সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফ্লোরিডাতে নৌ ভ্রমণ

নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডা আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম । সোহেল,তাপস ভাই, মিজান ভাই, বাবুল ভাই তারা অনুরোধ করে আমাকে রেখে দিলো । তারাও কুমিল্লার । দেশে থাকতেই আমাকে চিনতো । বললো, নিউ ইয়র্কেও ডলার বেতন পাবা এখানেও ডলার । ওখানেও ইংরেজিতে কথা বলবা এখানেও ইংরেজিতে কথা বলবা । সমস্যা কী ? কিন্তু কয়েকদিন থেকে আমি হাপিয়ে উঠলাম ।
মানুষজন কম । নিরিবিলি । নিউ ইয়র্কের মতো জমজমাট না । তখন আমার গাড়িও ছিলো না । এখানে আমার সময় কাটে না । তখনো দিদার, ইমতিয়াজ, কাজী, বাবু, রুমি, মনির, সবুজ, শওকতসহ আরো অনেকেই ওই সিটিতে যায় নি ।
একেবারে মেক্সিকো উপসাগরের পেটে ফোর্ট মায়ার্স সিটি । কান্ট্রি সাইড ।
সিনিয়র যারা ছিলেন তাদের সঙ্গে পরিচয়ও হয়নি তখন । তো একদনি রেগে মেগে শেল (Shell) থেকে বেরিয়ে গেলাম । সোহেলকে বললাম, যাহ,আর চাকরি করবো না । তুই পামপট্টি দিয়ে আমাকে এখানে রেখেছিস।
কিন্তু বেরিয়ে কোথায় যাবো ? কার কাছে যাবো ? একটা বাস ধরে গেলাম ফোর্ট মায়ার্স বিচে । তখনো কিছুই চিনি না । ভাষা না জানলে ওখানেও হারিয়ে যেতাম। । বিচের পাড়ে অনেকক্ষণ হেঁটে এক জায়গায় দেখলাম,
বড় সাইনবোর্ডে লেখা
Rent a Boat. Have a nice time in the Sea .বোট ভাড়া নিন... সমুদ্রে চমৎকার সময় কাটান । কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এক ঘন্টার জন্য বোটের ভাড়া একশ ডলার ।
কর্তৃপক্ষ আমাকে উপদেশ দিয়ে বললো গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য । তারপরও যদি বেশি দূর চলে যাই তবে অনেকগুলো লাল ভাসমান বল দেখবো, এই সীমানার বাইরে যাওয়া যাবে না । লাল বল থেকে নো ম্যান্স ল্যান্ড । এরপর কিউবার সীমানা ।
আমার মন সেদিন খুব খারাপ ছিলো । মন চাইছিলো যা খুশি তাই করবো । একবারে গভীর সমুদ্রেই চলে গিয়েছিলাম । মরলে মরবো ।
মেক্সিকো উপসাগরের নীল জলরাশি যেন আমাকে ডাকছিলো আরো বেশি তার কাছে যেতে ।
লাল ভাসমান বলের কাছে গিয়ে ভাবলাম আহামরি কি আর হবে ? আরেকটু সামনে গেলে হয়তো সাগর থেকে কিউবা দেখতে পাবো । ফিদেল ক্যাস্ত্রোর দেশ বলে কথা ! আমি বরাবরই দূরন্ত প্রকৃতির মানুষ। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখার আকর্ষণ আমার চিরকালের ।
আমি বিশ্বাস করি Life is an Adventure....Dare it. লাল বল পেরিয়ে একটু যেতেই দেখলাম,মাথার ওপর একটা হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে । আমি আপন মনে স্পিডবোট চালাচ্ছি । কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিক থেকে চারটি বড় সাইজের স্পিডবোট আমাকে ঘিরে ফেললো । বোটগুলোর গায়ে লেখা ছিলো ইউএস কোষ্ট গার্ড । একেকটি বোটে ছয়জন করে ড্রেসড গার্ড । বুঝলাম, কারণ লাল বল । এমনভাবে বোটগুলো আমাকে ঘিরেছে যে আমি থামতে বাধ্য ।
বোট থেকেই আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো গার্ডেরা । তোমার নাম কি ? তুমি কোথায় থাকো ? এখানে কেন এসেছো ?
উল্লেখ্য, ফিডেল ক্যাষ্ট্রোর কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ । ক্যাষ্ট্রো প্রতিদিনই আমেরিকাকে গালাগালি করেন ।
কোষ্ট গার্ডের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সমুদ্রে বোটিং করছি বললাম ।
আমাকে খুব ভদ্রভাবে তারা বললো, Just Follow Us কোষ্ট গার্ডের চারটি স্পিডবোটের পেছনে চললাম । লাল ভাসমান বলের কাছে গিয়ে তারা থামলো ।
আমিও ।
বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বললো, ভবিষ্যতে যখন সমুদ্রে বোটিং করবা তখন কোনো কারণেই এই সীমানা অতিক্রম করবা না ।
খুব হাসি-খুশি মুখে বললো, You have a nice time in the Sea. Relax Yourself.
ফিদেল কাস্ত্রো মারা গেছেন তাই ফ্লোরিডার ওই স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ছে
( "ফ্লোরিডাতে নৌ ভ্রমণ " আর্টিক্যাল থেকে অংশ বিশেষ। )
অনেক পরে একদিন আমি ও কবির ওই বিচে ।

 November 27, 2016

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর