সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফেসবুক ও সাম্যবাদ

ফেসবুক ও সাম্যবাদ

প্রথম যখন ফেসবুকে ঢুকি ১০ বছর আগে তখন ছিলো এক রকম অবস্থা। ফেসবুক এতো জনপ্রিয় ছিলো না। ২০১৩/১৪ সালে এসে ফেসবুক জনপ্রিয় হয়। তখন দুষ্টুমি করে লিখতাম “হে ফেসবুক, তুমি মোরে বানিয়েছো মিথ্যুক। পেঁচার ছবিতেও কমেন্ট করি,ওয়াও কি সুন্দর মুখ”। মেয়েদের ছবিতে বা এক লাইন ভালোবাসার কথায় অগনিত কমেন্ট আর লাইক পড়তো। এখনো পড়ে।
এদেশে প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটি সেল। তখন মোবাইল ফোন স্ট্যাটাস সিম্বল ছিলো। এক ফোনের দাম ছিলো ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। পরে গ্রামীণ এর সিম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকাও বিক্রি হয়েছিলো। মিনিটে সাড়ে সাত টাকা কলরেট। এখন সিমের দাম ১০০ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে মাগনাও পাওয়া যায়। ২ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্ট মোবাইল সেটও কেনা যায়। এটা কি খুব ভালো হলো?
২০০৫ সালে সাংবাদিকতার উপর একটা পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা করেছিলাম। আমাদের শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ড. শাখাওয়াত আলী খান একদিন আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে সম্পাদকীয় লিখতে বললেন- ওই সম্পাদকীয়র এক জায়গায় আমি লিখেছিলাম “ রাত ১২টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত যে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ২৫ পয়সা মিনিটে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন এটা অত্যন্ত অনৈতিক। এ সময় সবাই ঘুমাবে। এতো রাতে কিসের কথা? এটা যুবক যুবতীদের চ্যাট ও ফোন সেক্স করার সুব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই অনেক যুবক যুবতীর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছে বলে পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে”।
আমরা ১৩৫ জন ছাত্রের মধ্যে আমার লেখা সম্পাদকীয়টা প্রথম হয়েছিলো।
এখন বাংলাদেশে যার হাতে একটা কম দামি মোবাইল আছে সেও ফেইসবুক একাউন্ট খুলে বসে আছে। লেখাপড়া কিছুই নেই। এদের অনেকেই প্রোফাইলে নামীদামী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়। ওদের একমাত্র কাজ নিজের ও বন্ধুদের ছবি আপলোড করা। কয়টা লাইক পড়লো তা গুনে দেখা। আর মেয়েদের ছবি দেখা এবং লাইক মারা। অনেকে আবার অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়। আমার পরিচিত কয়েকজন আছে। তারা স্কুলের গন্ডি পার হয়নি।

বাংলাদেশে ফেসবুকের ক্ষেত্রে এক সাম্যবাদী বিপ্লব ঘটে গেছে। নারী-পুরুষ, ছোট বড়, কাজের লোক, বুয়া, ড্রাইভার, মালী, দারোয়ান-গাড়োয়ান, রাজমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রী, টাইলস মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী, সেনিটারি মিস্ত্রী, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, মডেল, নিজ স্ত্রী-পরস্ত্রী, শ্যালক-শ্যালিকা, বালক-বালিকা, গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা,জমির দালাল, গরুর দালাল, দোকানদার, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সন্ত্রাসী, ক্যাডার, বোমাবাজ, ডাকাত, চোর, যৌনকর্মী, চাকরিজীবী, কেরানি-অফিসার, বেকার, তরকারি বিক্রেতা, চা দোকানদার, হাফ ম্যাড, ফুল ম্যাড, শিক্ষিত-অশিক্ষিত এমনকি ভিক্ষুকেরও ফেইসবুক একাউন্ট আছে। এই কমিউনিস্ট ব্যবস্থাপনা কিভাবে আমাদের সমাজে বহাল হলো তা গবেষণার দাবি রাখে।
বানান ভুল, বাক্য গঠন ভুল, লেখার বিষয়ের মর্মার্থ না বুঝেই কমেন্ট করা। বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা আর কি? তাদেরকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখাও মান ইজ্জতের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পাইকারি ফেসবুক ব্যবহার করার কারনে অনেক সমস্যা হয়। অনেকেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। সব সময় প্রোফাইল চেক করার সময় থাকে না। একসেপ্ট করলে, পরে দেখা যায় সে কোনদিন স্কুলেই যায়নি।
বিঃদ্রঃ আমি কোন পেশাকেই ছোট করে দেখিনা । কাউকে অপমান বা দুঃখ দেয়ার জন্য এসব লেখা নয়। স্রেফ আমার অভিজ্ঞতা। আমি এই লেখা লেখার কারন কেউ যেন কারো পরিশ্রম,মেধা খরচ করে লেখা চুরি করে নিজের নামে না চালায়। এটা বড় ধরনের চুরি।
©Karim Chowdhury
24 June,2020
Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...