ওমাওয়ারিসান
করিম চৌধুরী
টোকিওর ব্যস্ত এলাকা শিনজুকুতে আমাদের স্কুল । নাম মাত্র ল্যাংগুয়েজ স্কুলে যাই । নাম মাত্র বললাম এই জন্য যে, টোকিওর মাটিতে পা রেখেই শুধু ভাষার কারনে দেশটি আমার অপ্রিয় হয়ে গেলো । যদিও আমরা কয়েক বন্ধু এই স্কুলটিতে ভর্তি হয়ে ঢাকার জাপানি দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে পড়াশোনার উদ্দেশেই টোকিও গিয়েছিলাম । আমাদের ভিসা স্ট্যাটাস ছিলো ৪-১-১৬-৩ । ছয় মাস পর পর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হয় । আমাদের ল্যাংগুয়েজ স্কুলটির নাম ছিলো ‘জাপান ফরেন ল্যাংগুয়েজ ইন্সটিটিউট ইনকর্পোরেটেড’ সংক্ষেপে বলা হতো জাফলি JAFLI .
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রচুর ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে । বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোর । চীন, ফিলিপিন্স, মঙ্গোলিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্ডিয়া, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তানসহ আরো অনেক দেশের । কিন্তু জানুয়ারি মাসের প্রচন্ড শীতে টোকিওর নারিতা এয়ারপোর্টে নেমে 'স্কাই লাইনার' এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে টোকিও মুল শহরে পৌঁছে প্রায় পাগল হয়ে গেলাম । কিচ্ছু পড়তে পারিনা । দোকানের সাইনবোর্ড থেকে সাবওয়ে ডাইরেকশন পর্যন্ত জাপানিতে লেখা । কোন ইংরিজি শব্দ চোখে পড়লো না । এসএসসি-এইচএসসি দু’টোতেই ভালো রেজাল্ট । ভেবেছিলাম পড়াশুনা করবো । কিন্তু ভাষা দেখে প্রথম দিনেই আমার হৃদয় ভেঙ্গে পানির মতো তরল হয়ে গেলো । ঢালু পেলেই তরল গড়ায় । সেই থেকে আমিও গড়ানোর ধর্ম পালন করে চললাম । বিদেশে পড়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেলো । সূর্যোদয়ের দেশ আমার কাছে সূর্যাস্তের দেশ হয়ে গেলো । উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেলো । ভাগ্যিস পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিইনি
'উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রা' ।
জাফলির অর্থাৎ আমাদের স্কুলের মালিক কাম প্রেসিডেন্ট কাম চিফ এক্সিকিউটিভ কাম বিজনেসম্যান ছিলেন একজন আমেরিকান । ভদ্রলোকের নাম ছিলো মারভিন এল টুইলজার । একদিন স্কুলে গিয়ে দেখি ক্লাশে নয় জন ছাত্র । একজনও বাংলাদেশি নেই । হরতনের গোলামের মতো গোঁফওয়ালা দুইজন পাকিস্তানি,তিনজন ভিয়েতনামি,দুইজন ফিলিপিনো,দুইজন উত্তর কোরিয়ার ছাত্র । প্রত্যেকের বয়স ৩০/৩৫। ওদের কাছে আমি নিতান্তই শিশু ।
সে সময় জাপান সরকার জাপানি ভাষাকে জাপানের বাইরে জনপ্রিয় করার জন্য এ ধরনের ভাষা শিক্ষা স্কুলগুলোকে উৎসাহ দিতো । মাস খানেকের মধ্যে টোকিওতে ব্যাঙের ছাতার মতো ভাষা শিক্ষা স্কুল গজিয়ে উঠলো । প্রয়োজনীয় কিছু জরুরি ভাষা শিখে দেখলাম আমি তোতলা হয়ে যাচ্ছি । আমিকে-ওয়াতাশি, তুমিকে-আনাতা, জাপানকে-নিহন, কঠিনকে(Difficult)মুজোকাশি,বুঝেছোকে (Understand)-ওয়াকারিমাস্তা, জাপানি ভাষাকে-নিহঙ্গ,ভাতকে-গোহান, মাছকে-সাকানা, আলুকে-জাগাইমু, পানিকে-মিজু, মেয়েকে-ওন্না, পুরুষকে- ওতোকো, বন্ধুকে-তোমোদাছি, মানুষকে-জিন, বাংলাদেশকে-বাংগুড়াদেশ, টাকাকে-ওকানে, স্বাগতমকে- ইরাশ্যাইমাছে, ছাত্রকে-গাকছেই, স্কুলকে-গাক্কু, সু প্রভাতকে-ওহাইয়োগুজাইমাছ, ধন্যবাদকে-দমো, সাবওয়েকে-চিকাতেৎসু, বিদায়কে-সাইওনারা, চাচাকে-অজিসান- মিথ্যাকে- উছো, সত্যকে-হন্ত, অলরাইটকে(Alright)-দাইজুবু, বিপদকে-আবুনাই, কি(What)কে-নানি, বিদেশিকে-গাইজিন, ভালোকে-ইয়ো, খারাপকে-দামে, দেশকে-কুনি,কাজকে-শিগোতো, চাওয়াকে(Want)-ঈশটাই, বরখাস্তকে-খুবি, মাকে-মামাসান, আর পুলিশকে ওমাওয়ারিসান শিখেই আমার অবস্থা কাহিল ।
ইতিমধ্যে জাপানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক জাপান টাইমস ও আশাহি শিমবুন কয়েকদিন পড়লাম । কিন্তু দাম বেশি । এরপর ধরলাম একটু কম দাম কিন্তু ভালো পত্রিকা মাইনিচি ডেইলি নিউজ ।
কিছুদিন পর আরেক গ্রেড নিচে নেমে এক বছরের জন্য গ্রাহক হলাম ইউমিউরি শিমবুন দৈনিকের । প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ঘরেই পেপার পাই । পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানতে পারি, টোকিওতে ভাষা শিক্ষার স্কুলগুলো পড়াশোনার নামে আদম ব্যবসা করছে । গরীব দেশের ছাত্রছাত্রীরাই এসব স্কুলে ভর্তি হয়ে জাপানে আসে এবং স্কুল না করে শুধু চাকরি করে । স্কুলের টিউশন ফি দিয়ে দিলেই স্কুল অথরিটি ছাত্র ছাত্রীদের "ভাষা শিক্ষা বিষয়ে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে" বলে সীল করা খামে কাগজপত্র দিয়ে দেন যা দেখে ইমিগ্রেশন অফিসার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেন । ছাত্ররা স্কুলের কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট নিয়ে ওতেমাচি নামের টোকিওর সুন্দর অথচ ভীতিকর জায়গা ইমিগ্রেশন হেড কোয়ার্টারে যায় দুরু দুরু বুকে । আমিও গিয়েছিলাম । ইমিগ্রেশন অফিসার স্কুলের কাগজপত্র দেখেই ভিসা বাড়িয়ে দেন । পত্র পত্রিকায় এসব খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নিজেকে আর ছাত্র বলে পরিচয় দিই না । ইতিমধ্যে আমরা ডাউন টাউন টোকিওর আকাবেনি, ইতাবাসি এবং ইকেবুকুরু এলাকার প্রতিবেশিসহ বেশির ভাগ জাপানির কাছে "উছো গাকছেই" অর্থাৎ মিথ্যা ছাত্র হিসাবে পরিচিত হয়ে গেলাম । উছো মানে মিথ্যা, গাকছেই মানে ছাত্র । এই কলঙ্ক ঢাকার আর কোন রাস্তা খোলা নেই ।
চার মাস চলে গেছে অলরেডি । প্রচুর বাংলাদেশির সমাগম ঘটেছে টোকিওতে । এক শ্রেণির বাংলাদেশি মোটা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে অনেককে ভাষা শিক্ষা স্কুলে ভর্তি করিয়ে টোকিওতে নিয়ে গেলেন । আমরা পড়াশোনা করা সৎ ছাত্ররা মিথ্যা ছাত্র হয়ে গেলাম । চার মাসে তিনটি চাকরি করেছি । একটি দশ দিন, একটি তের দিন আরেকটি একদিন । দুটো ছেড়েছি আরেকটি থেকে হয়েছি ' খুবি' বা বিতারিত । খুবি জাপানি শব্দ যার অর্থ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা । তিনটিই হোটেলে প্লেট ধোয়ার কাজ । এই কাজকে জাপানি ভাষায় বলে আড়াইমোনো । ঝিম ধরে বাসায় বসে থাকি,বিয়ার খাওয়া শিখেছি একটু ।
কাউসার আমি আলোচনা করলাম । কিভাবে পড়াশোনা করা যায় ? চার বছর জাপানি ভাষা শিখে লেখাপড়া করা সম্ভব নয় । তাই আমরা দুই বন্ধু মিলে ইংরেজিতে পড়া যায় কিনা তা নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম । প্রথমে গেলাম 'জসি সফিয়া ইউনিভারসিটিতে’ । না । আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স করতে হলে জাপানি ভাষায় করতে হবে । গেলাম 'কেও ইউনিভারসিটিতে' তাও হলোনা । গেলাম ‘ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটিতে’ । নাহ । একই নিয়ম । সবশেষে গেলাম টোকিও ইউনিভার্সিটিতে । এখানে ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ আছে । কিন্তু মাগার । ওই যে এক ছেলে তার মাকে বলেছিলো, “মা আমি তোমাকে বিক্রি করে দেবো ।"
দুঃখিত মা বলেছিলেন,"পুত, তুই আমারে বেইচ্চা লাইবি ? ছেলে মাকে বলেছিলো, মা, এমন দাম চামু কোন শালা তোমারে কিনবো ?'’ টোকিও ইউনিভার্সিটির আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স এর মাসিক টিউশন ফি ৯০০ ডলার । বাহ ! ভালো তো ! ভালো না?
পার্ট টাইম কাজ করে বাড়ি ভাড়া, খাওয়া, যাতায়ত আর টিউশন ফি অসম্ভব । শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে যাবো । কিন্তু দেশে ফেরার বিমান ভাড়া নেই । এদিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হবে জুন মাসে । ভিসা এক্সটেনশন করতে হলে এ মাসেই স্কুলের ছয় মাসের টিউশন ফি দিতে হবে ১২০০ ডলার । বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে সেই টাকা স্কুলে দিলাম । ভিসাও এক্সটেনশন করলাম । ঠোঁটে কামড় দিয়ে কিছুদিন চাকরি করে বিমান ভাড়াটা হলেই দেশে চলে যাবো এই আশায় ।
ভিসা বাড়ানোর পরদিন দেখি ইউমিউরি শিমবুন( Yumuri Shimbun) পত্রিকায় পাঁচ কলাম জুড়ে হেড লাইন নিউজ...
Immigration Officials Raided language Schools.
দীর্ঘ এই রিপোর্টের সারমর্মঃ ইমিগ্রেশন অফিশিয়ালরা কয়েকটি স্কুলে হঠাৎ অভিযান চালিয়ে দেখেছে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা যেখানে ৭০০ সেখানে ক্লাশে উপস্থিত আছে মাত্র ৬ জন । টোকিও পুলিশ হোটেল রেস্টুরেন্টসহ কিছু ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে অনেক উছো গাকছেই বা মিথ্যা ছাত্রকে ধরেছে । এখন থেকে ইমিগ্রেশন অফিসিয়াল স্কুলের কাগজপত্রের সঙ্গে ভিসা প্রার্থীর ভাষা জ্ঞান পরীক্ষা করে ভিসা দেবে ।
পত্রিকায় প্রকাশিত এসব খবর আমি নিজে পড়লাম । হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো । কি করতে এলাম । আর কি দেখছি ! আমরা মিথ্যা ছাত্রদের কাছে "ওমাওয়ারিসান" বা পুলিশ এখন এক বিরাট আতংক । ইতিমধ্যে আমাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে কর্মক্ষেত্রে । আমার চিন্তা শুধু বিমান ভাড়াটা যোগাড় করে দেশে ফেরা । প্রায় হাজার খানেক ডলার ঋণ । বিমান ভাড়াসহ দুই হাজার ডলার প্রয়োজন । দুই মাস জানোয়ারের মতো কাজ করলে দুই হাজার ডলার জমানো যায় । কিন্তু এতো কায়িক পরিশ্রম কি সম্ভব ? তার উপর ওমাওয়ারিসান এর ভয় । আফটার অল পুলিশ তো ।
মাঝে মধ্যে জাপানিরাও বলে বসে 'গাইজিন দামে দেছো' অর্থাৎ বিদেশি ভালোনা ।
এসব মনঃকষ্ট নিয়ে একটা ফোন কার্ড কিনে মেজো আপাকে ফোন করলাম । তখন সেল ফোন ছিলো না । টিএন্ডটি ফোনই একমাত্র সম্বল । হাউমাউ করে কেঁদে বললাম, আপা আমি জাপানে থাকবো না । এখানে পড়াশোনা করা সম্ভব না । হয়তো শিগগির চলে আসবো । আর এখানে হোটেলে প্লেট ধোয়ার কাজ করতে হয় । সারাদিন বেসিনে হাত ভিজিয়ে রাখতে হয় । আমার কি সুন্দর হাতগুলো বেসিনের ময়লা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে রাখতে দাগ পড়ে গেছে । আপা অবাক হয়ে বললেন, কস কি ! আর খুশি খুশি মনে বললেন, তোর বড় ভাগ্নির বিয়ে হয়েছে । তোকে জানাতে পারি নি । আসার সময় ছোট মামা শ্বশুর হিসাবে ভাগ্নি জামাইর জন্য একটা দামি ঘড়ি নিয়ে আসিস । জি আচ্ছা, বলে ফোন ছেড়ে দিলাম । মরার উপর খাড়ার ঘা । আরো কমপক্ষে তিনশ ডলার ঘড়ির জন্য ।
এ রকম আকাশ পাতাল দুঃখ নিয়ে শিনজুকু এলাকায় স্কুলের কাছাকাছি এক রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ নিলাম । নয় দিন কাজ করার পর এক দুপুরে চার জন কাস্টমার একসঙ্গে ঢুকলো । জাপানে ওয়েটারের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো,কাস্টমার ঢুকলেই বলতে হবে 'ইরাশ্যাইমাছে দোজো' অর্থাৎ স্বাগতম- প্লিজ বসুন । এটা জাপানি কালচার । ওনারা বসলেন । অর্ডার করলেন । খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিলাম খুব মায়া করে । খাওয়া শেষ করে বিল দিলেন । আমাকে টিপসও দিলেন ।
এক ফুট মাথা নুইয়ে জাপানি ভদ্রতায় বললাম, দমো, আরিগাতো গুজাইমাছ । ধন্যবাদ, আবার আসবেন ।
একজন ভদ্রলোক বিনীতভাবে আমাকে বললেন, ছুমি মাছেন অর্থাৎ মাফ করবেন, আমি কি আপনার জাপানে অবস্থানের বৈধ কাগজপত্র দেখতে পারি ? আমরা জাপান ইমিগ্রেশন পুলিশ । হাত দিয়ে গলায় ঝুলানো আইডি কার্ড শার্টের ভেতর থেকে চার জন একসঙ্গে বের করলেন ।
শিরদাঁড়া শিনশিন করে উঠলো । খাইছে আমারে ! বন্ধুদের হাওলাতি টাকা, বিমান ভাড়া এবং নতুন যন্ত্রণা ভাগ্নি জামাইর জন্য ঘড়ি । পকেট থেকে বের করে Alien Registration Card সহ( টোকিও মিউনিসিপাল অফিস থেকে দেয়া ছবিসহ নাম ও জাপানের বাসার ঠিকানা এবং ভিসার মেয়াদ উল্লেখ থাকে এই কার্ডে)স্কুলের কার্ডটিও দিলাম । একজন পুলিশ বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, আনাতা ওয়া উছো গাকছেই দেসকা ? অর্থাৎ তুমি কি একজন মিথ্যা ছাত্র ?
আমি শ্রদ্ধেয় চার পুলিশকে তোতলা জাপানি আর ভালো ইংরেজিতে খিচুড়ি বানিয়ে বললাম, আমি আপনাদের দেশে পড়াশোনা করতেই এসেছিলাম কিন্তু ভাষাগত সমস্যায় তা পারছিনা । নিহঙ্গ মুজোকাশি দেসো । জাপানি খুব কঠিন ভাষা । আমি নিয়ম কানুন জানতাম না । তাই দেশে চলে যাবো । কিন্তু আমার দেশে ফেরার বিমান ভাড়া নেই । তাই কাজ করছি । বিমান ভাড়াটা হলেই দেশে চলে যাবো ।
ওনারা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন । সম্ভবত আমার কম বয়স দেখে বিশ্বাস করলেন । তবু একজন মধ্যবয়সী পুলিশ রুক্ষ ভাবে প্রশ্ন করলেন-হন্ত নি ? অর্থাৎ সত্য নাকি ?
বললাম,হন্ত । সত্য ।
জানতে চাইলেন বিমান ভাড়া যোগাড় করতে কতোদিন কাজ করতে হবে?
কোন হিসেব ছাড়াই বলে ফেললাম, তিন মাস ।
রুক্ষ পুলিশটি এবার আমার কাঁধে হাত ঝুলিয়ে মায়া করে শাসনের ভঙ্গিতে বললেন, তিন মাস পর যদি তোমাকে টোকিওতে পড়াশোনা ফেলে কাজ করতে দেখি তবে পিছমোড়া বাধ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবো । মনে থাকে যেন । ওয়াকারিমাস্তা ? বুঝেছো ?
মাথা নেড়ে আস্তে বললাম, ওয়াকারিমাসো । বুঝেছি ।
দুইমাস একুশ দিন পর আমার বিমান ভাড়া,বন্ধুদের হাওলাতি টাকাসহ ভাগ্নি জামাইর জন্য দামি ঘড়ি কেনার টাকা হয়ে গেলো । মনে মনে বললাম, আল্লাহ বাচাইছে । তিন মাস পূর্তি হওয়ার কয়েকদিন আগেই আমি ইজিপ্ট এয়ারের এমএস ৬০৪ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে ব্যাংককে তিন দিনের ট্রানজিট করে টোকিও ছাড়লাম ।
বিকেল ঠিক পাঁচটায় বিমান টোকিওর নারিতা এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করলো । আমি জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে রইলাম । বিমান উপরে উঠছে আর আস্তে আস্তে টোকিও শহর দূরে যাচ্ছে । এক সময় অদৃশ্য হয়ে গেলো ।
ককপিট থেকে পাইলট ঘোষণা করলেন, বিমানটি এখন জাপান সাগর অতিক্রম করছে । ইজিপশিয়ান সুন্দরী এয়ার হোস্টেসরা খাবারের ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে আসতে লাগলো । আমি আত্মগতভাবে বললাম, দমো, সাইওনারা নিহনজিন ওমাওয়ারিসান । ধন্যবাদ । বিদায় জাপানি পুলিশ ।
করিম চৌধুরী
karimcbd@gmail.com
আগস্ট ১৯৯৮
নিউ ইয়র্ক ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন