সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দাঁত,প্রেম ও ব্লু শার্ট


দাঁত,প্রেম ও ব্লু শার্ট


আজ কয়েকদিন দাঁতের ব্যথায় বেশ অস্থির। মনটা মোটেও ভালো নেই। শরীরটাও কেমন যেন রিদমে নেই । দাঁত ব্যথায় মাথা ভার হয়ে থাকে। কথায় আছে দাঁতের ব্যথা আঁতে লাগে। ট্রিটমেন্ট চলছে রেগুলার। আমার দু'টো দাঁত বৃজ করে লাগাতে হবে। ডান দিকের উপরে মাড়ির দ্বিতীয় দাঁত এবং বাঁ দিকের নিচের মাড়ির দ্বিতীয় দাঁত ( ডেন্টিস্টরা বলেন ৫ নাম্বার দাঁত)। এই দু'টো দাঁতে ইনফেকশন হয়েছিলো। তাই ফেলে দিতে হয়েছে। এখন খেতেই পারছি না। আজ ১৫ দিন ধরে প্রতিদিন ডেন্টিস্ট এর কাছে যেতে হচ্ছে। এখনো এসেছি। বৃজ করা হলো,ফেলে দেয়া দাঁত দুটোর দুই দিকের ভালো দু'টো দাঁত একটু কেটে এক্সরে করে মাপ নিয়ে সেই মাপে ফেলে দেয়া দাঁত বানানো হয়েছে ল্যাবরেটরিতে ঢাকায় । এক সঙ্গে তিনটি করে ৬টি দাঁত বানানো হয়েছে। ওই বানানো দাঁতের ভেতর ডেন্টাল সিমেন্ট দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হলো আজ।
দুই দিকের ভালো দু'টো দাঁত মাঝেরটাকে ধরে রাখবে। সে জন্য এটাকে বৃজ করা বলে। তার আগে ভালো দাঁত দু'টোকে রুট ক্যানাল করা হয়েছে। এই দাঁত অরিজিনাল দাঁতের মতোই কাজ করে। এবং এটা ফিক্সড হয়ে থাকবে। বিদেশে দাঁতের টৃটমেন্ট খুব এক্সপেনসিভ। তাই এখানেই শেষ করে নিলাম। এখানেই ১৪০০০ টাকা লেগেছে।
গতকাল এক বন্ধুর আমন্ত্রণে অনেক দূরে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ের পাশেই বন্ধুর বাসা। রাস্তার উত্তর দিকে মাইলের পর মাইল শুধু সবুজ ধান ক্ষেত। হালকা ঠাণ্ডা বাতাস। হঠাৎ আমার বুকটা হাহাকার করে উঠলো কোনো কারণ ছাড়াই । মনে পড়ে গেলো কিশোর বয়সের এক স্মৃতি।
আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ১৯৮০ সালে যখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র (আমার ১ বছর ব্র‍্যাক অফ স্টাডি ছিলো) তখন আমার প্রথম প্রেমিকার বাবা মারা যান ক্যান্সারে । সে ছিলো ফ্যামিলির বড় মেয়ে। বাসায় অভিভাবক বলতে কেউ ছিলো না । তখন আমরা দু'জনই ঝাউতলা শহীদ শামসুল হক সড়কে থাকতাম। পাশাপাশি ছিলো বাসা।
বর্তমান সেনাপ্রধানের আগের সেনাপ্রধান জেনারেল মি. ইকবাল করিম ভুঁইয়া তার মামা। জেনারেল তখন ক্যাপ্টেন ছিলেন। ওই সড়কে জেনারেলদের নিজস্ব বাসা আজো আছে। বাসার নাম 'অরুণাচল'। বন্ধুরা আমাকে ভয় দেখিয়ে বলতো, 'মন্টু,মেয়ের মামা ক্যাপ্টেন। আর্মি মাইরা তোরে তর্জা কইরা ফেলবো।'
প্রেম করলে কি আর ডর ভয় থাকে? সেও ক্লাশ টেনে পড়তো ফয়জুন্নেসা গার্লস স্কুলে । বাবার মৃত্যুর পর তার ফ্যামিলি তাকে কুমিল্লা থেকে দিনাজপুর পাঠিয়ে দেয় তার চাচার বাসায়। আমার কিছুই করার ছিলো না। টেনে পড়ুয়া ছাত্র আমি। কুমিল্লা থেকে দিনাজপুর গিয়ে দেখা করা ওই বয়সে সম্ভব ছিলো না। সে আমাকে চিঠি লিখতো। কিন্তু আমি তাকে চিঠি লিখতে পারতাম না। তার নিষেধ ছিলো। কি যে কষ্ট!
একদিন শহর থেকে আমাদের গ্রামে যাই। শহরের পাশেই আমাদের গ্রাম। তখন মানুষ কম ছিলো। আমি আমাদের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে একটা কাঠাল গাছের নিচে বসেছিলাম। অক্টোবর মাস ছিলো। তার বাবা মারা গিয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসে। খাঁ খাঁ দুপুরে সেই কাঠাল গাছের নিচে বসে অনেক দূর পর্যন্ত তাঁকিয়ে ছিলাম। শুধু খোলা মাঠ দেখা যেতো। ঢাকা-চিটাগং বিশ্বরোড ছিলো না। ছিলো শুধু ধান ক্ষেতের মাঠ। তখন আমার বুকটা হাহাকার করে উঠেছিলো। ইচ্ছা হচ্ছিলো উড়ে দিনাজপুর চলে যাই। যা কাউকে কোন দিন বুঝানো সম্ভব নয়।
এই অনুভূতি কাউকে কিছুতেই বুঝানো যাবে না কোনোদিন ।
৩০ বছর পর ২০১০ সালে তার সঙ্গে আমি দেখা করি ঢাকা নিউ মার্কেটের উল্টো দিকে 'মিডনাইট সান' চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। তার একমাত্র ছেলে তখন জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে মাইক্রো বায়োলজিতে অনার্স পড়ছিলো। সঙ্গে তার ছোট বোন ছিলো। আমরা এক সঙ্গে লাঞ্চ খেয়েছিলাম। তাকে কিছু রোমান্টিক গানের সিডি ও কিছু প্রেমের উপন্যাস দিয়েছিলাম। তারপর তাকে ও তার বোনকে গাউছিয়া মার্কেট থেকে দু'টো করে চারটি থৃ পিস আর দু'টো গায়ের চাদর গিফট করি।
বিদায় নেবো এমন সময় সে খপ করে আমার হাতে ধরে এলিফ্যান্ট রোডের দিকে টানতে লাগলো। প্রকাশ্যে কোনো মেয়ের হাত ধরে আমি কখনো হাঁটিনি জেমিমার মা ছাড়া। আমাকে টানতে টানতে সে Monsoon এ নিয়ে গেলো।
নিজেই একটা ব্লু শার্ট পছন্দ করে আমাকে পরতে বললো। তারপর কাউন্টারে এসে নিজেই বিল দিলো
। শার্টটার দাম ছিলো ১৭০০ টাকা । শার্ট টা এখনো আছে।
অতঃপর বিদায়ের সময় ও আমার হাত ধরেছিলো ঠিক ২০ মিনিট। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি একটা ইয়েলো ক্যাব ডেকে দুই বোনকে উঠিয়ে দিলাম মগবাজার তার ব্যারিস্টার চাচার বাসায়।
বাসায় ফিরে জেমিমার মাকে সব বললাম। জিমুর মা বলেছিলেন, তাদের বাসায় নিয়ে আসতা। শার্ট টা খুব সুন্দর। তোমার আরো দামি গিফট দেয়া উচিৎ ছিলো। থৃ পিস একটা গিফট হলো? আমি জিমুর মাকে বললাম, একেকটা পিস ৩৫০০ টাকা। তখন জেমিমার বয়স ৪ বছর। জীবন কতো বিচিত্র!
সেই ব্লু শার্টের একটা ছবি। উড়ন্ত বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমানে সিনিয়র ক্রুর সঙ্গে তাদের রুমে।

 October 28, 2017

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর