স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন
স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপনের মধ্যে জীবনকে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখার চেষ্টা সব সময় করেছি।আমি অনেকগুলো দেশ দেখবো তা আমার স্বপ্নে ছিলো না।প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা বেতন পেতাম।সঞ্চয় করার চিন্তা ছিলো না কখনো।বিয়ে করিনি,বাবা,মা জীবিত নেই।পিছুটানও নেই অন্য কোনো।জাপানের কথা বাদ দিলেও আমি যখন ইউরোপে ছিলাম তখন আইন কানুন অনেক সহজ ছিলো।
যখন অস্টৃয়ায় ছিলাম তখন চার বছর বৈধভাবে ওদেশে থাকলে পাসপোর্ট দেয়া হতো।পাসপোর্ট নেয়ার জন্য অস্টৃয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে চিঠিও দেয়া হয়েছিলো।কিন্তু আমি দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী ছিলাম না।ইচ্ছা করলে ইউরোপের যে কোনো দেশে আমি স্থায়ীভাবে চিরকাল থেকে যেতে পারতাম।সেদিকে আমার কোনো মনযোগ ছিলো না।আমার তো নিজের দেশ আছেই। ওই সময় আমি অস্টৃয়ার পাসপোর্ট নিলে বাংলাদেশে আসতে আমার ভিসা নিতে হতো।আমার যুবক বয়সের মানসিকতায় তা আঘাত করে।যে দেশের আলো বাতাসে আমি বড় হয়েছি।যেখানে আমার জন্ম,বেড়ে উঠেছি সেই নিজ দেশে যেতে আমার পারমিশন নিয়ে যেতে হবে!
আমেরিকায়ও ছিলাম প্রায় নয় বছর।অনেক ফাঁকফোঁকর দিয়ে ওদেশেও স্থায়ী পারমিট নিয়ে থেকে যাওয়া যায়।অনেক বাংলাদেশিই সেই পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিলো।নিউ ইয়র্ক থাকতে সিরাজগঞ্জের বন্ধু বুলবুল আমার জন্য পারভীন নামের আমেরিকান পাসপোর্টধারী এক মেয়ের সঙ্গে বিয়েও ঠিক করেছিলো।ব্রুকলিনে থাকা খালাম্মার দুই সুন্দরী মেয়ে মুক্তা বা সুমন্তিকে চাইলেই বিয়ে করতে পারতাম।
ফ্লোরিডায়ও আমার কুমিল্লার এক বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্যামিলি তাদের মেয়ে আমার কাছে বিয়ে দিতে আগ্রহী ছিলেন।ওরা বিশেষ ধনী পরিবার।আমি তখন মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর । এই ঘটনা জেনে আমার বন্ধু ফ্লোরিডায় ইমতিয়াজ(এখনো আছে,ফেবুতে আমার বন্ধু তালিকায়ও আছে Imtiaz Ahmed)একবার আমাকে বলেছিলো,হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলো না।
আমি স্থায়ীভাবে বিদেশে থেকে যাবো এই চিন্তা কখনোই ছিলো না।দেশের জন্য মায়া হতো,পরান পুড়তো।মনে হতো কতো দূর পরে আছি।যদি থেকে যেতাম,তাহলে এতোদিনে আমেরিকায় আমার নিজস্ব একটা বাড়ি হতো,গোটা দু’এক গাড়ি থাকতো,(গাড়ি তখনো ছিলো আমার)মেম বউ থাকতো,কিংবা এক ফাঁকে দেশে এসে বিয়ে করে নিয়ে যেতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোনো রূপসীকে,আমার ছেলে মেয়েরা বাংলা না শিখে শুধু ইংরেজি বলতো!দু’তিন বছর পর পর দেশে ফিরতাম সুটকেস ভর্তি অল্পদামের ক্যামেরা,ঘড়ি, পারফিউম,গেঞ্জি,সোয়েটার নিয়ে। উদারভাবে সেগুলো বিলাতাম আত্মীয়- বন্ধুদের মধ্যে।আর নাক সিটকে বলতাম,এদেশ এতো নোংরা কেনো,ছি ছি !
জীবনের কোনো ব্যাপারেই কোনো গুরুত্ব দিইনি । টাকাপয়সা রোজগার,নিশ্চিন্ত জীবিকা,আরামের উপকরণ,ভালো ভালো খাদ্য পানীয় এসব কিছুর চেয়ে বেশি আনন্দ পাই দু’এক লাইন লিখে।তা যতো অকিঞ্চিৎকর হোক,আমার কাছে তার মুল্য অনেক।দু’চার লাইন লেখার সময় যে রোমাঞ্চ হয়, নারী সঙ্গের চেয়েও তা কম রোমহর্ষক নয়।
গত আট বছর ধরে যেভাবে আমি চাবির যত্ন করি, বাইরে বেরুলেই একটু পর পর প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখি চাবিটা আছে তো?না আবার কোথাও পরে গেলো। দু’বার চাবি হারিয়ে যে যন্ত্রণা আমি ভোগ করেছি তা শুধু আমি জানি।ডুপ্লিকেট কপি যেটা আছে সেটাও বাসায়।বাসায় একা থাকি বলে বের হলেই তালা মেরে বের হতে হয়।চাবি হারালে আর বাসায় ঢুকতে পারবো।হাতুড়ি,প্লায়ার্স এসব যোগাড় করে তালা ভেঙে ঢুকতে হবে।
মাঝে মাঝে ভাবি,যেভাবে চাবির যত্ন নিই,চাবিকে ভালোবাসি,তার যত্ন করি,একটু পর পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি; বিদেশে থাকতে-বেশি না,দু’তিন বছর যদি পকেটে হাত দিয়ে ডলারগুলো ঠিক আছে কিনা তা দেখতাম তাহলে সারাজীবন আর আমার টাকার অভাব হতো না ।
©Karim Chowdhury
18 May, 2020
Cumilla.
স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপনের মধ্যে জীবনকে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখার চেষ্টা সব সময় করেছি।আমি অনেকগুলো দেশ দেখবো তা আমার স্বপ্নে ছিলো না।প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা বেতন পেতাম।সঞ্চয় করার চিন্তা ছিলো না কখনো।বিয়ে করিনি,বাবা,মা জীবিত নেই।পিছুটানও নেই অন্য কোনো।জাপানের কথা বাদ দিলেও আমি যখন ইউরোপে ছিলাম তখন আইন কানুন অনেক সহজ ছিলো।
যখন অস্টৃয়ায় ছিলাম তখন চার বছর বৈধভাবে ওদেশে থাকলে পাসপোর্ট দেয়া হতো।পাসপোর্ট নেয়ার জন্য অস্টৃয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে চিঠিও দেয়া হয়েছিলো।কিন্তু আমি দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী ছিলাম না।ইচ্ছা করলে ইউরোপের যে কোনো দেশে আমি স্থায়ীভাবে চিরকাল থেকে যেতে পারতাম।সেদিকে আমার কোনো মনযোগ ছিলো না।আমার তো নিজের দেশ আছেই। ওই সময় আমি অস্টৃয়ার পাসপোর্ট নিলে বাংলাদেশে আসতে আমার ভিসা নিতে হতো।আমার যুবক বয়সের মানসিকতায় তা আঘাত করে।যে দেশের আলো বাতাসে আমি বড় হয়েছি।যেখানে আমার জন্ম,বেড়ে উঠেছি সেই নিজ দেশে যেতে আমার পারমিশন নিয়ে যেতে হবে!
আমেরিকায়ও ছিলাম প্রায় নয় বছর।অনেক ফাঁকফোঁকর দিয়ে ওদেশেও স্থায়ী পারমিট নিয়ে থেকে যাওয়া যায়।অনেক বাংলাদেশিই সেই পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিলো।নিউ ইয়র্ক থাকতে সিরাজগঞ্জের বন্ধু বুলবুল আমার জন্য পারভীন নামের আমেরিকান পাসপোর্টধারী এক মেয়ের সঙ্গে বিয়েও ঠিক করেছিলো।ব্রুকলিনে থাকা খালাম্মার দুই সুন্দরী মেয়ে মুক্তা বা সুমন্তিকে চাইলেই বিয়ে করতে পারতাম।
ফ্লোরিডায়ও আমার কুমিল্লার এক বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্যামিলি তাদের মেয়ে আমার কাছে বিয়ে দিতে আগ্রহী ছিলেন।ওরা বিশেষ ধনী পরিবার।আমি তখন মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর । এই ঘটনা জেনে আমার বন্ধু ফ্লোরিডায় ইমতিয়াজ(এখনো আছে,ফেবুতে আমার বন্ধু তালিকায়ও আছে Imtiaz Ahmed)একবার আমাকে বলেছিলো,হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলো না।
আমি স্থায়ীভাবে বিদেশে থেকে যাবো এই চিন্তা কখনোই ছিলো না।দেশের জন্য মায়া হতো,পরান পুড়তো।মনে হতো কতো দূর পরে আছি।যদি থেকে যেতাম,তাহলে এতোদিনে আমেরিকায় আমার নিজস্ব একটা বাড়ি হতো,গোটা দু’এক গাড়ি থাকতো,(গাড়ি তখনো ছিলো আমার)মেম বউ থাকতো,কিংবা এক ফাঁকে দেশে এসে বিয়ে করে নিয়ে যেতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোনো রূপসীকে,আমার ছেলে মেয়েরা বাংলা না শিখে শুধু ইংরেজি বলতো!দু’তিন বছর পর পর দেশে ফিরতাম সুটকেস ভর্তি অল্পদামের ক্যামেরা,ঘড়ি, পারফিউম,গেঞ্জি,সোয়েটার নিয়ে। উদারভাবে সেগুলো বিলাতাম আত্মীয়- বন্ধুদের মধ্যে।আর নাক সিটকে বলতাম,এদেশ এতো নোংরা কেনো,ছি ছি !
জীবনের কোনো ব্যাপারেই কোনো গুরুত্ব দিইনি । টাকাপয়সা রোজগার,নিশ্চিন্ত জীবিকা,আরামের উপকরণ,ভালো ভালো খাদ্য পানীয় এসব কিছুর চেয়ে বেশি আনন্দ পাই দু’এক লাইন লিখে।তা যতো অকিঞ্চিৎকর হোক,আমার কাছে তার মুল্য অনেক।দু’চার লাইন লেখার সময় যে রোমাঞ্চ হয়, নারী সঙ্গের চেয়েও তা কম রোমহর্ষক নয়।
গত আট বছর ধরে যেভাবে আমি চাবির যত্ন করি, বাইরে বেরুলেই একটু পর পর প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখি চাবিটা আছে তো?না আবার কোথাও পরে গেলো। দু’বার চাবি হারিয়ে যে যন্ত্রণা আমি ভোগ করেছি তা শুধু আমি জানি।ডুপ্লিকেট কপি যেটা আছে সেটাও বাসায়।বাসায় একা থাকি বলে বের হলেই তালা মেরে বের হতে হয়।চাবি হারালে আর বাসায় ঢুকতে পারবো।হাতুড়ি,প্লায়ার্স এসব যোগাড় করে তালা ভেঙে ঢুকতে হবে।
মাঝে মাঝে ভাবি,যেভাবে চাবির যত্ন নিই,চাবিকে ভালোবাসি,তার যত্ন করি,একটু পর পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি; বিদেশে থাকতে-বেশি না,দু’তিন বছর যদি পকেটে হাত দিয়ে ডলারগুলো ঠিক আছে কিনা তা দেখতাম তাহলে সারাজীবন আর আমার টাকার অভাব হতো না ।
©Karim Chowdhury
18 May, 2020
Cumilla.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন