সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডাক্তারের হাতের লেখা

ডাক্তারের হাতের লেখা


ছাত্র জীবনে সব বিষয়ে আলোচনা হতো। পড়াশোনা,রাজনীতি,প্রেম করা আর আড্ডা মারাই ছিলো প্রধান কাজ।আড্ডায় কোন নির্দিষ্ট বিষয় ছিলো না।কেউ কোনো বিষয় নিয়ে কথা বললে সেটাই হতো আলোচনার বিষয়বস্তু।চার কাপ চা আর চারটা খালি কাপের অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেস্টুরেন্টের ক্যাশে বসা মালিক বা ম্যানেজারের মুখটা কালো হয়ে যেতো।তিনি ফ্যানের সুইচটা অফ করে দিতেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতেন।আমরা দুই তিন ঘন্টা বসবো আর একটু পর পর চার কাপ চা আর চারটা খালি কাপের অর্ডার দেবো।আমরা আটজন চা ভাগ করে খাবো৷ এতে তার পোষাবে না। তাই ফ্যান বন্ধ।
একদিন আড্ডায় বন্ধু হিরো বললো,আচ্ছা ডাক্তারদের হাতের লেখা এতো খারাপ কেনো?ফার্মেসির সেলস পার্সন ছাড়া কেউ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পড়তে পারে না। সাধারণত ভালো/ মেধাবি ছাত্ররাইতো ডাক্তারি পড়ে।মিন্টু বললো,বেশি লেখাপড়া করে এখন লেখাপড়ার প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছে ডাক্তারদের। তাই হাতের লেখার এই অবস্থা। শাহিন বললো, আরে না। ডাক্তাররা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। আগের ডাক্তাররাও "পেঁচাইয়া পোঁচাইয়া " লিখতো। এমন পেঁচিয়ে না লেখলে ডাক্তারি লেখা হয় না।
আমি বললাম,আমার ধারণা,হাজার হাজার মেডিসিনের নামের সঠিক বানান ডাক্তারদের পক্ষে মুখস্থ রাখা সম্ভব নয়। কয়েকদিন পর পর ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো নতুন নতুন ওষুধ বাজারে ছাড়ে। ৫/৬ হাজার ওষুধের সঠিক ইংরেজি বানান মুখস্থ রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷তাই ডাক্তাররা এমন ভাবে প্যাঁচ মেরে লিখে যাতে কেউ ভুল ধরতে না পারে। ফার্মেসির ফাইভ পাশ ছেলেটা অনুমান করে ঠিকই বুঝে ফেলে।
আমার দুই ভাগ্নির দুই মেয়েই ডাক্তার।নাজমার বড় মেয়ে শায়লা হক ইভা এমবিবিএস পাস করে বেড়িয়েছে অনেক আগেই।এফসিপিএস করছে। আর ঝর্নার বড় মেয়ে ফারহানা প্রমি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার।
আছেন অনেক ডাক্তার বন্ধু।ফেইসবুকেও আছেন বেশ কিছু ডাক্তার বন্ধু।সবার কাছে জানতে চাই, আপনাদের হাতের লেখা এমন বিশ্রি কেনো? কাইন্ডলি বলবেন?আমি এই খারাপ হাতের লেখার ব্যাখ্যা দাবি করছি ডাক্তার সমাজের কাছে।৩টা, ৫টা বা ৬টা ওষুধের নাম লিখবেন, ৫০০/১০০০/১৫০০ টাকা ভিজিট নেবেন।তাও আপনাদের লেখা পড়া যাবে না। কেনো?
কয়েকদিন আগে একটা পত্রিকায় পড়লাম, ডাক্তারদের অস্পষ্ট হাতের লেখার কারনে প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী মারা যায়।আমার বাসার পাশেই কুমিল্লার সবচেয়ে বড় মেডিসিন মার্কেট।বলতে গেলে সবাই আমার পরিচিত।আমি বিষয়টা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম।তারা বলেছেন,অনেক লেখা আমরাও বুঝি না।দুই একটা অক্ষর দেখে অনুমান করে ওষুধ দিয়ে দিই। আমি অবাক হয়ে বললাম,এটা কি ঠিক? মানুষের জীবন মরন যেখানে জড়িত!তারা আমাকে বললেন, আমি না দিলে সে অন্য ফার্মেসিতে যাবে তখন সেই ফার্মেসিওয়ালাও অনুমান করেই ওষুধ দিয়ে দেবে।মাঝখানে আমার সেল কমে যাবে।
গতবছর সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো,যেনো সব ডাক্তার ক্যাপিটাল লেটারে প্রেস ক্রিপশন লিখেন।কিন্তু দুঃখজনক সত্য কোনো ডাক্তারই সরকারি এই আদেশ মানেন নি৷
সরকারও কোনো ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি!!!
ডাক্তারদের হাতের লেখা নিয়ে উপরের গল্প ছাড়াও আরো গল্প আছে।একটা গল্প এমন...
অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ে একটা ওষুধের দোকানের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেন সে দোকানের ভীড় কমার জন্য অপেক্ষা করছে। দোকানের মালিক তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাঁকাচ্ছে আর ভাবছে,মেয়েটি কি এমন কিছু কিনতে এসেছে যা সবার সামনে বলতে লজ্জা পাচ্ছে?
সুন্দরী মেয়ের প্রতি সব পুরুষেরই আকর্ষণ থাকে। ফার্মেসির মালিকও চাইছে অন্য কাস্টমারগুলো চলে যাক।তাতে তার বিক্রি কমলে কমুক। অনেকক্ষন পর ফার্মেসিটা একটু ফাঁকা হলে মেয়েটি দোকানে ঢুকে মালিককে ঈশারায় কাছে ডেকে সলজ্জ ভঙ্গীতে এক টুকরো কাগজ এগিয়ে দিয়ে ফিস ফিস করে বললো, আংকেল,আমার না... আমার না... কি করে যে বলি...আমার না এক ডাক্তারের সঙ্গে বিয়ে পাকা হয়েছে।আজ ওর প্রথম চিঠি পেয়েছি।ডাক্তারের হাতের লেখাতো সাধারন মানুষ পড়তে পারেন না।আপনারাই ডাক্তারের লেখা পড়তে পারেন।তাই একটু পড়ে শোনাবেন?আমি না কিচ্ছু বুঝতে পারছি না ।
©Karim Chowdhury
18 May, 2020
Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর