অথেরোস ক্লোরোসিস
আমাকে যারা চেনেন তাদের সকলেরই একটা ধারণা আমি রাগী ! কিন্তু আমার মনে প্রায়ই একটা প্রশ্ন জাগে- আসলেই কি আমি রাগি না আমাকে রাগানো হয় ? প্রায় ৮/১০ বছর আগে আমার চাচাতো ভাতিজা ফারুক চৌধুরী আমাকে বলেছিলো কাকা, আপনি বুঝেন না । কিছু লোক আপনাকে ইচ্ছা করে রাগায় । এরা খুব ধুরন্ধর । এরা জানে কি করলে বা বললে, আপনি রাগবেন । আপনি রাগলেই হারবেন আর তাদের স্বার্থ সিদ্ধি হবে ।
২০১০ সালে জেমিমার মা আমাকে ধানমণ্ডি ইবনে সিনহা হসপিটালে নিয়ে যান । কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাকে দেখেন । একেকজন একেক বিষয়ে স্পেশালিস্ট । এক্সরে, কয়েক রকমের ব্লাড টেস্ট, ব্লাড টেস্টের বিলই এসেছিলো ৮৩০০ টাকা । ইসিজি, ইউরিন টেস্ট, স্টুল টেস্ট, বুক, তলপেট, এমনকি ব্রেইন পর্যন্ত এক্সরে করিয়েছিলো জেমিমার মা । আমি তাকে বার বার বলেছি, আমার কোনো রোগ নেই । ইউরোপ- আমেরিকায় আমি ডাক্তার দেখিয়েছি । আমার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই । তোমরা আমাকে বোঝো না ।
একটা রোগ আছে, সেটা এই দেশের ডাক্তার আইডেনটিফাই করতে পারবে কিনা জানি না । আমি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় পড়েছি, সাবেক সোভিয়েত নেতা জোশেফ স্টালিন এক ধরনের রোগে ভুগতেন । তার মৃত্যুর ৫০ বছর পর তাঁর ব্যক্তিগত ডাক্তার এই রোগ সম্পর্কে গনমাধ্যমে বলেন যে, জোশেফ স্টালিন ‘অথেরস ক্লোরোসিস’ নামে এক রোগে ভুগতেন । এই রোগে মানুষ হঠাৎ রেগে যায় । প্রতিক্রিয়া হয় তীব্র । স্টালিন তাঁর সময়ে ৫ কোটি সোভিয়েতবাসীকে হত্যা করেছিলেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর বেরিয়েছিলো । ওই রিপোর্টে ডাক্তার বলেছেন, অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত কিন্তু আমরা না বুঝে তাকে রাগি, উম্মাদ, পাগল বলি । কিন্তু তা ঠিক নয় । এই রোগে তারাই আক্রান্ত হয় যাদের ব্লাডে ফ্যাট বেশি থাকে । রক্তে চর্বি বেশি থাকার কারনে শরীরের সব জায়গায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আমাদের মস্তিস্কে যে সূক্ষ্ম শিরা উপশিরা আছে সেখানে গিয়ে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে । যেহেতু মস্তিস্কের শিরা উপশিরা খুব সূক্ষ্ম সেখানে রক্তে চর্বির কারনে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধা দেয় । তখনি ওই মানুষ রেগে যায় ।
আমার তেমন রোগ আছে কিনা জানি না । অযথা কেন এই হয়রানি করছো ?
পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের মানুষ আছে । কেউ একটু রাগি হবে, কেউবা শান্ত প্রকৃতির । আর রাগ ছাড়া মানুষ আছে বলে আমার জানা নেই । স্বয়ং আল্লাহ ভীষণ রাগি । তার কথামতো না চললে, দোজখে কি কঠোর শাস্তি দেবেন তা পবিত্র কোরানে স্পষ্ট লেখা আছে । এটা নিয়ে কেনো ঝামেলা করছো ? আগে দেখো, বিনা কারনে আমি কারো সঙ্গে রাগ করি কিনা । যদি করি তবে সেটাকে রোগ হিসেবে ধরতে পারো । আমি অনিয়ম, অন্যায়, অসৌজন্যতা, দুর্নীতি এসব মেনে নিতে পারি না।
জেমিমার মা বলেছিলো, আমি দেখবো তোমার কোনো রোগ আছে কিনা ? আমি তখন ফান করে বলেছিলাম, বিশেষ মুহুর্তে কি আমাকে অসুস্থ মনে হয় তোমার কাছে ? আমি যে কি পরিমান রোমান্টিক এটা তোমার চোখে পড়ে না? জেমিমার মা বলেছিলেন, না, আপনি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতসম্পন্ন । ওই ব্যাপারে আপনি ক্লাশের ফার্স্ট বয়ের মতোই ফার্স্ট ।
৮/১০ দিন ধরে সব চেক আপ করে ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার একসঙ্গে বসে আমার সঙ্গে কথা বললেন ১৫ মিনিট । কিছুটা সাইকোলজিস্টের মতো । তারপর জেমিমার মাকে জানালেন, আমার কোনো রোগ নেই । অনেকদিন দেশের বাইরে নিয়মের মধ্যে চলে এখানের অনিয়ম দেখলে আমি রেগে যাই । এটা অ্যাডজাস্টমেন্ট সমস্যা । আর কিছু নয় । ব্লাডে সামান্য ফ্যাট আছে । যা স্বাভাবিক মাত্রার । প্রায় সকলেরই আছে । ডাক্তার আমাকে শুধু একটা ট্যাবলেট দিয়েছিলেন । ১০ দিন খাওয়ার জন্য । খুবই কম দামি একটা ট্যাবলেট । নাম Rex. ছোট এক বোতল ট্যাবলেটের (১০টা) দাম ১৫ টাকা । ভিজিট, টেস্ট সব মিলে খরচ হয়েছিলো ৪২৫০০ টাকা ! আর ওষুধ লেগেছে ১৫ টাকার !
করিম চৌধুরী
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
কুমিল্লা ।
আমাকে যারা চেনেন তাদের সকলেরই একটা ধারণা আমি রাগী ! কিন্তু আমার মনে প্রায়ই একটা প্রশ্ন জাগে- আসলেই কি আমি রাগি না আমাকে রাগানো হয় ? প্রায় ৮/১০ বছর আগে আমার চাচাতো ভাতিজা ফারুক চৌধুরী আমাকে বলেছিলো কাকা, আপনি বুঝেন না । কিছু লোক আপনাকে ইচ্ছা করে রাগায় । এরা খুব ধুরন্ধর । এরা জানে কি করলে বা বললে, আপনি রাগবেন । আপনি রাগলেই হারবেন আর তাদের স্বার্থ সিদ্ধি হবে ।
২০১০ সালে জেমিমার মা আমাকে ধানমণ্ডি ইবনে সিনহা হসপিটালে নিয়ে যান । কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাকে দেখেন । একেকজন একেক বিষয়ে স্পেশালিস্ট । এক্সরে, কয়েক রকমের ব্লাড টেস্ট, ব্লাড টেস্টের বিলই এসেছিলো ৮৩০০ টাকা । ইসিজি, ইউরিন টেস্ট, স্টুল টেস্ট, বুক, তলপেট, এমনকি ব্রেইন পর্যন্ত এক্সরে করিয়েছিলো জেমিমার মা । আমি তাকে বার বার বলেছি, আমার কোনো রোগ নেই । ইউরোপ- আমেরিকায় আমি ডাক্তার দেখিয়েছি । আমার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই । তোমরা আমাকে বোঝো না ।
একটা রোগ আছে, সেটা এই দেশের ডাক্তার আইডেনটিফাই করতে পারবে কিনা জানি না । আমি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় পড়েছি, সাবেক সোভিয়েত নেতা জোশেফ স্টালিন এক ধরনের রোগে ভুগতেন । তার মৃত্যুর ৫০ বছর পর তাঁর ব্যক্তিগত ডাক্তার এই রোগ সম্পর্কে গনমাধ্যমে বলেন যে, জোশেফ স্টালিন ‘অথেরস ক্লোরোসিস’ নামে এক রোগে ভুগতেন । এই রোগে মানুষ হঠাৎ রেগে যায় । প্রতিক্রিয়া হয় তীব্র । স্টালিন তাঁর সময়ে ৫ কোটি সোভিয়েতবাসীকে হত্যা করেছিলেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর বেরিয়েছিলো । ওই রিপোর্টে ডাক্তার বলেছেন, অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত কিন্তু আমরা না বুঝে তাকে রাগি, উম্মাদ, পাগল বলি । কিন্তু তা ঠিক নয় । এই রোগে তারাই আক্রান্ত হয় যাদের ব্লাডে ফ্যাট বেশি থাকে । রক্তে চর্বি বেশি থাকার কারনে শরীরের সব জায়গায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আমাদের মস্তিস্কে যে সূক্ষ্ম শিরা উপশিরা আছে সেখানে গিয়ে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে । যেহেতু মস্তিস্কের শিরা উপশিরা খুব সূক্ষ্ম সেখানে রক্তে চর্বির কারনে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধা দেয় । তখনি ওই মানুষ রেগে যায় ।
আমার তেমন রোগ আছে কিনা জানি না । অযথা কেন এই হয়রানি করছো ?
পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের মানুষ আছে । কেউ একটু রাগি হবে, কেউবা শান্ত প্রকৃতির । আর রাগ ছাড়া মানুষ আছে বলে আমার জানা নেই । স্বয়ং আল্লাহ ভীষণ রাগি । তার কথামতো না চললে, দোজখে কি কঠোর শাস্তি দেবেন তা পবিত্র কোরানে স্পষ্ট লেখা আছে । এটা নিয়ে কেনো ঝামেলা করছো ? আগে দেখো, বিনা কারনে আমি কারো সঙ্গে রাগ করি কিনা । যদি করি তবে সেটাকে রোগ হিসেবে ধরতে পারো । আমি অনিয়ম, অন্যায়, অসৌজন্যতা, দুর্নীতি এসব মেনে নিতে পারি না।
জেমিমার মা বলেছিলো, আমি দেখবো তোমার কোনো রোগ আছে কিনা ? আমি তখন ফান করে বলেছিলাম, বিশেষ মুহুর্তে কি আমাকে অসুস্থ মনে হয় তোমার কাছে ? আমি যে কি পরিমান রোমান্টিক এটা তোমার চোখে পড়ে না? জেমিমার মা বলেছিলেন, না, আপনি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতসম্পন্ন । ওই ব্যাপারে আপনি ক্লাশের ফার্স্ট বয়ের মতোই ফার্স্ট ।
৮/১০ দিন ধরে সব চেক আপ করে ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার একসঙ্গে বসে আমার সঙ্গে কথা বললেন ১৫ মিনিট । কিছুটা সাইকোলজিস্টের মতো । তারপর জেমিমার মাকে জানালেন, আমার কোনো রোগ নেই । অনেকদিন দেশের বাইরে নিয়মের মধ্যে চলে এখানের অনিয়ম দেখলে আমি রেগে যাই । এটা অ্যাডজাস্টমেন্ট সমস্যা । আর কিছু নয় । ব্লাডে সামান্য ফ্যাট আছে । যা স্বাভাবিক মাত্রার । প্রায় সকলেরই আছে । ডাক্তার আমাকে শুধু একটা ট্যাবলেট দিয়েছিলেন । ১০ দিন খাওয়ার জন্য । খুবই কম দামি একটা ট্যাবলেট । নাম Rex. ছোট এক বোতল ট্যাবলেটের (১০টা) দাম ১৫ টাকা । ভিজিট, টেস্ট সব মিলে খরচ হয়েছিলো ৪২৫০০ টাকা ! আর ওষুধ লেগেছে ১৫ টাকার !
করিম চৌধুরী
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
কুমিল্লা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন