সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বদনা গিফট

বদনা গিফট ও স্মৃতিতে তাপস ভাই

বদনা আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য উপাদান।নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অন্যতম একটি।  বিশেষ করে প্রাচ্যের মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে টয়লেট টিস্যুই বদনার কাজ করে। কিন্তু আমাদের দেশে বদনা ছাড়া চলেই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে বস্তিবাসী সকলেরই বদনার প্রয়োজন। বদনার বহুমুখী ব্যবহার। ছোটবেলা দেখেছি, কারো জ্বর হলে মাথার নীচে ওয়াল ক্লথ দিয়ে খাটের নিচে বালতি রেখে বদনা দিয়ে কপালে পানি দেয়া হতো। এতে জ্বর কমতো । কাজেই বদনার মাহাত্ম্য অনেক। বদনা শুধু পশ্চাৎদেশে নয়। সময় মতো কপালেও আসে। বদনা দিয়ে ফুল গাছ ও অনন্যা ছোট গাছে পানিও দেয়া হয়। পুরনো বদনা দিয়ে অনেকে বাসার সামনে,ছাদে ফুল গাছ ও অনন্যা ছোট সবজির চাষও করেন।
পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের 'পরান পুকুর' কবিতায়ও বদনার উল্লেখ আছে ।
......"বদনায় ভরা একটুকু, তারি ভরসায় গেঁয়ো চাষি,
চৈত্র- রোদের করুণ করিয়া বাজাত গানের বাঁশি ।"
বদনার দাবিতে এদেশে মিছিল হয়েছে । মিটিং হয়েছে । সংবাদ সম্মেলন হয়েছে । কতো প্রয়োজনীয় বদনা !
বদনা নিয়ে আমার এক স্মৃতি আছে ফ্লোরিডায়। সেই স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ফ্লোরিডার ফোর্ট মায়ার্স সিটিতে সদ্য প্রয়াত তাপস ভাই।
সোহেল আমার বন্ধু। তুই তোকারি সম্পর্ক। একদিন সোহেল আমার বাসায় এসে টয়লেটে গেলো। কিছুক্ষণ পর সে টয়লেট থেকে চিৎকার করে বললো,
আরে তোর বদনা কই?
আমি বললাম, তোর চোখে কি ঠুলি পরেছে?
টিস্যু পেপার দেখিস না? বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে সে আমাকে কুমিল্লার স্থানীয় ভাষায় জিজ্ঞেস করলো,
"মন্টু, তুই আইগ্যা হোছোস না?" মানে পায়খানা করে পানি দিয়ে পাছা ধোস না? আমি বললাম, কেনো, টিস্যু পেপার আছে না? সারা দুনিয়ায় টিস্যু বানায় কেনো? আমিতো জাপান, ইউরোপ, নিউ ইয়র্কে মোট বারো বছর টিস্যু পেপারই ইউজ করেছি। সে অবাক হয়ে বললো, "আরে তুই কস কি?"
সোহেল আমি একই শেলে চাকরি করতাম। সিনিয়র ভাইয়েরা সকালের শিফটে কাজ করতেন। আর বিকেলে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে বের হতেন। সবারই গাড়ি আছে। তাপস ভাইয়ের লেক্সাস জিপ,বাবুল ভাইয়ের হোন্ডা CRV জিপ, সোহেলের নিসান আল্টিমা,আমার হোন্ডা সিভিক সিডান, মিজান ভাইয়ের টয়োটা ফোর রানার জিপ। একেবারেই মেক্সিকো উপসাগরের পাড়ে ওই শহর। আমাদের ওই এলাকার নামই ছিলো ফোর্ট মায়ার্স বিচ ।
উনারা ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরে ফিরে আমাদের শেলে এসেও দেখা করতেন। ওই ঘটনার অর্থাৎ আমার বাসায় সোহেলের টয়লেট করার পরদিন বিকেলে তাপস ভাই,লতা ভাবী,তাদের সন্তান প্রান্ত,অন্ত, বাবুল ভাই, তাসলিমা ভাবী,তাদের সন্তান তামান্না এলেন শেলে। আমরা তখন অন ডিউটিতে। তখন সন্ধ্যা।
সোহেল তার স্বভাবসূলভ ভঙ্গীতে বললো,
তাপস ভাই, এক বিরাট খবর। ভাবীরাসহ অবাক হয়ে জানতে চাইলেন,
ঘটনা কি সোহেল ভাই ?
সোহেল বললো, " মন্টু তো আইজ ১২ বছর আইগ্যা হোছে না । সে অ্যামেরিকানদের মতো টিস্যু পেপার ব্যবহার করে।'
'হাসির রোল পরে গেলো শেল গ্যাস স্টেশনে । তাপস ভাই, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুই না শুক্রবার জুম্মার নামাজ পরিস ।"
 আমি উত্তর দিলাম, আমি তো প্রতিদিন দুইবার গোসল করি । ফ্লোরিডায় যা গরম । অসুবিধা কি? তাপস ভাই বললেন, ধুরো খবিশ । হাসাহাসি করতে করতে ভাই ভাবীরা চলে গেলেন ।
ওমা ! কিছুক্ষণ পর দেখি বাইরে তাপস ভাইয়ের লেক্সাস এসে থামলো । আমাদের শেল গ্যাস স্টেশনটা বেশ বড় ছিলো । ২৪টা গাড়ি একসঙ্গে তেল নিতে পারে । আর ভেতরে সবকিছু পাওয়া যায় । সামনের পুরো দেয়ালটাই কাঁচের গ্লাসের । ভেতর থেকে বাইরে সব কিছু দেখা যায় । গাড়ি দেখলেই আমরা বুঝতে পারতাম কে এসেছে । তাপস ভাই ও লতা ভাবী নামলেন । প্রান্ত, অন্ত তখন ছোট ৪/৫ বছর বয়সি । ওরা গাড়িতে বেবি সিটেই বসেছিলো ।
তাপস ভাইয়ের হাতে দুইটা প্লাস্টিকের বদনা ।
ভেতরে এসে আমাকে বললেন, নে । তোর জন্য বদনা গিফট । এডিসন মল থেকে কিনে এনেছি । আজ থেকে টিস্যু পেপার বাদ দিয়ে পানি ইউজ করবি ।
জানিনা, বন্ধুদের মাঝে কেউ বদনা গিফট পেয়েছেন কিনা । তিন দিন হয় তাপস ভাই মারা গেছেন ফ্লোরিডায় । রেখে গেছেন অনেক স্মৃতি ।
Showkat Showkat, Leetu Zaman, Rushy Pervez, Chowdhury Erfanul Kabir, Shireen Afzal.

২০ নভেম্বর,২০১৯
কুমিল্লা ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর