সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শেফালি একটু ফাঁক করো

শেফালি একটু ফাঁক করো

নিউ ইয়র্ক থাকতে প্রথম কিছু কবিতা লিখেছিলাম । সাপ্তাহিক প্রবাসী, সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় । উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয়,বহুল প্রচারিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’ । সিরাজগঞ্জের বন্ধু বুলবুল একদিন বললো,বাংলাদেশে কাউয়ার(কাক)থাইক্যা কবি বেশি । বুলবুল ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেছিলো । আপনি বরং গদ্য লিখেন । আপনি যেহেতু অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন সে সব অভিজ্ঞতা কি কবিতায় প্রকাশ করা সম্ভব ?
কাউয়ার কথা শোনে মনে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম । এরপর থেকে আমি আর এক লাইনও কবিতা লিখিনি।
"পাগল" নামে একটা ভালোবাসার (প্রেমের নয়) গল্প লিখলাম । ফ্যাক্স করে পাঠালাম সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায়। তখন বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মি.ফজলুর রহমান । তিনি গুরুত্ব দিয়ে গল্পটি ছাপলেন । একটি লাইন তিনি এডিট করেছিলেন । মানে বাদ দিয়েছিলেন । কেন তা বাদ দেয়া হলো তা জানতে বাংলা পত্রিকা অফিসে ফোন করেছিলাম । সম্পাদক ফজলু ভাই ফোন ধরেই বলেছিলেন, পাগল সাহেব কেমন আছেন ? বলেন আর কি পাগলামি আছে আপনার ? ওই গল্প ছাপা হবার পর নিউ ইয়র্কে সাংবাদিক মহলে অনেকেই আমাকে পাগল সাহেব বলে ডাকতেন । এটা ১৯৯৬ সালের কথা ।
লাইনটি ছিলো...
"শেফালি একটু ফাঁক করো । আমি দিতেছি ।"
এই লাইনটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল দেয়া নিয়ে । ওই সময় ১৯৮৭-৮৮ সালে গ্রামের পরীক্ষা কেন্দ্রে খুব নকল চলতো । পরীক্ষার ১৫/২০ দিন আগেই আমি বুক হয়ে যেতাম । ইংরেজি পরীক্ষার জন্য । ইংরেজিতে ভালো ছিলাম বলে ।
জেনেশুনে অপরাধের মধ্যে জীবনে এটাই করেছিলাম । বন্ধু বান্ধবের ভাই বোনেরা পরীক্ষা দেবে । অনুরোধ করলে তরুণ বয়সে ফেলতে পারতাম না । এই নিয়ে অনেকের সঙ্গে সম্পর্কও নষ্ট হয়েছিলো । দুই তিন বন্ধু একই পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করলে তো রাখা সম্ভব ছিলো না । কেউ হয়তো দেবিদ্বার কেন্দ্রে, কেউ বুড়িচং, কেউ মিয়ার বাজার কেন্দ্রে আবার কেউ ইলিয়টগঞ্জ কেন্দ্রে । আমি কয় কেন্দ্রে যাবো ? ছাত্র জীবনে খুব ভালো মটর বাইক চালাতাম ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজি পেপারে নকল দিতে গেলাম গ্রামের পরীক্ষা কেন্দ্রে এক বন্ধুর বোনকে । শহর থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহকারীরা তিন ভাগে বিভক্ত। পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন আউট করে আমাদের কাছে পৌঁছে দিতো একদল। আমরা ছোট ছোট কাগজে উত্তর লিখতাম কার্বন পেপার দিয়ে। যাতে পরীক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবীরাও পায়। আরেক দল আমাদের তৈরি করা নকল পুলিশকে হাত করে জানালা দিয়ে পৌঁছে দিতো পরীক্ষার্থীর হাতে। সাহায্যকারীদের উৎপাতে এসব পরীক্ষা কেন্দ্রের জানালা ইনভিজিলেটরদের নির্দেশে সব সময় বন্ধ থাকতো। পরীক্ষার্থীরা থুথু ফেলা বা নাক ঝাড়ার উসিলায় মাঝে মাঝে জানালা খোলে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো । কখনো বাইরে থেকে সাহায্যকারীদের ডাকেও জানালা খোলতো। আমরা দেখলাম, একটি ছেলে তার প্রেমিকার জন্য তৈরি করা নকল হাতে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে বন্ধ জানালার কাছে ফিশফিশ করে বললো,
শেফালি একটু ফাঁক করো । আমি দিতেছি।
ছেলেটি নকল দেয়ার জন্যই জানালা ফাঁক করতে বলেছিলো ।
ওই সব কেন্দ্রে আমাদের সে কি কদর ! ভালো ছাত্র । শহর থেকে গিয়েছি । অনেকে জোর করে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট পকেটে ঢুকিয়ে দিতো । যেন উত্তর লেখার সময় কার্বন পেপার নিচে রেখে লিখি । সে ওই কপি তার কোনো প্রিয়জনকে দিয়ে সাহায্য করবে ।
নকল টকল লিখে মটর বাইকের উপরে বসে আড্ডা মারছিলাম। কতগুলো গরিব বাচ্চা মেয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে বকুল ফুলের মালা বিক্রি করছে । অনেক ফুলের মাঝে বকুল ফুলও আমার প্রিয় । একটা মালা ছয় মাস ঘরে রেখে দিলেও গন্ধ ছড়ায় । গ্রামীণ এই টোকাইদের আমার খুব মায়া লাগে । হাতের ইশারায় ডাকতেই ১০/১২ বছরের একটি মেয়ে দৌঁড়ে কাছে এসে খুশি খুশি মনে জিজ্ঞাসা করলো-
সাব মালা নিবেন?
অপরিষ্কার জামা আর ময়লা শরীরের মেয়েটির মাথায় হাত রেখে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে দুষ্টুমি করে জিজ্ঞাসা করলাম, সবগুলো মালা কতো?
আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি বললো,
সাব আপনে নিলে পয়সা লাগবো না
হাতে নিয়ে গুণে দেখি ছয়টা মালা। পকেট থেকে পাতা রঙের একটা বিশ টাকার নোট বের করতেই মেয়েটি এক দৌঁড়ে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো। ছোট একটি গরিব মেয়ের ভালোবাসার কাছে ঋণী হয়ে রইলাম ।
 ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর