সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

TIME

TIME










বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন একবার বেগম জিয়াকে নিয়ে এক্সক্লুসিভ কভার স্টোরি করেছিলো ৷ টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বে খুব প্রভাবশালী সাপ্তাহিক । টাইম আমেরিকার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। ১৯২৩ সালের ৩ মার্চ টাইমের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। আজ থেকে ৯৬ বছর আগে। Newsweek (নিউজউইক)ও ছিলো। বেশ কয়েক বছর হয় নিউজউইক তাদের পৃন্ট এডিশন বন্ধ করে দেয়। এখন নিউজউইক শুধু অনলাইনে পড়া যায়।
টাইম ম্যাগাজিন পৃথিবীর সব দেশে পাওয়া যায়। আমাদের ঢাকায়ও । সোনারগাঁও হোটেল, শেরাটন হোটেল যা এখন রূপসী বাংলা, রূপসী বাংলার উল্টো দিকে সাকুরা বারের মার্কেটের নিচেও পাওয়া যায় । এক কপি টাইমের দাম ৪২০ টাকা ৷
টাইম একযোগে পৃথিবীর অনেক দেশে ছাপা হয়। আটলান্টিক এডিশন বা ইউরোপীয় সংস্করণ ছাপা হয় লন্ডনে। এশিয়া এডিশন ছাপা হয় হংকং । সাউথ প্যাসিফিক এডিশন ছাপা হয় সিডনিতে। আমেরিকান সংস্করণ ছাপা হয় নিউ ইয়র্কে। সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন হিসেবে টাইমের সার্কুলেশন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। টাইম এর পৃন্ট এডিশন ২৬ মিলিয়ন কপি। ২ কোটি ৬০ লাখ কপি টাইম ছাপা হয় সপ্তাহে!
অনেক দেশে ইংরেজির পাশাপাশি ওই দেশের ভাষায়ও প্রকাশিত হয়৷ আমি জাপানে জাপানি ভাষায় টাইম দেখেছি।
ইউরোপ -আমেরিকায় আমি ১৫ বছর টাইম ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রাইবার ( গ্রাহক) ছিলাম । প্রতি সপ্তাহে বাসার লেটার বক্সে টাইম আসতো । টাইমের গ্রাহকদের কাছে যে কপি আসতো তাতে আলাদা এড্রেস লেবেলে গ্রাহকের নাম ঠিকানা লেখা থাকে না । টাইমের কভার পাতার ( যেমন ছবিতে দেয়া এই পাতাটি) ডান দিকে নিচে গ্রাহকের নাম ঠিকানা লেখা থাকে । এটা টাইম ছাপার সময়ই প্রথম পাতায় গ্রাহকের ঠিকানা ছেপে দেয় । দেখতে বেশ ভালো লাগে । স্বচ্ছ পলিথিন পেপারে প্যাকেট করা থাকে । এটাকে ভাজ করা বা ফোল্ড করা হয় না । টাইমের লাখ লাখ গ্রাহক আছে পৃথিবীতে ।
টাইমের হেড অফিস নিউ ইয়র্কের সিক্সথ এনিনিউতে । আকাশ ছোঁয়া ৪৮তলা বিল্ডিংটি টাইমস স্কোয়ার আর রকফেলার সেন্টারের মাঝে অবস্থিত । বিল্ডিংয়ে বড় করে লেখা...
Time and Life Building .ওই রাস্তায় আমি কতো হেঁটেছি!
আমি যখন আমেরিকায় ছিলাম তখন প্রতি কপি টাইম নিউজ স্ট্যান্ড থেকে কিনলে দাম ছিলো ৫ ডলার । গ্রাহক হলে দাম দুই ডলারেরও কম পরে । টাইমের উপরে ডান দিকের কোণায় দাম লেখা থাকে । টাইমের লাল বর্ডার ট্রেড মার্ক । এ রকম চারদিকে লাল বর্ডার দিয়ে কেউ আর ম্যাগাজিন বের করতে পারবে না । টাইমের অনেকগুলো পাবলিকেশন আছে । তার মধ্যে People অন্যতম । আমি পিপলেরও গ্রাহক ছিলাম ।
টাইমের গ্রাহক হওয়া খুব সহজ । প্রতিটি ম্যাগাজিনের ভেতর একটি পোস্ট কার্ড থাকে । তাতে গ্রাহক হবার সংক্ষিপ্ত নিয়মাবলি থাকে ।
65% Discount for Subscribers .
6 months
1 Year
3 Years
4 Your Full Address
এই । শুধু টিক মার্ক দিয়ে নিজের ঠিকানাটা লিখে দিলেই হয় । আর কিছুই করতে হয় না ।
আর উলটো পাতায় লেখা থাকে টাইমের ঠিকানা । ডান দিকে কোণায় পোস্টাল টিকেটের ঘরে লেখা থাকে
No postage Necessary
If Mailed in The US
অর্থাৎ গ্রাহকের পোস্টাল টিকেটও লাগাতে হবে না । উল্লেখ্য, আমেরিকায় পোস্টাল সার্ভিস খুব গুরুত্বপূর্ন । বড় দেশ। রাস্তার পাশে একটু পর পর পোস্টাল/ লেটার বক্স । ওই কার্ডটাতে ৬ মাস, ১ বছর বা তিন বছর টিক মার্ক দিয়ে একটা পোস্টাল বক্সে ফেলে দিলেই পরের সপ্তাহে বাসার ঠিকানায় টাইম আসবে ।
আমেরিকার ঠিকানা খুব সহজ। নিউ ইয়র্কে আমার ছিলো...
Karim Chowdhury
444 3rd Avenue
Apt# 9
NY 10016 ।

আর আমার ফ্লোরিডার ঠিকানা ছিলো...
Karim Chowdhury
5466 First Avenue
Fort Myers
FL 33907 ।

সঙ্গে খুব সুন্দর ইংরেজি ভাষায় একটা চিঠি আসবে ।
যাতে লেখা থাকে,
টাইম পরিবারে জয়েন করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ । শিক্ষিত, জ্ঞানী, সৎ আর স্মার্ট লোকেরাই টাইম পড়ে । তুমিও তাদের একজন ।( এই কথা শুধু আমাকেই লিখে না । সব গ্রাহককেই লিখে ।) ৪ সপ্তাহ আমরা তোমাকে টাইম ম্যাগাজিন পাঠাবো । সবগুলো সংখ্যা পড়ার পর যদি তুমি মনে করো টাইমের লেখা ভালো তবে এই চিঠির সঙ্গে দেয়া কার্ডটিতে Satisfied ঘরে টিক মার্ক দিয়ে পোস্ট করে দিও । তখন আমরা তোমাকে ইনভয়েস পাঠাবো । আর যদি টাইম তোমার কাছে ভালো না লাগে তবে কোনো রেসপন্স করতে হবে না । আমরা তোমাকে টাইম পাঠানো বন্ধ করে দেবো । এই ৪ সংখ্যার জন্য তোমাকে কোনো টাকা দিতে হবে না ।
চিঠির শেষ লাইনটি এতো সুন্দর যে, আমি টাইমের চিঠি পড়ে মুগ্ধ না হয়ে পারিনি । চিঠির শেষ লাইনে টাইম ম্যাগাজিনের অফিস থেকে লেখা হয়...
Please Help Us To Help You.
মানে, তোমাকে সাহায্য করার জন্য তুমি আমাদের সাহায্য করো । বাহ ! কি সুন্দর কথা ।
ও বলতে ভুলে গিয়েছিলাম । ওই প্রথম সংখ্যা পত্রিকা ও চিঠির সঙ্গে আমার জন্য প্যাকেটে একটা গিফটও ছিলো । একটা ঘড়ি । যাতে পত্রিকায় যেমনভাবে টাইম লেখা হয় ঠিক সেভাবে ছোট করে Time লেখা । ঘড়ির নামটা যেখানে লেখা থাকে।
আমি যথারীতি Satisfied টিক মার্ক দিয়ে কার্ডটা পোস্ট করে দিলাম ।
৪ সপ্তাহ পর আমার ঠিকানায় একটা ইনভয়েস আসে । মানে টাকা দেয়ার রশিদ । সঙ্গে একটা সুন্দর চিঠি । ১ বছরের জন্য তখন প্রাইস ছিলো মাত্র ৪৬ ডলার । পার্সোনাল চেকে পে করতে হবে। তারা ক্যাশ টাকা নেয় না। চিঠিতে লেখা আছে, তুমি চাইলে তিন বারে টাকা দিতে পারো ভেঙে ভেঙে ।
আমি টাইম ম্যাগাজিন খুব পছন্দ করি । প্রতিটি সংখ্যাই সংগ্রহে রাখার মতো । টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবছর সারা পৃথিবী থেকে বিশেষ অবদানের জন্য একজন মানুষকে নির্বাচন করে। একাদিক ব্যক্তিও নির্বাচিত হতে পারেন। প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ সংখ্যা ওই নির্বাচিত ব্যক্তিকে নিয়ে কভার স্টোরি করে। TIME লেখাটার উপরে ক্যাপিটাল লেটারে লেখা থাকে PERSON OF THE YEAR.
প্রচ্ছদ হিসেবে ওই ব্যক্তির ছবি থাকে। যেমন এখানে ওবামা,একমাত্র আইনস্টাইন একবার PERSON OF THE CENTURY হয়েছিলেন। পাকিস্তানি মেয়ে মালালা ইউসুফ জাইও PERSON OF THE YEAR হয়েছিলেন। টাইম ম্যাগাজিন Commemorative Issueও ছাপে। মৃত অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিকে স্মরন করে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। প্রিন্সেস ডায়ানা, রোনান্ড রেগানকে নিয়ে টাইম Commemorative Issue বা স্মরন সংখ্যা ছেপেছিলো।
টাইম ম্যাগাজিন ইহুদী মালিক নিয়ন্ত্রিত !
যদিও আমার কাছে এটা মেটার করে না। আইনস্টাইনও ইহুদী ছিলেন। কার্ল মার্ক্সও ইহুদী ছিলেন। ফেসবুকের আবিস্কারক ও মালিক মার্ক জাকারবার্গও একজন ইহুদি। আমেরিকার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী যিনি ৮০ টিরও বেশি ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন সেই নোয়াম চমস্কিও ইহুদি। তারাও এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে। বেশ ধার্মিক । অনেক ইহুদীর সঙ্গে আমি নিউ ইয়র্ক কথা বলেছি। নিউ ইয়র্কে প্রচুর ইহুদী আছে।
এরা মুসা নবীর অনুসারী। তাদের ধর্ম গ্রন্থ আমরা যাকে 'তাওরাত' বলি যার ইংরেজি 'তোরাহ' ( Torah)। এটিও আসমানি কিতাব।
(TIME ম্যাগাজিন ও নিউজউইকের কয়েকটা ছবি দিলাম । আমি জীবনে অনেক পত্রিকা পড়েছি। যে দেশেই গিয়েছি সে দেশের প্রধান পত্রিকা খোঁজে আগেই পড়েছি। আমি ছিলাম সত্যিকার অর্থেই পত্রিকার পোকা। গল্প, উপন্যাস প্রবন্ধ, ফিচার, ভ্রমণ কাহিনী, আত্মজীবনী তো আছেই।)
০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯
কুমিল্লা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর