এ ব্রোকেন ড্রিম, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা
সংক্ষেপিত অনুবাদঃ পৃষ্ঠা ৪৭৭ – ৪৭৯।
“কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা জাতির গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস করতে হলে তার কার্যকর এক উপায় হলো পরিকল্পিতভাবে চরিত্রহনন করা। চরিত্রহননের এ কাজটির বেশ কিছু তরিকা আছে। মিথ্যা অভিযোগ তুলতে হয়, গুজব ছড়াতে হয়, বিভিন্ন তথ্য বিকৃত করতে হয়। পাশপাশি কোন কথার ভুল ব্যাখ্যা, অর্ধ সত্য কথা কিংবা ইচ্ছাকৃত ভুল উপস্থাপনও বেশ কাজে দেয়।
কোন ভিকটিমের উপর শারিরীকভাকে আক্রমণের আগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে তার চরিত্রহনন করে এভাবেই তাকে অমানুষ হিসেবে দেখানো শুরু হয়।
তবে কোন একজন মানুষ যখন কারো চরিত্রহনন করে সেই ঘটনা এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র মিলে যখন কারো চরিত্রহনন করতে দল বেঁধে ঝাপিয়ে পড়ে, এ দুই ঘটনায় বড় একটা পার্থক্য আছে। কোন সরকার যদি এই কাজ করে তাহলে বুঝে নিতে হয়, ঐ সমাজে অপরাধীদের বিচারবিহীন এক রাজত্ব কায়েম হতে যাচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষ সরকারের এসব কথাকে বিশ্বাস করে।
২০১৭ এর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আইনমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি জঘন্যতম ভাষায় আমার উপর হামলে পড়েন। দেশের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে চুড়ান্ত অশ্লীল ও জঘন্য সব কথাবার্তা তিনি অবলীলায় বলে গেলেন।
পরের মাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এক জনসভা হয়। ঐ জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মন্ত্রীরা আমার উপর আক্রমণ করেন। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এক্ষেত্রে বসে থাকলেন না। তিনিও মহানন্দে তাদের সাথে শামিল হলেন।
২২ আগষ্ট তারিখে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক সরকারী অনুষ্ঠান ছিলো। গ্রেনেড হামলায় ঘটনার নিহত-আহতদের স্মরণে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অতিথি হিসেবে ছিলেন। এখানে কথা বলতে গিয়ে তিনি আমার উপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন। আমার অপরাধ ছিলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা।
তিনি বললেন, মহান সংসদকে অবমাননা করা এবং এ ধরণের নিকৃষ্ট তুলনা করার আগেই বিচারপতি সিনহার পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। হাসিনার ভাষায়, ‘আমি পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি সব কিছু সহ্য করা যায় কিন্তু বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা সহ্য করা হবে না। এর বিচারের ভার আমি জনগণের কাছে দিচ্ছি। জনগণের আদালতই হলো সবচেয়ে বড় আদালত’।
তার এইসব কথাবার্তা থেকে আসলে বুঝা যায় কিভাবে কিছু চাটুকার দালালদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি এসব কথা বলছেন। তিনি জনগণ ও আইন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন। আদালতে ডিসিপ্লিনারি নিয়মকানুন সংক্রান্ত আমার এক কথাকে বিচ্ছিন্নভাবে এবং ভুলভাবে তার কাছে তুলে ধরে ঐ চাটুকারেরা তাকে ভুল বুঝিয়েছে।
আমরা পাকিস্তানকে পরাজিত করেছি এটা বাস্তবতা। সে দেশে কোন গণতন্ত্র নেই, বরং স্বৈরশাসকেরাই পাকিস্তানকে চালিয়ে আসছে। কিন্তু আরও বাস্তবতা হলো ১৯৭৩ সালের পর থেকে সে দেশের নিম্ন আদালত পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে। তাদের প্রধান বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরীর সময়কাল থেকে তাদের উচ্চ আদালতও স্বাধীন।
সেদেশের প্রধান বিচারপতি একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার দায়ে সরিয়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত রেখেছেন। উল্টোদিকে, পানাম পেপারস কেলেংকারি ফাঁস হওয়ার পর আমাদের দেশে আমরা কি এটা নিয়ে কোন তদন্ত করার ন্যুনতম চেষ্টাও করতে পেরেছি?
এখন আমার প্রশ্ন হলো, পাকিস্তানের এ ঘটনা সম্পর্কে আমার মন্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথায় এভাবে মাল উঠে যাওয়ার প্রকৃত কারণটা কি? কারণ আসলে তাকে সঠিক তথ্য জানানো হয় না। তাই তিনি ওয়েস্টমিনিস্টার সরকার পদ্ধতির বিভিন্ন সাংবিধানিক ও গুরত্বপুর্ণ বিষয় ঠিকমতো বুঝেন না। প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, এটা আসলে কোন আনুকূল্য নয়। বরং এটা হলো প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
সবশেষে এলো সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এমপি ও মন্ত্রীরা দল বেঁধে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও, সবাই মিলে একযোগে আমার নামে টানা সাড়ে পাঁচ ঘন্টা যাবত বিষোদগার করলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি নাকি জোরজবরদস্তি করে আমার রায়ে অন্য বিচারপতিদের স্বাক্ষর আদায় করেছি। তিনি তার নিজের মুখের বুলির সাংবিধানিক পরিণতি বুঝতে ব্যর্থ হলেন।
পুরোটা সময় তাকে সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিষয়ে প্রচুর ভুল বুঝানো হচ্ছিলো তাই তিনি এসব কাজকর্ম করছিলেন। কিন্তু এতো সব উস্কানির পরও শুধুমাত্র বিচারবিভাগের স্বার্থে এসবের কোন উত্তর না দিয়ে বরং আমি তখন চুপ করে থাকলাম।”
সংক্ষেপিত অনুবাদঃ পৃষ্ঠা ৪৭৭ – ৪৭৯।
“কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা জাতির গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস করতে হলে তার কার্যকর এক উপায় হলো পরিকল্পিতভাবে চরিত্রহনন করা। চরিত্রহননের এ কাজটির বেশ কিছু তরিকা আছে। মিথ্যা অভিযোগ তুলতে হয়, গুজব ছড়াতে হয়, বিভিন্ন তথ্য বিকৃত করতে হয়। পাশপাশি কোন কথার ভুল ব্যাখ্যা, অর্ধ সত্য কথা কিংবা ইচ্ছাকৃত ভুল উপস্থাপনও বেশ কাজে দেয়।
কোন ভিকটিমের উপর শারিরীকভাকে আক্রমণের আগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে তার চরিত্রহনন করে এভাবেই তাকে অমানুষ হিসেবে দেখানো শুরু হয়।
তবে কোন একজন মানুষ যখন কারো চরিত্রহনন করে সেই ঘটনা এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র মিলে যখন কারো চরিত্রহনন করতে দল বেঁধে ঝাপিয়ে পড়ে, এ দুই ঘটনায় বড় একটা পার্থক্য আছে। কোন সরকার যদি এই কাজ করে তাহলে বুঝে নিতে হয়, ঐ সমাজে অপরাধীদের বিচারবিহীন এক রাজত্ব কায়েম হতে যাচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষ সরকারের এসব কথাকে বিশ্বাস করে।
২০১৭ এর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আইনমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি জঘন্যতম ভাষায় আমার উপর হামলে পড়েন। দেশের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে চুড়ান্ত অশ্লীল ও জঘন্য সব কথাবার্তা তিনি অবলীলায় বলে গেলেন।
পরের মাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এক জনসভা হয়। ঐ জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মন্ত্রীরা আমার উপর আক্রমণ করেন। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এক্ষেত্রে বসে থাকলেন না। তিনিও মহানন্দে তাদের সাথে শামিল হলেন।
২২ আগষ্ট তারিখে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক সরকারী অনুষ্ঠান ছিলো। গ্রেনেড হামলায় ঘটনার নিহত-আহতদের স্মরণে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অতিথি হিসেবে ছিলেন। এখানে কথা বলতে গিয়ে তিনি আমার উপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন। আমার অপরাধ ছিলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা।
তিনি বললেন, মহান সংসদকে অবমাননা করা এবং এ ধরণের নিকৃষ্ট তুলনা করার আগেই বিচারপতি সিনহার পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। হাসিনার ভাষায়, ‘আমি পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি সব কিছু সহ্য করা যায় কিন্তু বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা সহ্য করা হবে না। এর বিচারের ভার আমি জনগণের কাছে দিচ্ছি। জনগণের আদালতই হলো সবচেয়ে বড় আদালত’।
তার এইসব কথাবার্তা থেকে আসলে বুঝা যায় কিভাবে কিছু চাটুকার দালালদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি এসব কথা বলছেন। তিনি জনগণ ও আইন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন। আদালতে ডিসিপ্লিনারি নিয়মকানুন সংক্রান্ত আমার এক কথাকে বিচ্ছিন্নভাবে এবং ভুলভাবে তার কাছে তুলে ধরে ঐ চাটুকারেরা তাকে ভুল বুঝিয়েছে।
আমরা পাকিস্তানকে পরাজিত করেছি এটা বাস্তবতা। সে দেশে কোন গণতন্ত্র নেই, বরং স্বৈরশাসকেরাই পাকিস্তানকে চালিয়ে আসছে। কিন্তু আরও বাস্তবতা হলো ১৯৭৩ সালের পর থেকে সে দেশের নিম্ন আদালত পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে। তাদের প্রধান বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরীর সময়কাল থেকে তাদের উচ্চ আদালতও স্বাধীন।
সেদেশের প্রধান বিচারপতি একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার দায়ে সরিয়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত রেখেছেন। উল্টোদিকে, পানাম পেপারস কেলেংকারি ফাঁস হওয়ার পর আমাদের দেশে আমরা কি এটা নিয়ে কোন তদন্ত করার ন্যুনতম চেষ্টাও করতে পেরেছি?
এখন আমার প্রশ্ন হলো, পাকিস্তানের এ ঘটনা সম্পর্কে আমার মন্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথায় এভাবে মাল উঠে যাওয়ার প্রকৃত কারণটা কি? কারণ আসলে তাকে সঠিক তথ্য জানানো হয় না। তাই তিনি ওয়েস্টমিনিস্টার সরকার পদ্ধতির বিভিন্ন সাংবিধানিক ও গুরত্বপুর্ণ বিষয় ঠিকমতো বুঝেন না। প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, এটা আসলে কোন আনুকূল্য নয়। বরং এটা হলো প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
সবশেষে এলো সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এমপি ও মন্ত্রীরা দল বেঁধে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও, সবাই মিলে একযোগে আমার নামে টানা সাড়ে পাঁচ ঘন্টা যাবত বিষোদগার করলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি নাকি জোরজবরদস্তি করে আমার রায়ে অন্য বিচারপতিদের স্বাক্ষর আদায় করেছি। তিনি তার নিজের মুখের বুলির সাংবিধানিক পরিণতি বুঝতে ব্যর্থ হলেন।
পুরোটা সময় তাকে সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিষয়ে প্রচুর ভুল বুঝানো হচ্ছিলো তাই তিনি এসব কাজকর্ম করছিলেন। কিন্তু এতো সব উস্কানির পরও শুধুমাত্র বিচারবিভাগের স্বার্থে এসবের কোন উত্তর না দিয়ে বরং আমি তখন চুপ করে থাকলাম।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন