ফ্লোরিডাতে নৌ-ভ্রমণ
করিম চৌধুরী
( লেখাটি যায়যায়দিনের বিশেষ "নৌ ভ্রমণ" সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো । লিখেছিলাম ফ্লোরিডা থেকে।)
একদিন খুব মন খারাপ ছিলো। ফ্লোরিডায় গিয়েছি নিউ ইয়র্ক থেকে । নিউ ইয়র্কের মতো কসমোপলিটন সিটি থেকে বাইরে গেলে প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগে । আমি ফ্লোরিডায় যে সিটিতে ছিলাম তার নাম ফোর্ট মায়ার্স । একেবারে মেক্সিকো উপসাগর ঘেঁষে । বাসা থেকে সাগরের গর্জন শোনা যায় । খুব কম মানুষের বসবাস । এসব অঞ্চলকে কান্ট্রি সাইড বলা হয় । ফ্লোরিডায় কখনোই তুষারপাত হয় না । এই জন্যই ফ্লোরিডার ডাক নাম সানসাইন স্টেট । আবহাওয়া ঠিক বাংলাদেশের মতো । সারা বছর বেশ গরম ফ্লোরিডায় । ডিসেম্বর ,জানুয়ারিতে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হলেও বাংলাদেশের চেয়েও কম শীত । কোস্টাল স্টেট বলে ঝড়, বৃষ্টি, সাইক্লোন,টর্নেডো ফ্লোরিডায় লেগেই থাকে । পশ্চিমা দেশে কোনো স্টেট এমন হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাসই হবে না । ফ্লোরিডার তিন দিকেই সমুদ্র । আটলান্টিক মহাসাগর আর মেক্সিকো উপসাগর ঘিরে রেখেছে ফ্লোরিডাকে । অন্য দিকে জর্জিয়া আর অ্যালাবামা স্টেট । আমেরিকার প্রতিটি স্টেটের আবহাওয়া ও আরো কিছু বিশেষত্বের জন্য ৫০টি স্টেটেরই ডাক নাম আছে । ক্যালিফোর্নিয়ার ডাক নাম অরেঞ্জ স্টেট ।
মন ভালো করার জন্য টিভি দেখলাম ঘন্টা খানেক। এবিসি (আমেরিকান ব্রডকাষ্টিং কর্পরেশন), সিবিএস, সিএনএন, ফক্স নিউজ চ্যানেল, ডিসকভারি, ওয়েদার চ্যানেল। কোনো চ্যানেলের কোনো প্রোগ্রামই মন ভালো করতে পারলো না। ওয়েদার চ্যানেলে বৃষ্টি হওয়ার কোনো নিউজ নেই।
বৃষ্টিতে ভেজা আমার অনেক পছন্দের অন্যতম। কয়েক বন্ধুকে ফোন করলাম। নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, অরল্যান্ডো, মায়ামি, মেরিল্যান্ড, আটলান্টা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ জার্সি। না, মন ভালো হলো না। ভাবলাম লং ড্রাইভে যাবো। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সিডি অন করলাম। নচিকেতার গান শুনছি আর ড্রাইভ করছি।
এই বেশ ভালো আছি
কর্ম কাজ নেই
গাড়ি ঘোড়া কিছু নেই
অফিস কাচারি নেই
হাজিরা কামাই নেই
শব্দ বা পরিবেশ দোষন বালাই নেই
সময় দেই না বলে তেলে বেগুনে জ্বলে
গিন্নির রাগ নেই
টেলিফোনে ডাক নেই.....।
তবুও মন ভালো হলো না।
বাসায় ফিরে কম্পিউটারে বসলাম। পত্রিকা পড়লাম। তখনো ফেসবুক আবিস্কার হয় নি । আমি ২০০৩ সালের কথা বলছি। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বুশকে ইরাক আক্রমণ না করার অনুরোধ করে ই-মেইল করলাম। যে কেউ আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে ইমেইল করতে পারেন । তারপরও মনের লক্ষণ ভালো দেখা যাচ্ছে না।
ফ্লোরিডায় যে বাসায় থাকতাম তার পাশেই মেক্সিকো উপসাগর। গালফ অফ মেক্সিকো। বাসা থেকে দশ মিনিটের ড্রাইভ। আকাশ, পাহাড়, সাগর, নদী আমাকে খুব আকর্ষণ করে। আমি মূলত প্রকৃতি প্রেমি।
চলে গেলাম বিচে। বিচটির নাম ফোর্ট মায়ার্স বিচ। হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে অনেকক্ষণ সাগরে হাঁটলাম। প্রচন্ড ঢেউ। ছলাৎ ছলাৎ পানির শব্দ কানে আসছে। হঠাৎ ক্ষিধে অনুভব করলাম। বৃজ করে সাগরের মাঝে নিয়ে একটা রেষ্টুরেন্ট বানানো হয়েছে। ভাসমান রেষ্টুরেন্ট। মেরিনেটেড চিকেন, সালাড আর ডৃংকস খেয়ে চলে গেলাম ফিশিং পিয়ার ( Fishing Pier) -এ। সাগরের তীরে থেকে বৃজ তৈরি করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সাগরের মাঝে ছাদহীন গোল একটা ঘরের মতো বানানো। এখান থেকে অনেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। এখানে কফি শপ, সুভেনিরের দোকান আছে ।এই জায়গাটিকে বলা হয় ফিশিং পিয়ার।
আমার মন ভালো হচ্ছে না। কিন্তু আমাকে মন ভালো করতেই হবে যে কোনো মূল্যে। মন খারাপ নিয়ে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারি না ।
খালি পায়ে সৈকতের বালি লাথি মারতে মারতে হাঁটতে লাগলাম। সমুদ্র সৈকতে যখন যাই তখন জুতা খুলে গাড়িতে রেখে যাই এবং শর্টস আর গেঞ্জি পরে যাই। কথাটা উল্লেখ করলাম এজন্য যে, আমার কিছু বন্ধু প্যান্ট আর জুতা পরে সৈকতে যান। আমি যখন পানিতে নেমে হাঁটি, তখন তারা আফসোস করে।
অনেকক্ষণ হেঁটে গিয়ে বেশ দূরে দেখলাম সারি সারি স্পিড বোট সাগরে। কাছে গিয়ে দেখলাম বড় সাইনবোর্ডে লেখা.. Rent a boat. Have a nice time in the sea.বোট ভাড়া নিন... সমুদ্রে চমৎকার সময় কাটান।
কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এক ঘন্টার জন্য বোটের ভাড়া একশ ডলার। পকেটে ক্যাশ টাকা নেই, তাই ক্রেডিট কার্ড দিলাম। ড্রাইভার্স লাইসেন্স জমা দিতে হলো। এটা নিয়ম। উল্লেখ্য, আমেরিকায় ড্রাইভার্স লাইসেন্স বলে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নয় ।
কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালো, প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল যাওয়ার পর অনেকগুলো লাল ভাসমান বল দেখবো, এই সীমানার বাইরে যাওয়া যাবে না। লাল বল থেকে পাঁচ মাইল নো ম্যান্স ল্যান্ড। এরপর কিউবার সীমানা। কয়েকটা বিয়ার নিয়েছিলাম স্পিডবোটে । বিয়ার খেতে খেতে স্পিডবোট চালাতে বেশ মজা । লাল ভাসমান বলের কাছে গিয়ে ভাবলাম আহামরি কি আর হবে? আরেকটু সামনে গেলে হয়তো সাগর থেকে কিউবা দেখতে পাবো। ছাত্রজীবনে সমাজতন্ত্রের প্রতি দুর্বল ছিলাম । সমাজতন্ত্রের উপর পড়েছিও বেশ । কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো তখন প্রেসিডেন্ট । ১৯৫৯ সালে কিউবান বিপ্লবের পর আমৃত্যু তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন । আমাদের কাছে সব সময়ই তিনি হিরো হয়ে থাকবেন । আমেরিকা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে কিউবা । রাজধানী হাভানা । বিল ক্লিনটন আর বুশকে প্রতিদিনই ডিপ্লোম্যাটিক ভাষায় গালাগালি করতেন আর বলতেন এরা মুর্খ । এমন সাহসী নেতা আমি আর দেখিনি । আমেরিকার ঘরের কাছে বসে এমন হুঙ্কার ছাড়তেন অথচ আমেরিকা তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি । সিআইএ তাকে মারার জন্য ৬৬৫ বার চেষ্টা করেছে । কিন্তু কাস্ত্রোকে তারা কিছুই করতে পারেনি । প্রায় ৬০ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন । ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিনি হাভানায় স্বাভাবিক মৃত্যু বরন করেন।
আমি বরাবরই দূরন্ত প্রকৃতির মানুষ। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখার আকর্ষণ আমার চিরকালের।
আমি বিশ্বাস করি Life is an Adventure.....Dare it. জীবন একটা এডভেঞ্চার... সাহস করে এগোনো উচিত।
লাল বল পেরিয়ে প্রায় দশ নটিক্যাল মাইল দূরে যেতেই দেখলাম মাথার ওপর একটা হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। আমি আপন মনে বিয়ার খাচ্ছি আর স্পিডবোট চালাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিক থেকে চারটি বড় সাইজের স্পিডবোট আমাকে ঘিরে ফেললো। বোটগুলোর গায়ে লেখা ইউএস কোষ্ট গার্ড। একেকটি বোটে ছয়জন করে ড্রেসড গার্ড। বুঝলাম ঘটনা খারাপ। কারণ লাল বল। এমনভাবে বোটগুলো আমাকে ঘিরেছে যে আমি থামতে বাধ্য।
বোট থেকেই আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো গার্ডেরা। তোমার নাম কি? তুমি কোথায় থাকো? এখানে কেন এসেছো?
উল্লেখ্য, ফিডেল ক্যাষ্ট্রোর কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন নেই কয়েক যুগ ।
কোষ্ট গার্ডের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সমুদ্রে বোটিং করছি বললাম।
আমাকে খুব ভদ্রভাবে তারা বললো,Just Follow us . আমাদের ফলো করো।
কোষ্ট গার্ডের চারটি স্পিডবোটের পেছনে চললাম। লাল ভাসমান বলের কাছে গিয়ে তারা থামলো।
আমিও।
বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বললো, ভবিষ্যতে যখন সমুদ্রে বোটিং করবে তখন কোনো কারণেই এই সীমানা অতিক্রম করবে না। কেননা এরপর কিউবা । এতে তোমার ফাইন দিতে হবে অবৈধভাবে একদেশ থেকে আরেক দেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রমের কারনে ।
খুব হাসি-খুশি মুখে বললো, You have a nice time in the sea. Relax man . সমুদ্রে আনন্দ করো। রিলাক্স করো।
আরেক দিনের ঘটনা। নেভাডা রাজ্যের লাস ভেগাসের জুয়ার কথা জানি। কিন্তু সেখানে আমার যাওয়া হয়নি। নিউ জার্সির আটলান্টিক সিটির ক্যাসিনোতে গিয়েছিলাম। লাস ভেগাসের মতোই। ফ্লোরিডা ষ্টেটের নিয়ম, আইন অনুযায়ী ক্যাশ টাকা দিয়ে জুয়া খেলা ফ্লোরিডায় নিষিদ্ধ যেমনটি লাস ভেগাস বা আটলান্টিক সিটিতে হয়। তবে লটো (লটারি) বা স্ক্র্যাচ (Scratch) লটারি দোকান থেকে কিনে খেলা যায়।
দেশে ফেরার কয়েকদিন আগে ভাবলাম লাস ভেগাসের মতো জুয়া খেলবো একদিন । আমি জানি ফ্লোরিডায় এমন জুয়া খেলা যায়, তবে ফ্লোরিডা সীমান্তের বাইরে, গভীর সমুদ্রে। সব ব্যবস্থাই আমেরিকায় আছে । ফ্লোরিডার লোকেরা জুয়া খেল্বে না ? তা কি হয় ? ফ্লোরিডা সীমানার বাইরে গিয়ে খেললেই হয় ।
ফোর্ট মায়ার্স বিচ থেকে সপ্তাহে দুই দিন বুধ ও রোববার এক ঘন্টা পরপর বিকেল পাঁচটা থেকে ক্যাসিনো ক্রুইজ ( Casino Cruise) নামে সমুদ্রে জাহাজ বা শিপ চলে। চার তলা জাহাজ। সবগুলোর গায়ে বড় করে লেখা Casino Cruise. আগের দিন ফোন করে বুকিং কনফার্ম করে রাখতে হয়।
জুনিয়র বন্ধু মাসুদকে নিয়ে রোববার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় স্ক্রুইজ ঘাটে পৌঁছাতেই গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো যেন আমরা ভিআইপি। অবশ্য সবার জন্য এই নিয়ম। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাবি গার্ডের কাছে জমা দিতে হলো। ওরাই গাড়ি পার্ক করে রাখবে। একটা ছোট টোকেন দিয়ে দি্লো, গাড়ির প্রমাণ। জনপ্রতি দশ ডলার দিয়ে টিকেট কিনলাম।
চারটি সিকিউরিটি পোষ্ট পেরিয়ে জাহাজে উঠলাম। ডিসেম্বর মাস। কিন্তু ফ্লোরিডার আবহাওয়া অনুযায়ী ঠান্ডা নেই। বসন্তকালের মতো আবহাওয়া। জাহাজের চার তলায় লাইভ মিউজিক এবং ডৃংকিং বার। তিন তলায় রেষ্টুরেন্ট, ডিনার খাওয়ার ব্যবস্থা। দোতলা আর নিচ তলায় জুয়ার আড্ডা। দোতলায় স্লট মেশিনে অর্থাৎ কয়েন দিয়ে মেশিনে জুয়া খেলার ব্যবস্থা। নিচ তলায় ঘুরানো মেশিনের জুয়া। যেমন আপনি কোনো একটি ঘরে টাকা রাখলেন । ঘড়ির মতো বোর্ডের কাটাটা ওই ঘরে এসে থামলে আপনি জিতবেন ।
জাহাজ ছেড়েছে ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায়। জাহাজ ভর্তি মানুষ । আমেরিকানরা বেশ জুয়া খেলে । জুয়া খেলেও আমেরিকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া যায় । আমাদের দেশের মতো ছ্যাঁচড়া জুয়া না ।
পাবলিক অ্যাড্রেস সিসটেমে ঘোষণা করার হয়েছে দেড় ঘন্টা পর জাহাজ মেক্সিকো উপসাসাগরের নো ম্যান্স ল্যান্ড-এ গিয়ে পৌঁছাবে। তখন খেলা শুরু হবে। খেলা চলবে দেড় ঘন্টা। আমি ব্যক্তিগতভাবে জুয়া খেলি না এবং জুয়াড়িকে পছন্দও করি না। শুধু শখ ও অভিজ্ঞতার জন্যই এ কাজ করা। দেড় ঘন্টা পর শিপ (Ship) গিয়ে থামলো নো ম্যান্স ল্যান্ড-এ। ঘোষণা এলো, আপনারা খেলা শুরু করতে পারেন। হুড়মুড় করে সবাই চলে গেলো দোতলা এবং নিচ তলায়। সাগরে জাহাজে বসে জুয়া খেলা । সে এক অন্য রকম অনুভূতি ।
আমি গেলাম দোতলায়। বাজেট পাঁচশ ডলার পর্যন্ত খেলবো স্লট মেশিনে। পঞ্চাশ ডলার খেলতেই পনের মিনিটের মধ্যে এক হাজার ডলার জিতে গেলাম। খেলতে লাগলাম। কি যে হৈ হুল্লুর হাহাজে ! প্রায় এক ঘন্টা খেলার পর হঠাৎ জাহাজ নড়তে লাগালো অস্বাভাবিকভাবে। পাবলিক অ্যাড্রেস সিসটেমে ঘোষণা করা হলো আবহাওয়া খুব খারাপ, সমুদ্র উত্তাল, প্রচন্ড ঢেউ। তবে যাত্রীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা কোষ্ট গার্ড এবং হেলিকপ্টারকে মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি। যে কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী বোট এবং হেলিকপ্টার প্রস্তুত আছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। মাসুদ ভয় পেয়েছিলো। যদি জাহাজ ডুবে যায়।
মৃত্যু সম্পর্কে আমার নিজের ধারণা, একে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে কোনো সময় তা আসতে পারে। এই নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আনন্দ করতে করতে মরে যাওয়ার মজাই আলাদা। মাসুদকে বললাম, মরার জন্য রেডি হও। সলিল সমাধি। কয়জনের ভাগ্যে আছে? দুঃখের মাঝেও মাসুদ আমাকে বললো, আংকেল আপনি একজন পিকিউলিয়ার মানুষ।
জেতা এক হাজার ডলার হারলাম। আরো দুইশ ডলার খেলার পর সময় শেষ। ঘোষণা এলো Stop playing. Time is over. খেলা বন্ধ করো। সময় শেষ।
জাহাজ চলতে শুরু করলো। রাত ঠিক এগারোটায় ক্যাসিনো ক্রুইজ ঘাটে এসে থামলো। গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। এবার মন বেশ ফুরফুরে । ধনী দেশের জীবন অনেক উপভোগ্য । হয়তো এসব করেছি বলেই আমার আর কোনো কিছুর প্রতিই বিশেষ আগ্রহ নেই ।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৩
ফ্লোরিডা
karimcbd@gmail.com
করিম চৌধুরী
( লেখাটি যায়যায়দিনের বিশেষ "নৌ ভ্রমণ" সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো । লিখেছিলাম ফ্লোরিডা থেকে।)
একদিন খুব মন খারাপ ছিলো। ফ্লোরিডায় গিয়েছি নিউ ইয়র্ক থেকে । নিউ ইয়র্কের মতো কসমোপলিটন সিটি থেকে বাইরে গেলে প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগে । আমি ফ্লোরিডায় যে সিটিতে ছিলাম তার নাম ফোর্ট মায়ার্স । একেবারে মেক্সিকো উপসাগর ঘেঁষে । বাসা থেকে সাগরের গর্জন শোনা যায় । খুব কম মানুষের বসবাস । এসব অঞ্চলকে কান্ট্রি সাইড বলা হয় । ফ্লোরিডায় কখনোই তুষারপাত হয় না । এই জন্যই ফ্লোরিডার ডাক নাম সানসাইন স্টেট । আবহাওয়া ঠিক বাংলাদেশের মতো । সারা বছর বেশ গরম ফ্লোরিডায় । ডিসেম্বর ,জানুয়ারিতে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হলেও বাংলাদেশের চেয়েও কম শীত । কোস্টাল স্টেট বলে ঝড়, বৃষ্টি, সাইক্লোন,টর্নেডো ফ্লোরিডায় লেগেই থাকে । পশ্চিমা দেশে কোনো স্টেট এমন হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাসই হবে না । ফ্লোরিডার তিন দিকেই সমুদ্র । আটলান্টিক মহাসাগর আর মেক্সিকো উপসাগর ঘিরে রেখেছে ফ্লোরিডাকে । অন্য দিকে জর্জিয়া আর অ্যালাবামা স্টেট । আমেরিকার প্রতিটি স্টেটের আবহাওয়া ও আরো কিছু বিশেষত্বের জন্য ৫০টি স্টেটেরই ডাক নাম আছে । ক্যালিফোর্নিয়ার ডাক নাম অরেঞ্জ স্টেট ।
মন ভালো করার জন্য টিভি দেখলাম ঘন্টা খানেক। এবিসি (আমেরিকান ব্রডকাষ্টিং কর্পরেশন), সিবিএস, সিএনএন, ফক্স নিউজ চ্যানেল, ডিসকভারি, ওয়েদার চ্যানেল। কোনো চ্যানেলের কোনো প্রোগ্রামই মন ভালো করতে পারলো না। ওয়েদার চ্যানেলে বৃষ্টি হওয়ার কোনো নিউজ নেই।
বৃষ্টিতে ভেজা আমার অনেক পছন্দের অন্যতম। কয়েক বন্ধুকে ফোন করলাম। নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, অরল্যান্ডো, মায়ামি, মেরিল্যান্ড, আটলান্টা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ জার্সি। না, মন ভালো হলো না। ভাবলাম লং ড্রাইভে যাবো। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সিডি অন করলাম। নচিকেতার গান শুনছি আর ড্রাইভ করছি।
এই বেশ ভালো আছি
কর্ম কাজ নেই
গাড়ি ঘোড়া কিছু নেই
অফিস কাচারি নেই
হাজিরা কামাই নেই
শব্দ বা পরিবেশ দোষন বালাই নেই
সময় দেই না বলে তেলে বেগুনে জ্বলে
গিন্নির রাগ নেই
টেলিফোনে ডাক নেই.....।
তবুও মন ভালো হলো না।
বাসায় ফিরে কম্পিউটারে বসলাম। পত্রিকা পড়লাম। তখনো ফেসবুক আবিস্কার হয় নি । আমি ২০০৩ সালের কথা বলছি। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বুশকে ইরাক আক্রমণ না করার অনুরোধ করে ই-মেইল করলাম। যে কেউ আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে ইমেইল করতে পারেন । তারপরও মনের লক্ষণ ভালো দেখা যাচ্ছে না।
ফ্লোরিডায় যে বাসায় থাকতাম তার পাশেই মেক্সিকো উপসাগর। গালফ অফ মেক্সিকো। বাসা থেকে দশ মিনিটের ড্রাইভ। আকাশ, পাহাড়, সাগর, নদী আমাকে খুব আকর্ষণ করে। আমি মূলত প্রকৃতি প্রেমি।
চলে গেলাম বিচে। বিচটির নাম ফোর্ট মায়ার্স বিচ। হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে অনেকক্ষণ সাগরে হাঁটলাম। প্রচন্ড ঢেউ। ছলাৎ ছলাৎ পানির শব্দ কানে আসছে। হঠাৎ ক্ষিধে অনুভব করলাম। বৃজ করে সাগরের মাঝে নিয়ে একটা রেষ্টুরেন্ট বানানো হয়েছে। ভাসমান রেষ্টুরেন্ট। মেরিনেটেড চিকেন, সালাড আর ডৃংকস খেয়ে চলে গেলাম ফিশিং পিয়ার ( Fishing Pier) -এ। সাগরের তীরে থেকে বৃজ তৈরি করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সাগরের মাঝে ছাদহীন গোল একটা ঘরের মতো বানানো। এখান থেকে অনেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। এখানে কফি শপ, সুভেনিরের দোকান আছে ।এই জায়গাটিকে বলা হয় ফিশিং পিয়ার।
আমার মন ভালো হচ্ছে না। কিন্তু আমাকে মন ভালো করতেই হবে যে কোনো মূল্যে। মন খারাপ নিয়ে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারি না ।
খালি পায়ে সৈকতের বালি লাথি মারতে মারতে হাঁটতে লাগলাম। সমুদ্র সৈকতে যখন যাই তখন জুতা খুলে গাড়িতে রেখে যাই এবং শর্টস আর গেঞ্জি পরে যাই। কথাটা উল্লেখ করলাম এজন্য যে, আমার কিছু বন্ধু প্যান্ট আর জুতা পরে সৈকতে যান। আমি যখন পানিতে নেমে হাঁটি, তখন তারা আফসোস করে।
অনেকক্ষণ হেঁটে গিয়ে বেশ দূরে দেখলাম সারি সারি স্পিড বোট সাগরে। কাছে গিয়ে দেখলাম বড় সাইনবোর্ডে লেখা.. Rent a boat. Have a nice time in the sea.বোট ভাড়া নিন... সমুদ্রে চমৎকার সময় কাটান।
কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এক ঘন্টার জন্য বোটের ভাড়া একশ ডলার। পকেটে ক্যাশ টাকা নেই, তাই ক্রেডিট কার্ড দিলাম। ড্রাইভার্স লাইসেন্স জমা দিতে হলো। এটা নিয়ম। উল্লেখ্য, আমেরিকায় ড্রাইভার্স লাইসেন্স বলে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নয় ।
কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালো, প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল যাওয়ার পর অনেকগুলো লাল ভাসমান বল দেখবো, এই সীমানার বাইরে যাওয়া যাবে না। লাল বল থেকে পাঁচ মাইল নো ম্যান্স ল্যান্ড। এরপর কিউবার সীমানা। কয়েকটা বিয়ার নিয়েছিলাম স্পিডবোটে । বিয়ার খেতে খেতে স্পিডবোট চালাতে বেশ মজা । লাল ভাসমান বলের কাছে গিয়ে ভাবলাম আহামরি কি আর হবে? আরেকটু সামনে গেলে হয়তো সাগর থেকে কিউবা দেখতে পাবো। ছাত্রজীবনে সমাজতন্ত্রের প্রতি দুর্বল ছিলাম । সমাজতন্ত্রের উপর পড়েছিও বেশ । কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো তখন প্রেসিডেন্ট । ১৯৫৯ সালে কিউবান বিপ্লবের পর আমৃত্যু তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন । আমাদের কাছে সব সময়ই তিনি হিরো হয়ে থাকবেন । আমেরিকা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে কিউবা । রাজধানী হাভানা । বিল ক্লিনটন আর বুশকে প্রতিদিনই ডিপ্লোম্যাটিক ভাষায় গালাগালি করতেন আর বলতেন এরা মুর্খ । এমন সাহসী নেতা আমি আর দেখিনি । আমেরিকার ঘরের কাছে বসে এমন হুঙ্কার ছাড়তেন অথচ আমেরিকা তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি । সিআইএ তাকে মারার জন্য ৬৬৫ বার চেষ্টা করেছে । কিন্তু কাস্ত্রোকে তারা কিছুই করতে পারেনি । প্রায় ৬০ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন । ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিনি হাভানায় স্বাভাবিক মৃত্যু বরন করেন।
আমি বরাবরই দূরন্ত প্রকৃতির মানুষ। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখার আকর্ষণ আমার চিরকালের।
আমি বিশ্বাস করি Life is an Adventure.....Dare it. জীবন একটা এডভেঞ্চার... সাহস করে এগোনো উচিত।
লাল বল পেরিয়ে প্রায় দশ নটিক্যাল মাইল দূরে যেতেই দেখলাম মাথার ওপর একটা হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। আমি আপন মনে বিয়ার খাচ্ছি আর স্পিডবোট চালাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিক থেকে চারটি বড় সাইজের স্পিডবোট আমাকে ঘিরে ফেললো। বোটগুলোর গায়ে লেখা ইউএস কোষ্ট গার্ড। একেকটি বোটে ছয়জন করে ড্রেসড গার্ড। বুঝলাম ঘটনা খারাপ। কারণ লাল বল। এমনভাবে বোটগুলো আমাকে ঘিরেছে যে আমি থামতে বাধ্য।
বোট থেকেই আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো গার্ডেরা। তোমার নাম কি? তুমি কোথায় থাকো? এখানে কেন এসেছো?
উল্লেখ্য, ফিডেল ক্যাষ্ট্রোর কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন নেই কয়েক যুগ ।
কোষ্ট গার্ডের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সমুদ্রে বোটিং করছি বললাম।
আমাকে খুব ভদ্রভাবে তারা বললো,Just Follow us . আমাদের ফলো করো।
কোষ্ট গার্ডের চারটি স্পিডবোটের পেছনে চললাম। লাল ভাসমান বলের কাছে গিয়ে তারা থামলো।
আমিও।
বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বললো, ভবিষ্যতে যখন সমুদ্রে বোটিং করবে তখন কোনো কারণেই এই সীমানা অতিক্রম করবে না। কেননা এরপর কিউবা । এতে তোমার ফাইন দিতে হবে অবৈধভাবে একদেশ থেকে আরেক দেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রমের কারনে ।
খুব হাসি-খুশি মুখে বললো, You have a nice time in the sea. Relax man . সমুদ্রে আনন্দ করো। রিলাক্স করো।
আরেক দিনের ঘটনা। নেভাডা রাজ্যের লাস ভেগাসের জুয়ার কথা জানি। কিন্তু সেখানে আমার যাওয়া হয়নি। নিউ জার্সির আটলান্টিক সিটির ক্যাসিনোতে গিয়েছিলাম। লাস ভেগাসের মতোই। ফ্লোরিডা ষ্টেটের নিয়ম, আইন অনুযায়ী ক্যাশ টাকা দিয়ে জুয়া খেলা ফ্লোরিডায় নিষিদ্ধ যেমনটি লাস ভেগাস বা আটলান্টিক সিটিতে হয়। তবে লটো (লটারি) বা স্ক্র্যাচ (Scratch) লটারি দোকান থেকে কিনে খেলা যায়।
দেশে ফেরার কয়েকদিন আগে ভাবলাম লাস ভেগাসের মতো জুয়া খেলবো একদিন । আমি জানি ফ্লোরিডায় এমন জুয়া খেলা যায়, তবে ফ্লোরিডা সীমান্তের বাইরে, গভীর সমুদ্রে। সব ব্যবস্থাই আমেরিকায় আছে । ফ্লোরিডার লোকেরা জুয়া খেল্বে না ? তা কি হয় ? ফ্লোরিডা সীমানার বাইরে গিয়ে খেললেই হয় ।
ফোর্ট মায়ার্স বিচ থেকে সপ্তাহে দুই দিন বুধ ও রোববার এক ঘন্টা পরপর বিকেল পাঁচটা থেকে ক্যাসিনো ক্রুইজ ( Casino Cruise) নামে সমুদ্রে জাহাজ বা শিপ চলে। চার তলা জাহাজ। সবগুলোর গায়ে বড় করে লেখা Casino Cruise. আগের দিন ফোন করে বুকিং কনফার্ম করে রাখতে হয়।
জুনিয়র বন্ধু মাসুদকে নিয়ে রোববার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় স্ক্রুইজ ঘাটে পৌঁছাতেই গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো যেন আমরা ভিআইপি। অবশ্য সবার জন্য এই নিয়ম। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাবি গার্ডের কাছে জমা দিতে হলো। ওরাই গাড়ি পার্ক করে রাখবে। একটা ছোট টোকেন দিয়ে দি্লো, গাড়ির প্রমাণ। জনপ্রতি দশ ডলার দিয়ে টিকেট কিনলাম।
চারটি সিকিউরিটি পোষ্ট পেরিয়ে জাহাজে উঠলাম। ডিসেম্বর মাস। কিন্তু ফ্লোরিডার আবহাওয়া অনুযায়ী ঠান্ডা নেই। বসন্তকালের মতো আবহাওয়া। জাহাজের চার তলায় লাইভ মিউজিক এবং ডৃংকিং বার। তিন তলায় রেষ্টুরেন্ট, ডিনার খাওয়ার ব্যবস্থা। দোতলা আর নিচ তলায় জুয়ার আড্ডা। দোতলায় স্লট মেশিনে অর্থাৎ কয়েন দিয়ে মেশিনে জুয়া খেলার ব্যবস্থা। নিচ তলায় ঘুরানো মেশিনের জুয়া। যেমন আপনি কোনো একটি ঘরে টাকা রাখলেন । ঘড়ির মতো বোর্ডের কাটাটা ওই ঘরে এসে থামলে আপনি জিতবেন ।
জাহাজ ছেড়েছে ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায়। জাহাজ ভর্তি মানুষ । আমেরিকানরা বেশ জুয়া খেলে । জুয়া খেলেও আমেরিকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া যায় । আমাদের দেশের মতো ছ্যাঁচড়া জুয়া না ।
পাবলিক অ্যাড্রেস সিসটেমে ঘোষণা করার হয়েছে দেড় ঘন্টা পর জাহাজ মেক্সিকো উপসাসাগরের নো ম্যান্স ল্যান্ড-এ গিয়ে পৌঁছাবে। তখন খেলা শুরু হবে। খেলা চলবে দেড় ঘন্টা। আমি ব্যক্তিগতভাবে জুয়া খেলি না এবং জুয়াড়িকে পছন্দও করি না। শুধু শখ ও অভিজ্ঞতার জন্যই এ কাজ করা। দেড় ঘন্টা পর শিপ (Ship) গিয়ে থামলো নো ম্যান্স ল্যান্ড-এ। ঘোষণা এলো, আপনারা খেলা শুরু করতে পারেন। হুড়মুড় করে সবাই চলে গেলো দোতলা এবং নিচ তলায়। সাগরে জাহাজে বসে জুয়া খেলা । সে এক অন্য রকম অনুভূতি ।
আমি গেলাম দোতলায়। বাজেট পাঁচশ ডলার পর্যন্ত খেলবো স্লট মেশিনে। পঞ্চাশ ডলার খেলতেই পনের মিনিটের মধ্যে এক হাজার ডলার জিতে গেলাম। খেলতে লাগলাম। কি যে হৈ হুল্লুর হাহাজে ! প্রায় এক ঘন্টা খেলার পর হঠাৎ জাহাজ নড়তে লাগালো অস্বাভাবিকভাবে। পাবলিক অ্যাড্রেস সিসটেমে ঘোষণা করা হলো আবহাওয়া খুব খারাপ, সমুদ্র উত্তাল, প্রচন্ড ঢেউ। তবে যাত্রীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা কোষ্ট গার্ড এবং হেলিকপ্টারকে মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি। যে কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী বোট এবং হেলিকপ্টার প্রস্তুত আছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। মাসুদ ভয় পেয়েছিলো। যদি জাহাজ ডুবে যায়।
মৃত্যু সম্পর্কে আমার নিজের ধারণা, একে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে কোনো সময় তা আসতে পারে। এই নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আনন্দ করতে করতে মরে যাওয়ার মজাই আলাদা। মাসুদকে বললাম, মরার জন্য রেডি হও। সলিল সমাধি। কয়জনের ভাগ্যে আছে? দুঃখের মাঝেও মাসুদ আমাকে বললো, আংকেল আপনি একজন পিকিউলিয়ার মানুষ।
জেতা এক হাজার ডলার হারলাম। আরো দুইশ ডলার খেলার পর সময় শেষ। ঘোষণা এলো Stop playing. Time is over. খেলা বন্ধ করো। সময় শেষ।
জাহাজ চলতে শুরু করলো। রাত ঠিক এগারোটায় ক্যাসিনো ক্রুইজ ঘাটে এসে থামলো। গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। এবার মন বেশ ফুরফুরে । ধনী দেশের জীবন অনেক উপভোগ্য । হয়তো এসব করেছি বলেই আমার আর কোনো কিছুর প্রতিই বিশেষ আগ্রহ নেই ।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৩
ফ্লোরিডা
karimcbd@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন