দৃষ্টিপাত
এই উপন্যাসটি ক্লাশ টেনে থাকতে পড়েছিলাম। তখন কম বুঝেছিলাম। ভাষা খুব কঠিন ছিলো এই উপন্যাসের। কলেজ, ভার্সিটি জীবনেও পড়েছি। এখনো মাঝে মাঝে পড়ি। খুব কঠিন অথচ চমৎকার বাংলায় লেখা একটি বিখ্যাত উপন্যাস। মাত্র ৯৭ পৃষ্ঠার এই উপন্যাস একটি পরকীয়া প্রেমের উপাখ্যান । মহিলা বিবাহিতা। আর লেখক ব্যাচেলর। তবে এটিকে আমি পরকীয়া প্রেমের উপন্যাস বলতে নারাজ। এটা মূলত গভীর বন্ধুত্ব থেকে এক নিষ্কলুষ ভালোবাসার উপন্যাস। যেখানে যৌনতা বা শারীরিক সম্পর্কের লেশমাত্র নেই। এমনকি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও নেই। তখনো দেশ ভাগ হয়নি। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগের ঘটনা। ভদ্রলোক থাকতেন বোম্বে ( মুম্বাই) । আর ভদ্রমহিলা থাকতেন লাহোরে। বম্বে রেলওয়ে স্টেশনে গভীর রাতে তাদের পরিচয়। মহিলার সঙ্গে তার স্বামীও ছিলেন। তখন তো মোবাইল ফোন,ফেসবুক, ইন্টারনেট ছিলো না। তারা যোগাযোগ করতেন চিঠি লিখে।
আমি খুব অবাক হয়ে ভাবি, আমার জীবনেও এক বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়ে তা ব্যক্তিগত সম্পর্কে গড়ায়! এই ক্ষেত্রেও ওই মহিলার স্বামীর উপস্থিতিতেই আমাদের পরিচয়, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা। আমরা যোগাযোগ করতাম ফেসবুকে, ফোনে,ম্যাসেজ লিখে। যা তারা করতো চিঠি লিখে।
এই উপন্যাসে বিবাহিতা সুনন্দা ভদ্রলোকের জন্য যা করেছেন আমার বন্ধুটিও আমার জন্য কম করেন নি। উপন্যাসে সম্পর্ক শেষ হয় বিচ্ছেদ দিয়ে। আমার ক্ষেত্রেও সম্পর্ক শেষ হয় বিচ্ছেদ দিয়ে। শুধু পার্থক্য, ভদ্রলোক ওই মহিলার লাহোরের বাসায় গিয়ে আতিথ্য গ্রহণ করতেন। আমার বন্ধুটির বাসায় আমার যাওয়া হয়নি। অবশ্য তিনি আমায় বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণও জানান নি। না ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় না নোয়াখালীর বাড়িতে। যদিও আমি প্রাণের ব্যাকুলতায় চাটখিল গিয়ে উনি কোন স্কুলে পড়েছেন, ওই এলাকাটি কেমন, এমন কি তাদের বাড়িও চিনে এসেছি । তাদের বাড়ির সামনে তাদেরই মসজিদে নামাজ পড়েছি। আমি তার বাবার নাম জানতাম, তিনি এলাকায় পরিচিত এবং প্রভাবশালী। কাজেই বাড়ি চিনতে কোনো সমস্যা হয়নি।
এই উপন্যাসের নায়ক নায়িকার চরিত্র আর আমাদের চরিত্রও ঠিক একই রকম! সম্পর্কের শুরুতে আমি আমার ওই বন্ধুকে এই উপন্যাসের কাহিনী বলে তাকে সতর্ক করেছিলাম,আমাকে যেন চারুদত্ত আধারকার হতে না হয়। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও সুনন্দা-ই হয়ে গেলেন! ১৯৪৭ সালের আগে লাহোরের সুনন্দা ব্যানার্জি আধারকারের সঙ্গে যা করেছিলেন ৮০ বছর পর ২০১৭ সালে বাংলাদেশেরই এক নারী আমার সঙ্গেও তাই করলেন! পৃথিবীর সব যুগে, সব দেশে, সব নারীই কি এক?
ষাটের দশকে এই উপন্যাস প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্য জগতে হৈ চৈ পরে যায় বলে সাহিত্যপ্রেমী সিনিয়রদের কাছে শোনেছিলাম । ষাটের দশকের সাড়া জাগানো বিখ্যাত উপন্যাস " দৃষ্টিপাত"। ওই উপন্যাসের অনেক লাইন,অনেক প্যারা অনেকের মুখস্থ। আমারো। 'যাযাবর' ছদ্মনামে লিখলেও লেখকের নাম বিনয় মুখোপাধ্যায়।
২০১৭ সালে আমি কিছু বই গিফট দিয়েছিলাম আমার ওই প্রিয় বন্ধুকে। তার স্বামীর কাছেই বইগুলো দিয়েছিলাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেমের গল্প ফাতিমা ভুট্টোর Songs of Blood and Sword, পারভেজ মোশাররফের In The Line Of Fire, আরো কি বই দিয়েছিলাম মনে পড়ছে না তবে এই দৃষ্টিপাতও দিয়েছিলাম বলে মনে হয়।
যারা পড়েননি অনুরোধ করবো উপন্যাসটি পড়ার জন্য। আমি ১০০% নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার অবশ্যই ভীষণ ভালো লাগবে উপন্যাসটি। মনে কষ্টও পাবেন অনেক ।
পুরো ৯৭ পৃষ্ঠা পড়ার দরকার নেই৷ আপনি শুধু শেষের তিনটি চ্যাপ্টার পড়বেন। ১৩ চ্যাপ্টার থেকে ১৬ চ্যাপ্টার। মূল কাহিনী এই তিন চ্যাপ্টারেই। ১৪ পৃষ্ঠায়ই তিন চ্যাপ্টার শেষ। বড়জোর আধা ঘন্টা লাগবে ১৪ পাতা পড়তে। বইটির দাম মাত্র ১০০ টাকা।
বইটির শেষ প্যারা....
কোনোদিন সন্ধ্যাবেলায় তাঁর কুশল কামনা করে তুলসীমঞ্চে কেউ জ্বালাবে না দীপ, কোনো নারী সীমন্তে ধরবে না তাঁর কল্যাণ কামনায় সিদুরচিহ্ন, প্রবাসে অদর্শনবেদনায় কোনো চিত্ত হবে না উদাস উতল। রোগশয্যায় ললাটে ঘটবে না কারও উদ্বেগকাতর হস্তের সুখস্পর্শ, কোনো কপোল থেকে গড়িয়ে পড়বে না নয়নের উদ্বেল অশ্রুবিন্দু। সংসার থেকে যেদিন হবে অপসৃত, কোনো পীড়িত হৃদয়ে বাজবে না এতটুকু ব্যথা, কোনো মনে রইবে না ক্ষীণতম স্মৃতি।
প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কী? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কান্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার ।
এই উপন্যাসটি ক্লাশ টেনে থাকতে পড়েছিলাম। তখন কম বুঝেছিলাম। ভাষা খুব কঠিন ছিলো এই উপন্যাসের। কলেজ, ভার্সিটি জীবনেও পড়েছি। এখনো মাঝে মাঝে পড়ি। খুব কঠিন অথচ চমৎকার বাংলায় লেখা একটি বিখ্যাত উপন্যাস। মাত্র ৯৭ পৃষ্ঠার এই উপন্যাস একটি পরকীয়া প্রেমের উপাখ্যান । মহিলা বিবাহিতা। আর লেখক ব্যাচেলর। তবে এটিকে আমি পরকীয়া প্রেমের উপন্যাস বলতে নারাজ। এটা মূলত গভীর বন্ধুত্ব থেকে এক নিষ্কলুষ ভালোবাসার উপন্যাস। যেখানে যৌনতা বা শারীরিক সম্পর্কের লেশমাত্র নেই। এমনকি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও নেই। তখনো দেশ ভাগ হয়নি। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগের ঘটনা। ভদ্রলোক থাকতেন বোম্বে ( মুম্বাই) । আর ভদ্রমহিলা থাকতেন লাহোরে। বম্বে রেলওয়ে স্টেশনে গভীর রাতে তাদের পরিচয়। মহিলার সঙ্গে তার স্বামীও ছিলেন। তখন তো মোবাইল ফোন,ফেসবুক, ইন্টারনেট ছিলো না। তারা যোগাযোগ করতেন চিঠি লিখে।
আমি খুব অবাক হয়ে ভাবি, আমার জীবনেও এক বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়ে তা ব্যক্তিগত সম্পর্কে গড়ায়! এই ক্ষেত্রেও ওই মহিলার স্বামীর উপস্থিতিতেই আমাদের পরিচয়, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা। আমরা যোগাযোগ করতাম ফেসবুকে, ফোনে,ম্যাসেজ লিখে। যা তারা করতো চিঠি লিখে।
এই উপন্যাসে বিবাহিতা সুনন্দা ভদ্রলোকের জন্য যা করেছেন আমার বন্ধুটিও আমার জন্য কম করেন নি। উপন্যাসে সম্পর্ক শেষ হয় বিচ্ছেদ দিয়ে। আমার ক্ষেত্রেও সম্পর্ক শেষ হয় বিচ্ছেদ দিয়ে। শুধু পার্থক্য, ভদ্রলোক ওই মহিলার লাহোরের বাসায় গিয়ে আতিথ্য গ্রহণ করতেন। আমার বন্ধুটির বাসায় আমার যাওয়া হয়নি। অবশ্য তিনি আমায় বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণও জানান নি। না ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় না নোয়াখালীর বাড়িতে। যদিও আমি প্রাণের ব্যাকুলতায় চাটখিল গিয়ে উনি কোন স্কুলে পড়েছেন, ওই এলাকাটি কেমন, এমন কি তাদের বাড়িও চিনে এসেছি । তাদের বাড়ির সামনে তাদেরই মসজিদে নামাজ পড়েছি। আমি তার বাবার নাম জানতাম, তিনি এলাকায় পরিচিত এবং প্রভাবশালী। কাজেই বাড়ি চিনতে কোনো সমস্যা হয়নি।
এই উপন্যাসের নায়ক নায়িকার চরিত্র আর আমাদের চরিত্রও ঠিক একই রকম! সম্পর্কের শুরুতে আমি আমার ওই বন্ধুকে এই উপন্যাসের কাহিনী বলে তাকে সতর্ক করেছিলাম,আমাকে যেন চারুদত্ত আধারকার হতে না হয়। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও সুনন্দা-ই হয়ে গেলেন! ১৯৪৭ সালের আগে লাহোরের সুনন্দা ব্যানার্জি আধারকারের সঙ্গে যা করেছিলেন ৮০ বছর পর ২০১৭ সালে বাংলাদেশেরই এক নারী আমার সঙ্গেও তাই করলেন! পৃথিবীর সব যুগে, সব দেশে, সব নারীই কি এক?
ষাটের দশকে এই উপন্যাস প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্য জগতে হৈ চৈ পরে যায় বলে সাহিত্যপ্রেমী সিনিয়রদের কাছে শোনেছিলাম । ষাটের দশকের সাড়া জাগানো বিখ্যাত উপন্যাস " দৃষ্টিপাত"। ওই উপন্যাসের অনেক লাইন,অনেক প্যারা অনেকের মুখস্থ। আমারো। 'যাযাবর' ছদ্মনামে লিখলেও লেখকের নাম বিনয় মুখোপাধ্যায়।
২০১৭ সালে আমি কিছু বই গিফট দিয়েছিলাম আমার ওই প্রিয় বন্ধুকে। তার স্বামীর কাছেই বইগুলো দিয়েছিলাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেমের গল্প ফাতিমা ভুট্টোর Songs of Blood and Sword, পারভেজ মোশাররফের In The Line Of Fire, আরো কি বই দিয়েছিলাম মনে পড়ছে না তবে এই দৃষ্টিপাতও দিয়েছিলাম বলে মনে হয়।
যারা পড়েননি অনুরোধ করবো উপন্যাসটি পড়ার জন্য। আমি ১০০% নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার অবশ্যই ভীষণ ভালো লাগবে উপন্যাসটি। মনে কষ্টও পাবেন অনেক ।
পুরো ৯৭ পৃষ্ঠা পড়ার দরকার নেই৷ আপনি শুধু শেষের তিনটি চ্যাপ্টার পড়বেন। ১৩ চ্যাপ্টার থেকে ১৬ চ্যাপ্টার। মূল কাহিনী এই তিন চ্যাপ্টারেই। ১৪ পৃষ্ঠায়ই তিন চ্যাপ্টার শেষ। বড়জোর আধা ঘন্টা লাগবে ১৪ পাতা পড়তে। বইটির দাম মাত্র ১০০ টাকা।
বইটির শেষ প্যারা....
কোনোদিন সন্ধ্যাবেলায় তাঁর কুশল কামনা করে তুলসীমঞ্চে কেউ জ্বালাবে না দীপ, কোনো নারী সীমন্তে ধরবে না তাঁর কল্যাণ কামনায় সিদুরচিহ্ন, প্রবাসে অদর্শনবেদনায় কোনো চিত্ত হবে না উদাস উতল। রোগশয্যায় ললাটে ঘটবে না কারও উদ্বেগকাতর হস্তের সুখস্পর্শ, কোনো কপোল থেকে গড়িয়ে পড়বে না নয়নের উদ্বেল অশ্রুবিন্দু। সংসার থেকে যেদিন হবে অপসৃত, কোনো পীড়িত হৃদয়ে বাজবে না এতটুকু ব্যথা, কোনো মনে রইবে না ক্ষীণতম স্মৃতি।
প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কী? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কান্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন