সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আমার ঘরে বেশ কিছু বই আছে । যখন যেটা মন চায় সেটা পড়ি। আজ পড়ছি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেমের গল্প । প্রেম ভালোবাসা সবার কাছেই প্রিয় । প্রেমের কোনো বয়স নেই বলেও একটা কথা আছে । আমি স্কুল কলেজ থেকেই গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো । তখন এতো না বুঝলেও পড়তাম । পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ স্কুল জীবন থেকেই ছিলো । যা আজো একটুও কমেনি । প্রতিদিন আমার ২/৩ ঘন্টা না পড়লে ভালোই লাগে না । কবি, লেখক, শিল্পিরা রোমান্টিক হয় ।
সত্যি বলতে কি বাংলা সাহিত্যে সুনীল আমার প্রিয় লেখক । তাঁর খুব কম বই আছে যা আমার পড়া হয়নি। তার বিশাল ক্যানভাসে রচিত দুই খন্ডে পূর্ব পশ্চিম, সেই সময়, প্রথম আলো কলেজ জীবনেই পড়ে শেষ করেছি । তাঁর আরেকটি চমৎকার বই আছে নাম.. ছবির দেশে কবিতার দেশে ।
এটা ফ্রান্সের উপর লেখা । মার্গারিটা নামের এক ফরাসি মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের কথা আছে এই বইতে । আমার বেশি ভালোলাগে তার প্রেমের গল্প ও কবিতা । তাঁর সব উপন্যাসেও দারুণ প্রেমের কথা থাকে । নীল লোহিত ছদ্মনামেও তাঁর অসংখ্য বই আছে । সে সবও বাদ দিইনি ।
তাঁর কবিতাও অনেক সুন্দর । কেউ কথা রাখেনি, হঠাৎ নীরার জন্য কার না ভালোলাগে ?
১৯৯৫ সালে ইউরোপ থেকে দেশে বেড়াতে এসে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম । কলকাতায় বেশ কিছুদিন ঘুরে, কলেজ স্টৃট থেকে প্রায় ৫ হাজার টাকার বই কিনে, হঠাৎ মাথায় পাগলামি বুদ্ধি এলো । আমি কলকাতায় আছি আর আমার প্রিয় লেখক তিনিও কলকাতায় আছেন । ইচ্ছা করলেই আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারি । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন ‘দেশ’ পত্রিকার সহকারি সম্পাদক । আমি কিছু করবো বলে মনস্থির করলে তা করবোই । ছোটবেলায় নতুন নতুন দুষ্টুমি করলে মা দেখে বলতেন, তোর সব দিকে এতো খেয়াল কেনো ? তোর খায়ালে কোনো অন্ত নেই ?
এক দুপুরে কলকাতায় দেশ পত্রিকা অফিসে গিয়ে হাজির হলাম । অফিসে গিয়েই আমি বেশ কয়েকজন কর্মরত লেখক,সাংবাদিককে বললাম, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। সুনীলদার সঙ্গে দেখা করতে চাই । তারা আমাকে সুনীলদার রুম দেখিয়ে দি্লেন । আমি তখন টগবগে যুবক । সুনীলদার রুমে ঢুকেই আমি বাঙালি মুসলিমের কায়দায় সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম । তিনি অত্যন্ত আদর করে আমাকে বসতে বললেন । অনেক কথা হলো সেদিন । চা বিস্কিট খাওয়ালেন।
তার তিন বছর পর ১৯৯৮ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গেলেন আমেরিকায় । তিনি অসংখ্যবার আমেরিকায় গিয়েছেন । আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কৃয়েটিভ রাইটিং এ পড়েছেন । নিউ ইয়র্কের সবগুলো বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হলো
‘বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারা লাইব্রেরিতে বসবেন ।' সেদিন ছুটির দিন ছিলো না । আমি কিভাবে ছুটি নেবো ? মালিক জানতেন আমি লেখালেখি করি । মালিকের পরিচয় আরেকদিন দেবো । তার নাম ক্যানেথ সিং খান্দোজা । তিনি ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবের লোক । তার বড় পরিচয় তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার ভাতিজা । আমাকে খুবই আদর করতেন । তাকে বুঝিয়ে বললাম, আমার ছুটির কেনো দরকার । তিনি খুশি মনে আমাকে ছুটি দিলেন ।
ডিসেম্বরের রক্ত ঠান্ডা করা শীত নিউ ইয়র্কে সেদিন । তাপমাত্রা মাইনাস নয় । আমি থাকতাম নিউ ইয়র্ক সিটির থার্ড এভিনিউতে । যাকে স্থানীয় ভাষায় ম্যানহাটন বলা হয় । সন্ধ্যার আগেই আমি F ট্রেন ধরে জ্যাকসন হাইটস গেলাম । ১৫ মিনিট লাগে মাত্র । রুজভেল্ট এভিনিউতে নামলেই জ্যাকসন হাইটস ।
মুক্তধারায় গিয়েই আমি সুনীলদার পাশের চেয়ারে বসলাম । নিউ ইয়র্কের সাংবাদিকরা আমাকে শ্রদ্ধা করতেন । ভালো লিখি বলে আমার সুনাম ছিলো । সেখানে গিয়ে দেখি অনেক পাঠক সুনীলের বই কিনছেন আর অটোগ্রাফ নিচ্ছেন । নিউ ইয়র্কের সাংবাদিকদের দলও উপস্থিত তার ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য ।
অনেক পরে ভিড় কমলে আমি মাথার কেলভিন ক্লেইন লাল রঙের ক্যাপটা মাথা থাকে খোলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছিলাম,
সুনীলদা, আমি বাংলাদেশের একজন পাগল পাঠক । আমি আপনার পুর্ব পশ্চিম উপন্যাসটা ৬ বার পড়েছি ।
সুনীলদা অবাক হয়ে বললেন, এতো বড় দুই খন্ডের বই তুমি ৬ বার পড়েছো ? তোমার নাম তো গিনেস বুকে উঠা দরকার । সুনীলদা খুব সিগারেট খেতেন । আমি তাকে চেস্টারফিল্ড এক প্যাকেট সিগারেট দিলাম । লেখকদের মন বড় হয় । তিনি আমাকে বললেন, তুমিও একটা খাও ।
এরপর তিনি বললেন, সবাই অটোগ্রাফ নিলো, তুমি নিলে না যে ? আমি তখন আমার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা বাড়িয়ে দিলাম । আমার ডায়েরিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখলেন,
“সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে।’’
করিম চৌধুরীকে শুভেচ্ছাসহ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । তারপর আমাকে বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি যারা বেশি পড়ে তারা লেখালেখি করে । সুন্দর করে লিখে ‘দেশ’ পত্রিকায় আমার নামে পাঠিয়ে দিও । আমি দেখে দেবো ।
তিনি তার বাসার ঠিকানাও আমার ডায়েরিতে লিখে দিলেন ইংরেজিতে ফোন নাম্বারসহ । বললেন, আবার কলকাতায় গেলে যেন উনার বাসার যাই ।
Sunil Gangopadhyay
‘Parijat’ ( পারিজাত তার বাসার নাম)
24 Mandoville Gardens
Calcutta-29
West Bengal
India
phone 4407302
সেদিন সুনীলদাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম এমন
১। আপনি কখন লিখেন ?
২। কিভাবে লিখেন ? অনেকেইতো বুকে বালিশ দিয়ে উপর হয়ে খাটের উপর লিখেন ।
৩। এরপর কি করেন ?
সেখানে তখন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন তাঁর ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য । আমি তখন ‘প্রবাসী, ঠিকানা, বাংলাপত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম ।
‘বাংলাপত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক ছিলেন মি. ফজলুর রহমান । তিনি আমাকে ‘পাগল’সাহেব বলে ডাকতেন । ‘পাগল’ নামে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম ‘বাংলা পত্রিকা’য় । বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন তখন মি. আবু তাহের । তাহের সিলেটের লোক । আমার জুনিয়র । আমাকে খুবই শ্রদ্ধা করতো ।
আমার প্রশ্নে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন,
আমি চেয়ার টেবিলে বসে লিখি । সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা । তারপর ‘দেশ’পত্রিকা অফিসে যাই । কয়েক ঘন্টা থাকি । বিকেল থেকে মদ খাওয়া শুরু করি । রাত পর্যন্ত চলে। উল্লেখ্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন ।
আমি কয়েকদিন নিউ ইয়র্ক থেকে তাঁর বাসায় ফোন করে কথা বলেছি । ফোন করলেই ধরতেন সাথী ভাবী । মানে উনার স্ত্রী । অনেক কথা হতো । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন ২৩ অক্টোবর ২০১২ সালে রাত ২টা ৫ মিনিটে ......। Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack.
তার বই আমি এখনো পড়ি ! এই বয়সেও আমি প্রেমের গল্প পড়ি শোনে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়য়ের এই ‘প্রেমের গল্প’ বইতে ৩০টি গল্প আছে । সবগুলো গল্পই চমৎকার । এগুলো নির্বাচিত গল্প । তবে আমার কাছে বেশি ভালোলাগে “মনীষার দুই প্রেমিক” আর “আগামীকাল” গল্পটি । ৩৭০ পৃষ্ঠার বই । দাম ৩৫০ টাকা । এই বইটা আমার একজন প্রিয় বন্ধু কাবেরী মির্জাকে গত বছর গিফট করেছিলাম অনেকগুলো বইয়ের সঙ্গে । আমার কাছে এই বইটা আর ছিলো না । তাই গত ১৫/২০ দিন আগে যে ঢাকা গিয়েছিলাম তখন নীলক্ষেত থেকে বইটি আবার কিনেছি । অন্য অনেক বইয়ের সঙ্গে এই বয়সেও আমি প্রেমের গল্প পড়ি । কি আশ্চার্য না?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ছবিটা তুলেছিলেন তৎকালীন বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মি. আবু তাহের । তাহের এখন ‘বাংলা পত্রিকার’ সম্পাদক ।
ডিসেমবরে তীব্র শীত ছিলো । তাই আমার গায়ে বটল গৃন হাইনেকের ফুল স্লিভ গেঞ্জির সঙ্গে লেদার জ্যাকেট পড়া ছিলো ।
আমার ঘরে বেশ কিছু বই আছে । যখন যেটা মন চায় সেটা পড়ি। আজ পড়ছি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেমের গল্প । প্রেম ভালোবাসা সবার কাছেই প্রিয় । প্রেমের কোনো বয়স নেই বলেও একটা কথা আছে । আমি স্কুল কলেজ থেকেই গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো । তখন এতো না বুঝলেও পড়তাম । পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ স্কুল জীবন থেকেই ছিলো । যা আজো একটুও কমেনি । প্রতিদিন আমার ২/৩ ঘন্টা না পড়লে ভালোই লাগে না । কবি, লেখক, শিল্পিরা রোমান্টিক হয় ।
সত্যি বলতে কি বাংলা সাহিত্যে সুনীল আমার প্রিয় লেখক । তাঁর খুব কম বই আছে যা আমার পড়া হয়নি। তার বিশাল ক্যানভাসে রচিত দুই খন্ডে পূর্ব পশ্চিম, সেই সময়, প্রথম আলো কলেজ জীবনেই পড়ে শেষ করেছি । তাঁর আরেকটি চমৎকার বই আছে নাম.. ছবির দেশে কবিতার দেশে ।
এটা ফ্রান্সের উপর লেখা । মার্গারিটা নামের এক ফরাসি মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের কথা আছে এই বইতে । আমার বেশি ভালোলাগে তার প্রেমের গল্প ও কবিতা । তাঁর সব উপন্যাসেও দারুণ প্রেমের কথা থাকে । নীল লোহিত ছদ্মনামেও তাঁর অসংখ্য বই আছে । সে সবও বাদ দিইনি ।
তাঁর কবিতাও অনেক সুন্দর । কেউ কথা রাখেনি, হঠাৎ নীরার জন্য কার না ভালোলাগে ?
১৯৯৫ সালে ইউরোপ থেকে দেশে বেড়াতে এসে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম । কলকাতায় বেশ কিছুদিন ঘুরে, কলেজ স্টৃট থেকে প্রায় ৫ হাজার টাকার বই কিনে, হঠাৎ মাথায় পাগলামি বুদ্ধি এলো । আমি কলকাতায় আছি আর আমার প্রিয় লেখক তিনিও কলকাতায় আছেন । ইচ্ছা করলেই আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারি । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন ‘দেশ’ পত্রিকার সহকারি সম্পাদক । আমি কিছু করবো বলে মনস্থির করলে তা করবোই । ছোটবেলায় নতুন নতুন দুষ্টুমি করলে মা দেখে বলতেন, তোর সব দিকে এতো খেয়াল কেনো ? তোর খায়ালে কোনো অন্ত নেই ?
এক দুপুরে কলকাতায় দেশ পত্রিকা অফিসে গিয়ে হাজির হলাম । অফিসে গিয়েই আমি বেশ কয়েকজন কর্মরত লেখক,সাংবাদিককে বললাম, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। সুনীলদার সঙ্গে দেখা করতে চাই । তারা আমাকে সুনীলদার রুম দেখিয়ে দি্লেন । আমি তখন টগবগে যুবক । সুনীলদার রুমে ঢুকেই আমি বাঙালি মুসলিমের কায়দায় সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম । তিনি অত্যন্ত আদর করে আমাকে বসতে বললেন । অনেক কথা হলো সেদিন । চা বিস্কিট খাওয়ালেন।
তার তিন বছর পর ১৯৯৮ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গেলেন আমেরিকায় । তিনি অসংখ্যবার আমেরিকায় গিয়েছেন । আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কৃয়েটিভ রাইটিং এ পড়েছেন । নিউ ইয়র্কের সবগুলো বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হলো
‘বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারা লাইব্রেরিতে বসবেন ।' সেদিন ছুটির দিন ছিলো না । আমি কিভাবে ছুটি নেবো ? মালিক জানতেন আমি লেখালেখি করি । মালিকের পরিচয় আরেকদিন দেবো । তার নাম ক্যানেথ সিং খান্দোজা । তিনি ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবের লোক । তার বড় পরিচয় তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার ভাতিজা । আমাকে খুবই আদর করতেন । তাকে বুঝিয়ে বললাম, আমার ছুটির কেনো দরকার । তিনি খুশি মনে আমাকে ছুটি দিলেন ।
ডিসেম্বরের রক্ত ঠান্ডা করা শীত নিউ ইয়র্কে সেদিন । তাপমাত্রা মাইনাস নয় । আমি থাকতাম নিউ ইয়র্ক সিটির থার্ড এভিনিউতে । যাকে স্থানীয় ভাষায় ম্যানহাটন বলা হয় । সন্ধ্যার আগেই আমি F ট্রেন ধরে জ্যাকসন হাইটস গেলাম । ১৫ মিনিট লাগে মাত্র । রুজভেল্ট এভিনিউতে নামলেই জ্যাকসন হাইটস ।
মুক্তধারায় গিয়েই আমি সুনীলদার পাশের চেয়ারে বসলাম । নিউ ইয়র্কের সাংবাদিকরা আমাকে শ্রদ্ধা করতেন । ভালো লিখি বলে আমার সুনাম ছিলো । সেখানে গিয়ে দেখি অনেক পাঠক সুনীলের বই কিনছেন আর অটোগ্রাফ নিচ্ছেন । নিউ ইয়র্কের সাংবাদিকদের দলও উপস্থিত তার ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য ।
অনেক পরে ভিড় কমলে আমি মাথার কেলভিন ক্লেইন লাল রঙের ক্যাপটা মাথা থাকে খোলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছিলাম,
সুনীলদা, আমি বাংলাদেশের একজন পাগল পাঠক । আমি আপনার পুর্ব পশ্চিম উপন্যাসটা ৬ বার পড়েছি ।
সুনীলদা অবাক হয়ে বললেন, এতো বড় দুই খন্ডের বই তুমি ৬ বার পড়েছো ? তোমার নাম তো গিনেস বুকে উঠা দরকার । সুনীলদা খুব সিগারেট খেতেন । আমি তাকে চেস্টারফিল্ড এক প্যাকেট সিগারেট দিলাম । লেখকদের মন বড় হয় । তিনি আমাকে বললেন, তুমিও একটা খাও ।
এরপর তিনি বললেন, সবাই অটোগ্রাফ নিলো, তুমি নিলে না যে ? আমি তখন আমার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা বাড়িয়ে দিলাম । আমার ডায়েরিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখলেন,
“সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে।’’
করিম চৌধুরীকে শুভেচ্ছাসহ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । তারপর আমাকে বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি যারা বেশি পড়ে তারা লেখালেখি করে । সুন্দর করে লিখে ‘দেশ’ পত্রিকায় আমার নামে পাঠিয়ে দিও । আমি দেখে দেবো ।
তিনি তার বাসার ঠিকানাও আমার ডায়েরিতে লিখে দিলেন ইংরেজিতে ফোন নাম্বারসহ । বললেন, আবার কলকাতায় গেলে যেন উনার বাসার যাই ।
Sunil Gangopadhyay
‘Parijat’ ( পারিজাত তার বাসার নাম)
24 Mandoville Gardens
Calcutta-29
West Bengal
India
phone 4407302
সেদিন সুনীলদাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম এমন
১। আপনি কখন লিখেন ?
২। কিভাবে লিখেন ? অনেকেইতো বুকে বালিশ দিয়ে উপর হয়ে খাটের উপর লিখেন ।
৩। এরপর কি করেন ?
সেখানে তখন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন তাঁর ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য । আমি তখন ‘প্রবাসী, ঠিকানা, বাংলাপত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম ।
‘বাংলাপত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক ছিলেন মি. ফজলুর রহমান । তিনি আমাকে ‘পাগল’সাহেব বলে ডাকতেন । ‘পাগল’ নামে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম ‘বাংলা পত্রিকা’য় । বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন তখন মি. আবু তাহের । তাহের সিলেটের লোক । আমার জুনিয়র । আমাকে খুবই শ্রদ্ধা করতো ।
আমার প্রশ্নে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন,
আমি চেয়ার টেবিলে বসে লিখি । সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা । তারপর ‘দেশ’পত্রিকা অফিসে যাই । কয়েক ঘন্টা থাকি । বিকেল থেকে মদ খাওয়া শুরু করি । রাত পর্যন্ত চলে। উল্লেখ্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন ।
আমি কয়েকদিন নিউ ইয়র্ক থেকে তাঁর বাসায় ফোন করে কথা বলেছি । ফোন করলেই ধরতেন সাথী ভাবী । মানে উনার স্ত্রী । অনেক কথা হতো । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন ২৩ অক্টোবর ২০১২ সালে রাত ২টা ৫ মিনিটে ......। Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack.
তার বই আমি এখনো পড়ি ! এই বয়সেও আমি প্রেমের গল্প পড়ি শোনে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়য়ের এই ‘প্রেমের গল্প’ বইতে ৩০টি গল্প আছে । সবগুলো গল্পই চমৎকার । এগুলো নির্বাচিত গল্প । তবে আমার কাছে বেশি ভালোলাগে “মনীষার দুই প্রেমিক” আর “আগামীকাল” গল্পটি । ৩৭০ পৃষ্ঠার বই । দাম ৩৫০ টাকা । এই বইটা আমার একজন প্রিয় বন্ধু কাবেরী মির্জাকে গত বছর গিফট করেছিলাম অনেকগুলো বইয়ের সঙ্গে । আমার কাছে এই বইটা আর ছিলো না । তাই গত ১৫/২০ দিন আগে যে ঢাকা গিয়েছিলাম তখন নীলক্ষেত থেকে বইটি আবার কিনেছি । অন্য অনেক বইয়ের সঙ্গে এই বয়সেও আমি প্রেমের গল্প পড়ি । কি আশ্চার্য না?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ছবিটা তুলেছিলেন তৎকালীন বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মি. আবু তাহের । তাহের এখন ‘বাংলা পত্রিকার’ সম্পাদক ।
ডিসেমবরে তীব্র শীত ছিলো । তাই আমার গায়ে বটল গৃন হাইনেকের ফুল স্লিভ গেঞ্জির সঙ্গে লেদার জ্যাকেট পড়া ছিলো ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন