সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কে এই সাবরিনা?

কে এই সাবরিনা?

ডা. সাবরিনা আরিফ। নামটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। টেলিভিশন টকশো কিংবা স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনার নিয়মিত মুখ সাবরিনা নানা সময়ে দিতেন সুস্থ থাকার নানা ফর্মুলা। চিকিৎসক মহলে বেশ প্রভাবও ছিল তার।
সৈয়দ মোশাররফ হুসাইন নামে এক সাবেক আমলার মেয়ে সাবরিনা পড়ালেখা করেছেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। ২৭তম বিসিএসে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পুরো নাম ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন। আরিফ চৌধুরীকে বিয়ের পর নাম পাল্টে হয়ে যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
ডা. সাবরিনা জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি) প্রজেক্টের চেয়ারম্যান। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরীর চতুর্থ স্ত্রী তিনি। যদিও সাবরিনার দাবি, আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে তার এখন কোনও সম্পর্ক নেই। তবে হৃদরোগ হাসপাতালে তার কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায় স্বামীর নামযুক্ত নেমপ্লেটে লিখা ডা. সাবরিনা আরিফ।
সূত্রে দেয়া তথ্যে জানা যায়, চিকিৎসক মহলে প্রভাবশালী ডা. সাবরিনা চিকিৎসকদের একটি প্রভাবশালী সংগঠনের দাপুটে এক নেতার জুনিয়র বান্ধবী। সেই সুবাদে স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা মন্ত্রণালয়েও ছিল তার লম্বা হাত। এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়েই করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন তিনি।
ডা. সাবরিনার ক্ষমতাবলে জেকেজি প্রজেক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাগিয়ে নেয় করোনার স্যাম্পল কালেকশনের সুযোগ। প্রথমে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি নেন ডা. সাবরিনা। পরে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা ও বাইরের জেলাগুলো থেকেই নমুনা সংগ্রহ করছিল তার প্রতিষ্ঠান।
জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। গেল এপ্রিল মাস থেকে জেকেজি করোনার নমুনা সংগ্রহ শুরু করতে গিয়ে প্রতারণা শুরু করে। করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ইচ্ছেমতো রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ অভিযোগ উঠে সাবরিনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জেকেজির কয়েকজন কর্মী গ্রেফতারের পর তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, রোগীদের জ্বর থাকলে করোনা পজিটিভ আর জ্বর না থাকলে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়া হতো।
করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজিতে অভিযান চালায় তেজগাঁও থানা পুলিশ। অভিযানে প্রতারণার মূল হোতা ও জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন ডা. সাবরিনা।
পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেয়ার ঘটনা জানাজানি হলে দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এ প্রতারণায় আরিফ চৌধুরীর অন্যতম সহযোগী তার চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনাকে কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরছে না- তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সাবরিনার ছবি পোস্ট করে চলতে থাকে ট্রল। এ মুহূর্তে তার নানা আবেদনময়ী ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
অবশেষে গতকাল রবিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ডা. সাবরিনাকে। জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় গতকালই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। এরইমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলাও করেছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে প্রতারণার দায় এড়াতে গত কয়েকদিন ধরেই নানা ফন্দি আটছিলেন ডা. সাবরিনা। অনেকেই ভেবেছিলেন, চিকিৎসক সংগঠনের প্রভাবশালী নেতার প্রিয় বান্ধবী হওয়ায় হয়তো সাবরিনাকে ধরা হবে না। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ধরা তাকে পড়তেই হলো।
নভেল করোনা ভাইরাস মহামারিতে গোটা দেশ যখন দিশেহারা তখন করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ভয়ঙ্কর অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন সাবরিনা। আরিফ চৌধুরীর দুই স্ত্রী থাকেন রাশিয়া ও লন্ডনে। আরেক স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে ছাড়াছাড়ির পরও উপর মহলে দেনদরবার করে যাচ্ছেন সাবেক ওই স্ত্রী।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগীয় উপকমিশনারে (ডিসি) কার্যালয়ে ডা. সাবরিনাকে ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়াসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে তেজগাঁও থানা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিল মাস থেকে জেকেজি থেকে প্রায় ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআর-এর মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপের মাধ্যমে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জব্দ করা ল্যাপটপ থেকে এসবের প্রমাণও পেয়েছে।
তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশি প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিতো। আর বিদেশি রোগীদের কাছ থেকে নিতো ১০০ ডলার করে।
পুলিশের অভিযোগে জানা যায়, ডা. সাবরিনা যে মোবাইল সিমটি ব্যবহার করছেন সেটি এক রোগীর নামে নিবন্ধন করা। পুলিশ বলছে, এটিও একটি বড় অপরাধ। এ বিষয়ে সাবরিনা কিছু জানতেন না বলে সাংবাদিদের জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডা. সাবরিনার আগেও বিয়ে হয়েছিল। প্রথম সংসারে তার দুই সন্তান আছে। তবে জিকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরীকে বিয়ে করার পর তাদের কোনও সন্তান হয়নি।
গতকাল জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ চৌধুরীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. সাবরিনা দাবি করেন, দুই মাস আগে তাদের তালাক হয়ে গেছে। এখন তাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। সাবরিনার ঘনিষ্ঠজন সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রনি নামে সাবরিনার এক ব্যবসায়ী বন্ধু থাকেন। মাঝে মধ্যেই নিজে গাড়ি চালিয়ে রনির বাসায় যেতেন ডা.সাবরিনা।
Karim Chowdhury
14 July,2020
Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর