সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যুগোস্লাভিয়া


যুগোস্লাভিয়া


প্রথম ইউরোপের মাটিতে পা রেখেছিলাম সাবেক যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে। ১৯৮৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর । এখনকার ছেলেমেয়েরা যুগোস্লাভিয়ার নামও জানে না । জানবার কথাও নয় । জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম নেতা মার্শাল জোসেফ ব্রুজ টিটোর দেশ ।
সমাজতান্ত্রিক দেশ হলেও সাবেক সভিয়েট ইউনিয়নের বলয়ভুক্ত ছিলো না যুগোস্লাভিয়া যেমন ছিলো অন্যান্য দেশগুলো । যুগোস্লাভিয়া কমনওয়লেথভুক্ত একটি প্রভাবশালী দেশ ছিলো । যুগোস্লাভিয়ার ইংরেজি বানান Yugoslavia । তখনো যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে টুকরো হয়নি । আমি অস্টৃয়া থাকতেই ১৯৯২ সালে চোখের সামনে প্রতিবেশি যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে সাতটি দেশ হয়েছিলো । ১। বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনা ২। ক্রোয়েশিয়া ৩। মেসিডোনিয়া ৪। মন্টিনিগ্রো ৫। স্লোভেনিয়া
৬। সারভিয়া এবং ৭। কসোভো ।
রাজধানী যথাক্রমে-সারাজেবো, জাগরেব, স্কপজি, পোডগোরিকা, লুবজানা,(যুগোস্লাভ উচ্চারণে লুবলিয়ানা), বেলগ্রেড এবং প্রিস্টিনা ।
তখন যুগোস্লোভিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য পোর্ট অফ এন্টৃ বা ভিসা অন অ্যারাইভেল ছিল । বেলগ্রেড এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে দেখেছিলাম সারা শহর তুষারে ঢাকা । ডিসেম্বরের তীব্র শীত । বেলগ্রেডে ল্যান্ডিংয়ের আগেই বিমান থেকে দেখেছিলাম প্রচন্ড তুষারপাত হচ্ছিলো।
বেলগ্রেডের একটা দামি হোটেলে উঠেছিলাম । যুগোশ্লোভিয়ার মুদ্রার নাম ছিলো দিনার । এয়ারপোর্টে একশ ডলার চেইঞ্জ করে পেয়েছিলাম দেড় মিলিয়ন যুগোস্লাভ দিনার । অর্থাৎ পনের লাখ দিনার । এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যেতে ট্যাক্সি ভাড়া ছিলো চার লাখ দিনার । হোটেলের ডাবল রুমের ভাড়া ছিলো আট লাখ দিনার । সেদিন বেলগ্রেডের তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস আট ডিগ্রি ।
ইউরোপের দেশ হিসেবে যুগোস্লাভিয়া তুলনামূলকভাবে কিছুটা গরিব দেশ । যুগোস্লাভ মেয়েরা খুব ফ্রেন্ডলি । প্রচন্ড শীতেও ওরা স্কার্ট পড়ে । আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী । বিদেশিদের সঙ্গে সহজেই মেশে । প্রচুর ডৃংক করে । এগারো দিন যুগোস্লাভিয়া ছিলাম । প্রতিদিন তুষারপাত হতো । বেলগ্রেডের ঐতিহাসিক অনেক কিছু দেখে গিয়েছিলাম অ্যাডরিয়াটিক সী বা অ্যাডরিয়াটিক সাগর দেখতে । অবিশ্বাস্য তুষারপাত হচ্ছিলো। তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস এগারো ডিগ্রি । কি যে শীত! হাতের জ্বলন্ত সিগারেট নিভে গিয়েছিলো ঠান্ডায় । কানে হাত দিয়ে ধরে দেখলাম, আমার কান নেই । অতিরিক্ত ঠান্ডায় কান অবস হয়ে গিয়েছিলো ।
পাঁচ দিন বেলগ্রেডে থেকে গিয়েছিলাম যুগোস্লাভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জাগরেব । জাগরেব এখন ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী । বেলগ্রেড থেকে জাগরেব ৪৫০ কিলোমিটার । বেলগ্রেড থেকে ট্যাক্সিতে জাগরেব গিয়েছিলাম । যেদিকে তাকাই শুধু তুষার আর তুষার ।
জাগরেব তিন দিন ঘুরে চলে গেলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর যুগোস্লাভিয়ার সুন্দর শহর মেরিবোর । মেরিবোর ছবির মতো শহর । ওখানে আরো বেশি শীত । তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস এগারো ডিগ্রি । তখন মনে মনে ভেবেছিলাম, এই শীতে মানুষ বেঁচে থাকে কিভাবে ? আমাদের ধর্মগ্রন্থে দোজখের আগুনের বণর্না আছে । সৃষ্টিকর্তা দোজখে আগুন না দিয়ে এমন শীত দিলেই তো কাজ হতো বেশি । পরে নিজেই অভ্যস্থ হয়ে গেলাম শীতের দেশে বসবাসে । মেরিবোর শহরটি প্রতিবেশি দেশ অষ্টৃয়ার গ্রাজ শহরের খুব কাছে।
এই সময়ে কি শীত ইউরোপ-আমেরিকায় !
ছবিটা তীব্র তুষারপাতের মধ্যে এক রাতে
বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেব- এ তোলা।

 December 11, 2017

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর