বিড়াল
তখন ফ্লোরিডা শেল গ্যাস স্টেশনেই কাজ করতাম । কম বেশি অনেকেই জানেন, ফ্লোরিডা আমেরিকার কোস্টাল স্টেট । তিন দিকেই আটলান্টিক ও মেক্সিকো উপসাগর ঘিরে রেখেছে ফ্লোরিডাকে । অন্যদিকে জর্জিয়া ও অ্যালাবামা স্টেট । আবহাওয়া ঠিক বাংলাদেশের মতো । প্রচুর ঝড়বৃষ্টি, সাইক্লোন, টর্নেডো ফ্লোরিডায় হয় । কোনো টাইম টেবিল নেই ।
একদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো । আমি সিগারেট খেতে স্টোরের বাইরে এসেছিলাম। সিগারেট খেতে খেতে দেখলাম, একটি বিড়াল গারবেজের কাছে খুব জড়সড়ো হয়ে বসে আছে । যদিও আমেরিকার গ্যাস স্টেশনে শেড আছে । কেউ গাড়ির তেল নিতে চাইলে ভিজতে হবে না ।
আমার খুব মায়া হলো বিড়ালটার জন্য । যেন সে একটু আদর পেতে চায় । একটু আশ্রয় চায় যে কেউ তাকে এই দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায় একটু মায়া করুক ।
আমি কাছে গিয়ে বিড়ালটাকে ধরতেই সে চার পা দিয়ে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে ঝুলে রইলো । কিছুতেই আমি তাকে ছাড়াতে পারলাম না । চার পায়ের নখ দিয়ে জড়িয়ে ধরলে তা ছাড়ানো সম্ভব নয় । তাহলে শেলের ওয়ার্কিং গেঞ্জি খোলতে হবে । আমার কাছে মনে হলো সে একটু আদর চায় । আশ্রয় চায় । আমার বুকে মুখ ঘষতে লাগলো । আমি বুঝেছি সে আমাকে চুমু খাচ্ছে ।
মানুষ হিসেবে আমি খুবই আবেগপ্রবণ ।
এই বিড়ালকে বুকে নিয়েই আমি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে কাজ শেষ করলাম রাত ১০টায় । বিড়াল আর আমার বুক ছাড়ে না । সে বুকে ঝুলেই রইলো । আমার তখন একটা হোন্ডা সিভিক (Honda Civic) সিডান গাড়ি ছিলো ।
কাজ শেষে আমি গাড়িতে গিয়ে উঠলাম । বিড়াল কিন্তু আমার বুকে চার পা দিয়ে জড়িয়ে ধরেই আছে । আমি যখন গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসি তখনো সে আমার বুকে ।
তখন আমার একজন বান্ধবী ছিলো কুমিল্লা হাউজিং স্টেটে । নাম ইভা । বাসায় এসে তাকে ফোনে বললাম । সে বললো , আদর করো । বিড়াল আদর পেলে খুব খুশি হয় । বাসায় এসেও বিড়াল আমার বুক ছাড়ে না । ফ্রিজ থেকে বের করে একটা প্লেটে দুধ আর সিরিয়াল দিয়ে অনেক কষ্টে তাকে বুক থেকে নামিয়ে খেতে দিলাম । সে খুব আরাম করে খেয়েই আবার আমার বুক চেপে ধরলো । তাকে বুকে নিয়েই আমি রাতের খাবার খেলাম ।
শুতে গিয়ে অনেক কষ্টে তাকে বুক থেকে নামালাম । আমার বালিশের পাশে তাকে শুতে দিলাম ।
সকালে উঠেই আবার আমার গেঞ্জির বুকে জড়িয়ে ধরলো । এভাবে দুই দিন তাকে নিয়ে আমার কাজে যাওয়া আর আসা ।
তিন দিন পর এপার্টমেন্ট অফিস থেকে ফোন এলো ।
ক্যারিম, তুমি কি একটু অফিসে আসবে ? তোমার সঙ্গে কথা আছে । আমি কাজে যাওয়ার আগেই এপার্টমেন্ট অফিসে গেলাম । কমপ্লেক্সের ভেতরেই অফিস। ইতিমধ্যে বিড়াল আমার অনুগত হয়ে গেলো । তাকে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরিয়ে আমি এপার্টমেন্ট অফিসে গেলাম ।
আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি এপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়ার সময় তোমার কোনো পেটস ( Pets) নেই বলে সই করেছো । অর্থাৎ কুকুর , বিড়াল কিছু নেই । এখন আমরা জানতে পেরেছি তোমার একটি বিড়াল আছে । আমি ঘটনার সত্য বর্ননা দিলাম । বিড়াল কিভাবে এসেছে ।
আমাকে জুলিয়া, এপার্টমেন্ট এমপ্লয়ি জানালো, তুমি যদি এই বিড়াল তোমার এপার্টমেন্টে রাখতে চাও তবে প্রতিমাসে ১০০ ডলার বেশি দিতে হবে । পেটস রেন্ট হিসেবে । আর এই বিড়াল যদি এপার্টমেন্ট বা প্রতিবেশি কোনো এপার্টমেন্টের ক্ষতি করে তার ক্ষতিপুরন তোমাকে দিতে হবে । এবং তোমার বাসার ইলেক্ট্রিক লাইন, ফোন লাইনসহ কোনো কিছু ক্ষতি হয় তা তুমি নিজ দায়িত্বে সমাধান করবে । এপার্টমেন্ট কতৃপক্ষ তা বিনা খরচে করবে না । এটা আমেরিকার আইন । পেটস রাখতে হলে তোমাকে এই আইন মানতে হবে ।
আমি জানতে চাইলাম, আমি বিড়ালটাকে না রাখলে কি করতে হবে ?
জুলিয়া বলেছিলো, তুমি এনিমাল হাসবেনড্রি ডিপার্টমেন্টে ফোন করলে ওরা এসে নিয়ে যাবে ।
আমি ভারাক্রান্ত মনে এই সিদ্ধান্ত মেনে পরদিন কাজে গিয়ে এনিমাল হাসবেনড্রি ডিপার্টমেন্টে ফোন করলে ৫ মিনিটেই ওরা এসে হাজির ।
বিড়ালটাকে যখন নিয়ে যাচ্ছে, তখন সে আমার বুকে এমনভাবে চার পায়ের নখ দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো যে কিছুতেই ওকে ছাড়ানো যাচ্ছিলো না ।
পরে আমি ওয়ার্কিং গেঞ্জি খোলে বিড়ালটাকে ওদের হাতে তুলে দিই । বিড়ালটা তখন এমনভাবে আমার দিকে তাঁকিয়েছিলো যে ওর চোখে আমি পানি দেখেছি। আমাদের কোরবানি ঈদের গরুর চোখে যেমন অনেক সময় পানি দেখি ।
বিড়ালটার জন্য আজ খুব মায়া লাগছে । অল্প কয়টা টাকার জন্য আমি বিড়ালটার মনে দুঃখ দিয়েছি । ছি :।
আমিতো কোনো কালেই টাকার লোভী ছিলাম না।
৩০ নভেম্বর, ২০১৯
কুমিল্লা ।
তখন ফ্লোরিডা শেল গ্যাস স্টেশনেই কাজ করতাম । কম বেশি অনেকেই জানেন, ফ্লোরিডা আমেরিকার কোস্টাল স্টেট । তিন দিকেই আটলান্টিক ও মেক্সিকো উপসাগর ঘিরে রেখেছে ফ্লোরিডাকে । অন্যদিকে জর্জিয়া ও অ্যালাবামা স্টেট । আবহাওয়া ঠিক বাংলাদেশের মতো । প্রচুর ঝড়বৃষ্টি, সাইক্লোন, টর্নেডো ফ্লোরিডায় হয় । কোনো টাইম টেবিল নেই ।
একদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো । আমি সিগারেট খেতে স্টোরের বাইরে এসেছিলাম। সিগারেট খেতে খেতে দেখলাম, একটি বিড়াল গারবেজের কাছে খুব জড়সড়ো হয়ে বসে আছে । যদিও আমেরিকার গ্যাস স্টেশনে শেড আছে । কেউ গাড়ির তেল নিতে চাইলে ভিজতে হবে না ।
আমার খুব মায়া হলো বিড়ালটার জন্য । যেন সে একটু আদর পেতে চায় । একটু আশ্রয় চায় যে কেউ তাকে এই দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায় একটু মায়া করুক ।
আমি কাছে গিয়ে বিড়ালটাকে ধরতেই সে চার পা দিয়ে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে ঝুলে রইলো । কিছুতেই আমি তাকে ছাড়াতে পারলাম না । চার পায়ের নখ দিয়ে জড়িয়ে ধরলে তা ছাড়ানো সম্ভব নয় । তাহলে শেলের ওয়ার্কিং গেঞ্জি খোলতে হবে । আমার কাছে মনে হলো সে একটু আদর চায় । আশ্রয় চায় । আমার বুকে মুখ ঘষতে লাগলো । আমি বুঝেছি সে আমাকে চুমু খাচ্ছে ।
মানুষ হিসেবে আমি খুবই আবেগপ্রবণ ।
এই বিড়ালকে বুকে নিয়েই আমি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে কাজ শেষ করলাম রাত ১০টায় । বিড়াল আর আমার বুক ছাড়ে না । সে বুকে ঝুলেই রইলো । আমার তখন একটা হোন্ডা সিভিক (Honda Civic) সিডান গাড়ি ছিলো ।
কাজ শেষে আমি গাড়িতে গিয়ে উঠলাম । বিড়াল কিন্তু আমার বুকে চার পা দিয়ে জড়িয়ে ধরেই আছে । আমি যখন গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসি তখনো সে আমার বুকে ।
তখন আমার একজন বান্ধবী ছিলো কুমিল্লা হাউজিং স্টেটে । নাম ইভা । বাসায় এসে তাকে ফোনে বললাম । সে বললো , আদর করো । বিড়াল আদর পেলে খুব খুশি হয় । বাসায় এসেও বিড়াল আমার বুক ছাড়ে না । ফ্রিজ থেকে বের করে একটা প্লেটে দুধ আর সিরিয়াল দিয়ে অনেক কষ্টে তাকে বুক থেকে নামিয়ে খেতে দিলাম । সে খুব আরাম করে খেয়েই আবার আমার বুক চেপে ধরলো । তাকে বুকে নিয়েই আমি রাতের খাবার খেলাম ।
শুতে গিয়ে অনেক কষ্টে তাকে বুক থেকে নামালাম । আমার বালিশের পাশে তাকে শুতে দিলাম ।
সকালে উঠেই আবার আমার গেঞ্জির বুকে জড়িয়ে ধরলো । এভাবে দুই দিন তাকে নিয়ে আমার কাজে যাওয়া আর আসা ।
তিন দিন পর এপার্টমেন্ট অফিস থেকে ফোন এলো ।
ক্যারিম, তুমি কি একটু অফিসে আসবে ? তোমার সঙ্গে কথা আছে । আমি কাজে যাওয়ার আগেই এপার্টমেন্ট অফিসে গেলাম । কমপ্লেক্সের ভেতরেই অফিস। ইতিমধ্যে বিড়াল আমার অনুগত হয়ে গেলো । তাকে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরিয়ে আমি এপার্টমেন্ট অফিসে গেলাম ।
আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি এপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়ার সময় তোমার কোনো পেটস ( Pets) নেই বলে সই করেছো । অর্থাৎ কুকুর , বিড়াল কিছু নেই । এখন আমরা জানতে পেরেছি তোমার একটি বিড়াল আছে । আমি ঘটনার সত্য বর্ননা দিলাম । বিড়াল কিভাবে এসেছে ।
আমাকে জুলিয়া, এপার্টমেন্ট এমপ্লয়ি জানালো, তুমি যদি এই বিড়াল তোমার এপার্টমেন্টে রাখতে চাও তবে প্রতিমাসে ১০০ ডলার বেশি দিতে হবে । পেটস রেন্ট হিসেবে । আর এই বিড়াল যদি এপার্টমেন্ট বা প্রতিবেশি কোনো এপার্টমেন্টের ক্ষতি করে তার ক্ষতিপুরন তোমাকে দিতে হবে । এবং তোমার বাসার ইলেক্ট্রিক লাইন, ফোন লাইনসহ কোনো কিছু ক্ষতি হয় তা তুমি নিজ দায়িত্বে সমাধান করবে । এপার্টমেন্ট কতৃপক্ষ তা বিনা খরচে করবে না । এটা আমেরিকার আইন । পেটস রাখতে হলে তোমাকে এই আইন মানতে হবে ।
আমি জানতে চাইলাম, আমি বিড়ালটাকে না রাখলে কি করতে হবে ?
জুলিয়া বলেছিলো, তুমি এনিমাল হাসবেনড্রি ডিপার্টমেন্টে ফোন করলে ওরা এসে নিয়ে যাবে ।
আমি ভারাক্রান্ত মনে এই সিদ্ধান্ত মেনে পরদিন কাজে গিয়ে এনিমাল হাসবেনড্রি ডিপার্টমেন্টে ফোন করলে ৫ মিনিটেই ওরা এসে হাজির ।
বিড়ালটাকে যখন নিয়ে যাচ্ছে, তখন সে আমার বুকে এমনভাবে চার পায়ের নখ দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো যে কিছুতেই ওকে ছাড়ানো যাচ্ছিলো না ।
পরে আমি ওয়ার্কিং গেঞ্জি খোলে বিড়ালটাকে ওদের হাতে তুলে দিই । বিড়ালটা তখন এমনভাবে আমার দিকে তাঁকিয়েছিলো যে ওর চোখে আমি পানি দেখেছি। আমাদের কোরবানি ঈদের গরুর চোখে যেমন অনেক সময় পানি দেখি ।
বিড়ালটার জন্য আজ খুব মায়া লাগছে । অল্প কয়টা টাকার জন্য আমি বিড়ালটার মনে দুঃখ দিয়েছি । ছি :।
আমিতো কোনো কালেই টাকার লোভী ছিলাম না।
৩০ নভেম্বর, ২০১৯
কুমিল্লা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন