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় । আমি মরে গেলেও আমার এই একাউন্ট টা থাকবে। গত সপ্তাহে জেমিমাকে বলেছি, আম্মু, বাবা তোমাকে বাবার পাসওয়ার্ডটা দিয়ে যাবো। বাবা মরে গেলে এই একাউন্টেই তুমি বাবার মৃত্যু সংবাদ লিখবে। আর মাঝে মাঝে বাবার কিছু আগের পোস্ট শেয়ার করবে ।
যদি কখনো আমার মৃত্যু সংবাদ পাও তবে ঢাকা- নোয়াখালী আসা বা যাওয়ার পথে আমার কবরে কিছু ফুল দিয়ে যেও। এতে তোমার ৫ মিনিট সময় নষ্ট হবে । তোমার কাছে আর কিছুই চাই না মণি । কিছুদিন আগে " আমার আমি এবং আমরা" নামের পোস্টে আমার বাড়ির পুরো ঠিকানাসহ আমার সব আত্নীয়দের বর্ননা দেয়া আছে। সেটাও কমেন্ট অপশনে দিলাম । আমার কবর চিনতে তোমার একটুও কষ্ট হবে না। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই আমাদের বাড়ি দেখিয়ে দেবে। কুমিল্লা শহর থেকে সেনানিবাস এবং বিশ্ব রোডের যে কেউ আমাদের চৌধুরী বাড়ি চিনে।
আমি ফটোশপ খুব একটা বুঝিনা । তুমি আমার ছবি দিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় অনেক দুষ্টুমি করতে । আবার সে সব ছবি আমাকে পাঠাতে । সে রকম একটা ছবিও এই পোস্টে জুরে দিলাম । আরো অনেক কথা লেখার ছিলো । কিন্তু প্রায় ৪৫০০ শব্দ হয়ে গেছে তোমাকে নিয়ে এই পর্যন্ত লিখে । আর হেচকি তুলে কান্না আসছে। তাই আর বাড়াবো না । ফেসবুকের মাধ্যমে এতো বড় লেখা স্মৃতি হয়েই থাক।
আজ আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসি । কে কেমন আছি কেউ জানি না । তবে এই পৃথিবীর যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। এই কামনায় বিদায় বন্ধু।
তোমাকে ফোনে গেয়ে শোনানো একটা হিন্দি গান শোনে একদিন তুমি খুব প্রশংসা করেছিলে । জানতে চেয়েছিলে এটা কোন ছবির গান । আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, এটা ১৯৯১ সালের সুপারহিট প্রেমের ছবি সাজন"এর গান । সাজন ছবির পরিচালক লরেন্স ডি সুজা। গল্প রীমা রাকেশনাথ। মাধুরী দীক্ষিতের সেকরেটারি রাকেশ নাথের স্ত্রী রীমা রাকেশনাথ। এই ছবির সব ক'টি গানই চমৎকার। খুবই জনপ্রিয়। এই ছবির মিউজিক ডিরেক্টর নাদিম-শ্রাবন। ছবিতে মাধুরী আর সালমান খান আলাদাভাবে গানটি গেয়েছিলেন । পুরুষ কন্ঠে গানটি গেয়েছিলন এসপি বালা সুব্রানিয়াম । তুমি তখন পিচ্চি মেয়ে । শেষ বার ফেবুতে লিখে ওই গানটা আজ ঈদের আগের দিন তোমাকে আবার শোনালাম......
বহুত পেয়ার কারতে হ্যায় তুমকো সনম
কসম চাহে লে লাও
খোদা কি কসম। 
২১ আগস্ট ২০১৮

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর