পিএসসি, জেএসসি, স্মার্টফোন, ফেসবুক,আত্নহত্যা!!!
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উপর একটা বিরাট মানসিক চাপ । বিশেষ করে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা । পড়ে এক স্কুলে পরীক্ষা দেয় আরেক স্কুলে । অভিভাবকদেরও বিরাট হয়রানি ।
অন্য স্কুলে যাতায়াতে ট্রান্সপোর্ট সমস্যা ছাড়াও অনেক রকমের ভোগান্তি পোহাতে হয় । এদেশে নির্দিষ্ট সময়ে কোথাও পৌঁছা প্রায় অসম্ভব । তাছাড়া পিএসসি, জেএসসির ফলাফল ভবিষ্যৎ জীবনে কোথাও কাজে লাগে না বা কেউ সেটা দেখতেও চায় না । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রেও কোনো কর্তৃপক্ষ এই দুই পরীক্ষার ফলাফল দেখতে চায় না বা বিবেচনায় নেয় না । এমনকি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও পিএসসি, জেএসসির ফলাফল কোনো বিবেচনায় আসে না । যে পরীক্ষার ফলাফল ভবিষ্যতে কোনোই কাজে লাগে না তা নিয়ে কেনো ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের এতো হয়রানি করা হয় ? ফাঁক তালে এসব পরীক্ষায় পাস বা ভালো ফলের আশায় প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য হয় রমরমা । এই দুটি পরীক্ষা বাতিল এখন সময়ের দাবি।
আমার কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, গ্রামের প্রায় সব স্কুলেই এই দুই পরীক্ষায় ৫০/৬০ নাম্বারের উত্তর শিক্ষকরাই বলে দেয় । ৪০ নাম্বারের এমসিকিউ তো শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে বলে দেয় । আবার জিজ্ঞেস করে, সবাই লেখছো ?
সেজন্য এসএসসিতে জিপিএ -৫ পাওয়া ছেলেমেয়েদের টিভি থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, 'আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি' এর ইংরেজি কি ?
ছাত্রছাত্রীরা উত্তর দিয়েছিলো I am GPA 5.
আর অপারেশন সার্চ লাইট কি?
এই প্রশ্নের উত্তরেও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা বলেছিলো, অপারেশনের সময় যে লাইট জ্বালানো হয় সেটাই অপারেশন সার্চ লাইট । জিপিএ ৫ এর কি বাহার !!!
অপ্রয়োজনীয় কতোগুলো সাবজেক্ট যেমন...
১। চারু ও কারুকলা
২। কৃষি শিক্ষা
৩। বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
৪। কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা
এসব একেবারেই অপ্রয়োজনীয় অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত । ছাত্রছাত্রীদের বইয়ের বোঝা বাড়ানো হয়েছে । আর কিছু নয় । নাইন টেনের ৮৫% ছাত্রছাত্রী ইন্ডিয়া,নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও থাইল্যান্ডের রাজধানীর নামই জানে না । তো 'বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' পড়িয়ে লাভ কি ? নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এগুলো যে কেউ জানতে পারে । ৯০% বা তারও বেশি ছাত্রছাত্রীরা পত্রিকাই পড়ে না । আমি কমপেয়ার করে দেখেছি, আমাদের সময়ের ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এখনকার জিপিএ ৫ এর কোনো তুলনাই হয় না । এদিক দিয়ে আমরা ৩০/৪০ বছর আগে হলেও এগিয়ে ছিলাম ।
এখন একটা পেয়েছে সবাই ফেসবুক । অনার্স, মাস্টার্সে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে চার লাইন লিখলে ৫টা বানান ভুল থাকে !!! সেগুলো না শিখেই ফেসবুক চালায় ! এতোই যখন ফেসবুকের শখ, তো আগে অভ্র বা প্রভাত দিয়ে ইউনিকোডে লেখাটা অন্তত শিখো । এটাও একটা শিক্ষা । নইলে লিখতে আসো কেন ? এদেশের সব স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা এখন বুদ্ধিজীবী ! এরা ফেসবুকে দু'তিন লাইনে ‘বাণী’ দেয় । অনেকে বলে, ফেসবুকে বানান ভুল হয় ই । আমি এই বাণীর সঙ্গেও একমত না । এরা বানানই জানে না । যদি জানতো তবে নিজে চোখে দেখে এই ভুল বানানের ‘বাণী’ পাবলিক ফোরামে দিয়ে নিজেকে অন্যের কাছে ছোট করতো না । সঠিক বানানটা আগেই শিখে নিতো । এটা অভ্র বা প্রভাত জানা একজন লোকের কাছে একদিনেই শেখা যায় । দুই তিন হাজার শব্দের কোনো গল্প বা আর্টিক্যাল লিখলে ৪/৫টা বানান অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে । অনেকেই ধরে নেবেন এতো বড় একটা লেখা লিখতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ চার পাঁচটা বানান ভুল হতেই পারে ।
ফেসবুক আর স্মার্টফোন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিরাট ক্ষতি করে । এটা এক ধরনের আসক্তি । মাদকাসক্তের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় । কমেন্ট অপশনে লিংক দিলাম। ম্যাসেঞ্জারে যে কোনো ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলা যায় । এতে অনেকে সম্পর্কেও জড়ায় । ঘরে বসে, রাত ১টা/ ২টায় না ঘুমিয়ে, কাউকে না জানিয়ে, শুয়ে শুয়ে প্রেম করার এক অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে স্মার্টফোন । স্কুল কলেজের একটা ছেলে বা মেয়ে গড়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা ফেসবুকে সময় দেয় । এখন অনেক ছেলেমেয়ের স্কুল জীবনেই চশমা লাগে । তা স্মার্টফোনের রেডিয়েশনের কারনে । আমি নিজে রিসার্চ করে দেখেছি, গড়ে শহরের ছেলেমেয়েদের চেয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে বেশি আসক্ত । এর কারন হতে পারে শহরের চেয়ে গ্রামে বিনোদনের অভাব । আরো কারন, গ্রামে সাধারণত অল্প শিক্ষিত অভিভাবকরাই বেশি থাকেন । তাদের ফাঁকি দেয়া সহজ। তাদের সচেতনতাও কম । শিক্ষিত অভিভাবকরা সকলেই শহরে থাকেন । চাকরি, ব্যবসা ও ছেলেমেয়েদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য । আমি দেখেছি, গ্রামে অল্প শিক্ষিত অভিভাবকের সন্তানরা যখন কলেজে পড়ে তখন অনেক সন্তানই পিতামাতাকে হেয় জ্ঞান করেন । বাবা মাকে ঘাড় ত্যারা করে “আপনি কিছু বুঝেন না” এমন কথাও সন্তানকে বলতে শোনেছি !
আমি গত বছর শখ করে জেমিমার একটা ফেসবুক একাউন্ট খোলে দিয়ে মেয়েকে একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিলাম । দুইমাস পরে মেয়ে আমাকে ফোনে বলে.. " আব্বু, একটা ছেলে আমাকে ফোন করে।''
জানতে চাইলাম, কি বলে ? মেয়ে বললো,
'ছেলেটা বলে, তুমি খুব সুন্দর। '
আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিলো । আমার মানসিকতা বন্ধুরা জানেন । বড় হলে ছেলেমেয়েরা প্রেমট্রেম করবে এটাতো খুবই স্বাভাবিক । তাই বলে ফাইভ সিক্সে ?
