সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লুসিয়া

লুসিয়া
----------
অস্টৃয়ায় প্রথম কয়েকমাস মনে রাখার মতো এক গ্রামে ছিলাম। ভিয়েনা থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে। জায়গাটির নাম থেনেবার্গ ( Theneberg)। শহরের চেয়ে ইউরোপের গ্রামগুলো বেশি সুন্দর। পরিচ্ছন্ন। মানুষগুলোও আন্তরিক। কি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য!! অনেকেই বলেন, আমাদের দেশের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইউরোপ-আমেরিকায় নেই। এই ধারণা একেবারেই ভুল। শুধু একটি দেশের রাজধানীতে গিয়ে কয়েকদিন থেকে এলেই ওই দেশটি সম্পর্কে জানা যায় না। আমাদের দেশের চেয়েও অনেকগুন বেশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ইউরোপ -আমেরিকা। দক্ষিন আমেরিকা আরো সুন্দর।
কোনো একজন লিখেছিলেন....
" এমন দেশটি কোথাও খোঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি। "
অন্য দেশ সুন্দর বা অন্য দেশের অনেক কিছু ভালো, তা বলার অর্থ এই নয় যে নিজের দেশকে ছোট করা। বরং তা উদারতা। হীনমন্যতা নয় মোটেও।
এই নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেছিলেন, এটা ওই কবির দেখার সীমাবদ্ধতা। তিনি বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশ দেখেন নি।
ইউরোপের ওই বাসায় আমাদের ঠিক পাশের রুমে এক চেক ফ্যামিলি(চেকোস্লোভাকিয়ান) থাকতো । ছেলেটি আমার বয়সি । নাম জর্জ। তার স্ত্রীর নাম লুসিয়া লামোশ। তাদের একমাত্র তিন বছরের মেয়ের নাম ডরিস । জর্জ মিউজিশিয়ান । দারুণ কি বোর্ড বাজায়। এখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে। চেকোস্লোভাকিয়ায় "ভেলভেট রেভুলিউশনের" পর অনেক চেক সিটিজেন পশ্চিম ইউরোপে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
আমার সঙ্গে এই পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেলো। লুসিয়া দারুণ সুন্দরী ছিলো। লম্বা প্রায় ৬ ফিট। মেধহীন দারুণ স্লিম ফিগার।
স্কার্ট পড়লে তার পা'গুলো বাকল ছাড়ানো কলা গাছের মতো মসৃণ দেখাতো। লম্বা কালো চুল । লুসিয়া ইউরোপীয়ান হলেও স্বর্নকেশি ছিলো না। পূর্ব ইউরোপের মেয়েরা পশ্চিম ইউরোপের মেয়েদের চেয়ে সুন্দরী। সব পুরুষের কাছেই মেয়ে মানুষ ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক । প্রকৃতি সেভাবেই সৃস্টি হয়েছে।
ইউরোপ - আমেরিকায় একান্ত আপনজন ছাড়া বাচ্চাদের কোলে নিয়ে চুমু খাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এটাকে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট হিসেবে টৃট করা হয়। ডরিসের সঙ্গে আমার খুব ভাব হয়ে গেলো। আড়াই, তিন বছরের ডরিস আমাকে ছাড়া যেন কিছুই বুঝে না ! কখনো কখনো ডরিস অবুঝের মতো আমাকে পাপা বলতো। লুসিয়া শোনে লাজুক ভঙ্গীতে মুচকি হাসতো। এসব দুষ্টুমিতে জর্জ কিছুই মনে করতো না। একদিন জর্জ আর লুসিয়াকে বুঝিয়ে আমাদের কালচার বললাম যে,আমরা ছোট বাচ্চাদের বেশি আদর করলে কোলে নিয়ে চুমু খাই। ডরিসকে আমি খুব আদর করি। কিন্ত তোমাদের কালচারে তাকে আমি কোলে নিয়ে চুমু খেতে পারি না। ওরা ডরিসকে কোলে নিয়ে আদর করার অনুমতি আমাকে দিয়েছিলো।
আমি জার্মান ভাষার 'জ'ও তখন জানিনা।
চেকোস্লোভাকিয়ার ( এখন চেক রিপাবলিক-রাজধানী প্রাগ -Prague ) বেশির ভাগ মানুষ জার্মান ভাষা জানে । জার্মানির সঙ্গে রয়েছে চেক রিপাবলিকের দীর্ঘ স্থল সীমান্ত - চেকের তুলনায় জার্মানি লক্ষ কোটিগুন বেশি উন্নত দেশ । তাই নিজেদের প্রয়োজনে চেকরা জার্মান ভাষা শিখে নিয়েছে ।
আমি লুসিয়াকে অনুরোধ করলাম, আমাকে বেসিক জার্মান শেখাতে । লুসিয়া খুশি মনে রাজি হলো । প্রতিদিন সন্ধ্যায় এক ঘন্টা তার রুমে। ওই সময়টা সে ফ্রি । জর্জ ডরিসকে নিয়ে মিউজিক স্কুলে যায় । আমার জার্মান শেখার প্রথম টিচার চেকোস্লোভাকিয়ান সুন্দরী তরুণী লুসিয়া লামোশ । আমিও তখন মিষ্টি তরুণ ছাত্র।
আমরা টেবিলে সামনাসামনি না বসে পাশাপাশি বসতাম । লুসিয়া আমার ডান হাত মোট করে ধরে লেখা শেখাতো ।
শব্দ শেষ করে আমাকে বাক্য ধরালো লুসিয়া। একদিনের কথা খুব মনে পড়ছে । লুসিয়া আমাকে বাক্য শেখাচ্ছে "ইখ লিবে ডিখ।" ( Ich Liebe Dich) । আমি কিছুতেই সঠিক উচ্চারণ করতে পারছি না । "ইখ" উচ্চারণ করতে গলা দিয়ে বাতাস বেরুতে হবে। "ডিখ" উচ্চারণ করতেও। আমি বলি ''ইক লিবে ডিক ''।
লুসিয়া আমার মাথায় হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে আস্তে ভেঙে ভেঙে বলতো "ইখ- লিবে- ডিখ" । এবার আমি কিছুটা পারলেও না পারার ভাণ করতাম । লুসিয়া আবার বলতো ।
এক সময় আমি হঠাৎ লুসিয়ার ঘাড়ে ধরে আমার দিকে তার মুখ ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলাম,জিখা ? 'জিখা' জার্মান ভাষা যার মানে শিউর বা তুমি কী সত্য বলছো ?
লুসিয়া থতমত খেয়ে কিছু সময় নিয়ে আমার মাথার চুল টেনে বললো, "ভাইস দু নিখত্"?( Wies du nicht)?
" ইখ লিবে ডিখ " মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি । " ভাইস দু নিখত্ " মানে তুমি জানো না ?
এই ভ্যালিতেই আমরা থাকতাম । বাসার পাশেই ছোট পাহাড়ের উপর বসে আমরা কতো গল্প করতাম! এই ছবিটা লুসিয়া তুলেছিলো এক বিকেলে ।
এক জীবনে মানুষ কতো কি করে!!
কোথায় যেন আছে লুসিয়া এখন? বেঁচে থাকলে ইউরোপের পছন্দ মতো কোনো দেশে মধ্যবয়সী এক মহিলা।
©করিম চৌধুরী
১৮ সেপ্টেম্বর,২০১৫
কুমিল্লা ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর