সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্মপ্রাণ মুসলিম


ধর্মপ্রাণ মুসলিম

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার পর সব মুসলিম রাস্ট্রই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ইরান থেকে তুরস্ক, সৌদি আরব থেকে পাকিস্তান । মুসলিম ভাতৃত্ববোধ উত্রে উঠেছে! অথচ খাদ্য সংকটে ইয়েমেনের মানুষ এখন গাছের পাতা খায়! কয়েকদিন আগেই আল জাজিরাতে দেখলাম । অপুষ্টিতে হাজার হাজার শিশু মৃত্যুর মুখে। ভয়ংকর খাদ্য সংকট ইয়েমেনে। সৌদি আর ইউ.এ.ই.-র অবরোধের কারনে।
সৌদি আরবে প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার অপচয় করা হয় তা দিয়ে ছোট খাটো একটা দেশের মানুষের খাদ্য সমস্যা অনায়াসে ঘুচে যায়। ইউটিউবে সার্চ দিলে দুনিয়াতেই মধ্যপ্রাচ্যের শেখদের বেহেশতি জীবন যাপন দেখা যায়! সেদিকে কেউ নজর দেয় না! কেউ কিছু বলেও না! কাগজে কলমেই ইসলাম সাম্যের ধর্ম। এর কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। কোনো মুসলিমই তা মানে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ আমাদের দেশের ধনী লোকেরা যদি ইসলামের ন্যায় পরায়ণতা, সাম্য, ভাতৃত্ববোধ, ঐক্য মেনে চলতো তবে দুনিয়ার বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।
সাদ্দাম হোসেনকে মারার জন্য কুয়েত,সৌদি আরব আমেরিকাকে সামরিক ঘাটি করার জায়গা দেয়! সৌদি আরব প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়! রিয়াদের সঙ্গে তেল আবিবের সম্পর্ক খুবই মধুর।
সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ইসরায়েল প্যালেস্টাইনীদের মেরে আসছে, অথচ এই বিষয়ে এতোগুলো মুসলিম দেশ কোনো কার্যকর ভুমিকা গত ৭০ বছরেও রাখতে পারেনি! আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একবার চেস্টা করে ইসরাইলি প্রাইম মিনিস্টার শিমন পেরেস আর পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাতকে দিয়ে নরওয়ের অসলোতে একটা শান্তি চুক্তি করিয়েছিলেন যা অসলো শান্তি চুক্তি নামে পরিচিত ছিলো। Oslo Peace Treaty. সেটাও বেশিদূর যেতে পারেনি। পেরেস, আরাফাত দু'জনই মারা গেছেন। ইসরাইল রাস্ট্রের চারদিকেই মুসলিম রাস্ট্র। মুসলিম বিশ্বের অনৈক্যই ইসরাইল রাস্ট্রের স্থায়িত্ব দিয়েছে। কাশ্মীরী মুসলমানদের পাশেও কেউ নেই! নামমাত্র ওআইসি (Organisation of Islamic Conference) আছে। এই সংস্থাটি মাঝে মাঝে মিটিং করা ছাড়া আর কোনো কাজ করার ক্ষমতা রাখে না। আরব লীগের কোনো কর্মকাণ্ডই চোখে পরে না! ২২টি মুসলিম দেশ নিয়ে আরব লীগ! অথচ কারো সঙ্গে কেউ একমত হতে পারে না! মুসলিমদের উপর কোথাও হামলা হলে একটা গতানুগতিক নিন্দা জানানো ছাড়া মুসলমানদের আর কিছু করার নেই।
ইসলাম ধর্ম নিয়ে আমাদের অহংকারের শেষ নেই। ধর্ম নিয়ে অহংকারের কি আছে ? এখন আমি প্র‍্যাকটিসিং মুসলিম। ধর্মীয় বই পুস্তক বেশি পড়ি। নবীজীর মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিস্ঠিত ইসলামি সমাজের নেতৃত্ব কে দিবেন তা নিয়ে যে বিভক্তি মুসলমানদের মধ্যে ওই সময় দেখা দেয়,১৩০০ বছর পর এই বিভক্তি আরো বেড়েছে।
কেনো দুর্নীতির সূচকে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর নাম আগে আসে? কোনো মুসলিম প্রধান দেশেই গনতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা কিছুই নেই? কেন ? এই কি ইসলামের শিক্ষা? আমাদের মুখে এক অন্তরে আরেক ৷ আমরা নামাজ পড়ি, হজ্ব করি কিন্তু দুঃস্থ,অসহায় প্রতিবেশিকে সাহায্য করি না। সম্পদ,ক্ষমতা আর স্বার্থ নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে, চাচা ভাতিজায় মারামারি করে সম্পর্কচ্ছেদ করতে আমরা দ্বিধা করি না। এটা মুসলিম সমাজেই দেখা যায়। অথচ ইসলামেই উল্লেখ আছে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। কিছুদিন আগে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস ( মোহাম্মদ বিন সালমান ) নিজের ক্ষমতার পথ নিস্কংটক করতে কয়েকশ প্রিন্সকে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কাউকে হত্যাও করে। এরা সকলেই তার চাচাতো, জেঠাতো ভাইবোন! আমাদের মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে এই বিভেদ সবচেয়ে বেশি ৷ এগুলো কিভাবে কমিয়ে এনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। ওয়াজ মাহফিল ও মসজিদে খুতবায় মাওলানা, ইমাম সাহেবরা এসব বলেন না।
আমরা পাঞ্জাবি কতো বড় পরতে হবে, পায়জামা কয় ইঞ্চি উপরে পরতে হবে? দাঁড়ি কতো বড় রাখলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে, দাঁড়িতে কালি দেয়া যাবে-না মেহেদী দিয়ে লাল করতে হবে, মেয়েদের ঠোঁটে লিপস্টিক, নখে নেইল পলিশ দেয়া যাবে কিনা এসব সুন্নতি আলোচনায় ব্যস্ত থেকে ইসলাম উদ্ধার করে খুব আনন্দ পাই! নবী (সাঃ) মাটির তৈরী না নূরের তৈরী এমন অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে তর্ক করে নিজেরাই খুনোখুনি করি! একজন আরেকজনকে কাফের বলি।
আমরা খুবই ধার্মিক। অথচ ইউরোপ - আমেরিকাসহ অমুসলিমদের দেশে যেতে মুখিয়ে থাকি! ইহুদী নাসারাদের দেশে যেতে পারলেই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হাসিল হয়ে যায়! অমুসলিমদের দেশে লেখাপড়া করে ডিগ্রি নিতে পারলে তো জীবন ধন্য । মুসলিমরা অমুসলিমদের দেশে যতোটা স্বাধীনতা, সহযোগিতা, সম্মান, অধিকার পায় ততোটা কোনও মুসলিম দেশে পায় না। তাই যতো ধার্মিকই হোক, তারা অমুসলিমদের দেশে বাস করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। লাখ লাখ 'ধর্মপ্রাণ' মুসলমান বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আজীবনের জন্য থেকে যাচ্ছেন । বিভিন্ন ফাঁকফোঁকর দিয়ে গ্রিন কার্ড,পাসপোর্ট নিচ্ছেন। নিজেদের কোনো আত্মীয় ওইসব দেশে থাকলে তা নিয়ে গর্বও করেন ! পেটে একটু ব্যথা হলেই 'ধর্মপ্রাণ' মুসলিম চিকিৎসার জন্য অমুসলিম দেশে দৌঁড় দেন!
মুসলিম চিকিৎসকদের উপর তাদের আস্থা নেই!!! নিজ দেশে সেই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়েও তুলেন না।
 March 18

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...