মেয়ের মাকে ফোন করে বললাম,এই খবরদার, জেমিমার ফোনটা কালই আমাকে পার্সেল করে পাঠাবা । স্মার্টফোনের গোষ্ঠী কিলাই । মেয়ের মা জানতে চেয়েছিলেন, কি হইছে ? আমি আবারো বললাম, খবরদার । কোনো কথা নেই । একদম চুপ ।
মেয়ের মা আর কোনো কথা বলেননি । আমার ঘাড় ত্যারা স্বভাব উনি জানেন । তিনি পরদিনই ফোনটা আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । সেই থেকে মেয়ের আর ফোন নেই । ফোন নিয়ে আসবো জানলে হয়তো অবুঝ জেমিমা আমাকে বলতোই না । মেয়ে বোধহয় মনে মনে বলে " কি গরুটা বাঘে খাইলো"।
মাঝে মাঝে মেয়ে তার মা, মামা,খালাদের স্মার্টফোন খোঁচাখুঁচি করে তাদের সামনেই ।
গতকাল পিএসসির রেজাল্টের পর মেয়েকে বুঝিয়ে বললাম, ইন্টারমেডিয়েট পাস করার আগে যেনো সে স্মার্টফোন ইউজ না করে । জেমিমা ছোটবেলা থেকেই কথা শোনে ।
বাসায় ল্যাপটপ, ডেস্কটপ আছে । সব বড়দের স্মার্টফোন আছে ৷ কখনো কিছু খেলতে চাইলে বড়দের ফোন নিয়েই তা পারে । বা কাউকে কল করতে । এতো ছোট মেয়ের স্মার্টফোনের কি দরকার ? বা ফোনেরই কি দরকার ?
ভিকারুননিসার নাইনে পড়ুয়া যে মেয়েটা মাস খানেক আগে আত্নহত্যা করে মারা গেলো তার অভিভাবক তাকে স্মার্টফোন না দিলে মেয়েটা পরীক্ষার হলে তা নিয়ে যেতো না আর তার বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগও উঠতো না । বাবা মা অপমানিত হতো না ৷ মেয়েটিরও আত্নহত্যা করে প্রাণ বিসর্জন দিতে হতো না ।
আদর করে কিংবা নিজের আভিজাত্য দেখাতে ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন দেয়ার আগে একবার কি ভাববেন ?
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উপর একটা বিরাট মানসিক চাপ । বিশেষ করে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা । পড়ে এক স্কুলে পরীক্ষা দেয় আরেক স্কুলে । অভিভাবকদেরও বিরাট হয়রানি ।
অন্য স্কুলে যাতায়াতে ট্রান্সপোর্ট সমস্যা ছাড়াও অনেক রকমের ভোগান্তি পোহাতে হয় । এদেশে নির্দিষ্ট সময়ে কোথাও পৌঁছা প্রায় অসম্ভব । তাছাড়া পিএসসি, জেএসসির ফলাফল ভবিষ্যৎ জীবনে কোথাও কাজে লাগে না বা কেউ সেটা দেখতেও চায় না । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রেও কোনো কর্তৃপক্ষ এই দুই পরীক্ষার ফলাফল দেখতে চায় না বা বিবেচনায় নেয় না । এমনকি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও পিএসসি, জেএসসির ফলাফল কোনো বিবেচনায় আসে না । যে পরীক্ষার ফলাফল ভবিষ্যতে কোনোই কাজে লাগে না তা নিয়ে কেনো ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের এতো হয়রানি করা হয় ? ফাঁক তালে এসব পরীক্ষায় পাস বা ভালো ফলের আশায় প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য হয় রমরমা । এই দুটি পরীক্ষা বাতিল এখন সময়ের দাবি।
আমার কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, গ্রামের প্রায় সব স্কুলেই এই দুই পরীক্ষায় ৫০/৬০ নাম্বারের উত্তর শিক্ষকরাই বলে দেয় । ৪০ নাম্বারের এমসিকিউ তো শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে বলে দেয় । আবার জিজ্ঞেস করে, সবাই লেখছো ?
সেজন্য এসএসসিতে জিপিএ -৫ পাওয়া ছেলেমেয়েদের টিভি থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, 'আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি' এর ইংরেজি কি ?
ছাত্রছাত্রীরা উত্তর দিয়েছিলো I am GPA 5.
আর অপারেশন সার্চ লাইট কি?
এই প্রশ্নের উত্তরেও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা বলেছিলো, অপারেশনের সময় যে লাইট জ্বালানো হয় সেটাই অপারেশন সার্চ লাইট । জিপিএ ৫ এর কি বাহার !!!
অপ্রয়োজনীয় কতোগুলো সাবজেক্ট যেমন...
১। চারু ও কারুকলা
২। কৃষি শিক্ষা
৩। বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
৪। কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা
এসব একেবারেই অপ্রয়োজনীয় অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত । ছাত্রছাত্রীদের বইয়ের বোঝা বাড়ানো হয়েছে । আর কিছু নয় । নাইন টেনের ৮৫% ছাত্রছাত্রী ইন্ডিয়া,নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও থাইল্যান্ডের রাজধানীর নামই জানে না । তো 'বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' পড়িয়ে লাভ কি ? নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এগুলো যে কেউ জানতে পারে । ৯০% বা তারও বেশি ছাত্রছাত্রীরা পত্রিকাই পড়ে না । আমি কমপেয়ার করে দেখেছি, আমাদের সময়ের ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এখনকার জিপিএ ৫ এর কোনো তুলনাই হয় না । এদিক দিয়ে আমরা ৩০/৪০ বছর আগে হলেও এগিয়ে ছিলাম ।
এখন একটা পেয়েছে সবাই ফেসবুক । অনার্স, মাস্টার্সে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে চার লাইন লিখলে ৫টা বানান ভুল থাকে !!! সেগুলো না শিখেই ফেসবুক চালায় ! এতোই যখন ফেসবুকের শখ, তো আগে অভ্র বা প্রভাত দিয়ে ইউনিকোডে লেখাটা অন্তত শিখো । এটাও একটা শিক্ষা । নইলে লিখতে আসো কেন ? এদেশের সব স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা এখন বুদ্ধিজীবী ! এরা ফেসবুকে দু'তিন লাইনে ‘বাণী’ দেয় । অনেকে বলে, ফেসবুকে বানান ভুল হয় ই । আমি এই বাণীর সঙ্গেও একমত না । এরা বানানই জানে না । যদি জানতো তবে নিজে চোখে দেখে এই ভুল বানানের ‘বাণী’ পাবলিক ফোরামে দিয়ে নিজেকে অন্যের কাছে ছোট করতো না । সঠিক বানানটা আগেই শিখে নিতো । এটা অভ্র বা প্রভাত জানা একজন লোকের কাছে একদিনেই শেখা যায় । দুই তিন হাজার শব্দের কোনো গল্প বা আর্টিক্যাল লিখলে ৪/৫টা বানান অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে । অনেকেই ধরে নেবেন এতো বড় একটা লেখা লিখতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ চার পাঁচটা বানান ভুল হতেই পারে ।
ফেসবুক আর স্মার্টফোন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিরাট ক্ষতি করে । এটা এক ধরনের আসক্তি । মাদকাসক্তের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় । কমেন্ট অপশনে লিংক দিলাম। ম্যাসেঞ্জারে যে কোনো ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলা যায় । এতে অনেকে সম্পর্কেও জড়ায় । ঘরে বসে, রাত ১টা/ ২টায় না ঘুমিয়ে, কাউকে না জানিয়ে, শুয়ে শুয়ে প্রেম করার এক অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে স্মার্টফোন । স্কুল কলেজের একটা ছেলে বা মেয়ে গড়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা ফেসবুকে সময় দেয় । এখন অনেক ছেলেমেয়ের স্কুল জীবনেই চশমা লাগে । তা স্মার্টফোনের রেডিয়েশনের কারনে । আমি নিজে রিসার্চ করে দেখেছি, গড়ে শহরের ছেলেমেয়েদের চেয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে বেশি আসক্ত । এর কারন হতে পারে শহরের চেয়ে গ্রামে বিনোদনের অভাব । আরো কারন, গ্রামে সাধারণত অল্প শিক্ষিত অভিভাবকরাই বেশি থাকেন । তাদের ফাঁকি দেয়া সহজ। তাদের সচেতনতাও কম । শিক্ষিত অভিভাবকরা সকলেই শহরে থাকেন । চাকরি, ব্যবসা ও ছেলেমেয়েদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য । আমি দেখেছি, গ্রামে অল্প শিক্ষিত অভিভাবকের সন্তানরা যখন কলেজে পড়ে তখন অনেক সন্তানই পিতামাতাকে হেয় জ্ঞান করেন । বাবা মাকে ঘাড় ত্যারা করে “আপনি কিছু বুঝেন না” এমন কথাও সন্তানকে বলতে শোনেছি !
আমি গত বছর শখ করে জেমিমার একটা ফেসবুক একাউন্ট খোলে দিয়ে মেয়েকে একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিলাম । দুইমাস পরে মেয়ে আমাকে ফোনে বলে.. " আব্বু, একটা ছেলে আমাকে ফোন করে।''
জানতে চাইলাম, কি বলে ? মেয়ে বললো,
'ছেলেটা বলে, তুমি খুব সুন্দর। '
আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিলো । আমার মানসিকতা বন্ধুরা জানেন । বড় হলে ছেলেমেয়েরা প্রেমট্রেম করবে এটাতো খুবই স্বাভাবিক । তাই বলে ফাইভ সিক্সে ?
মেয়ের মাকে ফোন করে বললাম,এই খবরদার, জেমিমার ফোনটা কালই আমাকে পার্সেল করে পাঠাবা । স্মার্টফোনের গোষ্ঠী কিলাই । মেয়ের মা জানতে চেয়েছিলেন, কি হইছে ? আমি আবারো বললাম, খবরদার । কোনো কথা নেই । একদম চুপ ।
মেয়ের মা আর কোনো কথা বলেননি । আমার ঘাড় ত্যারা স্বভাব উনি জানেন । তিনি পরদিনই ফোনটা আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । সেই থেকে মেয়ের আর ফোন নেই । ফোন নিয়ে আসবো জানলে হয়তো অবুঝ জেমিমা আমাকে বলতোই না । মেয়ে বোধহয় মনে মনে বলে " কি গরুটা বাঘে খাইলো"।
মাঝে মাঝে মেয়ে তার মা, মামা,খালাদের স্মার্টফোন খোঁচাখুঁচি করে তাদের সামনেই ।
গতকাল পিএসসির রেজাল্টের পর মেয়েকে বুঝিয়ে বললাম, ইন্টারমেডিয়েট পাস করার আগে যেনো সে স্মার্টফোন ইউজ না করে । জেমিমা ছোটবেলা থেকেই কথা শোনে ।
বাসায় ল্যাপটপ, ডেস্কটপ আছে । সব বড়দের স্মার্টফোন আছে ৷ কখনো কিছু খেলতে চাইলে বড়দের ফোন নিয়েই তা পারে । বা কাউকে কল করতে । এতো ছোট মেয়ের স্মার্টফোনের কি দরকার ? বা ফোনেরই কি দরকার ?
ভিকারুননিসার নাইনে পড়ুয়া যে মেয়েটা মাস খানেক আগে আত্নহত্যা করে মারা গেলো তার অভিভাবক তাকে স্মার্টফোন না দিলে মেয়েটা পরীক্ষার হলে তা নিয়ে যেতো না আর তার বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগও উঠতো না । বাবা মা অপমানিত হতো না ৷ মেয়েটিরও আত্নহত্যা করে প্রাণ বিসর্জন দিতে হতো না ।
আদর করে কিংবা নিজের আভিজাত্য দেখাতে ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন দেয়ার আগে একবার কি ভাববেন ?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন