এই খবরদার
আমেরিকার বেশির ভাগ পুলিশ গরমের সময় মাথা কামায়। কামানো মাথার অনেক পুলিশ আমি দেখেছি নিউ ইয়র্কে। ফ্লোরিডায় আরো বেশি। হয়তো ফ্লোরিডার আবহাওয়া সারা বছরই গরম বলে।
এ ব্যাপারে তাদের ইন্টেরিয়র মিনিস্ট্রি থেকে হয়তো কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাদের দেখে আমিও মাঝে মাঝে মাথা কামাতাম। বেশ আরাম। শ্যাম্পু করার ঝামেলা নেই। গোসলের পর মাথা মোছার ঝামেলা নেই। হেয়ার জেল দেয়ার দরকার নেই। মাথা আঁচড়ানোর প্রয়োজন নেই। বাতাসে চুল এলোমেলো করার সম্ভাবনা নেই এক কামানোতে চার পাঁচ এই শান্তি।
একবার শিল্পী রফিকুল আলম,আবিদা সুলতানা ও রথীন্দ্রনাথ রায় গেলেন আমেরিকায় কনসার্ট করতে। আমরা সংগীতপ্রিয় অনেকে মিলে তাদের নিয়ে একটা কনসার্টের আয়োজন করেছিলাম ফ্লোরিডার ফোর্ট মায়ার্স(Fort Myers City)সিটিতে ।
মিতালী মুখার্জি ও ভুপিন্দর সিং এর গাওয়া
"যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আধাঁর...''
এই রোমান্টিক বাংলা ডুয়েট গানটি আমার খুবই প্রিয়। একটু রিদমিক। অনেক পরে রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানাও এই ডুয়েট গানটি গেয়েছিলেন। কনসার্ট শুরু হলো। আমি কামানো মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে হাত তুলে বললাম,
‘এই খবরদার, “যেটুকু সময়, যেটুকু সময়"।
সোহেল,আমি,ইমতিয়াজ,কাজী,কবির,বাবু,রুমি,দিদার এই কয়েকজন কথা বলার আগে প্রায়ই “এই খবরদার” বলে শুরু করতাম। এমনকি ফোন করে কেউ ধরে হ্যালো বললেও প্রথম বলতাম,এই খবরদার। এটা ছিলো এক ধরনের ফান । তাৎক্ষনিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই “খবরদার” খুব কাজে আসে। ইচ্ছা করলে আপনারাও বলে দেখতে পারেন। আমার ‘খবরদার’ শুনে গান বন্ধ করে শিল্পী রফিকুল আলম ষ্টেজ থেকে বললেন "গাইবো, গাইবো"।
এবং পরের গানটাই ‘যেটুকু সময়' গাইলেন। অনেকের মতে, আমি যে পাগলামি করতাম তা ফ্লোরিডার সবাই জানেন। নিউ ইয়র্কেও কম করিনি। ইউরোপ থাকতে তো আরো বেশি। তখন আরো ছোট ছিলাম। একটু আনন্দ করা, মজা করা, ফান করাকে এদেশে পাগলামি বলে যা ঋণাত্মক অর্থে ব্যবহার হয়। সেই হিসেবে যে কেউ আমাকে পাগল বলতে পারেন। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'ঠিকানা' এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এ লিখতাম তখন। একটু লেখক লেখক মনে করতো সবাই।
কনসার্ট চলাকালীন তাপস ভাই ১০ ডলারের বিনিময়ে রাফেল ড্র এর আয়োজন করেছিলেন। আমার কাছ থেকে টাকা না নিয়েই তাপস ভাই আমাকে একটা নাম্বার দিলেন। ৬৯।
কনসার্ট শেষে ড্র-র ফলাফল ঘোষণা করলেন তিন গুণী শিল্পী। ৬৯ বলতেই আমি আবার বললাম, এই খবরদার, কেউ যাবা না। এটা পুরস্কার আমার। ওটা ছিলো খুব আধুনিক একটা ভিডিও প্লেয়ার। প্রথম পুরস্কার। তবে আমার মনে হয়েছিলো, তাপস ভাই পক্ষপাতিত্ব করেই প্রথম পুরষ্কারটা আমাকে দিয়েছিলেন।
আমি সাধারণত সেলিব্রেটিদের সঙ্গে ছবি তুলি না। আমার বেশির ভাগ ছবিই একা। কনসার্ট শেষে রফিকুল ভাই বললেন,"তুমিতো খুব গান প্রেমিক। এসো, তোমার সঙ্গে ছবি তুলি"।
এদিকে তাপস ভাইয়ের দুই ছেলে প্রান্ত আর অন্ত কান্নাকাটি শুরু করলো ড্রতে পাওয়া আমার ভিডিও প্লেয়ারের জন্য। তাপস ভাই আর লতা ভাবীর ফ্যামিলির সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক আছে। প্রান্ত আর অন্তকে বললাম, খবরদার,কান্নাকাটি করবি না। 'নে ধর' বলে ভিডিও প্লেয়ারটা ওদেরকে দিয়ে আমি কামানো মাথা নিয়ে দাঁড়ালাম।
রফিকুল আলম তাঁর স্ত্রী আবিদা সুলতানাকে মাঝে দাঁড়াতে বললেন। তাপস ভাই ছবিটি তুলেছিলেন। ।
তাপস ভাই, কবির,ইমতিয়াজ,দিদার,খায়রুল,লিটু ভাই,মনি দি,শামু,সোহেল,বাবুল ভাই,নেহাল ভাই(নেহাল পারভেজ-সোহেল রানার ছোট ভাই ও রোবেল এর বড় ভাই),রুমি,বাবুসহ আরো অনেকেই ওই কনসার্টে ছিলেন। ভাবীদের নাম লিখলাম না। তারা সবাই এখনো ফ্লোরিডায় আছেন। আমার পোষ্ট পড়েন সময় পেলে। কিন্তু লাইক কমেন্ট করেন না। আমি এমন সব স্মৃতিকথা লিখি যা অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নেন না। আমার মনে হয়, বিখ্যাত হবে এমন আশা করে কেউ ফেবুতে আসে না। আমিতো না-ই। আমার মনে হয়,সবাই ছোট করে তার জীবনের মজার স্মৃতিকথাগুলো লিখতে পারেন ফেবুতে। লেখা আর কি? বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা। যেমন আমি এখানে বন্ধুদের সঙ্গে কথাই বলি।
বিঃদ্রঃ ৭/৮ মাস আগে তাপস ভাই মারা গেছেন ফ্লোরিডায়। সেখানেই কবরস্থ করা হয় উনাকে। এই নিয়ে আমি "স্মৃতিতে তাপস ভাই" একটা লেখাও লিখেছিলাম। তাপস ভাইয়ের তোলা এই ছবিটি আজো রয়ে গেছে।
©Karim Chowdhury
5 June,2020
Cumilla.
আমেরিকার বেশির ভাগ পুলিশ গরমের সময় মাথা কামায়। কামানো মাথার অনেক পুলিশ আমি দেখেছি নিউ ইয়র্কে। ফ্লোরিডায় আরো বেশি। হয়তো ফ্লোরিডার আবহাওয়া সারা বছরই গরম বলে।
এ ব্যাপারে তাদের ইন্টেরিয়র মিনিস্ট্রি থেকে হয়তো কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাদের দেখে আমিও মাঝে মাঝে মাথা কামাতাম। বেশ আরাম। শ্যাম্পু করার ঝামেলা নেই। গোসলের পর মাথা মোছার ঝামেলা নেই। হেয়ার জেল দেয়ার দরকার নেই। মাথা আঁচড়ানোর প্রয়োজন নেই। বাতাসে চুল এলোমেলো করার সম্ভাবনা নেই এক কামানোতে চার পাঁচ এই শান্তি।
একবার শিল্পী রফিকুল আলম,আবিদা সুলতানা ও রথীন্দ্রনাথ রায় গেলেন আমেরিকায় কনসার্ট করতে। আমরা সংগীতপ্রিয় অনেকে মিলে তাদের নিয়ে একটা কনসার্টের আয়োজন করেছিলাম ফ্লোরিডার ফোর্ট মায়ার্স(Fort Myers City)সিটিতে ।
মিতালী মুখার্জি ও ভুপিন্দর সিং এর গাওয়া
"যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আধাঁর...''
এই রোমান্টিক বাংলা ডুয়েট গানটি আমার খুবই প্রিয়। একটু রিদমিক। অনেক পরে রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানাও এই ডুয়েট গানটি গেয়েছিলেন। কনসার্ট শুরু হলো। আমি কামানো মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে হাত তুলে বললাম,
‘এই খবরদার, “যেটুকু সময়, যেটুকু সময়"।
সোহেল,আমি,ইমতিয়াজ,কাজী,কবির,বাবু,রুমি,দিদার এই কয়েকজন কথা বলার আগে প্রায়ই “এই খবরদার” বলে শুরু করতাম। এমনকি ফোন করে কেউ ধরে হ্যালো বললেও প্রথম বলতাম,এই খবরদার। এটা ছিলো এক ধরনের ফান । তাৎক্ষনিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই “খবরদার” খুব কাজে আসে। ইচ্ছা করলে আপনারাও বলে দেখতে পারেন। আমার ‘খবরদার’ শুনে গান বন্ধ করে শিল্পী রফিকুল আলম ষ্টেজ থেকে বললেন "গাইবো, গাইবো"।
এবং পরের গানটাই ‘যেটুকু সময়' গাইলেন। অনেকের মতে, আমি যে পাগলামি করতাম তা ফ্লোরিডার সবাই জানেন। নিউ ইয়র্কেও কম করিনি। ইউরোপ থাকতে তো আরো বেশি। তখন আরো ছোট ছিলাম। একটু আনন্দ করা, মজা করা, ফান করাকে এদেশে পাগলামি বলে যা ঋণাত্মক অর্থে ব্যবহার হয়। সেই হিসেবে যে কেউ আমাকে পাগল বলতে পারেন। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'ঠিকানা' এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এ লিখতাম তখন। একটু লেখক লেখক মনে করতো সবাই।
কনসার্ট চলাকালীন তাপস ভাই ১০ ডলারের বিনিময়ে রাফেল ড্র এর আয়োজন করেছিলেন। আমার কাছ থেকে টাকা না নিয়েই তাপস ভাই আমাকে একটা নাম্বার দিলেন। ৬৯।
কনসার্ট শেষে ড্র-র ফলাফল ঘোষণা করলেন তিন গুণী শিল্পী। ৬৯ বলতেই আমি আবার বললাম, এই খবরদার, কেউ যাবা না। এটা পুরস্কার আমার। ওটা ছিলো খুব আধুনিক একটা ভিডিও প্লেয়ার। প্রথম পুরস্কার। তবে আমার মনে হয়েছিলো, তাপস ভাই পক্ষপাতিত্ব করেই প্রথম পুরষ্কারটা আমাকে দিয়েছিলেন।
আমি সাধারণত সেলিব্রেটিদের সঙ্গে ছবি তুলি না। আমার বেশির ভাগ ছবিই একা। কনসার্ট শেষে রফিকুল ভাই বললেন,"তুমিতো খুব গান প্রেমিক। এসো, তোমার সঙ্গে ছবি তুলি"।
এদিকে তাপস ভাইয়ের দুই ছেলে প্রান্ত আর অন্ত কান্নাকাটি শুরু করলো ড্রতে পাওয়া আমার ভিডিও প্লেয়ারের জন্য। তাপস ভাই আর লতা ভাবীর ফ্যামিলির সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক আছে। প্রান্ত আর অন্তকে বললাম, খবরদার,কান্নাকাটি করবি না। 'নে ধর' বলে ভিডিও প্লেয়ারটা ওদেরকে দিয়ে আমি কামানো মাথা নিয়ে দাঁড়ালাম।
রফিকুল আলম তাঁর স্ত্রী আবিদা সুলতানাকে মাঝে দাঁড়াতে বললেন। তাপস ভাই ছবিটি তুলেছিলেন। ।
তাপস ভাই, কবির,ইমতিয়াজ,দিদার,খায়রুল,লিটু ভাই,মনি দি,শামু,সোহেল,বাবুল ভাই,নেহাল ভাই(নেহাল পারভেজ-সোহেল রানার ছোট ভাই ও রোবেল এর বড় ভাই),রুমি,বাবুসহ আরো অনেকেই ওই কনসার্টে ছিলেন। ভাবীদের নাম লিখলাম না। তারা সবাই এখনো ফ্লোরিডায় আছেন। আমার পোষ্ট পড়েন সময় পেলে। কিন্তু লাইক কমেন্ট করেন না। আমি এমন সব স্মৃতিকথা লিখি যা অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নেন না। আমার মনে হয়, বিখ্যাত হবে এমন আশা করে কেউ ফেবুতে আসে না। আমিতো না-ই। আমার মনে হয়,সবাই ছোট করে তার জীবনের মজার স্মৃতিকথাগুলো লিখতে পারেন ফেবুতে। লেখা আর কি? বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা। যেমন আমি এখানে বন্ধুদের সঙ্গে কথাই বলি।
বিঃদ্রঃ ৭/৮ মাস আগে তাপস ভাই মারা গেছেন ফ্লোরিডায়। সেখানেই কবরস্থ করা হয় উনাকে। এই নিয়ে আমি "স্মৃতিতে তাপস ভাই" একটা লেখাও লিখেছিলাম। তাপস ভাইয়ের তোলা এই ছবিটি আজো রয়ে গেছে।
©Karim Chowdhury
5 June,2020
Cumilla.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন