হাদিস, বোরখা ও কিছু কথা
আমি যতদূর জানি, নবীজীর মৃত্যুর ২৫০ ( দুইশত পঞ্চাশ) বছর পর হাদিস সংগ্রহের কাজ শুরু করেন ইমাম বুখারী। এর মাঝে চার জেনারেশন গত হয়েছে। তাই বেশিরভাগ হাদিসই ভুয়া। সে সব কথা যে নবী বলেছেন তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কি? ইসলাম ধর্মে হাজার হাজার ভুয়া হাদিস আছে। নবীজী যা বলেন নি তাও হাদিস বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে!
কোরান একদিনে নাজিল হয়নি। যা অধিকাংশ মুসলিম জানে না। তারা বলে কোরান শব ই ক্বদর রাতে নাজিল হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোরানকে গ্রন্থাকারে প্রথম ছাপেন হজরত উসমান (রাঃ)৷ উসমান হাজার হাজার কোরান পুড়িয়ে ফেলেন। তাও অধিকাংশ মুসলিম জানেন না। কোরান বিভিন্ন আরবি উপভাষায়ও নাজিল হয়েছিলো। এক কোরানের সাথে আরেক কোরানের মিল ছিলো না। তাই হজরত উসমান শুধু আরবি ভার্সানের কোরান রেখে বাকি সব পুড়িয়ে ফেলেন। ইসলাম ধর্মের এমন অনেক কথা আছে যা মোল্লা, মাওলানারা আমাদের বলেন না। কেনো?
হজরত উসমানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নবীর দুই নাতি হাসান ও হোসেন তাদের দলবল নিয়ে অনেক চেস্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত উসমানকে তার বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার মৃতদেহ তিন দিন বাসায় পড়েছিলো। তার দেহ সম্পূর্ণ পচে গিয়েছিলো।
তিন দিন পর তাকে গোসল ছাড়াই রাতের অন্ধকারে ১০/১২ আত্নীয়স্বজনের উপস্থিতিতে কবর দেয়া হয়।
হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) একজন ভালো মানের মুসলিম ছিলেন। তিনি দামাসকাসের খলিফা ছিলেন। মুয়াবিয়া উসমানের ভাগিনা ছিলেন। হজরত আলীকে মুয়াবিয়া মেনে নেন নি। আলীর সঙ্গে মুয়াবিয়ার যুদ্ধ অমীমাংসিত ছিলো কিন্তু ওই যুদ্ধে আলীর প্রশাসন ভেঙে পরেছিলো। অবশেষে আলীও হত্যাকান্ডের শিকার হোন। ইয়াজিদ মুয়াবিয়ারই সন্তান ছিলেন।
নবীজীর মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখলের লড়াই ছিলো মুসলিমদের প্রধান কাজ। ইসলাম প্রচার করা নয়। হজরত আলীর সঙ্গে হজরত আয়েশারও যুদ্ধ হয়েছিলো। ইসলামের ইতিহাসে ওই যুদ্ধ উস্টের( উটের) যুদ্ধ নামে পরিচিত। কারন যুদ্ধে হজরত আয়েশা( রাঃ)উটে চড়ে এসেছিলেন। সেজন্য এই যুদ্ধের নাম উস্টের যুদ্ধ। আমি আরো কিছু সত্য কাহিনী জানি, অথেনটিক বইতে পড়েছি। ভার্সিটি লেবেলে 'ইসলামের ইতিহাস' পাঠ্য বইয়েও এসব উল্লেখ আছে। আমার উপরোক্ত বক্তব্য এই ধর্মান্ধ সমাজে বলে লাভ নেই বা বলাও রিস্কি। নিজ ধর্ম নিয়ে একাডেমিক আলোচনাও এখন এই দেশে করা যায় না।
বুখারী, তিরমিজি, মুসলিম, ফাজায়েলে আমল, মুন্তাখাব হাদিস, ফাজায়েলে সাদাকাত সবগুলো হাদিসের বইতে প্রচুর ভুয়া হাদিস আছে। হাদিস কখন থেকে সংগ্রহ শুরু হয় সেই সময়কাল আমি উল্লেখ করেছি। নবীজীর মৃত্যুর ২৫০ বছর পর হাদিস সংগ্রহ শুরু হয়। বিভিন্ন মানুষকে জিজ্ঞেস করে সেগুলোকে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২৫০ বছর আগে নবীজীর কথা শুনেছেন এমন কেউ জীবিত ছিলো না। সেখানে সন্দেহ পোষণ করার যথেষ্ট কারন আছে।
আমি চার মাস তাবলীগ জামাতে ছিলাম। প্রতিদিনই কমপক্ষে ৮টি হাদিস পড়তে হতো। চার মাসে ১২০ দিন। ১২০×৮=৯৬০ টি হাদিস। একটি হাদিস পড়লাম,
"যদি কোনো ব্যক্তি ৭০ হাজার বার কালেমা পড়ে কোনো মৃত ব্যক্তিকে তা উৎসর্গ করে তবে ওই মৃত ব্যক্তির কবরের আজাব কেয়ামত পর্যন্ত মাফ হয়ে যাবে। "
আমি হাদিসটি পড়ে সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম, এটা মিথ্যা হাদিস। উপস্থিত মুসুল্লিরা বলে উঠলেন, নাউজুবিল্লাহ। আমি বললাম, তাহলে ৪/৫ হাজার টাকা দিয়ে একজন লোক রেখে তাকে দিয়ে ৭০ হাজার বার কালেমা পড়িয়ে নিলেই সবাই নিশ্চিন্ত।
মৃত্যুর পর সে এই কালেমা ওই ব্যক্তিকে উৎসর্গ করবে আর তার কবরের আজাব কেয়ামত পর্যন্ত মাফ হয়ে যাবে। এটা কি করে সত্য হয়?
তবু সময় ছিলো বলে আমি ১ লাখ ৪০ হাজার বার কালেমা পড়েছিলাম। দুইজন মৃত ব্যক্তিকে উৎসর্গ করবো বলে। যদিও কাউকে উৎসর্গ করিনি এখনো কারন এই হাদিসটি ভুয়া ।
আরেকটা হাদিস নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷ তা হলো....
" আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসেন তাদেরকে দুনিয়াতে দুঃখ কষ্ট বেশি দেন ।"
এটা শান্তনার কথা। গরীব, অসহায়, নিঃস্ব,সহায়সম্বলহীন লোকদের শান্তনা দেয়ার কৌশল মাত্র। আফ্রিকা ও আমাদের দেশে কোটি লোক তিনবেলা খেতে পায়না, রোগের চিকিৎসা করাতে পারে না টাকার অভাবে। ধুকে ধুকে মরছে লাখ লাখ মানুষ। ইরাক, সিরিয়া,আফগানিস্তান, কাশ্মীর,প্যালেস্টাইনী মুসলিমদের কি করুন অবস্থা! আল্লাহ তাদের বেশি ভালোবাসেন বলে?! ওই হাদিস সত্য হলে তাদের জন্য মুসলমানদের এতো হাহাকার কেনো? আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন বলেই তাদের এই দুরবস্থা!
তাছাড়া কোরানের কথার চেয়ে তো হাদিসের কথা বেশি! একেক হাদিসের বই কোরানের চেয়ে বড়। নয় কি?
কোরানের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার কারনে সুন্নী ইসলামে আইন বিষয়ক চারটি তরিকার সৃষ্টি হয়।
হানাফি, সাফি, মালিকি ও হানবালি।
নবীজীর সময় শরিয়া আইন ছিলো না। মধ্যযুগে শরিয়া আইন প্রনীত হয়। মুসলিম শাসকদের সুবিধার্থে।
এক কোরানের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা হবে কেনো? দাঁড়ি রাখা, কতো বড় রাখা, কালি দেয়া যাবে না মেহেদি দিতে হবে এসব কথা কোরানে কোথায় বলা হয়েছে? টাখনুর উপর প্যান্ট পরা, মেয়েদের মুখঢাকা হিজাব বা বোরখা পড়া এর কোনটাই কোরানে উল্লেখ নেই। হিজাব বা বোরখা পরা যাবে তবে তার মুখমণ্ডল দেখা যাবে। মুখমণ্ডল ঢাকা থাকলে সে কে তা আপন আত্নীয়ও তাকে চেনেন না। এই মুখ ঢাকা বোরখার কারনে নারীরা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরেছে। বিভিন্ন পার্কে,হোটেলে, রাস্তাঘাটে পিতা মাতা,ভাইবোনও তাকে চিনতে পারেন না। সে নারী না পুরুষ তাও বুঝা যায় না। অনেক পুরুষ মুখ ঢাকা বোরখা পরে বড় অপরাধ করে থাকে।
কিছু হাদিস বা কোরানের আয়াত ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছিলো যা বর্তমানে প্রযোজ্য নয়। সমাজে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দেবে যার সমাধান কোরানে নেই। তাই ইজমা, কিয়াস ও ইস্তেহাদের কথা ইসলামই বলেছে। তখন ভিসা পাসপোর্ট ছিলো না। এখন হজ্ব করতে গেলেও পাসপোর্ট, ভিসা লাগে। কোনো নারী কি মুখ ঢাকা বোরখা পরে পাসপোর্টের ছবি তুলতে পারবেন? সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল দেখা যায় এমন ভাবেই ছবি তুলতে হবে।
এখন যেমন বিভিন্ন পীরেরা তাদের মুরিদদের বিভিন্ন ভুয়া কথা বলে বিশ্বাস করায়, তেমনি হাদিস সংগ্রহকারীরাও তাই করেছেন। কোরানে নারীকে শালীন পোশাক পরতে বলা হয়েছে। চোখমুখ ঢেকে বোরখা পরতে বলা হয়নি। এগুলো পরবর্তী মুসলিম শাসকদের বেধে দেয়া নিয়ম। সৌদি আরবসহ কিছু মুসলিম দেশে নারীরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে বের হতে পারে না। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কোরানের নয়। এসব এসেছে পরবর্তী মুসলিম শাসকদের কাছ হেকে। ইসলাম ধর্মকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আরো অনেক আছে।
৫টি ছবি দিলাম। একটিতে মুখমণ্ডল দেখা যায়, এটাই সঠিক হিজাব।
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯
কুমিল্লা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন