সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শেখ মুজিবের প্রশাসনে রাজাকারবৃন্দ

শেখ মুজিবের প্রশাসনে রাজাকারবৃন্দ

ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যে মামলার ট্রায়াল শুরু করেছিলেন সেই মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন করাচির 'ডন' পত্রিকার ঢাকার প্রতিনিধি মাহবুবুল আলম। শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হয়ে মাহবুবুল আলমকে প্রেস সেক্রেটারি নিযুক্ত করেন।
একাত্তর সালে ঢাকার এপিপি অফিসের জেনারেল ম্যানেজার আবুল হাশিম ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের জনসংযোগ অফিসার। সিএসপি রফিকুল্লাহ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারি।
কুখ্যাত খুনি জেনারেল টিক্কা খানের পিএস অনু ইসলাম চাকরি পান গণভবনে। মোনায়েম খানের এডিসি ব্রিগেডিয়ার মশরুলকে শেখ মুজিব নিজের এডিসি পদে নিয়োগ দেন।
পাকিস্তান আমলে তাজউদ্দিন আহমদের উপর নজরদারির জন্য একটি টিম ছিল '৩০৩' নামে। ওই ৩০৩ টিমের সদস্য সিএসপি মতিউল ইসলামকে বসানো হয়েছিল অর্থসচিব পদে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ধ্বংসলীলার সময়ে ঢাকা সিটির পুলিশের এসপি হিসেবে পাকিস্তান সরকারের চাকুরি করেছেন ই এ চৌধুরী। স্বাধীনতার পরে তিনি প্রমোশন পেয়ে ডিআইজি হন এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন।
আগরতলা মামলার মিথ্যা সাক্ষী তৈরী করেছিলেন পুলিশ অফিসার এ বি এস সফদর। স্বাধীনতার পরে তিনি কিছুদিন জেলে ছিলেন। বিশেষ তদবিরে মুক্তি পেয়ে তিনি হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর অনুসন্ধান কমিটির প্রধান (গোয়েন্দা প্রধান)।
লে কর্নেল এ কে এম রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সরবরাহ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কর্নেল রহমানের অবদান ছিল তিনি পাকিস্তান আর্মির সামরিক আদালত -- ১ এর বিচারক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাকার বাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন লে কর্নেল ফিরোজ সালাহউদ্দিন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি নিযুক্ত হলেন বঙ্গবন্ধুর সরকারের সামরিক সচিব পদে।
শেখ মুজিব সরকারের সেনাপুলিশের প্রধান হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন হাকিম। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি পাকিস্তান আর্মির ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্টের ট্রানজিট ক্যাপ্টেন হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অপারেশন পরিচালনা করেন। আখাউড়া, তেলিয়াপাড়া এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার অপারেশনে শহীদ হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান আর্মির গোলাবারুদ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পাকিস্তান আর্মির অর্ডিন্যান্স কোরের অফিসার লে. মোদাব্বের ও লে. ফরিদ স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগে উচ্চপদ লাভ করেন।
এয়ার কমোডর আমিনুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর ঢাকার প্রধান ছিলেন। স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিব সরকারের প্রশাসনে তিনি হলেন সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান।
প্রশ্ন হলো, স্বাধীন দেশে শেখ মুজিবের প্রশাসনে একাত্তরের পাকবন্ধুদের বড় বড় পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিকে রাজাকার পুনর্বাসন বলা যাবে কি না ?
( রেফারেন্স : 'মুজিবের রক্ত লাল', এম আর আখতার মুকুল। পৃষ্ঠা : ১২২-২৩)

১৮ ডিসেম্বর ২০১৯
কুমিল্লা ।


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর