সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এ যেন এক মহানায়কের গল্পঃ

এ যেন এক মহানায়কের গল্পঃ


জন্ম হয়েছিলো ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামের রাউজানে এক রাজকীয় পরিবারে। ছাত্রাবস্থায় তিনি চড়তেন ব্যক্তিগত গাড়িতে। লন্ডনে পড়ার সময় রাজকীয় দর্জি বাসায় এসে তার স্যুটের মাপ নিয়ে যেতো! এজন্য পরিশোধ করতে হতো অতিরিক্ত ২০ পাউন্ড। অথচ স্বাধীনতার পরে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তিনি বেছে নেন অতি সাধারণ জীবন। দেশ বিদেশে তার কোনো ফ্ল্যাট নেই। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বাড়ি দান করে দিয়েছেন ছোট বোনকে।
মরণোত্তর দেহ দান করেছেন। ফলে প্রয়োজন হবে না কোনো দাফনের কাপড় কিংবা কবরের জমি। তাঁর সম্পর্কে জাহানারা ইমাম তার একাত্তরের দিনগুলি বইয়ের ১৬১-১৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন -
জাফরুল্লাহ তখন লন্ডনে এফ আর সি এস পড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস শেষ করে। চার বছরের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে যখন পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, তখন জানতে পারলেন পাকিস্তানি বাহিনীর ২৫ মার্চের নির্মম হত্যাকান্ডের কথা। পরীক্ষা বাদ দিয়ে ভারতে এলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে তৈরি করলেন হাসপাতাল। যা আজকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামে পরিচিত।

পাকিস্তানি নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইড পার্কে নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। হয়েছিলেন রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক। তারপর ইংল্যান্ড থেকে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের প্রত্যয়ন নিয়ে নেন। ভারতের ট্র‍্যাভেল পারমিট নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে লন্ডনে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন- তিনি তার নিজের রক্ত দিয়ে জাতির ঋণ পরিশোধ করলেন।
৭১ সালের যুদ্ধটা ছিলো দৃশ্যমান অপশক্তির বিরুদ্ধে। অপশক্তির পরাজয় হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু স্বপ্নের সমাজতন্ত্র অর্জিত হয়নি। দেশে সমাজতন্ত্রীদের মত ও পথের ভিন্নতা ছিলো। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সমাজতান্ত্রিক চেতনার যে বিকাশ ঘটেছিলো তা পরবর্তীকালে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ম্রিয়মাণ হয়েছে। সমাজতন্ত্রের অনুসারীরা অনেকেই হতাশ হয়েছেন। সমাজতন্ত্রের পথ ত্যাগ করেছেন। সুবিধা প্রাপ্তির রাজনীতির স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। এবার সম্পূর্ণ নতুন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। যুদ্ধ বললে কম বলা হবে। বিশ্বযুদ্ধে নেমেছেন। পৃথিবী বনাম অদৃশ্য অপশক্তি মহাপরাক্রমশালী করোনা ভাইরাস। তিনি পৃথিবীর পক্ষে। তিনি শুধু যোদ্ধাই নন তিনি শত্রু চিহ্নিতকারী ও নির্মূলকারী মহা সমরনায়ক। তিনি শত্রু সনাক্তকরণের কিট তৈরি করেছেন। হয়তো এই কারণেই শত্রুর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে আছেন। অনেক যুদ্ধে বিজয়ী এই বিশ্ব সমরনায়ক।
আশা করি উনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর অদম্য সাহস দিয়ে করোনা ভাইরাসকে পরাভূত করবেন। সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আবারও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পরবেন। জয় হউক এই মহান দেশপ্রেমিক করোনা যোদ্ধার। জয় হউক আমাদের সকলের প্রিয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডাক্তার মোঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরীর।
সংক্ষেপিত, সম্পাদিত, পরিমার্জিত, সংশোধিত।
Karim Chowdhury
14 June,2020
Cumilla

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...