সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সময়


আমাদের সময়

আমাদের ছাত্রজীবনে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পাওয়ার দুঃচিন্তা ছিলো না! লাখ লাখ টাকা ঘুষের প্রয়োজন ছিলো না একটা যেন তেন চাকরির জন্য! ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার দালালচক্র ছিলো না দেশব্যাপী ! দুর্নীতির মহামারি ছিলো না! খাদ্যে ভেজাল ছিলো না! আম থেকে শুরু করে তরমুজেও কেমিক্যাল দিয়ে লাল করার চিন্তাও কেউ করেনি! মাছে ফরমালিন দেয়ার প্রশ্নই ছিলো না! ফল আর মাছ বাজারে দোকানি সব সময় হাত পাখা দিয়ে মাছি তাড়াতো। এখন তো ফল আর মাছে মাছিই বসে না! কেমিক্যালের কারনেই ফলে আর মাছে এখন মাছি বসে না। এমন কোনো খাদ্য নেই যাতে এখন ভেজাল দেয়া হয় না! ডাক্তাররা ছিলো মানবিক। এখন ডাক্তার মানেই কমিশনখোর! যে ওষুধ কোম্পানি বেশি টাকা ঘুষ দেবে ডাক্তার ওই কোম্পানির ওষুধ লিখবে । ডাক্তাররা কমিশন খাওয়া বন্ধ করলে ৪০% চিকিৎসা ব্যয় কমবে বলে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন। নকল ওষুধ ছিলোই না। এখন অনেক নকল ওষুধের কারখানা আছে! যে ওষুধ খেয়ে অসুস্থ মানুষ সুস্থ হবে সেই ওষুধ নকল বানানো হয়! কতো বড় জানোয়ার! কখনো সখনো ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালালেও ওরা এতোই প্রভাবশালী যে,ম্যাজিস্ট্রেটকেও লাঞ্চিত করে। জিপির নামে রাস্তায় প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হয়। আছে পুলিশের চাঁদাবাজি।
লাভ করলেও রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বিল্ডিং, রাস্তা, ব্রিজ বানানোর চিন্তা ঠিকাদাররা করেন নি। স্কুল, কলেজে বাধ্যতামূলক কোচিং ছিলো না । স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসায় কমিটি ছিলো না। কয়েকজন মুরুব্বি বসেই সিদ্ধান্ত দিতেন কি করতে হবে। টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কেনার কথা মানুষের চিন্তায়ই ছিলো না। অশিক্ষিত কমিটির লোকেরা শিক্ষকদের ধমকের সুরে কথা বলার সুযোগ ছিলো না৷ শিক্ষক কর্তৃক কন্যাতুল্য ছাত্রী ধর্ষিতা হতো না! যাকে তাকে খুন করা হতো না! পুলিশ এতো অত্যাচার করতো না! গাঁজা তখনো ছিলো। পুলিশ কারো পকেটে গাঁজা দিয়ে ধরে নিয়ে যেতো না! বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ ছিলো প্রাপ্য। বাসে ট্রেনে বই বা পত্রিকা পড়া হতো! প্রেম ভালোবাসা থাকলেও তা ছিলো নিয়ন্ত্রিত। চিঠি লেখায় সীমাবদ্ধ। মেয়েদের পথেঘাটে সম্মানের চোখে দেখা হতো। প্রতিবেশি অভাব / অসুবিধায় থাকলে অন্য প্রতিবেশী এগিয়ে যেতো। ভাইয়ে ভাইয়ে, দেবর ভাবী, ননদ, চাচা ভাতিজা, ভাতিজী, ভাইবোন, মামা ভাগ্নের সেই মধুর বন্ধন কি আগের মতো বিদ্যমান?
ধর্ষণ, হত্যার কঠিন বিচার হতো। যতো প্রভাবশালীই হোন না তিনি। মনে আছে, ১৯৭৮ সালে স্বামী ডাক্তার ইকবাল আর স্ত্রী সালেহার কথা? কাজের মেয়ের সঙ্গে ইকবালকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলায় স্ত্রী সালেহাকে হত্যা করেছিলো ইকবাল। বহু দেন দরবার করেছিলো ইকবালকে বাঁচাতে। কিছু বিশিষ্ট নাগরিক প্রেসিডেন্ট জিয়ার কাছে ইকবালের প্রাণভিক্ষা চাইলে জিয়া তাদের ভৎর্সনা করেন। ডাক্তার ইকবালের ফাঁসি হয়েছিলো। মনে আছে, মনির-খুকুর কথা? এইতো সেদিন ১৯৮৮ সালে। দেশের নামকরা ডাক্তার মেহেরুন্নেছা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার আবুল কাশেমের বখে যাওয়া ছেলে মনির খুকুর পরকীয়া প্রেমে পরে মনির হত্যা করে তার স্ত্রী শারমিন রীমাকে। রীমা ছিলেন শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিনের কন্যা। বহু চেস্টা করেও মেহেরুন্নেছা ও কাশেমের মতো খ্যাতিমান ডাক্তার মনিরকে বাঁচাতে পারেন নি। তারা এরশাদের সঙ্গেও দেখা করেছিলো কিন্তু লাভ হয় নি। ১৯৮৯ সালে এরশাদের সময়ই মনিরের ফাঁসি হয়েছিলো।
এখন আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট সব টাকা দিয়ে কেনা যায়। তিন দিন আগেই মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন একথা।
একদলীয় বা নিয়ন্ত্রিত গনতন্ত্র দিয়েও দেশের উন্নয়ন করা যায়। যদি সরকার প্রধান সৎ হয়। সিংগাপুরে লি কুয়ান করেছেন। মালয়েশিয়ায় মাহাতির করেছেন। আমরা পারি না কেন? ২৫/৩০ বছর আগের ঘটনাগুলো উল্লেখ করলাম। একটা জাতির উন্নতির জন্য কি ২৫/৩০ বছর কম? বরং ২৫/৩০ বছর আগেইতো দেশ অনেক ভালো ছিলো। আইন কানুন ভালো ছিলো, খাদ্যে ভেজাল ছিলো না, চাঁদাবাজি ছিলো না, দুর্নীতির মহামারি ছিলো না, ধর্ষণের মহোৎসব ছিলো না। এখন দেশে কোনো বিচার ব্যবস্থাই নেই! পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে! জেলে পল্লী হিসেবে পরিচিত আর খারাপ মানুষের বাসস্থান সিংগাপুরকে লি কুয়ান মাত্র ৩০ বছরে কি করেছেন! মালয়েশিয়ার মতো জংগলকে মাহাতির কোথায় নিয়ে গেছেন মাত্র ২০ বছরে? বৃটিশ সরকারও এক সময় বাছা বাছা দুর্ধর্ষ অপরাধীদের অস্ট্রেলিয়ার মতো দ্বীপে পাঠাতো শাস্তি হিসেবে। ওই অপরাধীরা আজ অস্ট্রেলিয়াকে কোথায় নিয়ে গেছে ?
সবাই দিন দিন সভ্য হয়,সৎ হয়, বিনয়ী আর ভদ্র হয়। আর আমরা হই অসৎ আর অভদ্র!
কিছু বড় বড় বিল্ডিং, ব্রিজ, রাস্তায় দামী গাড়ি চললেই দেশ উন্নত হয় না। ওই বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়েছে কিনা? ইমারজেন্সি ফায়ার এক্সিট রাখা হয়েছে কিনা?ভুমিকম্প বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে উদ্ধার কাজ চালানোর মতো রাস্তা ও অবকাঠামো রাখা হয়েছে কিনা? ব্রিজ করায় স্বচ্ছতা মানা হয়েছে কিনা? সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়েছে কিনা? বা যে প্রতিষ্ঠানকে ব্রিজের কাজ দেয়া হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক সুনাম আছে কিনা? নাকি ওই প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক লিস্টেড? এখানে কতো শত কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে কিনা? ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যায়, যার কোনো বিচার নেই! আর দামী দামী গাড়ির মালিক কারা? তাদের আয়ের উৎস কি? সে সব না দেখে যারা এসব দেখে দেশকে সিংগাপুর, কানাডা ভাবছেন তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।
সততা, সময়ানুবর্তিতা, ন্যায়বিচার আর মূল্যবোধ যে জাতির মধ্যে নেই সেই জাতি কখনোই উন্নতি করতে পারে না। এটা প্রমাণিত সত্য।
 May 17 at 8:31 PM

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর