ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ -১৯৭১
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের শেষ মুহুর্তে পাকিস্তান ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে যে
‘ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।’
পাঁচটা ৯ মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারত ভূখণ্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে। ৩রা ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাদানকালে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানের উল্লিখিত বিমান-আক্রমণ শুরু হয়। এই খবর পেয়ে তিনি দৌঁড়ে গিয়ে বিমানে উঠে দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মধ্যরাতের কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, এতদিন ধরে ''বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিলো তা এখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।”
ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ওই রাতে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে। ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে। যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড়ো করেছিলো। যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যৌথবাহিনীর সহায়তায় এগিয়ে আসে।
আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। এর আগেই বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীকে পরাস্ত করে ঢাকার সকল সামরিক বিমান ঘাঁটির রানওয়ে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণার পর ভারতীয় বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের সুযোগ পায়। নইলে প্রটোকল অনুযায়ী ভারতীয় বাহিনী এদেশে আসতে পারতো না। এটা ছিলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দূর থেকেই তারা সাহায্য করতো। ভারত -পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার ১৩ দিনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়!
আর সেজন্যই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ না করে ইন্ডিয়ান ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ লে.জেনারেল জগজিৎ শিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কারন শেষ মুহুর্তে ওই যুদ্ধ ছিলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকেও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখা হয়নি। তাহলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো লাফালাফি করার কি আছে ?
©Karim Chowdhury
24 May, 2020
Cumilla
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের শেষ মুহুর্তে পাকিস্তান ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে যে
‘ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।’
পাঁচটা ৯ মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারত ভূখণ্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে। ৩রা ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাদানকালে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানের উল্লিখিত বিমান-আক্রমণ শুরু হয়। এই খবর পেয়ে তিনি দৌঁড়ে গিয়ে বিমানে উঠে দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মধ্যরাতের কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, এতদিন ধরে ''বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিলো তা এখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।”
ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ওই রাতে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে। ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে। যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড়ো করেছিলো। যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যৌথবাহিনীর সহায়তায় এগিয়ে আসে।
আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। এর আগেই বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীকে পরাস্ত করে ঢাকার সকল সামরিক বিমান ঘাঁটির রানওয়ে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণার পর ভারতীয় বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের সুযোগ পায়। নইলে প্রটোকল অনুযায়ী ভারতীয় বাহিনী এদেশে আসতে পারতো না। এটা ছিলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দূর থেকেই তারা সাহায্য করতো। ভারত -পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার ১৩ দিনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়!
আর সেজন্যই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ না করে ইন্ডিয়ান ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ লে.জেনারেল জগজিৎ শিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কারন শেষ মুহুর্তে ওই যুদ্ধ ছিলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকেও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখা হয়নি। তাহলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো লাফালাফি করার কি আছে ?
©Karim Chowdhury
24 May, 2020
Cumilla
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন