সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একদিন প্রাগে

একদিন প্রাগে

--------------------------
Aerial View of Prague from Prague Castle,Capital of Czeck Republic.
Photo Credit : Mr.Tomas.
সেই কবে চেক রিপাবলিক বেড়াতে গিয়েছিলাম । সঙ্গে ছিলো টমাস । সাবেক সোভিয়েত ব্লকের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ঘুরতে বেশ মজা । মানুষজনও বেশ আন্তরিক । খরচও খুব কম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপটাকে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলো আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ।
প্রথম নাম ছিলো চেকোস্লোভাকিয়া । ১৯৪৮ সাল থেকে ২৩ এপৃল ১৯৯০ পর্যন্ত চেকোস্লোভাকিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শাসন চালু ছিলো । ৯০ দশকে সোভিয়েত ব্লকের পূর্ব ইউরোপের সবগুলো দেশে সমাজতন্ত্র ভেঙে পরে। আমি তখন অস্টৃয়ার রাজধানী ভিয়েনা ছিলাম। পূর্ব ইউরোপের ওই উত্তাল দিনগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসে। কতো আনন্দই না করেছিলাম ইউরোপীয় জীবনে!!! চেকোস্লোভাকিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটালাইট রাস্ট্র বলা হতো। সমাজতান্ত্রিক চেকোস্লোভাকিয়ার শেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন আলেকজান্ডার ডুবচেক।
চেকোস্লোভাকিয়ার বিপ্লব ছিলো শান্তিপূর্ণ । কমিউনিস্ট প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ডুবচেক জনরোষ দমন করতে সেনাবাহিনী নামালেও লাখ লাখ চেকোস্লোভাকিয়ান রাস্তায় নেমে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর দিকে ফুল ছিটিয়ে দেন। সেনাবাহিনী একটিও গুলি না ছুড়ে জনগনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হয়। চেকোস্লোভাকিয়ার বিশিষ্ট নাট্যকার ভাকলাভ হাভেল ( Vaclav Havel) নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেকোস্লোভাকিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শাসন চালু হয়। পরবর্তী একচল্লিশ বছর এই শাসন চলে। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে গনতান্ত্রিক পথে চেকোস্লোভাকিয়া যাত্রা শুরু করে। রক্তপাতহীন ও শান্তিপূর্ণ ছিলো বলে চেক সরকার এই বিপ্লবের নাম দিয়েছিলো "ভেলভেট রেভুলিউশান ( Velvet Revolution)"।
পূর্ব ইউরোপের ওই উত্তাল দিনগুলোতে আমি অস্টৃয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ছিলাম। তখন বয়স কম ছিলো। ছিলো তারুণ্যের উচ্ছ্বলতা ।
সামার হলিডেতে চেকোস্লোভাকিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সঙ্গী টমাস।
ভিয়েনা থেকে সহজেই চেকোস্লোভাকিয়ার ভিসা পাওয়া গেল। দশ দিন থাকবো বলে মনস্থির করলাম। চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগ ( Prague) । চেক ভাষায় বলা হয় প্রাহা (Praha)।
বলা প্রয়োজন,১৯৯৩ সালের ০১ জানুয়ারি চেকোস্লোভাকিয়া দুটো দেশে বিভক্ত হয়। চেকোস্লোভাকিয়া প্রধানত দুটো জাতি নিয়ে গঠিত ছিলো। চেক ও স্লোভাক। স্লোভাক জাতি চেকদের তুলনায় নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করতো। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে দুই জাতি বিভক্ত হয়ে দুটো দেশ হয়। একটি চেক রিপাবলিক এবং অন্যটি স্লোভাকিয়া। চেক রিপাবলিকের রাজধানী রয়ে গেলো প্রাগ। আর স্লোভাকিয়ার রাজধানী হলো তাদের বড় শহর ব্রাটিস্লাভা ( Bratislava.)। স্লোভাকিয়ায়ও গিয়েছিলাম। সে কথা আরেক দিন।
ভিয়েনা থেকে বাসে বা ট্রেনে সরাসরি প্রাগ যাওয়া যায়। সময় লাগে ৪ ঘন্টা। ভিয়েনা থেকে প্রাগ মাত্র ৩৩৪ কিলোমিটার।
ছাত্রজীবনে চেকোস্লোভাকিয়া বানানটা শিখতে যা কষ্ট হয়েছিলো । C এর পরে Z আছে Czechoslovakia । এখনো চেক রিপাবলিক লিখতে Czech Republic লিখতে হয় ।
এই ছবিটি প্রাগ ক্যাসলের একেবারে উপরে । যেখান থেকে পুরো প্রাগ শহর দেখা যায় । ছোটদের জন্য বলছি, উপর থেকে কিছু দেখাকে এরিয়াল ভিও Aerial View বলে । কি যে আনন্দের ছিলো ইউরোপীয় জীবনটা । মাঝে মাঝে ওই সময়ে ফিরে যেতে অবাস্তব ইচ্ছা হয় ।
চেক ভ্রমণ নিয়ে একটি বড় লেখা মৌচাকে ঢিল ম্যাগাজিনে লিখেছিলাম । ওই লেখাটির নামও দিয়েছিলাম 'ভেলভেট প্রতারণা'। ফেবুতেও দিয়েছিলাম। মেমোরি দেখালে শেয়ার করবো।
©Karim Chowdhury
1 June,2020
Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...