সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বানান

বানান

(মি. করিম চৌধুরী, আপনার সঙ্গে একেবারেই নতুন পরিচয়। অনেকদিন আগে আপনাকে ফ্রেন্ড রিকো পাঠিয়েছিলাম। একসেপ্ট করেছেন মাত্র ২ দিন আগে। আপনার কয়েকটা লেখা পড়লাম। আপনি অসাধারন লিখেন। লেখার স্টাইল, প্রকাশভঙ্গী, বিষয়বস্তু খুব সুন্দর। আপনার ভাষার স্টাইলও ভিন্ন । যেমনঃ আমরা লিখি "ক্রিম" আপনি লিখেন "কৃম" আমরা "এপ্রিল" আপনি "এপৃল" আমরা "ব্রিগেডিয়ার" আপনি "বৃগেডিয়ার" আমরা "স্ট্রিট" আপনি "স্টৃট" আমরা "ফ্রি" আপনি "ফৃ" আমরা "থ্রি" আপনি "থৃ" লিখেন। এটা কি আপনার নিজস্ব বানানরীতি? এভাবে লিখলে ভুল হবে কিনা? সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ) ।
আমার এক নতুন মেয়ে বন্ধু গতকাল আমাকে ইনবক্সে লিখেছেন ।
আমি ভাষা বিশেষজ্ঞ নই। লেখালেখি করলে ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান অবশ্যই প্রথম শর্ত। তবু চেষ্টা করবো আমার অল্প জ্ঞানে যা জানি তা জানাতে। যুগে যুগে ভাষা পরিবর্তন হয় প্রয়োজনে। স্কুল জীবনে আমরা ‘শ্রেনী’ লিখতাম এখন লিখি ‘শ্রেণি’। এক সময় ঢাকার বানান ছিলো Dacca. এই বানানের কারণে বিদেশিরা আমাদের রাজধানীর নামকে কেউ বলতো ডাচ্চা,কেউ বলতো ডাক্কা, কেউ বলতো ডেক্কা। প্রেসিডেন্ট এরশাদ কেবিনেট মিটিং করে ঢাকার বানান পরিবর্তন করে Dhaka রাখেন। আগে মক্কা বানান ছিলো Mecca.বিদেশিরা মেক্কা বলতো বলে সৌদি সরকার বানান পরিবর্তন করে Makkha রেখেছে।
আমাদের আরো কিছু জেলার নামের বানান নিয়ে আমার আপত্তি আছে । যেমন Jessore বাংলায় যশোহর । Bogra বাংলায় বগুড়া। ইংরেজি বানানের সঙ্গে বাংলা উচ্চারণের মিল নেই । Sylhet বাংলায় সিলেট, এটাও হয় সিলহেট । Kustia (কুষ্টিয়া) লিখতে K দিয়ে কিন্তু Comilla লিখতে C দিয়ে। কেউ যদি কুমিল্লাকে চুমিল্লা বলে তবে ভুল হবে না। এগুলো বৃটিশরা তাদের ইচ্ছা মতো করেছেন বলে আমার ধারণা। এগুলো এখন পরিবর্তন করার সময় এসেছে। আগে ‘বাড়ী’ লিখতাম এখন লিখি ‘বাড়ি’ । আগে ‘গাড়ী’ এখন গাড়ি । আগে ‘পাখী’ এখন পাখি । আগে প্রেমিকাকে আমরা আদর করেব ‘লক্ষ্মীমণি’, ‘লক্ষ্মীসোনা’ বলে চিঠি লিখতাম। এখন লিখে ‘জান’ ‘জানু’ কেউ কেউ বেশি আদর করে লিখে ‘জান্টুস’।
একটা ভাষা বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে তৈরি হয়। বাংলা ভাষায়ই যেমনঃ তৎসম শব্দ, অর্ধ তৎসম শব্দ ,তৎভব শব্দ, দেশি শব্দ এবং বিদেশি শব্দ। চেয়ার, টেবিল, গ্লাস, পেনসিল এসবই এখন বাংলা শব্দ। ইংরেজি থেকে এসেছে। তেমনি ‘খোদা’ ফার্সি শব্দ। আবার রেস্তোরা ফরাসি শব্দ। বানান হচ্ছে Restaurant. কিন্তু এই ফরাসি শব্দটা এখন ইংরেজি শব্দ হিসেবে ব্যবহার হয় । CV- Curriculum Vitae, Resume এই শব্দ দুটোও ফরাসি কিন্তু তা এখন ইংরেজি শব্দও।
আমার বানান রীতির বিষয়টা এখন বলি। প্রত্যেক পত্রিকা অফিসে একটা স্টাইল বুক থাকে। ওই পত্রিকা কোন বানান রীতি অনুসরন করবে। অনেকেরই মনে থাকার কথা 'দৈনিক আমার দেশ' ‘মুক্তি’কে ‘মুকতি' লিখতো। আমি যে 'ক্রিম'কে 'কৃম' 'এপ্রিল'কে 'এপৃল' 'ব্রিগেডিয়ার'কে 'বৃগেডিয়ার 'স্ট্রিট' কে 'স্টৃট' 'ফ্রি'কে 'ফৃ' 'ফ্রিজ'কে ফৃজ 'থ্রি'কে 'থৃ' লিখি তা ভুল নয়।
লক্ষ্য করলে দেখবেন উপরের সবগুলো শব্দ ইংরেজি। ইংরেজি উচ্চারণটা বাংলায় সঠিক করতে দু'রকম ভাবেই করা যায় এবং দুটোই সঠিক উচ্চারণ। আমি যেভাবে লিখি এতে কম্পিউটারে কম্পোজ করতেও সুবিধা। হ্রস ই কার, দীর্ঘ ঈ কার, রফলা এসব দিতে হয় না। একটা রি ফলা দিলেই সঠিক উচ্চারণ হয়। এতে সময় বাচে, লেখার জায়গা কম লাগে। আরেকটা কথা না বললেই নয় ভাষার বানান প্রসঙ্গে। আমেরিকান ইংরেজি বানান- Color, Labor, Center, Behavior, Neighbor, Favor এবং বৃটিশ বানান যথাক্রমে Colour, Labour, Centre, Behaviour, Neighbour, Favour .
©Karim Chowdhury
22 June,2016
Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...