সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এই খবরদার

আমেরিকা থাকতে আমি মাঝে মাঝে মাথা কামাতাম । আমেরিকার বেশির ভাগ পুলিশ মাথা কামায় । বিশেষ করে ফ্লোরিডার পুলিশ । হয়তো ফ্লোরিডার আবহাওয়া সারা বছরই গরম বলে । একদিন আমার পরিচত এক পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,তোমাদের এই
মাথা কামানোতে সরকারের কোন বিধিনিষেধ নেই ? ওই পুলিশ অফিসার ঠোঁট উল্টে আমাকে বলেছিলো,Who Cares?
একবার শিল্পী রফিকুল আলম,আবিদা সুলতানা ও রথীন্দ্রনাথ রায় গেলেন আমেরিকায় কনসার্ট করতে । আমরা সংগীতপ্রিয় অনেকে মিলে তাদের নিয়ে একটা কনসার্ট করেছিলাম ফ্লোরিডার Fort Myers City তে।
মিতালী মুখার্জি ও ভুপিন্দর শিং এর গাওয়া
"যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আধাঁর...''
এই রোমান্টিক বাংলা ডুয়েট গানটি আমার খুবই প্রিয় । একটু রিদমিক । অনেক পরে রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানাও এই ডুয়েট গানটি গেয়েছিলেন । কনসার্ট শুরু হলো । আমি কামানো মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে হাত তুলে বললাম ‘এই খবরদার, “যেটুকু সময়, যেটুকু সময়"। সোহেল,আমি,ইমতিয়াজ,কাজী,কবির,বাবু,রুমি,দিদার এই কয়েকজন কথা বলার আগে প্রায়ই “এই খবরদার” বলে শুরু করতাম । এটা ছিলো এক ধরনের ফান । তাৎক্ষনিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই “খবরদার” খুব কাজে আসে । ইচ্ছা করলে আপনারাও বলে দেখতে পারেন । আমার ‘খবরদার’ শুনে গান বন্ধ করে শিল্পী রফিকুল আলম ষ্টেজ থেকে বললেন "গাইবো, গাইবো"।
এবং পরের গানটাই ‘যেটুকু সময়' গাইলেন । আমি যে খুব পাগলামি করতাম তা ফ্লোরিডার সবাই জানেন । নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'ঠিকানা' এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এ লিখতাম । একটু লেখক লেখক মনে করতো সবাই ।
কনসার্ট চলাকালীন তাপস ভাই ১০ ডলারের বিনিময়ে রাফেল ড্র এর আয়োজন করেছিলেন । আমার কাছ থেকে টাকা না নিয়েই তাপস ভাই আমাকে একটা নাম্বার দিলেন । ৬৯ । ড্র র ফলাফল ঘোষণা করলেন তিন গুণী শিল্পী । ৬৯ বলতেই আমি আবার বললাম,এই খবরদার, কেউ যাবা না । এই পুরস্কার আমার । এটা ছিলো খুব আধুনিক একটা ভিডিও প্লেয়ার । প্রথম পুরস্কার । তবে আমার মনে হয়েছিলো তাপস ভাই পক্ষপাতিত্ব করেই প্রথম পুরষ্কারটা আমাকে দিয়েছিলেন ।
আমি সাধারণত সেলিব্রেটিদের সঙ্গে ছবি তুলিনা । কনসার্ট শেষে রফিকুল ভাই বললেন,"তুমিতো খুব গান প্রেমিক । এসো তোমার সঙ্গে ছবি তুলি"। এদিকে তাপস ভাইয়ের দুই ছেলে প্রান্ত আর অন্ত কান্নাকাটি শুরু করলো ড্র তে পাওয়া আমার ভিডিও প্লেয়ার এর জন্য । তাপস ভাই আর লতা ভাবীর ফ্যামিলির সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক আছে । প্রান্ত আর অন্তকে বললাম, খবরদার,কান্নাকাটি করবি না । 'নে ধর' বলে ভিডিও প্লেয়ারটা ওদেরকে দিয়ে আমি কামানো মাথা নিয়ে দাঁড়ালাম ।
রফিকুল আলম তাঁর স্ত্রী আবিদা সুলতানাকে মাঝে দাঁড়াতে বললেন । তাপস ভাই ছবিটি তুলেছিলেন । গত বছর তাপস ভাই ফোন করে বলেছিলেন,তোকে অনেকদিন দেখিনা,একটু skype তে আয়,তোকে দেখতে ইচ্ছা করছে । কবিরও ফোন করেছিলো । আমি আর কবির ছিলাম একটু বেশি বান্দর । কবির এখন ওয়েস্ট পাম বিচ থাকে । নামাজ পরে,খুব ধার্মিক হয়ে গেছে । ফোনে কবিরকে বললাম, Lookers,Foxy Lady ওই ক্লাব গুলোতে তো এখন সদস্য কমে গেলো রে । কবির বলেছিলো, তুই আবার চলে আয় ।
তাপস ভাই, কবির,ইমতিয়াজ,দিদার,খায়রুল,লিটু ভাই,মনি দি,শামু,সোহেল,বাবুল ভাই,নেহাল ভাই(নেহাল পারভেজ-সোহেল রানার ছোট ভাই ও রোবেল এর বড় ভাই),রুমি,বাবুসহ আরো অনেকেই ওই কনসার্টে ছিলেন । ভাবীদের নাম লিখলাম না । তারা সবাই এখনো ফ্লোরিডায় আছেন । আমার পোস্টিং পড়েন । কিন্তু লাইক কমেন্ট করেন না । আমি এমন সব স্মৃতিকথা লিখি যা অনেকেই লজ্জা পেয়ে যান । কী রে ভাই,আমি কি ভুল কিছু লিখলাম ?
 February 20, 2016

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...