সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মৃত্যু

মৃত্যু

এবছর জানুয়ারি মাসে ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশিতে খুব ভুগতে হয়েছে । অনেক ধরনের ওষুধ খেয়েছি । আমার জীবনে এখন পর্যন্ত কোনো সিরিয়াস অসুখ হয়নি । আমার দুটো ইচ্ছা আজো অপূর্ন রয়ে গেছে ।
১। জেল খাটার খুব ইচ্ছা আছে । জেল জীবন কেমন তা দেখার জন্য ।
২। গুরুতর অসুস্থ হয়ে কিছুদিন হসপিটালে থাকা । নার্সের সেবাযত্ন উপভোগ করা ।
তো জানুয়ারি মাসের অসুস্থতা খুব ভুগিয়েছে । ফেক্সোফেনাডিনসহ কতো ওষুধ যে খেয়েছি সব মনে নেই । সারাদিনই শুয়ে থাকতাম । শরীর বেশ দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো । আমার ডায়াবেটিস নেই । পরীক্ষা করিয়েছি । ব্লাড প্রেশারও স্ট্যান্ডার্ড ৮০/১২০ ।
ওই সময় থেকেই আমার মাঝে মৃত্যু চিন্তা বেশ বাসা বেঁধেছে । মৃত্যু সম্পর্কে আমার নিজস্ব কিছু ধারণা আছে । যে কোনো সময় যে কোনো ভাবে মৃত্যু হতে পারে যে কারো । কলেজ জীবনে ইত্তেফাক পত্রিকায় পড়েছিলাম, "হাসিতে হাসিতে মৃত্যু "। হাসতে হাসতেও মানুষ মারা যেতে পারে। দুর্ঘটনা, খাবার গলায় আটকে, সিড়িতে পরে গিয়ে, বাথরুমে ।
মৃত্যু আমার কাছে একটা স্বাভাবিক ঘটনা । আমরা যে বেঁচে আছি, এটাই একটা মিরাকল । মৃত্যু শ্বাশত, মৃত্যু চিরন্তন, মৃত্যু অনিবার্য । এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । জন্ম হয়েছে মৃত্যুর জন্যই । যা অনিবার্য তাকে ভয় পাওয়া এক ধরনের মূর্খতা । কেউ কম বয়সে মারা গেলে অনেককেই বলতে শুনি,
" তিনি অসময়ে চলে গেলেন।" এখানে অসময় বলতে কিছু নেই । তিনি এই সময়ে যাবেন এটা তার জন্য নির্ধারিত ছিলো । কেউ যখন পরিনত বয়সে মারা যান, আমি আন্দোলিত হই । তার মানে এই নয় যে আমি খুশি হই বা উৎফুল্ল হই । মৃত্যু অবধারিত । তাই তাকে আলিঙ্গন করাই শ্রেয় । অনেকদিন আগে এক জায়গায় পড়েছিলাম,
Life is Nothing but a Journey towards death.
জীবন কিছুই নয় । মৃত্যুর দিকে ধাবমান এক ভ্রমন । এমন মানুষ নেই যিনি মরবেন না । প্রতিনিয়ত মৃত্যু চিন্তা করলে কোনো মানুষ পাপ করতে পারে না বলে আমার বিশ্বাস । মৃত্যু চিন্তা মানুষকে সৎ ও মহৎ করে । মৃত্যু নিয়ে গত কয়েক মাস পড়াশোনা করেছি । এতে যা পেয়েছি তা লিখলাম ।
মৃত্যু বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোনো জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়। মৃত্যু বিভিন্ন স্তরে ঘটে থাকে।
ইসলামী পরিভাষায় মৃত্যু হচ্ছে জাগতিক জীবনের সমাপ্তি এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন তথা আখিরাত এর প্রবেশদ্বার। মৃত্যু হচ্ছে জাগতিক দেহ হতে আত্মার পৃথকীকরন এবং একই সাথে এই আত্মার জাগতিক দুনিয়া হতে আখিরাত এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা। সুতরাং মৃত্যু হচ্ছে চলমান জীবন প্রক্রিয়ার একটি পরিবর্তনীয় অবস্থা। ইসলামী দৃষ্টিকোন হতে সকল জীবিত প্রাণীর জন্যই মৃত্যু একটি সর্বোচ্চ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
মৃত্যু সংক্রান্ত ইসলামী ব্যাখ্যা এতটাই ব্যাপক যে্নো এটা একটা ছবির মতোই পরিষ্কার। ইসলাম মৃত্যুকালীন, মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে বেশ স্পষ্ট করেই বর্ণনা করেছে। মৃত্যুর ফেরেশতা (মালাক উল মউত, যাকে আজরাইলও বলা হয়) মৃত ব্যক্তির রুহ তথা আত্মা শরীর থেকে বের করে নিয়ে যান, এবং তার সঙ্গে থাকেন আরও অন্যান্য ফেরশতারা. মৃত ব্যক্তির জাগতিক জীবনাচারের উপর ভিত্তি করে তার মৃত্যুর আয়োজন ঠিক করা হয়। সৎ পথে চালিত মু'মিন (বিশ্বাসী) ব্যক্তির জন্য ফেরেশতারা খুবই দয়ালু এবং কোমল আচরন করেন এবং তার মৃত্যু হয় অপেক্ষাকৃত কম কষ্টদায়ক, অপর দিকে অসৎ কিংবা অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের প্রতি ফেরেশতারা খুবই কঠোর আচরন করেন এবং তাদের মৃত্যু হয় অসীম যন্ত্রনাদায়ক। মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পাদনার পর তার নিকট মুনকার - নকীর নামক নীল চোখ এবং কালো গাত্রবর্ন বিশিষ্ট দুইজন প্রশ্নকারী ফেরেশতার অগমন ঘটে। তাঁরা মৃত ব্যক্তির ঈমান তথা বিশ্বাস পরীক্ষার জন্য তাকে প্রশ্ন করে থাকেন। সৎ বিশ্বাসী ব্যক্তিগন তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করতে পারবে এবং তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে শান্তিতে বসবাস করেত পারবে। কিন্ত অসৎ অবিশ্বাসী ব্যক্তিগন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না ফলে ফেরেশতারা তাদের জন্য কঠিন শাস্তির আয়োজন করবেন। মৃত্যুর পরবর্তী এই জীবনের শুরু হতে পুনরুত্থানকালীন সময় পর্যন্তকে বলা হয় বরযখ। আত্মহত্যা, কিংবা হত্যা ইসলামে অত্যন্ত ঘৃনিত এবং নিষিদ্ধ কাজ এবং কবিরা গুনাহ বা বড় ধরনের অপরাধ।
মৃত্যুর নিশ্চয়তা
ইসলামী দর্শন এবং ভাবধারায় মৃত্যু একটি নিশ্চিত এবং অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার। এর দ্বারা শুধুমাত্র জীবনের পরিসমাপ্তি বুঝায় না বরং এর দ্বারা বুঝায় আত্মার অবস্থার পরিবর্তন। ইসলামী বিশ্বাস মতে সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) এই জগত এবং জীবন সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে; এবং মৃত্যুর দ্বারা এই জাগতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এভাবে, প্রত্যেক ব্যক্তিই একটি মাত্র সুযোগ পায় তার পরবর্তী জীবনকে প্রস্তুত করবার এবং সৃষ্টিকর্তার সামনে দাঁড়াবার যেখানে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিরই আলাদা আলাদা হিসাব নেবেন এবং তাদের জাগতিক কর্মকান্ড এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে হয় তাদের পুরষ্কৃত করবেন নতুবা শাস্তি দেবেন। এবং মৃত্যু হচ্ছে জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি এবং আখিরাত জগতের প্রবেশদ্বার। ইসলামী বিশ্বাস মতে, সকল প্রাণীরই মৃত্যুর সময় এবং স্থান পূর্বনির্ধারিত এবং তার মৃত্যুর সময় শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। সকল মুসলমানই আশা করেন তাদের শেষ কথা হবে তাদের বিশ্বাসের স্বীকৃতি স্বরুপ বিশেষ কালেমা ("আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ [সাঃ] আল্লাহর রসূল")। এই কারনে মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত ব্যক্তিরা তাকে এটা পড়বার জন্য উৎসাহিত করে থাকে। এবং তার নিকট বারবার এই বাক্য পাঠ করা হয়।
So, Life is Nothing But a Journey towards Death.
করিম চৌধুরী
২৯ আগস্ট ২০১৯
কুমিল্লা ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর